Home গল্প-উপন্যাস অপরূপ গোধূলির রং

অপরূপ গোধূলির রং

।। মালেকা ফেরদৌস ।।

চারদিকে কলরোল- একদিকে ঘন কালো মেঘ, অন্যদিকে শেষ বিকেলের মেঘের ছায়ায় সূর্যের মুখ। অপরূপ গোধূলির রং পশ্চিমাকাশের একটি অংশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে। কিছু পাখি সে রংয়ে ডুবে উড়ছে। পাশের বাসার বারান্দায় একটি গোলাপ, টুকটুকে লাল কলাবতী ফুটে আছে, বাতাসে পাপড়ি দুলছে।

আদিগন্ত কল্লোলিত মুহূর্তের বাইরে আজ আমার মনে হয় আমি গোত্রহীন এক অচ্ছুত মানুষ। আমার কিছু নেই, – না সংসার, না সন্তান, না কোন বন্ধু। আমার সমস্ত চৈতন্য জুড়ে শুধু একজন। আমি তীব্র মমতা দুঃখের মধ্যে জানালায় শুধু শেষ বিকেলের রক্তিম আলো দেখতে থাকি। বিষন্ন শাদা বিছানা, অক্সিজেনের নল, হাসপাতাল, ফিনাইলের তীব্র গন্ধ। আমি এই অপরাহ্নের স্তব্ধতায় তার ফ্যাকাসে মুখটা ভাসতে দেখি।

১৪ দিনের লড়াই, ও লড়ছে আমি নির্বাক দেখছি। ডাক্তার তার কাছে যেতে দিচ্ছে না।আমার আত্মবল বেড়ে যায়। আস্তে কপালে হাত রাখি। চোখ মেলে দেখে- বকা খাই।আমাকে নিয়ে ভয় ওকে ভীত করে তোলে। আস্তে করে বলি- ভয় পেও না আমার হৃদয় দিয়ে তোমাকে ছুঁয়ে গেলাম। এ হৃদয় আল্লাহ নিজে বানিয়েছেন। আমার স্বভাবে আমি ওর সাথে কথা বলি। ওকে হাগ করি। চোখের কোনে জল, দু’জনে নিরবে কাঁদি।

ইনজেকশন দিতে ডাঃ রুবায়েত সিষ্টারসহ রুমে ঢোকেন যুদ্ধের সাজে। আমাকে সরিয়ে দেয়। আমি দাঁড়িয়ে থাকি। ডাঃ যেতে যেতে বলেন খুব ভালোবাসেন। কিন্তু ভুলে যাবেন না এ অদৃশ্য দানবের সাথে সারা বিশ্ব লড়ছে। মানুষের জীবন, সমাজ সংসারের নতুন চিত্র বিশ্ব দেখছে। এর চিকিৎসা আমাদের জানা নেই। আমরা চেষ্টা করছি । কত ডাঃ নিজেরাই ঝরে পড়ছে।

ওকে দেখাশোনা করা ছেলেটি একটা কাগজ হাতে রুমে আসে। বলে- ম্যাডাম আজ স্যারের টেষ্ট হবে। আপনিও করে নিতে পারেন। টেষ্টের নমুনা দিয়ে বাসায় ফিরছি।
ঢাকা শহরকে নতুন করে দেখছি। হে করুণাময়, তোমার অনুকম্পা কামনা করি, হে অনন্তের অধিকারী, তোমার আলোয় আমাদের প্রভাময় কর। আমাদের সুস্থতা দাও। বিশ্বের সব মানবের প্রতি তোমার দয়ার দরোজা খুলে দাও!

আরও পড়তে পারেন-

পরেরদিন ফোন আসে- ওপ্রান্ত থেকে ওর দুর্বল কণ্ঠ ভেসে আসে- আজ আমাকে রিলিজ করবে। রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। তোমারও নেগেটিভ। আমার নেগেটিভ! কারণ আমি চৌদ্দদিনই ওর কাছ থেকে সরিনি। ৭ দিন হসপিটালে ছিল, সেখানেও গিয়েছি। বাসায় তো মাক্স ছাড়াই যেতাম এবং বকা খেতাম। বকা দিলেই ওকে স্পর্শ করতাম। তাই বকাও দিত না।

দু’দিন থেকে রুম ষ্ট্রেলাইজ হয় । নতুন পর্দা, নতুন বালিশ, নতুন চাদর; সব ওর পছন্দের রং দিয়ে সাজিয়ে রাখি। রুমের আদল পাল্টে দেই। শুধু ফুলটা রাখতে পারিনি বাইরে থেকে আসবে বলে। সাইট টেবিলে আমার প্রেমের কবিতার বইটা রেখে দেই। যদিও ও কোনদিন পড়ে দেখেনি।

“ বিপদকে মনে করবে প্রস্তরের মতো যেন তুমি পাহাড়ের সানুদেশে বসে আছ।প্রলয়ঙ্কররূপে প্রস্তরখন্ড গুলো ভেঙ্গে পড়বে তোমার উপর। তখন তুমি বলবে- “ হে আমার প্রভু আমি তোমার শরণ নিচ্ছি, পাপ, দুর্ভাগ্য, অদৃশ্যের বিপাক এবং শত্রুর উল্লাস থেকে”।

আমার ডাঃ বন্ধুরা (জিয়া সাঈদ, স্নেহের অনু, ডাঃ ফেরদৌস, আমার ছেলের মত নমি); যারা আমাকে সর্বক্ষণ শক্তি ও সাহস জুগিয়েছেন তাদের প্রতি চির কৃতজ্ঞ আমি। কৃতজ্ঞ মর্ডান আনোয়ার খান মেডিকেল হসপিটালের ডাঃ রুবায়েত ও পরিচালক ডাঃ এহতেশামুল হকের কাছে।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।