Home শিক্ষা ও সাহিত্য নতুন শিক্ষাবর্ষের ছাত্রদের উদ্দেশ্যে হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালকের দিক-নির্দেশনা

নতুন শিক্ষাবর্ষের ছাত্রদের উদ্দেশ্যে হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালকের দিক-নির্দেশনা

প্রায় দেড় মাস শিক্ষা বিভাগের ছুটি শেষে গত সোমবার (৯ মে) দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ ইসলামী শিক্ষাকেন্দ্র আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসার নতুন শিক্ষাবর্ষ (১৪৪৩-৪৪হিঃ)এর ছাত্র ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

নতুন শিক্ষাবর্ষের ছাত্রদের উদ্দেশ্যে দারুল উলূম হাটহাজারীর মহাপরিচালক আল্লামা মুহাম্মদ ইয়াহইয়া উপদেশমূলক এক বার্তা দিয়েছেন। এতে ছাত্রদেরকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেছেন, আপনারা দুনিয়ার সকল লোভলালসা ত্যাগ করে এখানে এসেছেন দ্বীনি ইলম অর্জন করার জন্য। সুতরাং নিয়্যাতকে খালেস করে এবং অন্তরে তাকওয়া ও আল্লাহর ভয় নিয়ে নিজেদেরকে পড়ালেখায় আত্মনিয়োগ করবেন।

আল্লামা মুহাম্মদ ইয়াহইয়া ছাত্রদের প্রশংসা করে বলেন, আপনারা দ্বীনের বৃহৎ পরিসরে খেদমত করার মহান লক্ষ্য-উদ্দেশ্য নিয়েই দুনিয়াবী শিক্ষা ও খ্যাতির সম্ভাবনাকে পরিত্যাগ করে মাদ্রাসা শিক্ষাকে বেছে নিয়েছেন। কিন্তু এই উদ্দেশ্যে সফলতা আসতে হলে অবশ্যই আপনাদেরকে পূর্ণ মনোযোগ ও কঠোর অধ্যাবসায়ের সাথে দরসে নিয়মিত হাজির থাকতে হবে এবং অন্য সময়ে কিতাব মুতালায়া করতে হবে।

তিনি ছাত্রদের উদ্দেশ্যে নির্দেশনামূলক বার্তায় আরো বলেন, জামিয়ার সকল উস্তাদ, কর্মকর্তাসহ যিম্মাদারগণের প্রতি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা ও সম্মান বজায় রেখে আপনাদেরকে চলতে হবে। আপনাদেরকে নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা ও চলাফেরায় পারস্পরিক সম্মান ও সৌহার্দ্য বজায় রাখতে হবে। জামিয়ার অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা ও আইন পূর্ণরূপে মেনে চলতে হবে। এ ব্যাপারে কোন শিথিলতা করা যাবে না। যথারীতি দরসে সকল ছাত্রকে হাজির থাকতে হবে এবং দরসের বাইরে সময়ের উত্তম ব্যবহার করে পূর্ণ মনোযোগের সাথে পড়াশোনায় মনোনিবেশ করতে হবে। ক্যাম্পাসের বাইরে দোকানপাট ও বাজারে ঘোরাফেরা করবেন না এবং কোথাও আড্ডা দিবেন না। এসব বিষয়ে জামিয়ার পক্ষ থেকে কঠোর তদারকী করা হবে। আমরা চাই, আপনারা এখানে এসেছেন সহীহ দ্বীনি ইলম অর্জন করতে এবং দ্বীনি বিষয়ে উম্মাহ’র পথপ্রদর্শক হয়ে কাজ করার যোগ্যতা অর্জন করতে। আমরা আপনাদেরকে সেভাবেই গড়ে তুলতে চেষ্টা করবো ও সাহায্য করবো, ইনশাআল্লাহ।

তিনি ছাত্রদের জন্য মোবাইল ফোন ব্যবহারকে অত্যন্ত ক্ষতিকর উল্লেখ করে বলেন, জামিয়া ক্যাম্পাসে কারো কাছে কোন ধরনের স্মার্টফোন থাকতে পারবে না। তালেবে ইলমদের জন্য মোবাইল ফোনের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে কারো কোন দ্বিমত নেই। ছাত্রদের জন্য নিজেদের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করতে হলে আছর থেকে মাগরীব পর্যন্ত সময়ে শুধুমাত্র বাটন মোবাইল ফোন ব্যবহার করা যাবে। এই নিয়মের ব্যতয় ঘটলে বা কেউ লঙ্ঘন করলে জামিয়ার বিধিবদ্ধ আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হবে। সুতরাং এ বিষয়ে আপনারা সকলে সতর্ক ও সচেতন থাকবেন। মনে রাখবেন, আমরা এসব বিধিবিধান আপনাদের কল্যাণ চিন্তা করেই জারি করছি। জামিয়ার শৃঙ্খলা রক্ষার্থে আপনাদের দায়িত্ব সকল অভ্যন্তরীণ আইন যথাযথভাবে অনুসরণ করে চলা।

আল্লামা মুহাম্মদ ইয়াহইয়া ছাত্রদের উদ্দেশ্যে আরো বলেন, আপনারা অবশ্যই নিয়মিত জামাতে তাকবীরে ঊলার সাথে নামায আদায় করবেন, প্রতিদিন কুরআন তিলাওয়াত করবেন। রাত ১০টার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ে গভীর রাতে ওঠে তাহাজ্জুদ পড়ে ফজরের আগে ১-২ ঘণ্টা কিতাব পড়বেন। চলাফেরার সবপর্যায়ে সুন্নাতের পাবন্দীর উপর গুরুত্ব দিয়ে চলবেন। এভাবে যদি মেহনত-সাধনা করে এবং জামিয়ার সকল আইন মেনে নিজেকে আদর্শ ও পরিশুদ্ধতা নিয়ে পরিচালিত করতে পারেন, ইনশাআল্লাহ আপনারা এখান থেকে শিক্ষাউত্তীর্ণ হয়ে কওম-মিল্লাতের যোগ্য রাহবার ও খাদেম হয়ে সম্মান-শ্রদ্ধার্জনের সাথে দ্বীনের বহুমুখী কাজ আঞ্জাম দিতে পারবেন।

তিনি আরো বলেন, মুসলমানদেরকে বিভিন্ন দলে বিভক্ত করার জন্য এবং দ্বীনি বিষয়ে সাধারণ মুসলমানদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরির জন্য ইসলামের শত্রুদের বহুমুখী ষড়যন্ত্র ও অপতৎপরতা অনেক পুরনো। এসব ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতায় তারা নতুন নতুন নানা ফেরকার উদ্ভব ঘটানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। এসব ফেরকা ও ষড়যন্ত্রের মোকাবেলা করতে হলে যোগ্য আলেম হয়ে আপনাদেরকে গড়ে ওঠতে হবে। এই জন্য পবিত্র কুরআন-হাদীস ও ইলমে ফিক্বাহ’র মৌলিক জ্ঞানসহ অন্যান্য সকল বিষয়েও পারদর্শিতা অর্জন করতে হবে। ইলমে দুর্বলতা থেকে গেলে এটা উপকারীর চেয়েও অনেক ক্ষেত্রে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সুতরাং এ বিষয়ে সকলকে সযত্ন ও সতর্ক থাকতে হবে।

জামিয়া প্রধান আরো বলেন, কুরআন-হাদীস ও ইসলামের মৌলিক ইলম হাসিল করার জন্য আমাদের আকাবির ও পূর্বসূরীগণ সীমাহীন মেহনত-পরিশ্রম ও সাধনা করে গেছেন। নানা বিভ্রান্তি, অপব্যাখ্যা চিনতে ও বুঝার যোগ্যতা অর্জন করে সহীহ ইলমে দ্বীন হাসিল করতে হলে অক্লান্ত মেহনত-পরিশ্রম ও সাধনা করতে হবে। আর ইলম অর্জনের পাশাপাশি এখন থেকেই নিজেদের আমল-আখলাকের মধ্যেও তার অনুশীলন শুরু করে দিতে হবে।

তিনি বলেন, বর্তমানে ইসলাম ও মুসলমানদের নানামুখী সংকট ও দুর্দিনে কওম আপনাদের নেতৃত্বের অপেক্ষায় আছে। আর আপনারা যোগ্য আলেম রূপে গড়ে ওঠতে সক্ষম হলে তবেই কওমের পীপাসা নিবারণ করতে পারবেন।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।