Home ইসলাম কোরআন পরিত্যাগ করা গুরুতর পাপ

কোরআন পরিত্যাগ করা গুরুতর পাপ

।। আতাউর রহমান খসরু ।।

সমাজের বহু মানুষ কোরআনচর্চাকে রমজান মাসের ভেতর সীমাবদ্ধ করে ফেলেছে। তারা রমজান মাসে এক খতম বা দুই খতম কোরআন তিলাওয়াত করেন। কিন্তু সারা বছর কোরআন স্পর্শ করে দেখেন না। এটা কোরআন পরিত্যাগ করার নামান্তর।

আর কোরআনচর্চায় অনীহা এবং কোরআন থেকে দূরে থাকার পরিণতি ভয়াবহ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আমি তোমাদের কাছে দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি। তার একটি হলো আল্লাহর কিতাব। তাতে আছে হিদায়াত ও আলো, যে এটাকে আঁকড়ে রাখবে সে হিদায়াতের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে। আর যে এটা ছেড়ে দেবে সে পথ হারিয়ে ফেলবে। ’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৬১১৯)

কোরআন পরিত্যাগের অর্থ : মহানবী (সা.) কোরআন পরিত্যাগকারীদের ব্যাপারে অনুযোগ করে বলেছেন, ‘হে আমার প্রতিপালক, আমার সম্প্রদায় তো এই কোরআনকে পরিত্যাজ্য মনে করে। ’ (সুরা : ফোরকান, আয়াত : ৩০)

উল্লিখিত আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.) লেখেন, ‘মক্কার কুরাইশরা কোরআন তিলাওয়াতের সময় শোরগোল ও হৈচৈ করত এবং তা শ্রবণ করত না—এটা কোরআন পরিত্যাগ। কোরআনের ওপর আমল ছেড়ে দেওয়া এবং তা মুখস্থ না করাও কোরআন পরিত্যাগ। কোরআনের প্রতি ঈমান ত্যাগ করা, তা সত্যায়ন না করা, কোরআন নিয়ে চিন্তা-গবেষণা না করা, কোরআনের আদেশ ও নিষেধ অনুসরণ না করাও কোরআন পরিত্যাগ করা। কোরআনের পরিবর্তে কবিতা, গদ্য, গান, হাসি-কৌতুক, গালগল্প ইত্যাদির প্রতি ঝুঁকে যাওয়াও কোরআন পরিত্যাগ। ’ (তাফসিরে ইবনে কাসির)

আরও পড়তে পারেন-

কোরআন পরিত্যাগকারীর প্রতি হুঁশিয়ারি : কোরআনের একাধিক আয়াতে কোরআন পরিত্যাগকারীর প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘এক কিতাব, বিশদভাবে বিবৃত হয়েছে এর আয়াতগুলো, আরবি ভাষায় কোরআন, জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী। কিন্তু বেশির ভাগ লোক মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। সুতরাং তারা শুনবে না। ’ (সুরা: হা-মিম সাজদা, আয়াত : ৩-৪)

অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি আমার কাছ থেকে তোমাকে দান করেছি উপদেশ। যে এটা (কোরআন) থেকে বিমুখ হবে সে কিয়ামতের দিন মহাভার বহন করবে। তাতে তারা স্থায়ী হবে এবং কিয়ামতের দিন এই বোঝা তাদের জন্য হবে কত মন্দ। ’ (সুরা: তাহা, আয়াত : ৯৯-১০১)

কোরআন পরিত্যাগের নানা দিক : আল্লামা ইবনুল কায়্যিম ঝাওজি (রহ.) বলেন, কোরআন পরিত্যাগের নানা দিক আছে। তা হলো—

১. কোরআন শ্রবণ ও তার প্রতি ঈমান পরিত্যাগ করা।

২. কোরআনের হালাল ও হারাম সংক্রান্ত বিধানগুলো জানা ও তার ওপর আমল পরিহার করা। যদিও ব্যক্তি কোরআন তিলাওয়াত করে এবং তার প্রতি বিশ্বাস রাখে।

৩. কোরআনকে আইনের উৎস হিসেবে গ্রহণ না করা এবং কোরআনের বিধানগুলোকে অর্থহীন মনে করা।

৪. কোরআন নিয়ে চিন্তা ও গবেষণা ত্যাগ করা।

৫. আত্মার রোগের প্রতিকারে কোরআনি চিকিৎসা পরিত্যাগ করা।

উল্লিখিত সব দিক নিম্নোক্ত আয়াতের অন্তর্ভুক্ত। যদিও তার কোনো কোনোটি বেশি গুরুতর। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে আমার প্রতিপালক, আমার সম্প্রদায় তো এই কোরআনকে পরিত্যাজ্য মনে করে। ’ (সুরা ফোরকান, আয়াত : ৩০; আদ-দাউল মুনির আলাত-তাফসির : ৪/৩৯৬)

মুমিনের করণীয় : কোরআন পরিত্যাগের পাপ থেকে বাঁচতে মুমিনের করণীয় হলো—

১. তিলাওয়াত করা : মহান আল্লাহ কোরআন তিলাওয়াতের নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ‘তুমি আবৃত্তি কোরো কিতাব থেকে, যা তোমার প্রতি প্রত্যাদেশ করা হয়। ’ (সুরা: আনকাবুত, আয়াত : ৪৫)

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা কোরআন তিলাওয়াত করো। কেননা কিয়ামতের দিন কোরআন তার ধারণকারীর জন্য সুপারিশ করবে। ’ (সহিহ মুসলিম, আয়াত : ৮০৪)

২. কোরআন শ্রবণ করা : কোরআন শ্রবণের ব্যাপারে কোরআনের নির্দেশনা হলো, ‘যখন কোরআন তিলাওয়াত করা হয়, তখন তোমরা তা শ্রবণ কোরো এবং চুপ থাকো। যেন তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হতে পারো। ’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ২০৪)

৩. চিন্তা ও গবেষণা করা : পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘এক কল্যাণময় কিতাব, এটা আমি তোমার প্রতি অবতীর্ণ করেছি, যাতে মানুষ এর আয়াতগুলো অনুধাবন করে এবং বোধশক্তিসম্পন্ন ব্যক্তিরা গ্রহণ করে উপদেশ। ’ (সুরা: সাদ, আয়াত : ২৯)

৪. আমল করা : কোরআন মানবজাতির জন্য পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান। সুতরাং মুমিন শুধু তা পাঠ করবে না; বরং তার ওপর আমলও করবে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘এই কিতাব আমি অবতীর্ণ করেছি, যা কল্যাণময়। সুতরাং তার অনুসরণ কোরো এবং সাবধান হও, তাহলে তোমাদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করা হবে। ’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ১৫৫)

৫. কোরআনের চিকিৎসা গ্রহণ : পবিত্র কোরআনে আল্লাহ মানুষের আত্মিক ও শারীরিক রোগের আরোগ্য রেখেছেন। তাই কোরআনের চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। আল্লাহ বলেন, ‘আমি অবতীর্ণ করি কোরআন, যা মুমিনদের জন্য আরোগ্য ও রহমত। কিন্তু তা অবিচারকারীদের ক্ষতিই বৃদ্ধি করে। ’ (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৮২)

অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘বলুন! তা হলো মুমিনদের জন্য সুপথ ও আরোগ্য স্বরূপ। ’ (সুরা : ফুসসিলাত, আয়াত : ৪৪)

৬. বিচার করা : ইসলামী রাষ্ট্রের আইনের প্রধান উৎস হবে কোরআন। কোরআনের আলোকেই পরিচালিত হবে মুসলিম সমাজের বিচারব্যবস্থা। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি তো তোমার প্রতি সত্যসহ কিতাব অবতীর্ণ করেছি, যাতে তুমি আল্লাহ তোমাকে যা জানিয়েছেন সে অনুসারে মানুষের মধ্যে বিচার মীমাংসা করো এবং বিশ্বাস ভঙ্গকারীদের সমর্থনে তর্ক কোরো না। ’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১০৫)

আল্লাহ সবাইকে কোরআনের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএম

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।