শান্তা আনোয়ার: সতীদাহ প্রথা উচ্ছেদের জন্য বৃটিশ শাসনকে কৃতিত্ব দেয়া হয়। অথচ ভবানীপ্রসাদ সাহু তার একটি গবেষণামুলক গ্রন্থে লিখেছেন, তুগলক রাজবংশের সুলতান মুহম্মদ বিন তুঘলক (রাজত্ব: ১৩২৫-১৩৫১) প্রথম শাসক, যিনি সতীদাহ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। তিনি আইন করেন, যে মহিলা ‘সতী’ হতে চাইতেন, তার জন্য তাকে সরকারী অনুমতি নিতে হবে। ফলে জোর করে বা কারো ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো মহিলাকে ‘সতীদাহ প্রথার নামে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা বন্ধ করার প্রচেষ্টা হিসেবে এটাকে চিহ্নিত করা যায়।
এখানে বলে রাখা ভালো, সতীদাহ প্রথা হচ্ছে হিন্দু ধর্মাবলম্বী বিধবা নারীদের স্বামীর চিতায় সহমরণে বা আত্মহুতি দেবার ঐতিহাসিক প্রথা। সংস্কৃত সতী শব্দটি আক্ষরিক অর্থে এমন সতীসাধ্বী রমণীকে বোঝায়, যিনি তার স্বামীর প্রতি চূড়ান্ত সততা প্রদর্শন করেন এবং তার আত্মীয়-স্বজনদের প্রতিও থাকেন সত্যনিষ্ঠ।
আরও পড়তে পারেন-
- উলামায়ে কেরামের প্রতি মুফতি শফী (রাহ.)এর দরদমাখা নসিহত
- কম্পিউটার চিপ শিল্প: জলবায়ুর উপর ফেলছে ভয়ঙ্কর প্রভাব
- ইরানি বিজ্ঞানীকে যেভাবে হত্যা করে ইসরায়েল
- ব্যতিক্রমী এক ইসলামী আইন গবেষক
- ইবাদতের গুরুত্ব নিয়ে ঠাট্টা-তাচ্ছিল্য জঘন্য গুনাহ
যাইহোক কথায় আসা যাক, তুঘলকি কাণ্ড বলে মুহম্মদ বিন তুঘলকের বিরুদ্ধে যে অপবাদ আছে তার মধ্যে সতীদাহ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টাও একটা কারণ ছিলো।
সম্রাট আকবর তাঁর কোতোয়ালদের নির্দেশ দিয়েছিলেন যে, কোনো মহিলাকে যাতে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ‘সতী’ না করা হয়। আকবর জয়মাল নামের একজন মহিলাকে সতীদাহ থেকে বাঁচিয়েছিলেন এবং তার পুত্রকে কারাদণ্ড দিয়েছিলেন। কারণ সে তার মাকে জোর করে ‘সতী’ করতে চেয়েছিলো।
গভর্নর ও প্রাদেশিক শাসনকর্তাদের প্রতি আকবরের নির্দেশ ছিলো, কারো ‘সতী’ হওয়ার আগে যাতে সরকারী অনুমতি নেওয়া হয়। গভর্নর প্রথমে তাকে ‘সতী’ না হওয়ার জন্য বোঝাতেন। সতী হতে না চাইলে মহিলার পরিবার সেই মহিলাকে ত্যাগ করলে তার জন্য সরকার থেকে মাসোহারার বন্দোবস্ত করা হতো। কোনো মহিলার ছোট বাচ্চা থাকলে তাকে সহমরণের অনুমতি দেওয়া হতো না।
তবে সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং বিষয় হচ্ছে, সম্রাট আওরঙ্গজেব হচ্ছেন প্রথম বাদশাহ, যিনি তাঁর সাম্রাজ্যে সতীদাহ প্রথা আইন করে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন ১৬৬৪ খ্রিস্টাব্দে। বৃটিশদের কোনভাবেই এই জন্য কৃতিত্ব দেয়া যায় না।
– শান্তা আনোয়ার, লেখক ও সমাজ কর্মী।
উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ