Home মহিলাঙ্গন ইসলামের আলোকে পুণ্যবতী নারীর পরিচয় ও পরকালে তাদের পুরস্কার

ইসলামের আলোকে পুণ্যবতী নারীর পরিচয় ও পরকালে তাদের পুরস্কার

- আল্লামা মুফতি জসিম উদ্দীন।

।। আল্লামা মুফতি জসিম উদ্দীন ।।

নবী (সা.) কর্তৃক উত্তম নারীর পরিচয়

হযরত আবু হুরায়রা (রাযি.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.)এর নিকট ‘কোন্ মহিলাটি সব চেয়ে উত্তম’ জানতে চাওয়া হলে উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সা.) বর্ণনা করলেন, যে স্ত্রী স্বামীকে দেখলে খুশি করে দেয়। যখন স্বামী তাকে কোন কাজ করতে বলে, স্বতঃস্ফূর্তভাবে সে তা পালন করে, নিজের ইজ্জতের হেফাযত করে এবং স্বামীর অনুমতি ছাড়া তার কোন অর্থ-সম্পদ খরচ করে না।

হযরত আনাস (রাযি.) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, উত্তম মহিলা সে, যে গুনাহ থেকে পাক-পবিত্র থাকে, নিজের আত্মা ও ইজ্জতকে হেফাযত করে এবং নিজ স্বামীকে অতিব মুহাব্বত করে।

হযরত আবু হুরাইরা (রাযি.) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, উটের উপর আরোহণকারী (আরবের) মহিলাদের মধ্যে উত্তম মহিলা কোরাইশ বংশীয় মহিলারা। কারণ, তারা ছোট বাচ্চাদেরকে আদর-যত্ন করে, স্বামীর মালকে হিফাজতকারী হয়। ছোট বাচ্চাদেরকে আদর-যত্ন করার অর্থ হল তাদেরকে দুধ পান করানো, তাদের পায়খানা-প্রস্রাব ধুয়ে দেওয়া, উত্তম উপায়ে তাদেরকে লালন পালন করা।

স্বামীর আনুগত্যের কারণে স্ত্রীর পিতার গুনাহ মাপ হয়ে যায়

এক সাহাবী কোন কাজে ঘর থেকে বের হওয়ার সময় স্বীয় স্ত্রীকে বললেন, ঘরের বাইরে যাবে না। সে ঘরের নিচ তলায় উক্ত স্ত্রীর পিতা অবস্থান করত। পরবর্তীতে উক্ত মহিলার পিতা অসুস্থ্য হয়ে গেলে সে রাসূলুল্লাহ (সা.)এর খেদমতে লোক পাঠালেন ঘর থেকে বের হয়ে তার পিতাকে দেখার অনুমতির জন্য। রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করলেন, তোমার স্বামীর কথা মান্য করে বের হয়ো না। অতঃপর তার পিতা মারা গেলে সে রাসূলুল্লাহ (সা.)এর নিকট তার পিতাকে শেষ বারের মত দেখার অনুমতির জন্য লোক পাঠালেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, তোমার স্বামীর কথা মেনে ঘর থেকে বের হয়ো না। তারপর রাসূলুল্লাহ (সা.) ঐ মহিলার প্রতি এই সংবাদ পাঠালেন যে, সে তার স্বামীর কথা মেনে ঘরের বাইরে না যাওয়ার কারণে আল্লাহ তার পিতার মাগফিরাত করেছেন।

আরও পড়তে পারেন-

মাসআলাঃ স্বামীর বিশেষ অসুবিদা না হলে এবং দ্বীনি ক্ষতিও না হলে স্ত্রীকে মাতা-পিতার সাথে সাক্ষাতের জন্য প্রতি সপ্তাহে অনুমতি দেওয়া উচিত। নিকটবর্তী আত্মীয় স্বজনের সাথে সাক্ষাতের জন্য স্ত্রীকে বৎসরে অন্ততঃ একবার অনুমতি দেওয়া চাই এবং  প্রয়োজনে তার চেয়েও বেশি দিতে পারে।

একজন পুণ্যবতী নারী সত্তর জন সিদ্দিকীনের সমতুল্য

হযরত ওমর ফারুক (রাযি.) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, একজন পুণ্যবতী মহিলার আমল সত্তর জন সিদ্দিকীনের আমলের সমান। অন্যদিকে একজন বদকার ফাজেরার বদআমল হাজার জন বদকার ফাজেরার আমলের মত। নেক্কার মহিলা বলা হয়- যারা আল্লাহর উপর ঈমান রাখে, ফেরেস্তাদেরকে আল্লাহর মাখলুক স্বীকার করে, আল্লাহর কিতাব সমূহের উপর বিশ্বাস রাখে, কুরআন মজিদকে সর্বশেষ কিতাব ও সম্পূর্ণ আছে বিশ্বাস করে। আল্লাহর রাসূল সমূহের উপর ঈমান রাখে। আমাদের রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সর্বশেষ নবী ও ক্বিয়ামত পর্যন্ত আর কোন নবী রাসূল আসবে না বলে বিশ্বাস করে, আখেরাতের উপর বিশ্বাস রাখে, জান্নাত-জাহান্নাম, পুলসিরাত, কবর আযাব, হক্ব বিশ্বাস করে। তাকদিরের উপর ঈমান রাখে, অর্থাৎ- ভাল-মন্দ সব তাক্বদীরে লেখা আছে, আল্লাহর পক্ষ থেকে হয় এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে যা হয় তার উপর রাজী থাকে এবং মৃত্যুর পর পুনর্বার জীবিত হওয়ার উপর বিশ্বাস করে। পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করে রমযান শরীফের রোযা রাখে।

হজ্ব ও যাকাত আদায় করে, যিকির, তিলাওয়াত, দান-সদকা করে, স্বামীর অনুস্মরণ করে, স্বামীর মাল ও নিজ আত্মাকে গুনাহের কাজ হতে হিফাযত করে। মুখে ও হাতে কাউকে কষ্ট দেয় না, হারাম ভক্ষণ থেকে বেঁচে থাকে, পরের হক্ব নষ্ট করে না, গীবত করে না, চোগলখোরী করে না, অপবাদ দেয় না, মিথ্যা বলে না, পর্দার হুকুম অমান্য করে না, স্বামী ও মাহরামদেরকে দ্বীনের কাজে সহযোগিতা করে, নিজে দ্বীনের উপরে চলে, অন্যকে দ্বীনের উপর চালানোর চেষ্টা করে। কাউকে অভিশাপ দেয় না, কাউকে খোঁটা দেয় না, ঝগড়া-ফাসাদ করে না, পরহিংসা, দুশমনী, যাদু-টোনা থেকে বেঁচে থাকে। গান-বাদ্য, বাজনা-সিনেমা ও টিভি থেকে বেঁচে থাকে। রাসূল (সা.) নেক্কার মহিলাদেরকে ঐ কাকের সাথে তুলনা করেন, যে কাকের একটি ডানায় সাদা রঙ থাকে। অর্থাৎ- সেই কাক যেমন খুব কম পাওয়া যায়, নেক্কার দ্বীনদার মহিলাও কম পাওয়া যায়।

লেখকঃ উস্তাদুল হাদীস ওয়াল ফিক্বহ এবং সহকারী পরিচালক- আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।