Home ইতিহাস ও জীবনী শান্তির বার্তা নিয়ে পৃথিবীতে আগমন করেন রহমাতুল-লিল-আলামিন (সা.)

শান্তির বার্তা নিয়ে পৃথিবীতে আগমন করেন রহমাতুল-লিল-আলামিন (সা.)

- মাওলানা আব্দুচ্ছালাম।

।। মাওলানা আব্দুচ্ছালাম ।।

রবিউল আউয়াল আরবি হিজরি চান্দ্রবর্ষের তৃতীয় মাস। রবি অর্থ বসন্তকাল, আউয়াল অর্থ প্রথম; রবিউল আউয়াল অর্থ প্রথম বসন্ত। রবিউস সানি মানে দ্বিতীয় বসন্ত বা বসন্তের দ্বিতীয় মাস। সেকালে আরব দেশে রবিউল আউয়াল ও রবিউস সানি—এই দুই মাস মিলে ছিল বসন্তকাল। বসন্ত ঋতু হলো পত্রপল্লবে সুশোভিত ঋতুরাজ।

এমনি এক মোহনীয় সময়ে জগদ্বাসীর জন্য প্রশান্তির বারতা নিয়ে পৃথিবীতে শুভাগমন করলেন রহমাতুল লিল আলামিন তথা সমগ্র বিশ্বজগতের জন্য রহমত ও করুণার আকর মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)। সঙ্গে নিয়ে এলেন সভ্যতার বসন্তকাল।

সেদিন ছিল সোমবার। আজও মদিনাবাসী সপ্তাহে সোমবারে রোজা পালন করেন, শরিফে মসজিদে নববিতে করা হয় ইফতারের বিশেষ আয়োজন। নবী করিম (সা.) সোমবার রোজা পালন করতেন। সাহাবিগণ জানতে চাইলেন, হুজুর, আপনি কেন প্রতি সোমবার রোজা পালন করেন? নবীজি (সা.) উত্তরে বললেন, সোমবারেই আমার জন্ম হয়েছিল; তাই এই দিনটিতে আমি রোজা পালন করে আল্লাহ তাআলার শুকরিয়া জ্ঞাপন করি।

৫৭০ খ্রিষ্টাব্দের ২০ এপ্রিল, আজ থেকে প্রায় ১৪৪৪ সৌরবর্ষ পূর্বে হজরত মুহাম্মদ (সা.) এই ধরাধামে আগমন করেন। তখন চলছিল আইয়ামে জাহিলিয়াত, মানে অন্ধকার যুগ। অজ্ঞানতা, মূর্খতা, কুসংস্কার ও দুর্নীতি, পাপাচারে লিপ্ত ছিল জাজিরাতুল আরব বা আরব উপদ্বীপবাসী। এ সময় জ্ঞানের আলো নিয়ে, মুক্তির বাণী নিয়ে স্বর্গ থেকে মর্তে্য নেমে এলেন মানবতার মহান বন্ধু হজরত মুহাম্মদ (সা.)। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘কাদ জাআকুম মিনাল্লাহি নূরুঁ ওয়া কিতাবুম মুবিন’ অর্থাৎ ‘তোমাদের কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে আলোকজ্যোতি ও মহাগ্রন্থ এসেছে’। (আল–কোরআন, পারা: ৬, পৃষ্ঠা: ১১১/৯ হা., সূরা-৫ আল মায়িদাহ, আয়াত: ১৫)। সে মহাগ্রন্থ আল কোরআন এবং আল–কোরআনের বাস্তব রূপ হলেন আল্লাহর হাবিব মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সা.)।

তিনি এলেন শুক্লপক্ষে, রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখে। পুণ্যময় পূর্ণিমা শশীর পূর্ণ আলোয় আলোকিত করতে বিশ্বজগৎকে। এসেছেন তিনি প্রভাতে। সেই বর্বর যুগের পশুসুলভ জীবনাচার ও জুলুম-নির্যাতন এবং সামাজিক অন্যায়-অবিচারের তমসা হতে মানবতাকে সভ্যতার আলোর দিকে এগিয়ে নিতে; তিনি ভোরের সমীরণ প্রবাহ সঙ্গে নিয়ে, প্রভাত রবির রক্তিম আভায়, উষার আকাশে উদিত হলেন মুক্তির দূত রূপে।

তাঁর শত–সহস্র গুণবাচক নামের একটি হলো মুআল্লিম অর্থাৎ শিক্ষক। সত্যিই তিনি ছিলেন বিশ্বশিক্ষক। তিনি শিখিয়েছেন ভালোবাসা, শিখিয়েছেন ভ্রাতৃত্ব ও সাম্য, শিখিয়েছেন মানুষের প্রতি মানুষের অধিকার ও কর্তব্য। সর্বোপরি আরও শিখিয়েছেন ‘সৃষ্টির সেবা ও স্রষ্টার ইবাদত’। সেই মহামানবের আগমন বার্তা কোরআন কারিমে ঘোষণা করা হয়েছে এভাবে, ‘অবশ্যই তোমাদের মধ্য হতেই তোমাদের নিকট এক রাসুল এসেছেন। তোমাদিগকে যাহা বিপন্ন করে উহা তাঁর জন্য কষ্টদায়ক। তিনি তোমাদের মঙ্গলকামী, মুমিনদের প্রতি তিনি দয়ার্দ্র ও পরম দয়ালু। অতঃপর উহারা যদি মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে আপনি বলুন, আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট, তিনি ব্যতীত অন্য কোনো ইলাহ নেই। আমি তাঁরই ওপর নির্ভর করি এবং তিনি মহা আরশের অধিপতি।’ (আল–কোরআন, পারা: ১১, পৃষ্ঠা: ২০৮/৬ হা., সূরা-৯ তাওবা, আয়াত: ১২৮-১২৯)।

আরও পড়তে পারেন-

মহান আল্লাহ বলেন, ‘মুহাম্মদ (সা.) একজন রাসুল; তাঁর পূর্বে বহু রাসুল গত হয়েছেন। সুতরাং যদি তিনি ইন্তেকাল করেন অথবা শাহাদত বরণ করেন, তবে তোমরা কি পৃষ্ঠ প্রদর্শন করবে? এবং কেহ পৃষ্ঠ প্রদর্শন করলে সে কখনো আল্লাহর ক্ষতি করবে না; বরং আল্লাহ শীঘ্রই কৃতজ্ঞদিগকে পুরস্কৃত করবেন।’ (আল–কোরআন, পারা: ৪, পৃষ্ঠা: ৬৯/৭ হা., সূরা-৩ আলে ইমরান, আয়াত: ১৪৪)। ‘মুহাম্মদ (সা.) তোমাদের মধ্যে কোনো পুরুষের পিতা নহেন; বরং তিনি আল্লাহর রাসুল এবং সর্বশেষ নবী। আল্লাহ সর্ব বিষয়ে সর্বজ্ঞ।’ (আল–কোরআন, পারা: ২২, পৃষ্ঠা: ৪২৪/২ হা., সূরা-৩৩ আহযাব, আয়াত: ৪০)।

‘মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রাসুল; তাঁর সহচরগণ কাফিরদের প্রতি কঠোর এবং নিজেদের মধ্যে পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল; আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনায় আপনি তাহাদিগকে রুকু ও সিজদায় অবনত দেখবেন। তাদের লক্ষণ তাদের মুখমণ্ডলে সিজদার প্রভাব পরিস্ফুট থাকবে: তাওরাতে তাদের বর্ণনা এইরূপ এবং ইঞ্জিলেও তাদের বর্ণনা এইরূপই। তাদের দৃষ্টান্ত একটি চারাগাছ, যা হতে নির্গত হয় কিশলয়, অতঃপর ইহা শক্ত ও পুষ্ট হয় এবং পরে কাণ্ডের ওপর দাঁড়ায় দৃঢ়ভাবে, যা চাষির জন্য আনন্দদায়ক। এইভাবে আল্লাহ মুমিনদের সমৃদ্ধি দ্বারা কাফিরদের অন্তর্জ্বালা সৃষ্টি করেন। যারা ইমান আনে ও সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাহাদিগকে প্রতিশ্রুতি দিয়াছেন ক্ষমা ও মহা পুরস্কারের।’ (আল–কোরআন, পারা: ২৬, পৃষ্ঠা: ৫১৬/১৪ হা., সূরা-৪৮ ফাৎহ, আয়াত: ২৯)। ‘যারা ইমান আনে, সৎকর্ম করে এবং মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তাতে বিশ্বাস করে, আর উহাই তাদের প্রতিপালক হতে প্রেরিত সত্য, তিনি তাদের মন্দ কর্মগুলো বিদূরিত করবেন এবং তাদের অবস্থা ভালো করবেন।’ (আল–কোরআন, পারা: ২৬, পৃষ্ঠা: ৫০৮/৬ হা., সূরা-৪৭ মুহাম্মদ, আয়াত: ২)।

তিনি মহান প্রভুর সর্বাধিক প্রশংসাকারী ‘আহমাদ’। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘স্মরণ করো, মারইয়াম তনয় ঈসা (আ.) বলেছিল, “হে বনি ইসরাইল! আমি তোমাদের নিকট আল্লাহর রাসুল এবং আমার পূর্ব হতে তোমাদের নিকট যে তাওরাত রয়েছে, আমি তার সর্বাধিক সমর্থক এবং আমার পরে আহমাদ নামে যে রসুল আসবেন, আমি তাঁর সুসংবাদদাতা।”’ (আল–কোরআন, পারা: ২৮, পৃষ্ঠা: ৫৫৩/১১ হা., সূরা-৬১ সফ, আয়াত: ৬)।

তিনি কামলিওয়ালা। প্রিয় বন্ধু হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে তাঁর মহান বন্ধু আল্লাহ রাব্বুল আলামিন নানান অভিধায় অভিহিত করেছেন, বিভিন্ন বিশেষণে বিভূষিত করেছেন, বিবিধ সম্ভাষণে সম্বোধন করেছেন। আহ্বান করেছেন কখনো ‘তহা’, আবার কখনো ‘ইয়ািসন’। (আল–কোরআন, পারা: ১৬, পৃষ্ঠা: ৩১৩/১১ হা., সূরা-২০ তহা, আয়াত: ১; পারা: ২২, পৃষ্ঠা: ৪৪১/১৯ হা., সূরা-৩৬ ইয়ািসন, আয়াত: ১)। এসবের মাঝে পরিচিত তিনি ‘কামলিওয়ালা’ নবী তথা ‘মুযযাম্মিল’ ও ‘মুদ্দাছছির’। (আল–কোরআন, পারা: ২৯, পৃষ্ঠা: ৫৭৭ ও ৫৭৯/ ১৫ ও ১৭ হা., সূরা-৭৩ মুযযাম্মিল, আয়াত: ১ ও সূরা-৭৪ মুদ্দাছছির, আয়াত: ১)।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।