Home ধর্মতত্ত্ব ও দর্শন ইসলামে মুয়ানাকা এবং প্রচলিত বাড়াবাড়ি

ইসলামে মুয়ানাকা এবং প্রচলিত বাড়াবাড়ি

।। আল্লামা নূরুল ইসলাম ওলিপুরী ।।

মুসাফাহার ব্যাপারে যেসব অতিরঞ্জিত ও বাড়াবাড়ি করা হয় এর সামান্য বিবরণ আমার তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে উপরে ব্যক্ত করেছি। এ প্রসঙ্গে মুয়ানাকার বাড়াবাড়ি সম্পর্কেও সামান্য আলোকপাত করা দরকার মনে করি।

পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, সালামের আদান প্রদান যথাক্রমে সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ্ এবং ওয়াজিব হওয়ার ইসলামী বিধানে এ দু’টি হচ্ছে বাধ্যতামূলক। তার পরে হচ্ছে মুসাফাহা, অতঃপর মুয়ানাকার স্থান। এ দু’টি ঐচ্ছিক কাজ। সালাম করা না করার ব্যাপারে যেমন স্থান-কাল-পাত্রের প্রভেদ আছে, তেমনি মুসাফাহা এবং মুয়ানাকার বেলায় আরও গভীরভাবে স্থান-কাল-পাত্রের অবস্থা বিবেচনার প্রয়োজন আছে। যেমন যুবতী পর নারীর সাথে সালামের আদান প্রদান উভয়টাই নিষিদ্ধ। সুতরাং সেক্ষেত্রে মুসাফাহা-মুয়ানাকার তো কোন প্রশ্নই আসেনা। আর আপন মা-বোনের সাথে মুসাফাহা হয়ত একসময় করা যেতে পারে, কিন্তু মুয়ানাকা এখানেও নিষিদ্ধ। অনুরূপভাবে সালাম পরিচিত অপরিচিত নির্বিশেষে সবাইকে করার বিধান আছে। মুসাফাহাও অপরিচিতের সাথে করা যেতে পারে। কিন্তু অপরিচিতের সাথে মুয়ানাকার ব্যাপারটা বিশেষভাবে বিবেচ্য।

হযরত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবায়ে কিরামের যুগে পরিচিতদের মধ্যে মুয়ানাকার বিবরণ পাওয়া যায়। কিন্তু তারা কেউ অপরিচিতদের সাথে মুয়ানাকা করেছেন এমন বিবরণ আমি পেয়েছি বলে মনে পড়ে না। তদুপরি সে যুগটা ছিল সরলতার যুগ। বর্তমান যুগটা অত্যন্ত কপটতার যুগ। এ যুগে সাক্ষাতে শিষ্টাচারের বাহানায় অনেকেই অনেক রকম অঘটন ঘটিয়ে যাচ্ছে। সুতরাং এ যুগে অপরিচিতের সাথে মুয়ানাকা করতে যাওয়া রীতিমত চিন্তা-ভাবনার ব্যাপার। অথচ আমাকে অনেক সময়ই অনেক অপরিচিত ব্যক্তি মুয়ানাকা করতে বাধ্য করেন। হয়তবা আমাকে তিনি চিনেন। কিন্তু তাকেও আমি চিনি কিনা একথাটা ভাবতেও যেন তিনি নারাজ।

অথচ পরিচিতদের মধ্যেই মুয়ানাকা করার বিধান বাধ্যতামূলক নয়। যে ধরণের অপ্রস্তুত অবস্থায় ভক্তরা মুসাফাহার জন্য পীড়াপীড়ি করেন, অনুরূপ মুয়ানাকার বেলায়ও করেন। এর উদাহরণ দিয়ে শেষ করার উপায় নেই। কোন সময় আমার দু’হাত আবদ্ধ থাকা অবস্থায় জড়িয়ে ধরেন মুয়ানাকার জন্য। কখনও বা বসা এমনকি শায়িত অবস্থায়ই হয়ত জড়িয়ে ধরেন অথবা জোরে টান মেরে দাঁড় করিয়ে ফেলেন মুয়ানাকার জন্য। কোন কাজে রত অথবা বিশ্রামরত অবস্থায় এ বাড়াবাড়িটা অত্যন্ত বিরক্তিকর ও কষ্টকর। আর পূর্বেই বলা হয়েছে যে, মুসাফাহা-মুয়ানাকা না করলে গুনাহ্ হয় না। কিন্তু মানুষকে কষ্ট দিলে গুনাহ্ হয়। অনুরূপ আগন্তুক মেহমানকে ঘরে ঢুকার আগেই পথ রুখে লাইন করে দাঁড়িয়ে যান মুয়ানাকার জন্য। এ অবস্থাটাও মারাÍক কষ্টকর।

এক কথায় মুসাফাহা-মুয়ানাকার পূর্বে বিবেককে জিজ্ঞাসা করা দরকার যে, আমি যার সাথে এটা করতে যাচ্ছি, তিনিও এর জন্য প্রস্তুত আছেন কিনা এবং অপ্রস্তুত অবস্থায় করতে গেলে তার কোন অসুবিধা বা কষ্ট হচ্ছে কিনা। দুঃখের ব্যাপার হচ্ছে এতটুকু বিবেচনা করা তো দূরের কথা অসুবিধা এবং কষ্টের কথা উল্লেখ করতঃ বাঁধা দেয়া সত্ত্বেও জবরদস্তিমূলকভাবেই মুসাফাহা-মুয়ানাকা করার জন্যে উৎপীড়ন শুরু করা হয়। এটাও কি বাড়াবাড়ি নয়?

বুক মিলানো না কাঁধ মিলানো

আরো দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে আজকাল মুয়ানাকা কারীদের দু’একজন ছাড়া বাকী সবাই বুকে বুক মিলিয়ে চাপ দেন। এমনকি মুয়ানাকার সুন্নাতী নামটি পর্যন্ত বাদ দিয়ে অনেকেই বলেন, আসুন একটু বুকটা মিলাই। কী অভিনব বিকৃতি! অথচ বুক মিলানো সুন্নাত নয় এবং এর নাম মুয়ানাকাও নয়। বরং মুয়ানাকা শব্দের অর্থই হচ্ছে পরস্পরে কাঁধ মিলানো। আর এটাই সুন্নাত। যা সুন্নাত নয়, তার হিড়িক পড়ে গেছে। আর যা সুন্নাত তা যেন শিখতেও রাজী নয়। এ অবস্থাটাকে ধর্মে অনুরাগ বলা যায়, না ধর্মের নামে মাতলামি বলা যায়- তা ভেবে দেখা দরকার।

শুধু তাই নয়। বরং অনেকেই মুয়ানাকার ভঙ্গী করতঃ বুকে বুক মিলিয়ে এমন জোরে চাপ মারেন যে, রীতিমত ব্যথা পাওয়া যায়। কারো চাপের কারণে জামার বুতামের দ্বারা আর কখনো বা পকেটের কলমের দ্বারা বেশী ব্যথা পাওয়া যায়। অনেক সময় পকেটে রক্ষিত চশমাটা বুক মিলানোর দরূন চাপে বিনষ্ট হয়ে যায়। সবগুলি অবস্থাই আমার তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে বলছি। কিন্তু কেন? যে কাজ শিখতে রাজী নই, সে কাজ করতে যাব কেন? এসব ভক্তদেরকে বুঝাব কেমন করে? যাদেরকে বুঝালে বুঝতে রাজী নন, বাঁধা দিলে মানতে রাজী নন। অথচ তাদের এহেন অত্যাচার থেকে নিজেকে বাঁচাতে চাইলেও নারাজ হন।

একদা একজন ভাল জানা-শোনা লোক আমার সাথে মুয়ানাকা করতে অগ্রসর হলেন। ইতিমধ্যে আরেকজন আমাকে তার পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলছেন, তিনি নাকি আফগান মুজাহিদ। তখনকার আফগান মুজাহিদরা সরাসরি রাশিয়ান বাহিনীর মুকাবেলায় যুদ্ধ করত। কথিত এ আফগান মুজাহিদ মুয়ানাকার নামে আমাকে আলিঙ্গন করতঃ বুকে এমন জোরে চাপ মারলেন যে, আমার জিভ বের হয়ে যাওয়ার উপক্রম হল। ছেড়ে দেয়ার পরে আমি বললাম, ভাই! এটাকি মুয়ানাকা? উত্তরে তিনি বলেন, এটা জিহাদী মুয়ানাকা! জানিনা তিনি আমাকে শত্রু বাহিনীর কোন সদস্য ভেবেছিলেন কিনা। তা না হলে মুয়ানাকার নামে এমন অত্যাচার ইসলামী বিধানে আছে বলে আমার জানা নেই।

আদাবে মুলাকাত

ইসলামী বিধানে আদাবে মুলাকাত অর্থাৎ পারস্পরিক সাক্ষাতের অভিবাদন হচ্ছে সালাম বিনিময় ও মুসাফাহা-মুয়ানাকা। কিন্তু তা নীতিগতভাবে এবং বিশুদ্ধ পদ্ধতিতে হওয়া জরুরী। এভাবে যথারীতি সালাম বিনিময়ের পরে পরস্পরে কুশলাদির আদান প্রদান হতে পারে। এরই ভিত্তিতে আমরা সালাম বিনিময়ের পর একে অপরকে বলে থাকি, কেমন আছেন? ভাল আছেন কিনা ইত্যাদি। বিশেষতঃ আগন্তুক যদি মেহমান হয়ে থাকেন, তাহলে নিরাপদেই এলেন কিনা, আসার পথে কোন কষ্ট হল কিনা ইত্যাদি জিজ্ঞাসা করাও আদাবে মুলাকাতের অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু লক্ষ্য রাখতে হবে যে, এসব কথা-বার্তার আগে সালাম বিনিময় হতে হবে। একেই বলা হয়, আগে সালাম পরে কালাম। অর্থাৎ আগে সালাম পরে অন্য কথা। এটাই সালাম-কালামের আদব-কায়দার প্রাথমিক বিধান।

কিন্তু আমাদের দেশের কোন কোন এলাকা এমনও আছে, যেখানে আলেমদের কেউ মেহমান হিসাবে উপস্থিত হলেই এক শ্রেণীর লোকেরা তাবিজ-তুমার, ঝাড়-ফুঁক ইত্যাদির জন্য ভীড় জমায়। অবস্থা দেখলে মনে হয়, যেন এটা তাদের অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে। অথচ এগুলো কোন ইবাদত নয়, সুন্নাত নয়, তথা সাওয়াবের কাজ নয়। বরং এগুলো এক ধরণের চিকিৎসার পর্যায়ে পড়ে। এক হাদীসে উল্লেখ আছে, সূরায়ে ফাতিহা পড়ে ফুঁক দিলে মৃত্যু ছাড়া সকল রোগের চিকিৎসা হয়। (তিরমিযী শরীফ)। তবে এর জন্য শর্ত হল, যিনি পড়বেন তিনি আল্লাহ্র প্রিয় বান্দা হতে হবে। আর যিনি ফুঁৎকার গ্রহণ করবেন, তিনি আল্লাহর পবিত্র কালামের গুনাগুণের প্রতি পূর্ণ আস্থাশীল হতে হবে। (তাফ্সীরে নরুল কুরআন)। এজন্যই আমার মনে হয় তারা কোন আলেমকে পেলেই তার কাছে তাবীজ-তুমার, ঝাড়-ফুঁক, পানি পড়া, তেল পড়া ইত্যাদির জন্য ভীড় জমায়।

কিন্তু এখানেও প্রথম কথা হচ্ছে, এগুলো কোন ইবাদত নয়, বরং এসব হচ্ছে চিকিৎসা। এতে সরাসরি কোন সাওয়াবও নেই গুনাহ্ও নেই। হাঁ, যে কোন হালাল কাজ মহৎ উদ্দেশ্যে করলে আনুসাঙ্গিকভাবে তাতে সাওয়াব পাওয়া যায়, সেটা ভিন্ন কথা। কিন্তু তাই বলে সেগুলি কিন্তু সরাসরি সাওয়াবের কাজ নয়। এমনিভাবে ঝাড়-ফুঁক ইত্যাদি সরাসরি কোন সাওয়াবের কাজ নয়। তাই এগুলোর জন্য কোন আলেমকে পেলেই ভীড় জমাতে হবে এমন কোন কথা নয়। দ্বিতীয় কথা হচ্ছে, চিকিৎসা গ্রহণের জন্যও তো কিছু নিয়ম কানুন ও আদব কায়দা আছে। কোন ডাক্তার যদি ভিন্ন কোন কাজের জন্য কোথাও যান, তখন কি সেখানেই তার কাছে চিকিৎসার জন্য রোগীর দলের ভীড় জমানো উচিত হবে? কিছুতেই নয়।

অথচ একজন আলেমকে যারা আল্লাহর প্রিয় ব্যক্তি মনে করল, তাঁর প্রতি তাদের অন্তরে সর্বোচ্চ মর্যাদা ও ভক্তি আছে নিঃসন্দেহে। কিন্তু এ ভক্তির বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে অত্যন্ত অবমাননাকর পদ্ধতিতে। অর্থাৎ একজন আলেম ভিন্ন কোন কাজে আপনাদের এলাকায় মেহমান হয়ে এসেছেন, আপনাদের চিকিৎসার কাজে নয়। এমতাবস্থায় আপনারা নিজেদের চিকিৎসার জন্য তাঁর কাছে ভীড় জমাবেন, এটাতো একজন হাতুড়ে ডাক্তারের বেলায়ও সম্মানজনক নয়। এ সহজ কথাটা তো সাধারণ বিবেকেও সহজেই বুঝার কথা। অথচ একজন বিশিষ্ট আলেমের বেলায় এহেন আচরণ কি আদব-কায়দা পরিপন্থী নয়।

আমি খুব গভীরভাবে লক্ষ্য করেছি যে, এমন অভ্যাস যাদের আছে, তাদের অধিকাংশেরই মূলতঃ কোন রোগই নেই। বরং আলেম দেখলেই ঝাড়-ফুঁক চাওয়া তাদের অভ্যাসে পরিণত হয়ে আছে। এমনকি অনেককে আমি পরিস্কার ভাষায় জিজ্ঞাসা করেছি যে, তোমার কি রোগ হয়েছে? কিসের জন্য ফুঁক দিব বল। তখন কোন রোগের কথা স্বীকার করে না। এদের মধ্যে আবার অনেকেই আছে, যারা ঝাড়-ফুঁকের কথাও বলেনা। বলে আমাকে হাত বুলিয়ে দিন। কেউ বলে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিন। কেউ বলে আমার বুকে হাত বুলিয়ে দিন। কেউ বলে আমার পেটে, পিঠে, মাজায়, পায়ে ইত্যাদিতে হাত বুলিয়ে দিন। এদের উৎপাতে এদেরে হাত বুলাতে বুলাতে মূল কাজ বিঘিœত হয়ে পড়ে। অথচ সেটা তারা কিছুতেই বুঝতে রাজী নয়। বলুন তো, একজন ক্লান্ত পরিশ্রান্ত মেহমানের জন্য এসব ভক্তবৃন্দকে তৃপ্ত করা কি কষ্টকর ব্যাপার নয়?

এমনকি বিদায় বেলায় গাড়ী ছাড়ার সময় গাড়ীর গতিরোধ করে এরা ঘিরে ফেলে মেহমানের দ্বারা নিজেদের গায়ে হাত বুলিয়ে নেয়ার জন্য। এক পর্যায়ে মেহমান অতিষ্ট হয়ে হাত গুটিয়ে নিলে জোর করে মেহমানের হাত ধরে নিয়ে নিজের গায়ে বুলাতে থাকে। আমি বহুবার এভাবে ভুক্তভোগী হই। এটা কি রীতিমত এক অভিনব অত্যাচার নয়?

আর যাদের বাস্তবিকই কোন রোগ আছে, তাদের বেলায় আমার বুঝে আসে না যে, এটা কেমন রোগ যে, রোগের চিকিৎসার জন্য কোনদিন একজন আলেমের সন্ধানে যাওয়ার দরকার পড়েনি। অথচ তিনি অন্য কাজে আসার পরে চিকিৎসার জন্য দলে দলে ভীড় জমিয়ে মেহমানকে অতিষ্ট করে তোলার দরকার হল! কি আশ্চর্য এসব রোগী, আর কি অদ্ভুত এদের চিকিৎসা পদ্ধতি! যে কারণে একজন আলেমের সাথে আদাবে মুলাকাত বিঘিœত হয় আর ব্যবহার করতে হয় তার সাথে একজন হাতুড়ে ডাক্তারের চেয়েও নি¤œমানের। সর্বোপরি অপারগতা প্রকাশ করা সত্ত্বেও তাকে পীড়াপীড়ি করে কষ্ট দেয়া হয়। এটা কি গুনাহ্ নয়? এসব আচরণ আদাবে মুলাকাতের পরিপন্থী নয় কি?

আরও পড়তে পারেন-

মোটকথাঃ সালাম করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ্ এবং তার জবাব দেয়া ওয়াজিব, অর্থাৎ উভয়টাই বাধ্যতামূলক হওয়া সত্ত্বেও যদি স্থান-কাল-পাত্র ভেদে তার বিধান রহিত হয়ে যায়, তাহলে যে মুসাফাহা ও মুয়ানাকা সুন্নাতে যায়েদা অর্থাৎ ঐচ্ছিক হওয়া সত্ত্বেও স্থান-কাল-পাত্রের প্রভেদ না রেখে এর জন্য পীড়াপীড়ি করা, কারো জরুরী কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি করা, কষ্ট দেয়া, এমন কি অসুবিধার কথা ব্যক্ত করার পরও কাউকে মুসাফাহা-মুয়ানাকা করার জন্য বাধ্যতামূলক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা একদিকে ইসলামী বিধানের বেলায় বাড়াবাড়ি, অপরদিকে বিবেকহীনতা ও বোকামী ছাড়া আর কি হতে পারে?

আর তাবীজ-তুমার, ঝাড়-ফুঁক, তেলপড়া, পানি পড়া ইত্যাদি তো সরাসরি কোন সাওয়াবের কাজই নয়। এগুলির জন্য পীড়াপীড়ি করা, সময় সুযোগের তোয়াক্কা না করা তো আরও চরম বোকামী। বিশেষতঃ আমার বড়ই আশ্চর্য লাগে তখন, যখন কোন মেহ্মানকে তার জরুরী কাজের সময় নষ্ট করে দলে দলে লোকেরা এসে ভীড় জমিয়ে বলতে থাকে যে, আমাকে হাত বুলিয়ে দিন। আমি অনেককেই জিজ্ঞাসা করেছি যে, কি কারণে তোমাকে হাত বুলিয়ে দেব? তখন আর কিছু বলতে পারে না। এটা কি নিছক অভ্যাসগত আচরণ নয়?

আর যারা কোন রোগের জন্য বলে তাদেরও ভেবে দেখা উচিত যে, রোগের চিকিৎসাই যদি আমার উদ্দেশ্য হত, তাহলে আমি তার সন্ধানে না গিয়ে অন্য কাজের সময় তাকে ঘিরে বসলাম কোন বিবেকে? এছাড়া রোগী যখন চিকিৎসকের কাছে যায়, তখন কি রোগী চিকিৎসককে ঔষধ কোনটা দিবেন তার নাম বলে, না নিজের রোগের অবস্থা বলে? ঔষধ নির্বাচন করা তো চিকিৎসকের কাজ। রোগীর কাজ হচ্ছে চিকিৎসকের কাছে নিজের অবস্থা বলা। অথচ কোন একজন আলেমকে দেখলেই, কথা নেই বার্তা নেই, নিজের অবস্থার কোন বিবরণ নেই কেবল হাত বুলাবারই আবেদন। এটা কোন বিবেকের কা-? কি হয়েছে তোমার, তা তুমি বলবে না? তিনি হাত বুলাবেন, না কি করবেন এটা তুমি বলে দেবে! এটা কোন বিবেকের কা-? এসব আচরণ কি আদাবে মুলাকাতের পরিপন্থী নয়?

বিশেষতঃ কোন বিশিষ্ট আলেমের বেলায় তো আদব-কায়দা রক্ষা করার বিধান আরও কড়াভাবে আরোপিত হয়েছে শরীয়তে। শরীয়তের বিধানমতে বিশেষ কোন আলেম নিজের কোন আবদার নিয়ে যথায় তথায় পীড়াপীড়ি করা তো দূরের কথা বরং নিজের প্রয়োজনে তাঁর ঠিকানায় গিয়েও যখন তখন তাকে ডেকে বের করা বে-আদবী। বরং তিনি স্বেচ্ছায় বের হেয় আসলে পরে সাক্ষাতের অপেক্ষায় থাকাই হচ্ছে আদব। (দ্রঃ তাফ্সীরে মা আরিফুল কুরআন)।

বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আবু উবায়দা (রাযি.) বলেন, আমি কোন আলেমের সাক্ষাত কামনায় তাঁর বাসস্থানে গিয়ে কখনও দরজায় করাঘাত করিনি। বরং তিনি স্বেচ্ছায় যখন বের হয়ে আসবেন, তখন সাক্ষাতের অপেক্ষায় থাকি। (দ্রঃ তাফ্সীরে রূহুল মাআনী)।

আলেমগণ নবীগণের মত

এই মর্মে রয়ীসুল মুফাস্সিরীণ হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন আব্বাস (রাযি.)এর বর্ণনা আরও সুস্পষ্ট। তিনি বলেন, আমি যখন কোন আলেম সাহাবীর কাছে কোন হাদীস জানার জন্য তাঁর বাসস্থানে যাই, তখন তাঁর দরজায় করাঘাত করা থেকে সতর্কতার সাথে বিরত থাকি। বরং গেটের বাইরে বসে অপেক্ষারত থাকি। তিনি স্বেচ্ছায় বের হয়ে আমাকে অপেক্ষমাণ দেখে বলেন, হে রাসূলের চাচাত ভাই! আপনি দরজায় করাঘাত করতঃ আমাকে ডাকেননি কেন? জবাবে ইব্নে আব্বাস বলেন, আলেমগণ নিজেদের জাতির কাছে নবীর সমতুল্য। আর নবীর মর্যাদা বর্ণনায় আল্লাহ্ পবিত্র কুরআনে বলেছেন, তাঁকে সাক্ষাতের জন্য না ডেকে বরং তাঁর স্বেচ্ছায় বের হয়ে আসার অপেক্ষায় থাকার জন্য। (দ্রঃ সহীহ্ বুখারী শরীফের বরাতে তাফ্সীরে মাআরিফুল কুরআন)।

সুতরাং বাস্তবিকই যদি কোন রোগের চিকিৎসার জন্য কোন আলেমের শরণাপন্ন হতে হয়, তাহলে তাঁকে যথায়-তথায় ঘিরে বসাতো দূরের কথা, বরং তার বাসস্থানে গিয়েও তো সাক্ষাতের সুনির্দিষ্ট আদব-কায়দা রয়েছে। আল্লাহ্ আমাদের সকলকে সালাম-কালাম ও দেখা-সাক্ষাতের আদব-কায়দা বুঝার তাওফীক দান করুন। আমীন॥

লেখক: প্রখ্যাত আলেমে-দ্বীন, মুফাসসিরে কুরআন এবং জনপ্রিয় ইসলামী বক্তা।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।