Home সোশ্যাল মিডিয়া কেন একমাত্র আলজাজিরাই সফল, অন্যরা কেন নয়?

কেন একমাত্র আলজাজিরাই সফল, অন্যরা কেন নয়?

।। ইফতিখার জামিল ।।

মুসলিম বিশ্বের একমাত্র আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আলজাজিরার পঁচিশ বছর পূর্ণ হল। কেন একমাত্র আলজাজিরাই সফল, অন্যরা কেন নয়, এই প্রশ্ন নিয়ে কখনো ভেবেছেন?

অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক সংস্থানের কথা আমরা সবাই জানি। এর পাশাপাশি আরও দুটি বিষয়ের কথা সামনে আনতে হবে। কেননা নিছক অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক সক্ষমতা থাকলেই গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠা করা যায় না।

ক) ইখওয়ানি চিন্তা-নেতৃত্ব। আলজাজিরার নীতিনির্ধারণী বিষয়গুলো প্রধানত ইখওয়ানি চিন্তা ও ব্যক্তিত্বের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত। ইখওয়ানের নানারকম সীমাবদ্ধতা আছে, সেটা আমরা সবাই জানি। আবুল হাসান আলী নাদাবি এ বিষয়ে ছোট পুস্তিকাও লেখেছেন। তবে এসব সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও ইসলামপন্থী নেতৃত্বরাই মধ্যপ্রাচ্যের চিন্তা ও সক্রিয়তায় প্রধান নেতৃত্ব দিয়েছেন।

এখানে বলে রাখা ভালো, ফিকাহ ও ফিকির এক বিষয় নয়। অনেক দক্ষ মুত্তাকি আলেম চিন্তাগতভাবে পিছিয়ে থাকতে পারেন, আবার অনেক চিন্তাবিদকেও সহজ মাসায়েলে ভুল করতে দেখবেন। রমাজান বুতি দেখান, ফিকাহ ও ফিকির, এ দুটি শাখায় পার্থক্য করা জরুরী। আশরাফ আলী থানবির ফিকহি দক্ষতা অসামান্য, আবুল হাসান আলী নাদাবি ফিকাহ বিষয়ক বিশেষ কোন কিতাব লেখেননি, তার দক্ষতা ফিকিরে-চিন্তায়।

আরও পড়তে পারেন-

একটু তলিয়ে বুঝতে হবে। সাইদ ফুদা ও সাইয়েদ কুতুব একইসাথে আমার প্রিয় ব্যক্তিত্ব। আমি জানি, সাইদ ফুদার দৃষ্টিতে সাইয়েদ কুতুবের ফিকহি চিন্তায় অনেক রকম সীমাবদ্ধতা আছে, তবে সাইয়েদ কুতুবের ভাষা-বয়ান ছাড়া কি বিপ্লব করা সম্ভব, কুতুবের মাআলিম ফিত তরিক পড়লে যে বুকে ধকধক করে উঠে, তার তুলনা কোথায় পাবেন? যদি নৈরাজ্য শুরু হয়, তবে সাইদ ফুদারাই বিপর্যয় ঠেকাতে সক্ষম। আমার কাছে সাইদ ফুদা ও সাইয়েদ কুতুব তাই প্রতিপক্ষ নন, পরিপূরক।

খ) সেকুলার পেশাদারিত্ব। আলজাজিরা আরববিশ্বের দক্ষ দক্ষ সংবাদকর্মীকে উঠিয়ে নিয়ে আসে, মেধাবীরা সেকুলার হলেও তাদেরকে উঠিয়ে আনতে কোন রকম দ্বিধা করা হয়নি। বিশেষত ইংরেজি শাখা অনেকটাই ‘সেকুলারদের’ মাধ্যমে পরিচালিত। আপনি প্রশ্ন করতে পারেন, কেন ইসলামপন্থী সাংবাদিকদের নেওয়া গেলো না, উল্টোভাবেও প্রশ্ন করা যায়, কেন সেকুলারদেরকেই নিতে হল?

আল জাজিরা ইংলিশের প্রধান আফ. গান সাংবাদিক একজন খৃস্টান নারী। আলজাজিরা কি মুসলিম পুরুষ সাংবাদিক খুঁজে বের করতে পারত না? অবশ্যই পারত। তবে ইংরেজি ভাষাভাষী জনতার কাছে খৃস্টান নারী সাংবাদিকের ভাষা, যুক্তি ও উপস্থাপনাই অধিক পছন্দনীয় হবে, তাই না? মনে রাখবেন, সংবাদপত্রের উদ্দেশ্য মতামত প্রচার, সম্মতি উৎপাদন। এটা কৌশলগত বিষয়, সাধারণ নৈতিকতা দিয়ে এসব বুঝা যাবে না। একে বুঝতে হবে কৌশলগত দৃষ্টিকোণ থেকে। বেতন ও নীতিনির্ধারণ গছিয়ে দিয়ে একজন ‘সেকুলার-দক্ষ সাংবাদিক থেকে যে কাজটা নিতে পারবেন, সেটা অদক্ষ-হুজুর সাংবাদিকের কাছে পাবেন না। তাদের জন্য প্রতিষ্ঠা করেন ধর্মীয় পত্রিকা, ফাজায়েল-মাসায়েলে’ তাদের কাজ।

ভুল বুঝবেন না, আমি কখনো ‘সেকুলারদের’ দিয়ে ফতোয়া দিতে আহ্বান জানাচ্ছি না। নীতিনির্ধারণী জায়গাতেও তাদেরকে রাখা যাবে না। পাশাপাশি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের আধুনিকীকরণেরও বিপক্ষে আমি। কেননা এতে ধর্ম ও ধর্মীয় চর্চার স্বাধীনতা-নিজস্বতা হারাবে। তবে নাগরিক পরিসরে আপনাকে অবশ্যই ‘চিন্তা’ ও ‘কৌশল’কে গুরুত্ব দিতে হবে। আলজাজিরার অভিজ্ঞতাকে নির্ভুল বা প্রশ্নহীন মনে করার কোন সুযোগ নেই। তবে পঁচিশ বছরের সমৃদ্ধ অভিজ্ঞতা থেকে শেখার আছে অনেককিছু।

– ইফতিখার জামিল, তরুণ সাংবাদিক, লেখক ও চিন্তক।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন