Home প্রবন্ধ-নিবন্ধ চিকিৎসা শাস্ত্রে মুসলমানদের অবদান: প্রেক্ষিত অনুবাদ চর্চা

চিকিৎসা শাস্ত্রে মুসলমানদের অবদান: প্রেক্ষিত অনুবাদ চর্চা

।। মাওলানা হাসান মুরাদ ।।

বিশ্বের সকল দেশে মুসলমানদে আবাসস্থল রয়েছে। মুসলমানদের ইসলাম সম্পর্কে মোটামোটি জ্ঞান থাকলেও বিজ্ঞান চর্চায় যে মুসলমানদের ব্যাপক অবদান রয়েছে তা সম্পর্কে তেমন অবগত নন।

মুসলমানদে ধর্ম গ্রন্থ কুরআনুল করিম আরবি ভাষায় নাযিল হয়। পরবির্ততে এটি বাংলা, ইংরেজি, ফারসি ও উর্দুসহ সহু ভাষায় অনূদিত হয়েছে। এই পবিত্র কুরআন গবেষণা করে বিশ্ব অনেক এগিয়ে গেছে, আবিষ্কৃত হয়েছে বহু রোগের প্রতিষেধক ও চিকিৎসা পদ্ধতি। পবিত্র কুরআনে ৭৮২টি বিজ্ঞান বিষয়ক আয়াতের মধ্যে ২২০টি চিকিৎসা বিজ্ঞান সংক্রান্ত।

যুগে যুগে মানুষ বহু কিছু আবিষ্কার করেছে। ইউরোপ যখন অন্ধকারে নিমজ্জিত, জ্ঞানের আলো থেকে বঞ্চিত, মুসলিম জনসমাজ তখন জ্ঞান- বিজ্ঞানের আলোকচ্ছটায় উদ্ভাসিত। নব নব উদ্ভাবনে তাদের চোখ-মুখ ছিল উজ্জ্বল ও দেদীপ্যমান। তারা ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চলে বয়ে নিয়ে যায় জ্ঞানের শিখা। আলোকিত করে তোলে অন্ধকারাচ্ছন্ন অঞ্চলকে। আর তখন ইউরোপ থেকে ছুটে আসে জ্ঞানানুরাগীরা দলে দলে মুসলিম অধ্যুসিত অঞ্চলে। মুসলিম জাতি এ জ্ঞান অর্জন করেছে কুরআন- হাদীস অনুশীলন করে। আর এ দু’টি বস্তুই তাদের উজ্জীবিত করেছে আবিষ্কার ও উদ্ভাবনের প্রতি। আল্লাহপাক তাঁর শেষ নবীকে প্রেরণ করেছেন সমগ্র জাহানের প্রতি। তিনি এসেছেন রহমত ও কল্যাণ নিয়ে,শান্তির বার্তা নিয়ে। পৃথিবীর প্রতিটি কোণে এ শান্তির আহ্বান পৌছিয়ে দেওয়া তাঁর উম্মতের দায়িত্ব। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন পত্রিকা, ৪৫ বর্ষ ১ম সংখ্যা)।

আল্লাহ তা’আলা মানব জাতিকে জ্ঞান ও বুদ্ধি দান করেছেন। জ্ঞানের বলেই মানষ আশরাফুল মাখলুকাত তথা আল্লাহর সেরা সৃষ্টি। মহানবী (সা) জ্ঞানানুশীলনের প্রতি সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করেছেন। তাঁর ওপর অবতীর্ণ কুরআন মজীদের জ্ঞানের মাহাত্ম্য তুলে ধরা হয়েছে। জ্ঞানীগণের মর্যাদা বর্ণনা করা হয়েছে। চিন্তা ও গবেষণার প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে। অজানা বস্তুকে জহনা এবয় অজ্ঞাত বস্তুকে আবিষ্কার করার প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে। কুরআন মজীদে আল্লাহ তা’আলা বলেন- ‘পাঠ করুন, আর আপনার প্রতিপাল মহামহিমান্বিত। যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন। শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে, যা সে জানতো না।’ (আল- কুরআন, সূরা আলাক- ৯৬: ৩-৫)।

বর্তমান সময়ের এক শ্রেণীর লোকের ধারণা, ইসলাম ও বিজ্ঞান পরস্পর বিরোধী। বিজ্ঞানের সাথে ইসলামের কোন মিল নেই এবং আধুনিক জ্ঞান- বিজ্ঞানে এর কোন ভূমিকা নেই। তারা অকপটে বলে থাকেন যে, বিশে^ও জ্ঞান- বিজ্ঞান, শিল্প, সাহিত্য ও সভ্যতার উন্নয়নে ইসলাম ও মুসলমানের কোন অবদান নেই। তাদেও মতে ইসলাম নিতান্তই একটি পুরানো আচার আচরণ এবয় এ জন্যই বর্তমান যুগে এর কোন প্রয়োজনীয়তা নেই। জনৈক এক সমালোচকের মন্তব্য- Do you want us to go back to the age when people lived in tents a thousand years ago? (Muhamad Qutb, Islam the Misunderstood Religion, Darul Bayan Bookshop, Kuwait,1964, p.255). অপরদিকে একজন মুসলিম লেখক তার গ্রন্থে আইনষ্টাইনের কথা উল্লেখ করে তুলে ধরেছেন- Science without religion is lame and religion without science is blind. (মুহাম্মদ নূরুল ইসলাম, বিজ্ঞান না কোরআন , মল্লিক ব্রাদার্স, কলকাতা, ১৯৯২, পৃ-৬)।

মুসলিম জাতির অতীত গৌরবোজ্জ্বল সোনালী দিনগুলো সম্পর্কে তাদেও জ্ঞানের দৈন্যতাই এ জন্য দায়ী। এমন এক সময় ছিল যখন জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিল্প, সাহিত্য ও সভ্যতার ক্ষেত্রে মুসলিম জাতি ছিল বিশে^র মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি। অপরদিকে ইউরোপীয়রা ছিল মূর্খ ও অন্ধকাওে নিমর্জ্জিত। আল্লাহর অসীম করুণায় মুসলিম জাতির মধ্যে অনেক মনীার জন্ম হয়েছিল। “তাদের মধ্যে কেউ ছিলেন দার্শনিক, মযাদ্দিদ, কেউ চিকিৎসা বিজ্ঞানী, কেউ ছিলেন অলী-দরবেশ, ধর্ম প্রচারক, ঐতিহাসিক, কেউ বা ছিলেন লিখক, কবি, সাহিত্যিক ।

এ সকল মনীষীরা মানব কল্যাণে পুরো জীবন জ্ঞান-সাধনা করে জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রায় সকল শাখায় অনেক কিছু আবিষ্কার কওে গেছেন। তাদের মৌলিক আবিষ্কারের উপরই বর্তমান জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রায় সকল শাখায় অনেক কিছু আবিষ্কার করে গেছেন। তাঁদের মৌলিক আবিষ্কারের উপরই বর্তমান জ্ঞান-বিজ্ঞানের অধিষ্ঠান।” (মাওলানা মোঃ ফজলুর রহমান আশরাফী, বিশে^র মুসলিম মনীষীদের কথা,রামপুরা ঢাকা, ১৯৯৫, পৃ-৬)।

রাসূল (সা) এর আবির্ভাবের বহু শতাব্দী পূর্বে থেকেই জ্ঞান- বিজ্ঞানের চর্চা করেছিলেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায় তবে ঐ যুগের বিজ্ঞান ছিল ভাবমূলক, অবাস্তবও দুর্বোধ্য; পরীক্ষামূলক বা গবেষণামূলক ছিলনা। পূর্ব আরবের বিশেষ মহলে উন্নতমানের কবিতার চর্চা থাকলেও সমাগ্রিকভাবে সেখানকার মানুষ পাপাচার, অন্যায়, অত্যাচার ও পারস্পরিক দ্বন্দ্ব করহে লিপ্ত থাকতো।

রাসূল (সা) এর অবির্ভাবের সময় গ্রীক, পারস্য, রোম, সিরিয়া, মিশর ও ভারতবর্ষে বিজ্ঞান ও দর্শনের অনুশীলন মোটামুটি স্থিমিত হয়ে যায় । কারণ এ সময় পাদ্রীরা বিজ্ঞান চর্চাকে শয়তানের কাজ মনে করত। তারা জ্ঞানকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করত।

ইসলাম পূর্বযুগে আরবজাতি বর্বর ও অসভ্য বলে পরিচিত ছিল। কিন্তু এ জাতির ইসলামের সংস্পর্শে আসার ফলে প্রায় সমগ্র বিশ্বের নেতৃত্ব অর্জন করে এবং জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় প্রভুত উন্নতি সাধন করে। মূলত ইসলামই মুসলমানদের জ্ঞান চর্চায় অনুপ্রাণিত করে।

আল কুরআনের অন্যতম নির্দেশ হলো আল্লাহ তা’আলার সৃষ্টি জগত সম্পর্কে জ্ঞান বুদ্ধি খাটিয়ে চিন্তা গবেষণা করা। কুরআনের ঘোষণা, “ তারা কি কুরআন সম্বন্ধে অনুধাবন করে না?” (সূরা নিসা, আয়াত- ৮২)।

অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন- “আকাশ ম-ল ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে, দিবস ও রাত্রির পরিবর্তনে নিদর্শনাবলী রয়েছে বোধশক্তি সম্পন্ন লোকের জন্য”। (সূরা আল-ইমরান, আয়াত- ১৯০)।

আল-কোরআনে আরও ঘোষণা করা হয়েছে, “তবে কি তারা দৃষ্টিপাত করেনা উটের দিকে, কিভাবে তাকে সৃষ্টিকরা হয়েছে? এবং আকাশের দিকে, কিভাবে তাকে উর্ধ্বে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে? এবং পর্বতমালার দিকে, কিভাবে তাকে স্থাপন করা হয়েছে? এবং ভূ-তলের দিকে, কিভাবে ওকে সমতল করা হয়েছে? ইসলামের দৃষ্টিতে জ্ঞান- বিজ্ঞানের উন্নতি সাধন করা মানুষের জন্য অবশ্য কর্তব্য। এভাবে আল্ কোরআনই মানব জাতিকে প্রাকৃতিক সস্তুসমূহের উপর গবেষণা করার প্রতি অনুপ্রেরণা যোগান। [চলবে]

– মাওলানা হাসান মুরাদ, শিক্ষক- বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ, আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম-হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।