Home শিক্ষা ও সাহিত্য কওমি মাদরাসা দ্বীন রক্ষার ফ্যাক্টরি: আল্লামা উবায়দুল্লাহ ফারুক

কওমি মাদরাসা দ্বীন রক্ষার ফ্যাক্টরি: আল্লামা উবায়দুল্লাহ ফারুক

- ফাইল ছবি।

রাসূলুল্লাহ (সা.)এর প্রতি আমাদের ঈমান আনা যেমন ফরয ঠিক তেমনি অন্য নবীদেরও রাসূল (সা.)-এর প্রতি ঈমান আনা ফরজ। নবুওয়তের আকাশে সূর্য হলেন মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। অন্যান্য নবীগণ হলেন নবুওয়তের আকাশের তারা। যারা রাসূলুল্লাহ (সা.) এর নূর দ্বারা আলোকিত হয়েছেন।

রাসূলুল্লাহ (সা.) সর্বশেষ নবী। তিনি যে ধর্ম নিয়ে এসেছেন এই ধমে মানব জীবনের সার্বিক দিক-নির্দেশনা, মানুষের দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ অকল্যাণের যা কিছু আছে সব কিছু আছে। দেড় হাজার বছর অতিবাহিত হলেও কোনো অমুসলিম এই প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারেনি যে, এই সমস্যার সমাধান ইসলামে না থাকার কারণে আমি অন্য জাতির মুখাপেক্ষী হয়েছি।

হিন্দ, খ্রিস্টান, বোদ্ধ , ইহুদি যে কোন ধর্ম বলেন, কোন ধর্মে মানব জীবনের সার্বিক দিক-নির্দেশনা নেই। কিছু পূজা পাঠ, পারিবারিক জীবন, বিয়ে-শাদী এই সীমিত বিষয়ের উপর প্রত্যেক ধর্ম। আমাদের ইসলাম ধর্মে অর্থনীতি, বিচার বিভাগ, সামাজিক মাসআলা-মাসায়েল, পারিবারিক মাসআলা-মাসায়েল, বিশ্বের সাথে কিভাবে চলবো, মুসলমানের সাথে কিভাবে আচরণ করবো, অন্য ধর্মের সাথে কি ব্যবহার করবো, শান্তি-শৃঙ্খলায় কিভাবে জীবন পরিচালনা করবো, কিভাবে রাষ্ট্রপরিচালনা করবো, সবকিছু আমাদের ইসলামে আছে। এমন কিছু কাল্পনিকও বের করতে পারবেন না যে সমস্যার সমাধান ইসলামে নেই। যার কারণে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) এর পরে আর কোন নবী আসার সুযোগ নেই।

এক লম্পট গোলাম আহমদ কাদিয়ানী। তাকে ব্রিটিশ ইংরেজরা নবী বানিয়েছে। ব্যক্তিগত জীবন অত্যন্ত নিকৃষ্ট। মুলত মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করার জন্যে তাকে নবী বানানো হয়েছে। যেন ব্রিটিশরা সর্বদা এখানে থাকতে পারে।

আল্লাহ এক একথা মানা যেভাবে জরুরি ঠিক সেভাবে রাসুল (সা.) সর্বশেষ নবী সেটা মানাও জরুরি। কেউ যদি আল্লাহকে খুব মানে কিন্তু রাসূল (সা.)কে শেষ নবী না মানে, তাহলে আবু জাহেল আর তার মাঝে কোন পার্থক্য নেই। কালিমার উভয় অংশ মানতে হবে। কেউ লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মানলো মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) মানলো না সে একদম কাফের। মুহাম্মদ (সা.) সর্বশেষ নবী। এখন আর অন্য কোন নবী আসবে না। অন্য কোন দ্বীন ও শরীয়ত আসবে না। তাহলে কিভাবে চলবে ইসলাম? রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর তো ইন্তেকাল হয়ে গেল! এজন্য আল্লাহ্ তায়ালা এক সার্টিফিকেট দিয়েছেন যা অন্য কোন নবীর ধর্মে দেন নাই। সেই সার্টিফিকেট হলো- إِنَّا نَحْنُ نَزَّلْنَا ٱلذِّكْرَ وَإِنَّا لَهُۥ لَحَٰفِظُونَ

আরও পড়তে পারেন-

‘এই কোরআন আমি নাযিল করেছি; আর এর রক্ষণাবেক্ষণের পুরোটা দায়িত্ব আমার জিম্মায়।’ কোরআন শরীফ রক্ষণাবেক্ষণের তিনটা ক্ষেত্রঃ

১. কোরআন শরীফের রিডিং সংরক্ষণ।
২. কুরআনের অর্থ সংরক্ষন।
৩. কোরআনে বর্ণিত আমল অর্থাৎ নামাজ, রোজা, হজ্ব, যাকাত ইত্যাদি যত আমলের কথা এসেছে তার প্র্যাকটিক্যাল নমুনা সংরক্ষণ।

কেয়ামত পর্যন্ত কারা রিড়িং সংরক্ষণ করবে আল্লাহ তায়ালা লওহে মাহফুজে হাজার হাজার বছর আগে সেটা ঠিক করে রেখেছেন। ওই লিস্টে যদি কোন পীর বুজুর্গ, আলেমের ছেলের নাম না থাকে তাহলে হাজার মেহনত করেও তাকে হাফেজে কুরআন বানানো যাবেনা। রিক্সা চালক, শ্রমিক, কাজের বুয়ার নাম যদি লেখা থাকে সেই লিস্টে তাহলে তার ছেলে হাফেজে কোরআন হবে।

হাদীসে এসেছে- একজন হাফেজ তার বংশের ১০ জন মানুষ, যাদের জাহান্নাম ফায়সালা হয়ে গেছে, সে সুপারিশ করে জান্নাতে নিতে পারবে। কোন রাজাবাদশা, শিল্পপতি, কোটিপতি বিশাল ধনসম্পদ কিংবা অট্টালিকার মালিক আপনার পরিবারের কাউকে জান্নাতে নিতে পারবে না। একজন আলেম যিনি আল্লাহ তা’আলার কাছে মাহফুজ তিনি ৭০ জন জাহান্নামী, যাদের জাহান্নাম ফয়সালা হয়ে গেছে তাদেরকে সুপারিশ করে জান্নাতে নিতে পারবে। এইবার ভেবে দেখুন! আলেম বানানোর ফ্যাক্টরি জারি রাখা কত বড় জরুরি।

কোরআন ওযুর সাথে পড়লে এক হরফে ২৫ নেকি। না দেখে পড়লে দশ নেকি। একটা ছেলে হিফজ পড়ছে সে ডেইলি এক পৃষ্ঠা কয়েকবার পড়ে। এই এক পৃষ্ঠায় কতটা হরফ? প্রত্যেক হরফে ২৫ নেকি তাহলে একবার এক পৃষ্ঠা তেলাওয়াতে ক্যালকুলেটর দিয়ে হিসাব করে দেখেন কত ছোঁয়াব। এই এক পৃষ্ঠা হিফজ করতে ১০ বার, ১৫ বার, ৩০ বার রিপিট করে। তাহলে হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ নেকি তার আমলনামায় জমা হতে থাকে।

কওমী মাদরাসা দ্বীন রক্ষার ফ্যাক্টরি। আমাদের দেশে দ্বীন ইসলামের যতটুকু হেফাজত আছে সবটুকু এই কওমী মাদরাসার অবদান। স্কুল, কলেজ, ভার্সিটি মাধ্যমে দ্বীন ইসলামের হেফাজত হয় না। সেগুলো দুনিয়াবি শিক্ষা। দেড় হাজার বছর ইসলামকে হেফাজত করে আসছে কওমী মাদরাসা।

মানুষ হাজার কোটি টাকা লোন উঠায়ে ৫০ বিঘা ১০০ বিঘার উপরে বিশাল ফ্যাক্টরি বানায়। জীবনে যে লোন উঠিয়েছে তা শোধ করার আগেই সে মারা যায়। কবরের হিসাব আর লোনের লাঞ্ছনা সে ভোগ করার সাথে সাথে ফ্যাক্টরির মালিকানাও শেষ হয়ে যায়। আরেকজন তার ফ্যাক্টরির মালিক হয়ে যায়। এই ফ্যাক্টরি বস্তু বানায়, সিমেন্ট, হাড়ি-পাতিল, কাপড়-চোপড় বানায়, আর মাদরাসা যে ফ্যাক্টরি সেগুলো আদর্শ মানুষ বানায়। বেকার মানুষকে দামি বানায়। যেভাবে মাটি দিয়ে বিভিন্ন জিনিস বানানো হয় ঠিক সে ভাবে মাটির মতো আদর্শ মানুষ বানায়। কওমী মাদরাসায় মানবতার শিক্ষা দেয়া হয়। মানুষকে দামি বানায়।

এই ফ্যাক্টরিতে যারা জমি দিয়েছে, ঘর দিয়েছে, যাদের টাকায় উস্তাদদের বেতন হচ্ছে এবং যে যেভাবে সহযোগিতা করছেন এরা সবাই মিলে একটা কোম্পানি। আর এই কোম্পানির মালিকানা কেয়ামত পর্যন্ত মারা যাওয়ার পরেও তার অ্যাকাউন্টে ছোঁয়াব জমা হতে থাকবে। এই ফ্যাক্টরিগুলো কাজ দেয় আখিরাতে। আর যে ফ্যাক্টরিগুলো শিল্পপতিরা বানায় সেগুলো কাজ দেয় যতদিন আছে ততদিন। এই ফ্যাক্টরির কত ধরনের হিসাব দিতে হয় কিন্তু আখেরাতের ফ্যাক্টরির মালিকানা কেয়ামত পর্যন্ত তার কোনো হিসাব নেই।

এক মাদরাসায় যদি ১০ জন ছাত্র পড়ে তাহলে সবাই প্রতিদিন এক পৃষ্ঠা দশ বার পড়লে কত সওয়াব হচ্ছে? এর কোন হিসাব আছে? এই ফ্যাক্টরির মালিকরা প্রবাসী হওয়া কিংবা এলাকার হওয়া, শিল্পপতি হওয়া কিংবা গরীব হওয়া কোন পার্থক্য নেই। যে যেভাবে সহযোগিতা করবে তার একাউন্টে সেভাবে ছোঁয়াব জমা হতে থাকবে।

হাদীসে এসেছে- পৃথিবীর সব জিনিস আমাদের খেদমতের জন্য। আমাদেরকে গাড়ির হেফাজত, বিল্ডিং করা কিংবা পৃথিবী আবাদের জন্য বানানো হয় নাই। আমাদেরকে বানানো হয়েছে কোটি কোটি বছরের অনন্ত অসীম কালের যাবতীয় জীবন কিভাবে কাটাতে পারি এই মেহনতের জন্য।

আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে বুঝার এবং আমল করার তাওফিক দান করুন।

অনুলিখন- মুহাম্মদ নূর হোসাইন সবুজ

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।