Home ইসলাম হারাম উপার্জনকারীর ইবাদত কবুল হয় না

হারাম উপার্জনকারীর ইবাদত কবুল হয় না

।। ড. মুফতি ওয়ালীয়ুর রহমান খান ।।

মানবজীবনে হালাল উপার্জনের গুরুত্ব অপরিসীম। আল্লাহ তাআলা জীবন-জীবিকার জন্য অর্থ-সম্পদ বা খাদ্য-দ্রব্য সংগ্রহ করার নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি ইরশাদ করেছেন, ‘যখন নামাজ শেষ হয় তখন তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ো এবং আল্লাহর অনুগ্রহ তথা রিজিক অনুসন্ধান করো। আর বেশি পরিমাণে আল্লাহর স্মরণ করো; যেন তোমরা সফলকাম হতে পার।(সুরা : জুমুআ, আয়াত : ১০)

পবিত্র কোরআন ও হাদিসে হালাল উৎস থেকে উপার্জনের পাশাপাশি হালাল পথে ব্যয় করার নির্দেশনা রয়েছে। উল্লিখিত আয়াতে জীবিকার কথার আগে নামাজ এবং পরে আল্লাহর স্মরণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ জীবনের সব ক্ষেত্রে ইসলামের বিধান অনুসরণ এবং আল্লাহভীতি অন্তরে জাগ্রত রাখা জরুরি।

ইবাদত কবুলের অন্যতম শর্ত হালাল উপার্জন : পৃথিবীতে মানবজাতির আগমনের প্রধান উদ্দেশ্য, আল্লাহর ইবাদত করা। ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি জিন ও মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছি যেন তারা আমার ইবাদত করবে। ’ (সুরা : জারিয়াত, আয়াত : ৫৬)

আর আল্লাহর কাছে ইবাদত গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য উপার্জন হালাল উপায়ে হওয়া জরুরি। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, “হে মানুষ, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা অতিপবিত্র। তাই তিনি পবিত্র বস্তু ছাড়া কোনো কিছু গ্রহণ করেন না। আল্লাহ তাআলা রাসুলদের যা আদেশ করেছেন; মুমিনদেরও তাই আদেশ করেছেন। এরপর তিনি তিলাওয়াত করেন, ‘হে রাসুলরা, তোমরা পবিত্র খাদ্য আহার করো এবং ভালো কাজ করে যাও। তোমরা যেসব কাজ করো তা সম্পর্কে আমি পরিপূর্ণ অবগত। ’” (সুরা : মুমিনুন, আয়াত : ৫১)

আরও পড়তে পারেন-

তিনি আরো তিলাওয়াত করেন, ‘হে ঈমানদার লোকেরা, আমি তোমাদের যে রিজিক দিয়েছি তা থেকে তোমরা পবিত্র ও উত্কৃষ্ট বস্তুগুলো আহার করো। ’ এরপর তিনি এক ব্যক্তির কথা বর্ণনা করে বললেন, দীর্ঘ ভ্রমণের এলোমেলো চুল ধুলামলিন চেহারার ব্যক্তির দুই হাত আকাশের দিকে তুলে বলছে, হে আমার রব, হে আমার রব, অথচ তার আহার হারাম, পানীয় হারাম, পোশাক-পরিচ্ছদ হারাম। তার হারাম খাবার দিয়ে পুরো দেহ গড়ে উঠেছে। তাহলে তার এত দোয়া কিভাবে কবুল হবে?’ (মুসলিম, হাদিস : ১০১৫)

সবার জন্য হালাল উপার্জনের বিধান : ইসলামসহ সব ধর্মেই বৈধ উপায়ে অর্থ-সম্পদ উপার্জন ও ন্যায়সংগত পথে তা ব্যয়ের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মহান আল্লাহ শুধু মুসলিমদের নয়; বরং রাব্বুল আলামিন তথা বিশ্বজগতের প্রতিপালক হিসেবে পুরো মানবজাতিকে হালাল ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘হে মানবজাতি, তোমরা পৃথিবীর হালাল ও পবিত্র বস্তুসামগ্রী আহার করো, আর শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না, নিঃসন্দেহে সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। সে তো তোমাদের মন্দ ও অশ্লীল কাজ এবং তোমরা যেন আল্লাহর ব্যাপারে জান না এমন কথা বলার নির্দেশ দেয়। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৬৮-১৬৯)

অর্থ-সম্পদ হারাম হওয়ার অন্যতম কারণ সুদ : হালালের বিপরীত শব্দ হারাম। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সুদী লেনদেনের কারণে উপার্জিত অর্থ-সম্পদ হারাম হয়। ইসলাম ক্রয়-বিক্রয়কে হালাল আর সুদকে হারাম করেছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ তাআলা ক্রয়-বিক্রয়কে হালাল এবং সুদকে হারাম করেছেন। (সুরা : বাকারা, আয়াত :২৭৫)

সুদ সাধারণত দুই ধরনের হয়। এক. ঋণ প্রদান করে লাভ গ্রহণ করা। যেমন হাদিসে বর্ণিত, ‘যে ঋণ লাভ নিয়ে আসে তা-ই সুদ। ’ দুই. বিনিয়োগে নির্ধারিত পরিমাণ লাভ আদান-প্রদান করা।

অথচ বর্তমান সমাজের বেশির ভাগ মুসলমান হালাল বিধানের অনুসরণ করে না। সুদের শাস্তি হিসেবে পার্থিব জীবনের অশান্তি, অস্থিরতা ও দুশ্চিন্তার পাশাপাশি পরকালেও তাদের জন্য আছে কঠিন শাস্তি। সুদ, ঘুষসহ সব ধরনের অবৈধ উপার্জনে আসল সুখ ও শান্তি নেই। আল্লাহ তা দেন না। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আল্লাহ সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দানকে বাড়িয়ে দেন। (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৭৬)

দুর্নীতি হালাল উপার্জনের অন্তরায় : যেকোনো উপায়ে অন্যের অর্থ-সম্পদ ভোগ করা তথা নীতিবিরোধী সব কাজই দুর্নীতির অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে। আর অনৈতিক সুবিধা বা স্বার্থ হাসিল করতে দায়িত্বশীলকে বৈষয়িক সুবিধা দেওয়ার নাম ঘুষ বা উৎকাচ। অতএব দায়িত্ব পালন করে সেবা গ্রহিতার কাছ থেকে কোনো সুবিধা গ্রহণ করা, দায়িত্ব পালন না করেই বেতন গ্রহণ করা বা পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ে মিথ্যা মূল্য নির্ধারণ, প্রকল্পে অনিয়ম, নিয়োগ বা বদলি বাণিজ্য ইত্যাদি দুর্নীতির শামিল হবে।

এ ছাড়া চোরাচালান কারবারি, পণ্য মজুদ, শুল্ক ফাঁকি, খাবারে ভেজাল মেশানো, ওজনে কম-বেশি করাও দুর্নীতি বলে গণ্য হবে। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তোমরা একে অপরের সম্পত্তি অন্যায়ভাবে গ্রাস কোরো না, আর জেনে-বুঝে অন্যায়ভাবে মানুষের সামান্য পরিমাণ সম্পদ গ্রাস করার উদ্দেশ্যে বিচারকদের কাছে পেশ কোরো না। (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৮)

হালাল উপার্জনের উপকারিতা : অন্যদিকে হালাল উপার্জনে আছে অফুরন্ত উপকার ও বরকত। হালাল অন্তুরকে আলোকিত করে। আল্লাহ্র পক্ষ থেকে প্রশান্তি, পরিতৃপ্তি ও ভয়মিশ্রিত অনভূতি দান করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বিশিষ্ট সাহাবি সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা)-কে ডেকে বলেন, ‘হে সাদ, তোমার খাবার পবিত্র করো। তাহলে তোমার দোয়া কবুল হবে। (তাবরানি, মুজামুল আওসাত, হাদিস : ৬৪৯৫)

মহান আল্লাহ আমাদের হালাল উপার্জন ও হারাম কাজ থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন।

লেখক : মুহাদ্দিস, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএম

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।