Home ধর্মীয় প্রশ্ন-উত্তর মসজিদে মীলাদ পড়ানো ও শিরনী বিতরণের মান্নত মানা এবং এসব খাওয়া জায়েয...

মসজিদে মীলাদ পড়ানো ও শিরনী বিতরণের মান্নত মানা এবং এসব খাওয়া জায়েয হবে কি?

প্রশ্ন: কেউ যদি মান্নত করে যে, আল্লাহ্ আমার অমুক কাজটা পুরণ করে দিলে বা আমাকে অমুক রোগ থেকে মুক্তিদান করলে জুম্আর দিন মসজিদে শিরনী কিংবা বিস্কুট দিব। এবং উদ্দেশ্য পুরণ হওয়ার পর তা মসজিদে নিয়ে আসে। অতঃপর নামায শেষে মীলাদ পড়ে অথবা মীলাদ পড়া ছাড়া সকল মুসল্লীদের মধ্যে বন্টন করা হয়। এধরনের মান্নত মানা এবং এভাবে সকলে মিলে খাওয়া যাবে কি?

  • মুহাম্মদ শফিউল আলম, বালিয়াডাঙ্গী, ঠাকুরগাঁও।

উত্তরঃ মান্নত শুদ্ধ হওয়ার জন্য বেশ কিছু শর্ত রয়েছে। এগুলোর সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিম্নরূপ-

(১) যে বস্তুর মান্নত করা হচ্ছে সে জাতীয় কোন বস্তু ফরয বা ওয়াজিবের অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে। যেমন, নামায, রোযা, সাদ্কা ইত্যাদি। সুতরাং নফল নামায, নফল রোযা, নফল সাদ্কা ইত্যাদির মান্নত করলে তা পুরণ করতে হবে। কারণ, এজাতীয় ইবাদত যেমন রমযানের রোযা, ওয়াক্তিয়া নামায, যাকাত ফরয শ্রেণীভুক্ত। আর যদি এর বিপরীত হয় অর্থাৎ যে বস্তুর মান্নত করা হচ্ছে সে জাতীয় কোন বস্তু ফরয বা ওয়াজিবের অন্তর্ভুক্ত না থাকে তাহলে এধরনের মান্নতের ক্ষেত্রে উদ্দেশ্য পুরণ হলেও মান্নত পুরণ করতে হবে না। যেমন, রুগীর সেবাযতœ করা বা মসজিদে প্রবেশ করার মান্নত করা। কেননা, এজাতীয় কোন কাজ ফরয বা ওয়াজিব শ্রেণীভুক্ত নয়।

(২) মান্নতকৃত বস্তু ইবাদতে মাকসূদা হতে হবে। অর্থাৎ ইবাদতের মাধ্যম হিসেবে গণ্য এমন কোন ইবাদত দ্বারা মান্নত শুদ্ধ হবে না। যেমন, অযূ, গোসল, আযান, মসজিদ নির্মাণ ইত্যাদি।

(৩) মান্নতকৃত বস্তু পাপকর্ম না হতে হবে। সুতরাং হত্যা, লুণ্ঠন, মাদক সেবন, ব্যাভিচার ইত্যাদি পাপকর্মের মান্নত করলে তা পুরণ করা যাবে না। বরং পুরণ করলে গুনাহ্গার হতে হবে। উল্লেখ্য, এধরনের মান্নত করলে কাফ্ফারা দিতে হবে। অর্থাৎ দশজন গরীবকে দুই বেলা খানা খাওয়াতে হবে। এতে অসমর্থ হলে একাধারে তিনটি রোযা রাখতে হবে।

(৪) মান্নতকৃত বস্তু মান্নতের পূর্বে ফরয বা ওয়াজিব না হতে হবে। সুতরাং ফরয নামায বা ফরয রোযা ইত্যাদির মান্নত করা শুদ্ধ নয়।

(৫) মান্নত করার সময় মান্নতকৃত বস্তুর মালিক হতে হবে। সুতরাং অন্যের সম্পদের মান্নত শুদ্ধ নয় এবং একশত টাকার মালিক থাকাবস্থায় এক হাজার টাকার মান্নত করা শুদ্ধ নয়। করে ফেল্লে একশত টাকাই আদায় করতে হবে। এক হাজার টাকা নয়।

(৬) মান্নতকৃত বস্তু অসম্ভব না হতে হবে। যেমন, বিগত সময়ের অর্থাৎ আমি গতকাল দুই রাকাআত নামায পড়ব এরূপ মান্নত করা। এখানে মান্নত সংক্রান্ত আরও কয়েকটি মাসআলা উল্লেখ করা হল।

মান্নতের ক্ষেত্রে সময়, স্থান, বস্তু, পাত্র ইত্যাদি নির্দিষ্ট করলেও নির্দিষ্ট হয় না। সুতরাং কেউ যদি মান্নত করে যে, অমুক শুক্রবার অমুক মসজিদের মুসল্লীদেরকে অমুক বস্তু আল্লাহ্র ওয়াস্তে খাওয়াব। তাহলে যে কোন দিন, যে কোন স্থানে, যে কোন গরীবকে খাওয়ালেই আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু মান্নত যদি কোন শর্তের সাথে সম্পৃক্ত থাকে, তাহলে শর্ত পুরণ হওয়ার আগে মান্নত আদায় করা যাবে না।

আরও পড়তে পারেন-

যেমন, কেউ যদি মান্নত করে যে, আল্লাহ্ আমাকে রোগ থেকে মুক্তিদান করলে দুই রাকাআত নফল নামায কিংবা একশত টাকা দান করব। এক্ষেত্রে রোগমুক্তির আগেই মান্নত আদায় করলে তা আদায় হবে না। বরং রোগমুক্তির পর পুনরায় তা আদায় করতে হবে।

কেউ যদি পাত্রের সংখ্যা উল্লেখ না করে মান্নত করে। এক্ষেত্রে মান্নতকৃত বস্তু নির্দিষ্ট থাকলে দশ জন গরীব তার হকদার হয়ে যাবে। আর অনির্দিষ্ট থাকলে দশ জন ফকীরকে খানা খাওয়াতে হবে। অন্যথায় এক ফিত্রা সমপরিমাণ অর্থ বা অন্য কোন কিছু দিতে হবে।

এবার প্রশ্নের সমাধান হচ্ছে, শিরনী, বিস্কুট ইত্যাদি মসজিদের নামে মান্নত করে থাকলে তা আদায় করতে হবে না। কারণ, এ মান্নতই শুদ্ধ হয়নি। কিন্তু মসজিদের মুসল্লীদের খাওয়ানোর নিয়্যাতে মান্নত করে থাকলে পুরণ করতে হবে। তবে যেহেতু মুসল্লীর সংখ্যা ও গরীব-ধনীর ব্যাপারে কিছু উল্লেখ করা হয়নি তাই সকল মুসল্লীই খেতে পারবেন বটে, কিন্তু মুসল্লীদের মধ্যে দশ জন গরীব, যারা নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক নয়, তাদেরকে শামিল রাখতে হবে। কারণ, ধনীদের ক্ষেত্রে মান্নত শুদ্ধ নয়। তাছাড়া এগুলো মসজিদের মুসল্লীদের না খাইয়ে যে কোন ধরনের গরীবদেরকে দিয়ে দিলেও আদায় হয়ে যাবে। ইচ্ছা করলে শিরনী, বিস্কুট ছাড়া অন্য কিছু তার সমপরিমাণ আদায় করা যাবে। মীলাদ পড়া হোক বা না হোক উপরোক্ত বিবরণ অনুযায়ী খাওয়া যাবে। এর সাথে মীলাদের কোন সম্পর্ক নেই। আর ইসলামী শরীয়তে মীলাদের কোন অস্তিত্বই নেই।

আজকাল আমাদের দেশের প্রায় অধিকাংশ এলাকাতেই মসজিদের নামে শিরনী, বিস্কুট ইত্যাদি মান্নত করার একটা কুপ্রথা চালু হয়েগেছে। যা ধনী-গরীব নির্বিশেষে সকল মুসল্লীদের মধ্যে বন্টন করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় এসব মান্নতের খাদ্যসামগ্রী বণ্টন করতে গিয়ে মসজিদের মধ্যে হৈচৈ শুরু হয়ে যায় এমনকি কোথাও কোথাও মারামারি পর্যন্ত লেগে যায়। যা মসজিদে তো দূরের কথা মসজিদের বাইরে পর্যন্ত নাজায়েয। সুতরাং এধরনের কুপ্রথা থেকে বেঁচে থাকা একান্ত প্রয়োজন। মান্নত করতে হলে গরীবদেরকে বাড়ীতে দাওয়াত করে নিয়ে খাওয়ানো উত্তম।

তথ্যসূত্র- আল ফিক্বহু আলাল মাযাহিবিল আরবাআ-২/১৪৫, ফাত্ওয়ায়ে শামী-৩/৭৩৫-৭৪২, রদ্দুল মুহ্তার-৩/৭৪২, মিশ্কাত শরীফ-২/৪৭০, আলজুন্নাহ্-১৭৭ পৃঃ, ফয়যুল কালাম-১০১ পৃঃ, বাহ্রুর রায়েক্ব-২/২৯৮, বাদায়ে’-৫/৮২, জাওয়াহিরুল ফাত্ওয়া-১/১৩২।

উত্তর দিয়েছেন- আল্লামা মুফতি জসিমুদ্দীন

মুফতি, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও সহকারী পরিচালক-
জামিয়া আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসা, চট্টগ্রাম।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।