Home প্রবন্ধ-নিবন্ধ খতমে বুখারী অনুষ্ঠান: কিছু জরুরি আলাপ

খতমে বুখারী অনুষ্ঠান: কিছু জরুরি আলাপ

।। মাওলানা তাহমিদ বিন ইকরাম ।।

ঠিক কবে থেকে জানা নেই, কিন্তু এই উপমহাদেশে খতমে বুখারীর অনুষ্ঠানের একটি রেওয়াজ চালু হয়ে গেছে। আস্তে আস্তে আর দশটা রেওয়াজের মত এটাও এমন ভয়াবহ অসহনীয় পর্যায়ে চলে যাচ্ছে যে, এই মুহূর্তেই এই অনুষ্ঠানগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা জরুরী হয়ে পড়েছে। সনদ মুত্তাসিল না হলেও বেশ কয়েকজন আকাবিরের কথা শুনেছি, যারা এই খতমে বুখারীকে তো পুরোপুরি বিদআত বা বিদআতে চলে যাচ্ছে বলে দিয়েছেন।

কিছুদিন আগের কথা। জামিয়াতুন নূর আল কাসেমিয়া উত্তরাতে আমাদের পরামর্শ চলছিল। প্রথম প্রতিষ্ঠাবছর উপলক্ষে খতমে বুখারী অনুষ্ঠান বিষয়ক আলোচনা চলছিল। আমাদের শাইখুল হাদিস আল্লামা হেমায়েত উদ্দিন সাহেব হুজুর অনুপস্থিত ছিলেন। হুজুরের কথা মুহতামিম সাহেব বললেন যে, হুজুর বলেছেন, খতমে বুখারী অনুষ্ঠান হলে হুজুরকে পাওয়া যাবে না। হুজুর খতমে বুখারী করা মুনাসিব মনে করেন না।

পরামর্শের আলোচ্য বিষয় ছিল, আমরা এখন কী করবো?! আল্লাহ মুহতামিম সাহেব হুজুরের প্রতি রহম করুন! আলোচনা শেষে হুজুর সিদ্ধান্ত নিলেন, এই মুহূর্তে আমাদের মুরুব্বী আল্লামা হেমায়েত উদ্দিন সাহেব। হুজুর যেই মজলিস পছন্দ করেন না, আমরা এটা করতে পারিনা। সত্যিই ঐতিহাসিক এই সাহসী সিদ্ধান্তে মনটা অনেক ভরে গেলো। প্রতিষ্ঠার প্রথম বছর হিসেবে প্রচারণার কতটা প্রয়োজন ছিল বলাইবাহুল্য। কিন্তু এই মুহূর্তেও এই ধরনের সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে পারাটা সাধুবাদযোগ্য। পরে কী হয়েছে শুনুন, বুখারী শরীফের শেষ হাদিস পড়া হয়ে গেছে ধারাবাহিকভাবে। অথচ তখনও বুখারী শরীফের মাঝের অংশের সবক চলছিল !

(ই ধরনের সাহসী সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়টি আরো কিছু জামিয়ার ক্ষেত্রে শুনেছি, আলহামদুলিল্লাহ!

আরও পড়তে পারেন-

একটি ব্যক্তিগত চিন্তা বলি, আল্লাহ ভুল হলে মাফ করুন মাদরাসার স্বার্থে কোন অনুষ্ঠান যদি করতেই হয়, তাহলে দস্তারবন্দী বা পুরস্কার বিতরণী কিংবা সমাপনী অনুষ্ঠান করতে পারি। এই ধরনের অনুষ্ঠানের যেহেতু শরয়ী কোন হাইসিয়াত নেই। তাই কোন আমলের সংযোজন-সংকোচন না থাকায় এতে বেদাতের কোন প্রশ্ন নেই।

আসলেই সম্ভবত আমাদের ভাবার ও চিন্তা করার মতো যথেষ্ট কারণ উপস্থিত হয়েছে। আমরা আনুষ্ঠানিকতাসর্বস্ব হয়ে যাচ্ছি না তো?? খতমে বোখারী অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে যেই তোড়জোড় ও এধরনের খতমের ফজিলতের বিশাল ফিরিস্তির বর্ণনা। আদৌ কি শরীয়তে এর অবকাশ আছে?? বা থাকলে কতটুকুই বা আছে?! আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করুন।

সাথে সম্পৃক্ত হওয়া অন্যান্য মুনকারাত তো আলোচনা করলেও লজ্জা লাগে! খতমে বুখারীসহ এই ধরনের বেশকিছু মোবারক অনুষ্ঠানে ছবির বাহুল্য আমাদেরকে কোথায় পৌঁছিয়ে দিয়েছে?! মসজিদে মাদ্রাসায় ছবি ভিডিওর হিড়িক দেখলে এই মোবারক মজলিসের সামান্যতম ভাবগাম্ভীর্যতা ও পবিত্রতা বাকী থাকে বলে মনে হয় না! ছবি তোলার যতটুকু বৈধতার ফতোয়া কেউ দিয়েছেন, মনে হয় না উনাদের কেউ এতোটুকু বাড়াবাড়িকে সমর্থন করবেন! পাশাপাশি ফটোসেশন, কেককাটা (কোথাও নাকি কিছু ছাত্র কর্তৃক এমন ঘটনাও শোনা গেছে নাউজুবিল্লা), পুষ্পমাল্য পরিয়ে প্রদর্শনী আপনি এটাকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন??!

কোন নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। এর দায় আমাদের সবারই ‌। সকল অভিযোগ আল্লাহর কাছে!

পুনশ্চ: সম্প্রতি জরুরী পরামর্শসভায় ছবির নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারেও জামিয়াতুন নূরে সিদ্ধান্ত হয়েছে। আল্লাহ যেন ইস্তেকামতের তৌফিক দান করেন।

লেখক: মুহাদ্দিস, জামিয়াতুন নূর আল কাসেমিয়া, উত্তরা, ঢাকা।

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএম

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।