Home ইসলাম কিছু প্রাণীর গোশত হারাম হওয়ার রহস্য

কিছু প্রাণীর গোশত হারাম হওয়ার রহস্য

।।জাওয়াদ তাহের ।।

সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য স্বাস্থ্যকর পরিমাণমতো খাবার প্রয়োজন। খাদ্যাভ্যাসের মধ্যে মানবজাতির জন্য কোনটা ভালো, কোনটা মন্দ—এটা একমাত্র ভালোভাবে জানেন আমাদের সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ। এ জন্য শরিয়তকর্তৃক আমাদের জন্য কিছু বিষয় বৈধ করেছেন, আবার এর মাঝে কিছু জিনিস করেছেন অবৈধ। এর প্রকৃত ও যথাযথ কারণ একমাত্র তিনিই ভালো জানেন।

মহান আল্লাহ আমাদের ছোট-বড় যত বিধান দিয়েছেন, এর কোনো একটি অযথা ও অর্থহীন নয়। কোনো বিধানের হিকমত বা রহস্য বুঝে না এলেও এর ওপর ঈমান আনতে হবে এবং আমল করতে হবে। একজন মুমিন সব সময় এ বিশ্বাস লালন করবে যে আল্লাহ যে বিধান দিয়েছেন, তাতেই আছে মানবজাতির সমূহ কল্যাণ। বাহ্যিকভাবে তা আমাদের বুঝে আসুক বা না আসুক। ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ যার বক্ষ ইসলামের জন্য উম্মুক্ত করে দিয়েছেন, অতঃপর সে তার পালনকর্তার পক্ষ থেকে আগত আলোকে আছে। (সে কি তার সমান, যে এরূপ নয়) যাদের অন্তর আল্লাহর স্মরণের ব্যাপারে কঠোর, তাদের জন্য দুর্ভোগ। তারা সুস্পষ্ট ভ্রষ্টতায় আছে। ’ (সুরা জুমার, আয়াত : ২২)

আরও পড়তে পারেন-

তবে মানুষকে আল্লাহ তাআলা শ্রেষ্ঠ জাতি হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। সে জন্য মানুষের আহারের জন্য আল্লাহ তাআলার উত্কৃষ্ট বস্তু নির্ধারণ করে দিয়েছেন—এটা বলা বাহুল্য।

মৃত প্রাণী হারাম

স্থলজ কোনো প্রাণী যখন নিজে নিজে মারা যায় তা খাওয়া বৈধ নয়। আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত জন্তু। ’ (সুরা মায়েদা, আয়াত : ৫)

কারণ মৃত প্রাণীর শরীরে প্রবহমান রক্ত আছে, যা জবাই করলে বের হয়ে যেত। এই প্রবাহিত রক্ত তার পুরো শরীরে গোশতের সঙ্গে মিশে একাকার হয়ে গেছে। যা একরকম বিষাক্ত, শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। কোনো মানুষ যদি এ ধরনের মৃত প্রাণীর গোশত ভক্ষণ করে তাহলে তার শরীরের বিষ ক্রিয়ার প্রভাব বিস্তার করবে। সে জন্য আল্লাহ তাআলা মৃত প্রাণীকে হারাম করেছেন।

শূকর হারাম করার কারণ

ভূ-পৃষ্ঠের ওপর যত প্রাণী আছে তার মধ্যে শূকর সবচেয়ে অশ্লীল, নির্লজ্জ প্রাণী। শূকরের গোশত ভক্ষণের দ্বারা মানুষের মধ্যেও এই নির্লজ্জতা ও অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়বে। কারণ এটা প্রমাণিত যে খাদ্যের প্রভাব শরীরের মধ্যে বিস্তার করে। তাই তা খাওয়ার দ্বারা মানুষের মধ্যে এই অসভ্যতা ছড়িয়ে পড়বে।

অন্যদিকে শূকর নাপাক ও ময়লা বস্তু আহার করে। আর আল্লাহ তাআলা অনেক জাতির ওপর ক্রোধান্বিত হয়ে তাদের বিকৃত করে দিয়েছেন শূকরের আকৃতিতে। ইরশাদ হয়েছে, ‘যাদের কতককে বানর ও শূকরে রূপান্তরিত করে দিয়েছেন এবং যারা শয়তানের আরাধনা করেছে, তারাই মর্যাদার দিক দিয়ে নিকৃষ্টতর এবং সত্যপথ থেকেও অনেক দূরে। (সুরা মায়েদা, আয়াত : ৬০) পৃথিবীর শুরু থেকে যত আসমানি ধর্ম এসেছে, সব ধর্মে এর গোশত খাওয়া হারাম ছিল। আল্লাহ বলেন, ‘তিনি তোমাদের ওপর হারাম করেছেন মৃত জীব, রক্ত, শূকরের মাংস এবং সেসব জীবজন্তু, যা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে উৎসর্গ করা হয়। অবশ্য যে ব্যক্তি অনন্যোপায় হয়ে পড়ে এবং নাফরমানি ও সীমা লঙ্ঘনকারী না হয়, তার জন্য কোনো পাপ নেই। নিঃসন্দেহে আল্লাহ মহান ক্ষমাশীল, অত্যন্ত দয়ালু। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৭৩)

চতুষ্পদ জন্তু হারাম হওয়ার কারণ

চতুষ্পদ জন্তু থেকে আল্লাহ তাআলা যেগুলো আমাদের জন্য হারাম করেছেন—এর সবারই স্বভাব আক্রমণ করে খাওয়া, ছিঁড়েফেড়ে খাওয়া। মানুষ যদি এসব প্রাণী ভক্ষণ করে তাহলে মানুষের মধ্যে এ ধরনের স্বভাব চলে আসবে। যেমন—হিংস্র প্রাণী তার অভ্যাস, থাবা মেরে নিয়ে যাওয়া। কাক, চিল, সাপ ইত্যাদির স্বভাব মানুষকে কষ্ট দেওয়া। ইঁদুর ও অন্যান্য কীটপতঙ্গ এগুলোর স্বভাবে অসম্মান ও তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য আছে। নিজেরাই নিজেদের খায় এবং এগুলোর মধ্যে বিষাক্ত উপাদান আছে। আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘পাঁচটি অনিষ্টকর প্রাণীকে হারামের (মসজিদুল হারামে) ভেতরে হত্যা করা যায়—বিচ্ছু, ইঁদুর, কাক, চিল ও হিংস্র কুকুর। ’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৭৫৩)

গৃহপালিত গাধা

আল্লাহ তাআলা গাধার গোশত হারাম করেছেন। কারণ প্রাণী জগতে গাধা হচ্ছে সবচেয়ে নির্বোধ। নির্বুদ্ধিতার ক্ষেত্রে তাকে দিয়ে উপমা দেওয়া হয়। মানুষ যদি এই প্রাণী খায় তাহলে তার মধ্যেও নির্বুদ্ধিতার বিস্তার ঘটবে। জাবের (রা.) বলেন, ‘খায়বারের যুদ্ধে রাসুলুল্লাহ (সা.) গাধার গোশত খেতে নিষেধ করেছেন এবং ঘোড়ার গোশত খাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন। ’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৫২০)

পরিশেষে মানব দেহ, চরিত্র ও স্বভাবের সুস্থতা ও বিশুদ্ধতার কথা বিবেচনা করে বিভিন্ন ধরনের প্রাণীর গোশত খাওয়া হারাম করা হয়েছে।

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএম

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।