Home ইসলাম কথার মারপ্যাঁচ নিন্দনীয়

কথার মারপ্যাঁচ নিন্দনীয়

।। মুফতি ইবরাহিম সুলতান ।।

স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে সাধ্যাতীত কর্ম বা নিজের যা আছে তার চেয়ে বেশি প্রকাশ করার নাম তাকাল্লুফ বা লৌকিকতা। ইসলামে কৃত্রিমতা তথা লৌকিকতার পথ অবলম্বন করা চরম নিন্দনীয়। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা ওমর (রা.)-এর কাছে ছিলাম। তিনি বলেন, (সব ধরনের) কৃত্রিমতা থেকে আমাদের নিষেধ করা হয়েছে।(বুখারি, হাদিস : ৭২৯৩)

আরেক বর্ণনায় এসেছে, মাসরুক (রহ.) বলেন, একবার আমরা আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)-এর কাছে প্রবেশ করলাম। তিনি বলেন ‘হে লোকসকল, যে ব্যক্তির কিছু জানা থাকে, সে যেন তা বলে। আর যার জানা নেই, সে যেন বলে, ‘আল্লাহই ভালো জানেন। ’ কারণ তোমার অজানা বিষয়ে ‘আল্লাহই ভালো জানেন’ বলাও এক ধরনের ইলম (জ্ঞান)। মহান আল্লাহ তাঁর নবী (সা.)-কে সম্বোধন করে বলেছেন, ‘বলো, আমি উপদেশের জন্য তোমাদের কাছে কোনো প্রতিদান চাই না এবং যারা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে সাধ্যাতীত কর্ম করে, আমি তাদের অন্তর্ভুক্ত নই। ’ (সুরা : সদ, আয়াত: ৮৬) । (বুখারি, হাদিস : ৭২৯৩)

এমনকি যারা লৌকিকতা বা কৃত্রিমতার পথ অবলম্বন করে, তাদের ব্যাপারে হাদিস শরিফে কঠোর নিন্দা এসেছে। সহিহ বুখারির বর্ণনা, একবার এক নারী নবীজি (সা.)-এর কাছে এসে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসুল, আমার সতীন আছে। এখন তাকে রাগানোর জন্য যদি আমার স্বামী আমাকে যা দেয়নি তা বাড়িয়ে বলি, তাতে কি কোনো দোষ আছে? রাসুল (সা.) বলেন, ‘যা তোমাকে দেওয়া হয়নি তা দেওয়া হয়েছে বলা এমন প্রতারকের কাজ যে প্রতারণার জন্য দুই প্রস্থ মিথ্যার পোশাক পরিধান করে। ’ (বুখারি, হাদিস : ৫২১৯)

আরও পড়তে পারেন-

হাদিসের উপমার সঙ্গে সমকালীন সাদৃশ্যতা

এখানে নবী করিম (সা.) সমাজের বহুল প্রচলিত অত্যন্ত ক্ষতিকারক আত্মিক একটি রোগের ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। আর তা হলো, যেকোনো ক্ষেত্রে লৌকিকতার পথ অবলম্বন করা। যেমন স্বল্প জ্ঞানের মানুষরা নিজেকে মহাজ্ঞানী হিসেবে উপস্থাপন করা, ইবাদত-বন্দেগিতে তাকাল্লুফ করা এবং স্বল্প আয়ের মানুষরা নিজেকে ধনাঢ্য ব্যক্তি হিসেবে পেশ করা ইত্যাদি।

যারা এ ধরনের লৌকিকতার পথ অবলম্বন করে তাদের প্রতি নবীজি নিন্দা জানিয়ে বলেন, কেমন যেন তারা দুটি মিথ্যা ও প্রতারণার পথ অবলম্বন করেছে। এক. এর মাধ্যমে সে নিজের ব্যাপারে মিথ্যা বলেছে। অর্থাৎ যে জিনিস তাকে দান করা হয়নি তা দাবি করার মাধ্যমে মিথ্যা বলেছে। দুই. একই পদ্ধতিতে অন্যের ব্যাপারেও সে মিথ্যা আরোপ করেছে।

এই সময়েও অনেক অনভিজ্ঞ আলেম ও সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত ব্যক্তি রয়েছেন, যাঁদের ধর্মীয় গভীর জ্ঞান না থাকা সত্ত্বেও নিজেকে বড় আলেম হিসেবে প্রকাশ করে বিভিন্ন সবক দিতে থাকেন। সমকালে এসব লোকদের সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়ছে, যা স্পষ্টত কিয়ামতের আলামত। হাদিস শরিফে এসেছে, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, কিয়ামতের অন্যতম আলামত হলো, ‘ইলম হ্রাস পাবে, অজ্ঞতা প্রসারতা লাভ করবে, মদপানের মাত্রা বৃদ্ধি পাবে এবং জিনা-ব্যভিচার বিস্তার লাভ করবে। ’ (বুখারি, হাদিস: ৮০)

মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে লৌকিকতামুক্ত জীবন গড়ার তাওফিক দান করুন।

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএম

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।