Home প্রবন্ধ-নিবন্ধ ইন্দোনেশিয়ায় চীনের ‘ইসলামী কূটনীতি’

ইন্দোনেশিয়ায় চীনের ‘ইসলামী কূটনীতি’

।। মুহাম্মদ বজলুর রশীদ ।।

নোভি বাসুকি, একজন তরুণ লেখক ও সামাজিক মিডিয়া সম্পাদক। সম্প্রতি ইন্দোনেশিয়ার অনলাইন মিডিয়া ‘দেতিক নিউজ বাহাসা’ উইঘুরদের বেইজিং অলিম্পিক বয়কট নিয়ে বড় নিবন্ধ লিখেছেন। নোভি উল্লেখ করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া এ বছরের বেইজিং শীতকালীন অলিম্পিক নিয়ে চাল চালিয়ে বৈশ্বিক গেমকে ‘কূটনৈতিক বয়কট’ করেছে। মুখ্য কারণ বলা হয়েছে – জিনজিয়াংয়ে উইঘুর গণহত্যা। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিষয়ে তিনি সান ইয়াত-সেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ডক্টরেট করেছেন। ২০২০ সালে ইন্দোনেশিয়ায় ফিরে এসে ‘চীনে ইসলাম : পূর্ব ও এখন’ নামে বই প্রকাশ করেন এবং চীনা রাজনীতি ও ধর্ম বিষয়ে বিভিন্ন প্রবন্ধ সঙ্কলন ও প্রকাশনার কাজও করছেন।

নোভি বাসুকি বলেন, গণহত্যার অভিযোগগুলো লন্ডনের সাম্প্রতিক ‘উইঘুর ট্রাইব্যুনাল’ থেকে উদ্ভূত। এর পেছনে রয়েছে ওয়ার্ল্ড উইঘুর কংগ্রেস, যাদের একটি স্বাধীন সংস্থা বলে দাবি করা হয়। সংস্থাটি যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল এনডাউমেন্ট ফর ডেমোক্র্যাসি থেকে প্রয়োজনীয় অর্থ পেয়ে থাকে এবং সিআইএ বা সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির সাথে সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে।

আরো জানা যায়, ‘উইঘুর ট্রাইব্যুনাল’ মূলত একটি গোয়েন্দা ইপিসোড বা অভিযান। উইঘুর ট্রাইব্যুনালে রয়েছেন প্রবীণ কমিউনিস্টবিরোধী গবেষক অ্যাড্রিয়ান জেঞ্জ। তিনি আগে স্থানীয় সরকারের কাছ থেকে জিনজিয়াং সম্পর্কে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন। জেঞ্জ দাবি করেছেন, চীনা সরকার উইঘুরদের ওপর কঠোর জন্মনিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে, ফলে ২০১৮ সাল থেকে উইঘুর জনসংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। তিনি দাবি করেন, এটিও গণহত্যা থেকে পৃথক কিছু নয়।

পরিসংখ্যান মতে, ২০১৮ সালে জিনজিয়াংয়ে উইঘুর জনসংখ্যা ছিল ৮.৩৪ মিলিয়ন এবং ২০২০ সালে ১১.৬২ মিলিয়ন অর্থাৎ জনসংখ্য বৃদ্ধির হার ১.১৭ শতাংশ, বিপরীতে হান জাতিগোষ্ঠীর জন্ম হার ০.৮৩ শতাংশ। দেখা যায়, পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে জেঞ্জ যাকে গণহত্যা বলেছেন, সেটি একটি ভিত্তিহীন অভিযোগ। চীন জানিয়েছে, অলিম্পিককে সঙ্ঘাতের পরিবর্তে ক্রীড়ার মাধ্যমে বিশ্ব মৈত্রীর একটি ধাপ বলে মনে করা হয়। ক্রীড়াকে রাজনীতিমুক্ত করতে এত দিন যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন তারাই এখন ক্রীড়ায় ক‚টনীতির বিষাক্ত বাষ্প ছড়িয়ে দিচ্ছেন। ফলে তাদের দেশের হাজার হাজার ক্রীড়াবিদ ও ক্রীড়ামোদি অলিম্পিক গেমের সৌরভ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এ পদক্ষেপ অলিম্পিজমের ন্যায়বিচার এবং বন্ধুত্বের প্রতিনিধিত্বকে আঘাত করেছে। ক্রীড়া সভায় অংশ নেয়াও এক মানবাধিকার; সেটিও তারা ভ্রূক্ষেপ করল না।

বেশির ভাগ ইন্দোনেশীয় শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য প্রাথমিকভাবে নেদারল্যান্ডস, যুক্তরাজ্য ও জার্মানি, তার পর যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়ার চেষ্টা করেন। এক দশক ধরে চীনা সরকার ইন্দোনেশীয় শিক্ষার্থীদের বেশি করে বৃত্তি দিয়েছে। শিক্ষার্থীরা বেশি পরিমাণে চীনমুখী হয়েছেন। প্রাথমিক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চীনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও উচ্চতর কারিগরি প্রতিষ্ঠানে শত শত পূর্ব জাভার শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছেন।

বেইজিংয়ে ইন্দোনেশীয় দূতাবাসের তথ্যানুযায়ী, ২০১৯ সালে চীনে ১৫ হাজার ৭৬০ ইন্দোনেশীয় ছাত্রছাত্রী ছিল। তারা দেশে ইসলামী শিক্ষা শেষে চীনে পাড়ি দিয়েছেন। এক জরিপ অনুসারে চীনের কৃষক-ছাত্ররা ইসলামী বিষয় অধ্যয়ন করেন না, অন্যান্য কোর্স গ্রহণ করেন। কেউ চীনা ভাষা ও সংস্কৃতি অধ্যয়ন করেন, কেউ সামাজিক বিজ্ঞান, ব্যবসায়িক ব্যবস্থাপনা ও প্রযুক্তিগত কোর্স অধ্যয়ন করেন।

চীন-মার্কিন কৌশলগত প্রতিযোগিতায়, চীনে শিক্ষিত সব ইন্দোনেশীয় শিক্ষার্থী চীনের দিকে ঝুঁকবেন না, তবে বেশির ভাগই চীনকে সমর্থন করবেন বা অন্ততপক্ষে নিরপেক্ষ থাকবেন। এটি লক্ষণীয় যে, এসব ছাত্রের প্রবন্ধগুলো চীন ও দক্ষিণ চীন সাগর, বা ইন্দোনেশিয়ার সাথে বিরোধ নিয়ে লেখা নয়। এসব শিক্ষার্থী যখন ইন্দোনেশিয়ায় ফিরে আসেন, তখন কেউ ইন্দোনেশিয়ায় চীনা কোম্পানিতে কাজ করেন, আবার কেউ তাদের নিজস্ব সম্প্রদায় বা শিক্ষা ক্ষেত্রে ফিরে যান বা বেসরকারি কোম্পানিতে কাজ করেন।

এসব ইন্দোনেশীয় যারা চীনে অধ্যয়ন করে তারা চীনা ভাষা জানেন এবং চীনের সাথে সরাসরি যোগাযোগ রাখেন, তাই তারা প্রায়ই পশ্চিমা-শিক্ষিত ইন্দোনেশীয় ছাত্রদের থেকে ভিন্ন, এমনকি বিরোধী মতও উত্থাপন করেন। অন্যান্য দেশের চেয়ে এ মুহূর্তে চীনে খুব বেশি ইন্দোনেশীয় পড়াশোনা করেন না, তবে সংখ্যাটি দ্রুত বাড়ছে। চীন সম্পর্কে তাদের মতামত পশ্চিমা-শিক্ষিত, পশ্চিমপন্থী ইন্দোনেশীয় শিক্ষার্থীদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ।

প্রকৃতপক্ষে চীন একুশ শতকের গোড়ার দিকে ইন্দোনেশিয়ার সাথে ইসলামিক ক‚টনীতি শুরু করেছিল। ইন্দোনেশীয় মুসলিম ছাত্রদের, বিশেষ করে যারা কৃষক পরিবারের; তাদের চীনের তৃতীয় প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়ন করতে বৃত্তি দিয়ে থোকে বেইজিং। একই সাথে ইন্দোনেশীয় মুসলিম নেতাদের চীন সফরের আমন্ত্রণ জানানোর সাথে সাথে চীনা ভাষা শেখানোর জন্য কৃষকদের কাছেও শিক্ষক পাঠায়।

চীনও ইন্দোনেশিয়ার মুসলিম সম্প্রদায়ের সাথে যৌথ প্রকল্প শুরু করেছে। ২০১৮ সালে যখন জিনজিয়াং উইঘুর ইস্যুটি প্রকাশিত হয়, ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল অভিযোগ করেছিল – চীন ইন্দোনেশিয়ার প্রধান ইসলামী সংগঠনগুলো যেমন – নাহদলাতুল উলামা ও মুহাম্মদিয়াহ বিশাল অঙ্কের আর্থিক সহায়তা দিয়েছে, যাতে ওই সব দলের নেতারা জিনজিয়াং ইস্যু নিয়ে চুপ থাকে। অথচ এই দুই গোষ্ঠীর নেতারা সব দাবি কঠোরভাবে অস্বীকার করেছেন।

চীন ইন্দোনেশিয়ায় ক্রমবর্ধমান অবস্থান ধরে রাখতে সফট পাওয়ারকে প্রসারিত করছে। মিডিয়ায় প্রভাব, শিক্ষায় অংশীদারিত্ব এবং সাংস্কৃতিক বিনিময়ের মাধ্যমে চীন এগিয়ে যাচ্ছে। আরো গুরুত্বপূর্ণ উপায় হলো – হুয়াওয়ের ডিজিটাল বুদ্ধিমত্তা ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচি, যা ইন্দোনেশিয়ার ৩৩টিরও বেশি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু করা হয়েছে; সেটিও ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। হুয়াওয়ের কর্মসূচির সাথে জড়িত রয়েছে প্রচুর চাকরির সুযোগ। তাই এর জনপ্রিয়তা হু হু করে বাড়ছে ইন্দোনেশিয়ার সমাজে।

প্রোগ্রামটির লক্ষ্য হলো ইন্দোনেশিয়ায় ডিজিটাল রূপান্তরের ধারাকে বাড়ানো; যাতে তরুণরা ডিজিটাল প্রতিভাকে লালন করতে পারে। ইন্দোনেশিয়ার হুয়াওয়ে সিইও জ্যাকি চেনের মতে, এই ডিজিটাল প্রতিভা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), ইন্টারনেট অব থিংস (আইওটি), বিগ ডেটা, ক্লাউড অভিজ্ঞান ও দক্ষতার সাথে জড়িত। উন্নত ডিজিটাল পরিবেশে এসব আবশ্যিক বিষয়। অনেক প্রোগ্রামের মাধ্যমে এসব লক্ষ্য অর্জন করা হবে। আইসিটি একাডেমি এসব বাস্তবায়ন করবে। চীন ও হুয়াওয়ে ৭০টিরও বেশি দেশে এসব কর্মসূচি চালু করেছে।

এ ছাড়াও হুয়াওয়ে তরুণদের নিজের স্টার্ট-আপ তৈরি করতে উৎসাহিত করতে স্পার্ক প্রোগ্রামেরও সূচনা করেছে। ইন্দোনেশিয়ায় প্রোগ্রামটি ২০২০-২১ সালের মধ্যে প্রায় ৫২ হাজার ইন্দোনেশীয়কে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। হুয়াওয়ে ডিজিটাল ট্যালেন্ট প্রোগ্রাম বাস্তবায়নে, কোম্পানিটি ইন্দোনেশিয়ার বৃহত্তম টেলিকমিউনিকেশন অপারেটর টেলকোমসেলের সাথে একটি সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে সহযোগিতা করেছে।

সমঝোতা স্মারকের অধীনে ৪০০ টেলকোমসেল কর্মচারী হুয়াওয়ের বিশেষজ্ঞদের দিয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছেন। এসব প্রশিক্ষণে ‘ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন এরিয়ায় নেতৃত্ব’, ‘গ্লোবাল অপারেটর বেঞ্চমার্ক’ এবং ‘টেকনোলজি নলেজ ট্রান্সফার’ ‘ফাইভ-জি গ্রাহক অভিজ্ঞতা ব্যবস্থাপনা’ ‘নেটওয়ার্ক ফাংশন ভার্চুয়ালাইজেশনের’ সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি।

এ অঞ্চলে ডিজিটাল প্রতিভা বিকাশের বিষয়ে হুয়াওয়ে এবং আসিয়ান ফাউন্ডেশনের মধ্যে সমঝোতা স্মারকের আকারে অনুরূপ প্রচেষ্টা হয়েছে। এ সহযোগিতা বিশেষভাবে ২০০৮ সাল থেকে হুয়াওয়ের ফ্ল্যাগশিপ গ্লোবাল করপোরেট সোশ্যাল রেসপন্সিবিলিটি প্রোগ্রামের স্কেল-আপ সংস্করণ, ভবিষ্যতে আসিয়ানেও এ কর্মসূচি সম্প্রসারিত হবে।

এটি এখন স্বীকার করতেই হবে যে, হুয়াওয়ের ডিজিটাল প্রোগ্রাম ইন্দোনেশিয়ায় চীনের সফট পাওয়ার কর্মসূচির খুব বড় অংশ। এ ছাড়া চীনের বিআরআই বা বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ বাস্তবায়নের গুরুত্বপূর্ণ একটি দেশ। চীনা প্রযুক্তি জায়ান্টদের এসব কাজ চীনকে ইন্দোনেশিয়ার সমাজে ভালো ইমেজ প্রসারে সহায়তা করেছে। এখন ইন্দোনেশিয়ার ডিজিটালাইজেশন কর্মসূচিতে চীনের নাম সবখানে উচ্চারিত হচ্ছে।

ইন্দোনেশিয়ায় অ-ডিজিটাল অবকাঠামো প্রকল্পেও অনেক ক্ষেত্রে ডিজিটাল রূপ ধারণ করবে যেমন – রেল শিল্প। নিয়ন্ত্রণ ও সঙ্কেত সিস্টেমের পাশাপাশি স্মার্ট মনিটরিং সিস্টেম ব্যবহৃত হবে। ই-কমার্স ট্রেডিং প্ল্যাটফর্মও ডিজিটাল হয়ে চীনা পণ্য রফতানিতে অবদান রাখবে।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, চীন ইন্টারনেট ও প্রযুক্তির সাথে সম্পর্কিত হওয়ায় চীন, চীনা নীতি ও অনুশীলন সম্পর্কেও তথ্য প্রচার করতে সক্ষম। এটি ইঙ্গিত করে যে, বেইজিং কেবল প্রযুক্তিগত অবকাঠামো ও জ্ঞানই রফতানি করছে না, চীনের চিন্তাধারা ও নীতিও রফতানি করছে।

বেইজিং ইন্দোনেশিয়ার সাথে নাতুনা দ্বীপপুঞ্জ ও দক্ষিণ চীন সাগরের অন্যান্য অংশ নিয়ে আঞ্চলিক বিরোধে জড়িত এবং জাকার্তা সামরিক সক্ষমতা বাড়াতে চায়। ২০২১ সালে একটি চীনা সমীক্ষা জাহাজ এবং দুটি সশস্ত্র উপক‚ল গার্ড কাটার কয়েক সপ্তাহ ধরে ইন্দোনেশিয়ার জলসীমায় ২০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছিল। এটি জাতীয় সার্বভৌমত্বের নয় – ড্যাশ লাইন প্রয়োগ করার চীনের প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হয়েছিল। ইন্দোনেশিয়ার টহল জাহাজ প্রায়ই জলে চীনা জাহাজের মুখোমুখি হয়, জাকার্তা সেগুলোকে অর্থনৈতিক এলাকায় বিচরণের অধিকার বলে দাবি করে।

শক্তিশালী সামরিক বাহিনী গঠনের উদ্দেশে ইন্দোনেশিয়া বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনীতে রাফায়েল যুদ্ধবিমান ও নৌ গ্রুপ আক্রমণকারী সাব-মেরিন আনতে চায়। ইন্দোনেশিয়া ১০ ফেব্রুয়ারি ৪২টির মধ্যে ছয়টি রাফায়েল জরুরি সরবরাহে ফ্রান্সের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। ফ্রান্স জানিয়েছে, এ অস্ত্রের চুক্তির মূল্য ৮.১ বিলিয়ন ডলার। ভারতের পর এ অঞ্চলে ইন্দোনেশিয়া দ্বিতীয় দেশ রাফায়েল বিমান কিনছে। বিমানের ক্রু প্রশিক্ষণ, বেশ কয়েকটি বিমান ঘাঁটির জন্য সাজসরঞ্জাম সহায়তা, দুটি পূর্ণ মিশন সিমুলেটরসহ প্রশিক্ষণকেন্দ্রও চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। রাফায়েল যুদ্ধবিমান আন্তর্জাতিক বাজারে খুব জনপ্রিয়।

এরই মধ্যে বাইডেন প্রশাসন ইন্দোনেশিয়ার কাছে ৩৬টি এফ-১৫ ফাইটার বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে। পেন্টাগনের তথ্য মতে, চুক্তিটির মূল্য ১৩.৯ বিলিয়ন ডলার। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে – ইন্দোনেশিয়া, ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৭০টিরও বেশি জেট কিনতে চায়।

আরও পড়তে পারেন-

প্রতিরক্ষা চুক্তির অংশ হিসেবে ফরাসি নেভাল গ্রুপ ইন্দোনেশিয়ার সাথে সাব-মেরিন গবেষণা ও উন্নয়ন সহযোগিতায়ও একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। কৌশলগত অংশীদারিত্ব ইন্দোনেশিয়ার সামুদ্রিক প্রতিরক্ষা বাড়াবে বলে আশা করা হচ্ছে। ইন্দোনেশিয়া নিজ নৌবাহিনীর নেভাল গ্রুপের জন্য দুটি স্কোর্পিন সাব-মেরিন সংগ্রহেরও চেষ্টা করছে।

বিআরআই বা বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের সক্রিয় বাস্তবায়নের সময় ২০১৬ সালে চীনের ধর্মবিশ্বাস ভিত্তিক কূটনীতি বা ফেইথ ডিপ্লোম্যাসি শুরু হয়েছিল। এর কিছু প্রধান উপাদান রয়েছে। যেমন – সন্ত্রাসবাদ ও বিচ্ছিন্নতাবাদের প্রেক্ষাপটে জিনজিয়াং নীতি প্রণয়ন। ২০১৮ সালে চীনের জিনজিয়াং নীতির বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি প্রতিবাদের প্রতিক্রিয়ায় ইন্দোনেশিয়ায় চীনা রাষ্ট্রদূত জিয়াও কিয়ান, ‘জিনজিয়াংয়ের বাস্তব অবস্থা’ সম্পর্কে অবহিত করেছেন। সফরের সময়, তিনি উইঘুরদের বিরুদ্ধে চীনের দমনপীড়নকে বিচ্ছিন্নতাবাদ ও সন্ত্রাসবিরোধী প্রচেষ্টা হিসেবে প্রণয়ন করেন। সেইসাথে পারস্পরিক শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বেইজিংকে মধ্যপন্থী ইন্দোনেশীয় মুসলমানদের মিত্র হিসেবে উপস্থাপন করেন। ২০১৯ সালে ইন্দোনেশিয়ার মুহাম্মাদিয়া সংস্থা চীনের জিনজিয়াং নীতির সমালোচনা করে খোলা চিঠি জারির পর জাকার্তা বিষয়টি নিয়ে মৌন ছিল। মুহাম্মাদিয়া, কাউন্সিল অব উলামা ইন্দোনেশিয়া, বিভিন্ন সংস্থা ও শীর্ষ আলেমদের উইঘুরদের অবস্থা দেখতে জিনজিয়াং সফরের ব্যবস্থা করে থাকে চীন।

২০১৫ সালে চীনা দূতাবাস ইন্দোনেশিয়ার এতিমখানাগুলোতে সাত হাজার ডলার দান করে, ২০১৮ সালে পশ্চিম জাভার গ্রামগুলোতে স্যানিটেশন সুবিধা নির্মাণে অর্থায়ন করে। চীন মুহাম্মাদিয়ার সাথে শিক্ষাসংক্রান্ত বেশ কয়েকটি সহযোগিতামূলক প্রকল্পে কাজ করে। ইন্দোনেশিয়াজুড়ে ৩২টি মুহাম্মাদিয়াহ বিশ্ববিদ্যালয় চীনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সহযোগিতা করছে। বিশ্বাসভিত্তিক কূটনীতিতে চীনের প্রচেষ্টা ফলপ্রসূ প্রমাণিত হয়েছে।

ইন্দোনেশিয়ায় এমন ধারণা রয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্র, বিশেষ করে ওয়াশিংটনের সফট পাওয়ার কমছে। চীন মিডিয়া ও শিক্ষাগত সফট-পাওয়ারও প্রসারিত করেছে, যা বেইজিংয়ের ভাবমর্যাদা সংরক্ষণের প্রচেষ্টায় অবদান রাখতে পারে।

আসল কথা হলো, কৌশলগত প্রতিযোগিতায় চীন ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়ই ইসলামী সংগঠনের সমর্থনকে লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে। কিন্তু ইন্দোনেশিয়ায় চীনের ইসলামী কূটনীতি ফল পেলেও মার্কিন প্রচেষ্টা হালে পানি পায়নি। কাশ্মির, আসাম, হায়দরাবাদে মুসলিম নিপীড়ন, হিজাব বিরোধিতা, আফগানিস্তানে গণহত্যা, ইয়েমেন, ফিলিস্তিন, সিরিয়া ও লেবাননে মুসলমানদের দুদর্শা কি এর কারণ?

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত যুগ্মসচিব ও গ্রন্থকার।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।