Home ধর্মতত্ত্ব ও দর্শন পরামর্শের ভিত্তিতে কাজ করার উপকারিতা

পরামর্শের ভিত্তিতে কাজ করার উপকারিতা

।। আল্লামা নাজমুল হাসান কাসেমী ।।

পরস্পরে পরামর্শের মাধ্যমে কাজ করলে কাজ সহজ হয়। সাথীদের আত্মবিশ্বাস ঠিক থাকে। অন্তরের মাঝে পরস্পরের প্রতি মুহাব্বত সৃষ্টি হয়। মিলে-মিশে কাজ করার পরিবেশ সৃষ্টি হয়। অন্যথায় ভুল বুঝাবুঝি ও বিভ্রান্তি ছড়ায়। মতবিরোধ সৃষ্টি হয়। হুযূর (সা.)কে ওহী বহনকারী হওয়া সত্ত্বেও আল্লাহ তায়ালা সাহাবাদের সাথে পরামর্শ করার নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- شَاوِرْهُمْ فِى الْأَمْرِ “তাদের সাথে নিজেদের বিষয়ে পরামর্শ করুন”।

মহান আল্লাহ অপর আয়াতে ইরশাদ করেন- وَأَمْرُهُمْ شُوْرَا بَيْنَهُمْ “তাদের কাজ পরস্পরে পরামর্শের মাধ্যমে নির্ধারিত হয়” আল্লাহর এই আদেশকে রাসূল (সা.) অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বর্ণনা করেন। ইমাম তিরমীযী (রাহ.) হযরত আবু হুরায়রা (রাযি.)এর সূত্রে বর্ণনা করেন-

ما رأيت احدا مشورة لاصحابه من رسول الله (ترمذى رشيديه:১/২০৪)।

“আমি আমার সাথীদের মাঝে রাসূল (সা.)এর থেকে বেশি পরামর্শকারী আর কাউকে দেখিনি”। সাহাবায়ে কেরামের নিকটও পরামর্শের অনেক গুরুত্ব ছিল। তাই সর্বাবস্থায় সকলের সাথে আমাদেরও মিলে-মিশে কাজ করা উচিত।

পরস্পরে পরামর্শের প্রয়োজনীয়তার প্রতি লক্ষ্য রাখা উচিত। যেন আমাদের যোগ্যতা উন্নত মানবতা ও সহনশীল সমাজ বিনির্মাণে ব্যয় হয়। নতুন/পুরাতন যে কোন কাজে পরামর্শের ভিত্তিতে সবার কাছ থেকে মতামত নিবে। সবাইকে জিজ্ঞেস করবে। এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে প্রতিষ্ঠানের স্বার্থের প্রতি লক্ষ্য রেখে মতামত দিবে। গভীর চিন্তা-ভাবনার পর যে সিদ্ধান্তের মাঝে প্রতিষ্ঠানের কল্যাণ দেখতে পাবে তাই গ্রহণ করবে। ব্যক্তি স্বার্থের প্রতি দৃষ্টিপাত করবে না।

তারপর সকলেই আমীর সাহেবের কথা শুনে আল্লাহর দিকে রুজু করবে। এবং নিজের স্বার্থের প্রতি মোটেও দৃষ্টি দিবে না। প্রতিষ্ঠানের স্বার্থকে সামনে রেখে সঠিক সিদ্ধান্ত নিবে। এমন যেন না হয় যে, বৈঠকের পূর্বেই এক সিদ্ধান্ত নির্ধারণ করা হল এবং বৈঠকেও পূর্বনির্ধারিত সেই সিদ্ধান্তের উপরই রায় হল।

এই পদ্ধতিতে অনাস্থা ও অসন্তোষ ছড়ায়। কাজেই পরামর্শের ভিত্তিতে স্বচ্ছ্বতার সাথে প্রতিষ্ঠানের স্বার্থকে চূড়ান্ত বিবেচনায় নিয়ে সিদ্ধান্ত নিবে এবং সেই সিদ্ধান্ত সকলেই মেনে নেবে এবং তদনুযায়ী কাজ শুরু করবে। মনে রাখবে যে, আমাদের কাজ হচ্ছে খেয়াল পেশ করা এবং আমীর সাহেবের কাজ হল সিদ্ধান্ত দেয়া।

যদি সিদ্ধান্ত নিজের খেয়ালের বিপরীত হয় তাহলে মন খারাপ করবে না। বরং চিন্তাধারা এমন হওয়া চাই যে, ‘ভালোই হয়েছে, লোকেরা আমার খারাবী থেকে বেঁচে গিয়েছে’। বাইরের কেউ বৈঠকে কী আলোচনা হয়েছে তা সম্পর্কে জানার অধিকার রাখে না। তাদের অধিকার শুধুমাত্র পরামর্শক্রমে গৃহীত সিদ্ধান্তের উপর আমল করা।

আরও পড়তে পারেন-

মুফতি মাহমূদ হাসান গাঙ্গুহী (রাহ.) বলতেন, পরামর্শ দিতে আমার অনেক ভয় হয়। তাই আমি সর্বদা কামনা করি যে, কেউ যেন আমার কাছে পরামর্শ না চায়। কিন্তু যখন কেউ পীড়াপীড়ি করে, তখন আমি চিন্তা করি যে, তার স্থানে আমি হলে কী আশা করতাম? সেই পরামর্শই তাকে দিতাম। এবং অন্তর থেকে দোয়া করতাম যে, ‘হে আল্লাহ! এই পরামর্শে তার জন্য কল্যাণ রাখ।’ যদি আমার পরামর্শে লাভবান হত তখন আমি খুশি হতাম না। বরং এটাকে আল্লাহর মেহেরবানী মনে করতাম। আর যদি আমার পরামর্শ অনুযায়ী কাজ না করে অন্যের পরামর্শে বা নিজ খেয়াল অনুযায়ী কাজ করত, তাহলে আমি আল্লাহর শোকরিয়া আদায় করতাম যে, সে আমার খারাবী থেকে বেঁচে গেল।

আর যদি আমার কথা অনুযায়ী কাজ করে ক্ষতিগ্রস্ত হত, তাহলে আমার খুব খারাপ লাগত। আমি ব্যকুল হয়ে যেতাম যে, আমার কারণে সে ক্ষতিগ্রস্ত হল। যদি সে পুনরায় আমার নিকট আসত তাহলে তাকে বিদায় না দিয়ে আবার চিন্তা করতাম যে, তার স্থানে এই ভুলটা আমি করলে কী চাইতাম। সেই অনুযযায়ী পরামর্শই তাকে দিতাম এবং তার কল্যাণ কামনা করতাম। মোটকথা, মুফতী সাহেব (রাহ.)এর দৃষ্টি সর্বদা নি¤েœাক্ত হাদীসমূহের উপর থাকত-

لا يؤمن أحدكم حتى يحب لأخيه ما يحب لنفسه، (بخارى عن انس১/২ رقم:১৩

“তোমাদের মাঝে কোনো ব্যক্তি ততক্ষণ পর্যন্ত পরিপূর্ণ মু’মিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না সে তার ভাইয়ের জন্য তাই পছন্দ করে যা নিজের জন্য পছন্দ করে।”

المستشار مؤتمن، (ابو داؤد:২/২৯৯ رقم: ১১৯، ترمذى:২/৬০ رقم: ২৩৬৯)

“যার সাথে পরমর্শ করা হয় সে আমানতদার হয়ে যায়।” তার জন্য উচিত ঐ পরামর্শই দেয়া – যার মাঝে তার কল্যাণ নিহিত বলে অনুমিত হয়। সুতরাং যেনে শুনে অকল্যাণের পরামার্শ দিলে আমানতের খেয়ানত হবে।

الدين النصيحة، (بخارى:১/৩، مسلم:১/৫৪ رقم:৯৫)

“কল্যাণ কামনার নামই দ্বীন”।

উপরোক্ত হাদীসসমূহের উপর আমল করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অতঃপর হযরত (মুফতি মাহমূদ হাসান গাঙ্গুহী) বলেন, যদি আমরা হাদীসের কথা অনুযায়ী আমল শুরু করি তাহলে কখনো পরস্পর ঝগড়া-ঝাটি হবে না। আর মতবিরোধ, পরনিন্দা, চোগলখোরী, দ্বন্দ্ব ইত্যাদি খারাপ বিষয় থেকে আমরা বেঁচে যাব।

লেখক: প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক, জামিয়াতুন নূর-উত্তরা, ঢাকা, প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল- ঢাকা উত্তরা রওজাতুস সালিহাত মহিলা মাদ্রাসা, খতীব-  উত্তরা ১২নং সেক্টর বায়তুন নূর জামে মসজিদ এবং উপদেষ্টা- উম্মাহ ২৪ ডটকম।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।