Home পরিবার ও সমাজ মাদকাসক্তি যুবসমাজ ধ্বংসের হাতিয়ার

মাদকাসক্তি যুবসমাজ ধ্বংসের হাতিয়ার

।। আলহাজ্ব সৈয়দ জহির উদ্দীন ।।

মাদক যুব সমাজ ধ্বংসকারী অস্ত্র। এটি একটি জঘন্য নেশা জাতীয় দ্রব্য। এর ফলে যুবসমাজ তিলে তিলে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যায়। বাবা-মা হারায় তার সোনার ছেলেকে। বোন হারায় তার আদরের ভাইকে। স্ত্রী তার প্রিয় স্বামীকে, সন্তানরা হারায় তার প্রাণাধিক প্রিয় বাবাকে। মাদক নিয়ে কথা বলতে গেলেই প্রথমে জানতে হবে, এটি কি জিনিস?

মাদক এমন একটি জিনিস, যা মানুষের স্বাভাবিক শারীরিক ও মানসিক অবস্থায় প্রভাব বিস্তার করে। এ জন্যই এ জিনিসের প্রতি মানুষের আসক্তি বাড়ে। মাদকাসক্তের এ অবস্থায় ব্যবহারকারীর শারীরিক ও মানসিক বিপর্যয় বাড়িয়ে তোলে। বর্তমানে আমাদের দেশের যুবসমাজ তথা সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ এমনকি তরুণীরাও মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছে। গাঁজা, আফিম, হেরোইন, ইয়াবা, সীসা, প্যাথেডিন, ফিটামিন, ফেনসিডিল ও মেনড্রেক্স নামের মাদকদ্রব্যে বাজার আজ সয়লাব। দেশের ভবিষ্যতের কর্ণধার ছাত্র ও যুব সমাজের একটি অংশ মাদকাসক্ত হয়ে নৈতিকতা হারিয়ে পাশবিক আচরণে লিপ্ত হচ্ছে অহরহ। আর এই মাদকাসক্তির সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। যার ফলে আইন-শৃখলার সার্বিক অবস্থার অবনতি ঘটছে ক্রমশ।

জাতি গঠনের কারখানা, দেশের শিক্ষাঙ্গনগুলোতে আজ নানান অপরাধ কর্মকাণ্ডসহ চাঁদাবাজি, খুন, রাহাজানি, গণধর্ষণ, অপহরণ ইত্যাদি অপকর্ম এই মাদকদ্রব্য ব্যবহারেরই ফসল। মাদকাসক্তরা নৈতিকতা হারিয়ে ফেলে বলেই যে কোন জঘন্য থেকে জঘন্যতম আচরণ করতে তারা দ্বিধাবোধ করে না। বিত্তশালী পরিবারের সন্তানেরা অবাধে গ্রহণ করে মাদকদ্রব্য। আর তাদের পাশাপাশি দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তানরাও বাদ যাচ্ছে না মাদকাসক্তের ভয়াল থাবা থেকে। তারা বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে লিপ্ত থাকে বলেই দেশের সমাজের এমনকি পরিবারেরও কোন কাজে আসে না তারা। আর এই কালো জগতের মূলে কাজ করছে ধর্মীয় চেতনা ও মূল্যবোধের অবক্ষয়। অবশ্যই ইসলাম ধর্মের ন্যায় অন্য কোন ধর্মে মাদক সেবনের উপর কোন নিষেধাজ্ঞা নেই বলেই পাশ্চাত্য দেশসমূহে মাদকদ্রব্যের অবাধ ব্যবহার চলে বলেই সেখানকার অপরাধ জগতটা বিশাল। আর আমাদের দেশ একটি মুসলিম প্রধান দেশ। এখানে ধর্মীয়ভাবে যে রকম মাদকদ্রব্যে বিধিনিষেধ রয়েছে তেমনি রাষ্ট্রীয়ভাবেও রয়েছে এর প্রতি নানা বিধিনিষেধ (যদিও সঠিক প্রয়োগ নেই)। মাদকদ্রব্যের কবলে পড়ে আজ দ্রুত তরুণ ও কিশোর সমাজ পর্যন্ত ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে। তাই আজ সমাজের সচেতন নাগরিকরা চিন্তিত ও উদ্বিগ্ন।

ইসলামে মাদকদ্রব্য ও নেশা জাতীয় দ্রব্য হারাম, যা মুসলমান মাত্রই জানার কথা। কিন্তু পাশ্চাত্য সাংস্কৃতিতে আকৃষ্ট তথাকথিত বিত্তশালীরা আভিজাত্যের মুখোশ পরে মাদক সেবনকে তাদের আভিজাত্যের অংশ মনে করে এবং তা ধীরে ধীরে উঁচুনীচু বিভিন্ন সমাজে তাদের জীবাণু বিস্তার করছে। এভাবে আজ দেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে পড়েছে মাদক সেবনের এই দুরারোগ্য ব্যাধি। তারা মুসলমান নামের কলংক। কারণ, তাদের যদি সামান্যতমও ইসলামের প্রতি দরদ অন্তরে থাকত, তাহলে ধর্মীয় বিধিনিষেধের কথা চিন্তা করে এ পথ থেকে দরে থাকত। তাদের অন্তরে ধর্মীয় মূল্যবোধের অভাব রয়েছে বলেই মাদকদ্রব্য ব্যবহার বা সেবনে তাদের কোন দ্বিধাবোধ হয় না।

বিভিন্ন পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ১৯৭৮ সালের পর থেকে এদেশে মাদকাসক্তির সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। যা সত্যিই দেশ, জাতি তথা ধর্মের উপর সরাসরি আঘাত ও রীতিমত উদ্বেগ উৎকণ্ঠার বিষয়। ধর্মীয় মূল্যবোধ, ঈমানী চেতনা ও অন্তরে দৃঢ়তা নেই বলেই অসংখ্য নাগরিক ধর্মীয় বিধিনিষেধের বেড়াজাল ছিন্ন করে হারাম দ্রব্য গ্রহণ করতে দ্বিধা করছে না। এ জন্য রাষ্ট্র ও সমাজের পাশাপাশি ধর্মীয় অনুশাসন নিয়ে মাদকদ্রব্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। জনগণের কাছে ধর্মীয় মূল্যবোধ প্রবেশ করাতে হবে। তাদের অন্তরে ধর্মীয় চেতনা জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করতে হবে। চিকিৎসকদের মতে বাংলাদেশে মাদকাসক্তির সংখ্যা প্রায় ৫০ লক্ষাধিক। আবার তার মধ্যে ১ লক্ষাধিক নেশাগ্রস্ত শুধু রাজধানী ঢাকাতেই বসবাস করে। পত্রপত্রিকার খবরে প্রকাশ ১৬ থেকে ৩০ বছরের বয়সীরাই অধিক নেশাগ্রস্ত, আবার প্যাথেডিন নামক মাদক ব্যবহারকারীদের মধ্যে মহিলাদের সংখ্যা বেশী।

অধিকাংশ মানুষের ধারণা, বেকারত্ব, হতাশা, বন্ধু-বান্ধবদের প্ররোচনা, কৌতুহল, অসৎ সঙ্গের পাল্লায় পড়ে দুয়েকবার মাদকে আসক্ত হয়ে পড়লে সে আর সহজে ছাড়তে পারে না। অপরদিকে দেশে মাদকবিরোধী আইন প্রয়োগ না থাকায়, ধর্মীয় জ্ঞান, ভয় ও ধর্মীয় মূল্যবোধ এবং ধর্মীয় চেতনার অভাবে এসব মাদক ব্যবহার যুব সমাজে দিন দিন বেড়ে চলেছে। কেননা, জীবনে যত হতাশাই আসুক না কেন, ধর্মীয় চেতনা আল্লাহর ভয় অন্তরে থাকলে কোন মুসলিম পরিবারের সন্তান হারাম ও অবৈধ মাদকদ্রব্য সেবনের কোন সাহস পেত না। মানুষের শরীর বা অন্য যে কোন উপকারী কোন দ্রব্যকেই ইসলাম হারাম ঘোষণা করেনি। যে দ্রব্য ব্যবহারে মানুষ চরম ক্ষতির সম্মুখীন হবে, শুধু সেগুলোকেই নিষিদ্ধ করা হয়েছে ইসলামে। আর এটি বর্তমান বৈজ্ঞানিকভাবেও প্রমাণিত হয়েছে যে, ইসলাম বিজ্ঞান সম্মত। আর ইসলাম বাদ দিয়ে কোন বিজ্ঞান বিজ্ঞান হতে পারে না এবং সেগুলো বিজ্ঞানও বলা যাবে না।

মাদকদ্রব্য ব্যবহার মানুষের শরীর এবং স্বাস্থ্যের জন্যও বড় ক্ষতিকর। দেখা যায়, মাদকাসক্তরা মাদক জাতীয় গুঁড়ো মাটির কলকি বা বিড়ি সিগারেটের মসলার সাথে মিশিয়ে ধোঁয়া টেনে সেবনের পর পায় মানসিক আনন্দ; কিন্তু পরক্ষণে ধরা পড়ে এ সবের কুফল। আর এই সব নেশা জাতীয় দ্রব্য ব্যবহারের ফলে তারা হারিয়ে ফেলছে তাদের কার্যক্ষমতা এবং ধ্বংস হচ্ছে তাদের বিবেক বুদ্ধিসহ কার্যক্ষমতা। সময় থাকতে মাদকের বিরুদ্ধে জাতিকে সচেতন ও সজাগ হতে হবে। মাদকের ক্ষতিকর হাত থেকে বাঁচাতে হবে জাতিকে, নতুবা অচিরেই এর ফলে ধ্বংস হবে আমাদের যুব শক্তি। এ ব্যাপারে আপনাকে আমাকেই এগিয়ে আসতে হবে প্রথমে এবং তার পাশাপাশি সরকারকেও এগিয়ে আসতে হবে মাদকদ্রব্য প্রতিরোধে।

ভয়ঙ্কর মাদকের হাত থেকে আল্লাহ আমাদের রক্ষা করুন। আমীন।

লেখক: প্রকাশক- উম্মাহ ২৪ ডটকম, সিইও- এম.জেড. ট্রাভেলস এন্ড ট্যুরস এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক- আল-বাশার ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, পুরানা পল্টন, ঢাকা।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।