ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের জেরে যুদ্ধ থেকে বাঁচতে স্বামীর সাথে অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড গাজা উপত্যকায় আশ্রয় নিয়েছেন ইউক্রেনীয় নাগরিক ভিক্টোরিয়া সাইদাম।
বর্তমানে ২১ বছর বয়সী ভিক্টোরিয়া ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের দুই শ’ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমের একটি শহর ভিননেৎসায় জন্মগ্রহণ করেন। ভিক্টোরিয়া ব্রেইজ নামে জন্ম নেয়া এই ইউক্রেনীয় নারী কিয়েভে ফার্মাসিতে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য গেলে সেখাননে ফিলিস্তিনি মেডিক্যাল শিক্ষার্থী ইবরাহিম সাইদামের সাথে তার পরিচয় হয়।
২২ বছর বয়সী ইবরাহিম অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড গাজা উপত্যকার বুরাইজ শরণার্থী শিবিরে জন্ম নেন।
পরিচয় থেকে প্রণয়ে সম্পর্ক গড়ানোর পর দুই বছর আগে তারা বিয়ে করেন।
বিয়ের পরপরই ভিক্টোরিয়া গাজায় তার স্বামীর পরিবারের সাথে সাক্ষাত যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু নিজেদের অধ্যয়নের কারণে তারা তখনই গাজায় যেতে পারেননি।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর এই সাক্ষাত অবশেষে সম্ভব হলো।
বার্তা সংস্থা এএফপিকে দেয়া সাক্ষাতকারে ভিক্টোরিয়া বলেন, ‘আমরা বুঝতে পারছিলাম আগামীকাল কী হবে তার নিশ্চয়তা নেই। প্রতিদিনই মৃত ও মৃত্যু পথযাত্রীর সংখ্যা বাড়ছিলো।’
আরও পড়তে পারেন-
- প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষের বিবাহ্ সম্পর্কে শরয়ী বিধান
- ইসলামের আলোকে নারীর কর্মপরিধি
- সালাম: উম্মাহর ঐক্য ও সংহতি রক্ষার অন্যতম বাহন
- বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ: বাস্তবতা ও অপপ্রচার
- সকালের ঘুম যেভাবে জীবনের বরকত নষ্ট করে
তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী ও আমি ইউক্রেনের চেয়ে নিরাপদ কোনো স্থানের সন্ধান করছিলাম। আমরা গাজাকেই বেছে নিলাম।’
সাইদাম দম্পতি প্রথমে কিয়েভ ছেড়ে ভিননেৎসায় যান। ৭ মার্চ শহরটিতে রাশিয়ার বোমা বর্ষণের আগেই তার রোমানিয়া সীমান্তের উদ্দেশে যাত্রা করেন। মিনিবাসে ও পায়ে হেটে এই পথ তারা অতিক্রম করেন।
রোমানিয়া থেকে মিসরের রাজধানী কায়রোতে তারা বিমানে করে যান। মিসরের সিনাই সীমান্তে রাফাহ ক্রসিং পার হয়ে তারা গাজায় প্রবেশ করেন।
বার্তা সংস্থা আনাদোলু এজেন্সির কাছে ভিক্টোরিয়া বলেন, ‘আমাদের বন্ধু ও পরিবারকে পেছনে রেখে আমরা এসেছি এবং তাদের কি অবস্থা তার কিছুই আমরা জানি না।’
গাজায় ইসরাইলি হামলার প্রবণতায় কিছুটা শঙ্কিত ভিক্টোরিয়া। তবে আপাতত ইউক্রেনের থেকে অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ড নিরাপদ বলে মনে করেন তিনি।
নিজের দেশ ছেড়ে আসার ’কঠিন’ হলেও স্বামীর পরিবারের সাথে ‘স্বস্তি’ অনুভব করছেন বলে জানান তিনি।
ইবরাহিম জানান, ইউক্রেনের বর্তমান পরিস্থিতি ‘ভয়াবহ’ ও ‘গভীরভাবে বিপর্যস্ত’ যার সাথে গাজায় বিভিন্ন সময় ইসরাইলি আগ্রাসনের মিল রয়েছে।
তিনি জানান, যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরপরই তারা ইউক্রেনে ফিরে যেতে আগ্রহী যাতে স্ত্রীর পরিবারের সদস্যদের খোঁজ নেয়া সম্ভব হয় এবং তারা তাদের অধ্যয়ন শেষ করতে পারেন।
বর্তমানে দুই জনই তাদের বিভাগে চতুর্থ বর্ষে রয়েছেন।
গত ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে পূর্ব ইউক্রেনের রুশপন্থী বিদ্রোহী ও সরকারি বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এর জেরে ২১ ফেব্রুয়ারি বিদ্রোহীদের দুই রাষ্ট্র ‘দোনেৎস্ক পিপলস রিপাবলিক’ ও ‘লুহানস্ক পিপলস রিপাবলিক’কে স্বীকৃতি দিয়ে শান্তি রক্ষায় ওই অঞ্চলে সৈন্য পাঠায় রাশিয়া।
পরে ২৪ ফেব্রুয়ারি রুশপন্থী বিদ্রোহীদের সহায়তার লক্ষ্যে রুশ স্থল, নৌ ও বিমান বাহিনীকে ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার অভিযানের নির্দেশ দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনকে পুতিন ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ হিসেবে বর্ণনা করছেন। ইউক্রেনকে ‘বেসামরিকীকরণ’ ও ‘নাৎসিমুক্ত’ করার জন্যই তিনি এই অভিযান চালিয়েছেন বলে দাবি করছেন।
সূত্র : আনাদোলু এজেন্সি ও আরব নিউজ।
উম্মাহ২৪ডটকম: আইএএ