Home ইসলাম ইসলামের দৃষ্টিতে জাতিগত বৈষম্য ও গণহত্যা

ইসলামের দৃষ্টিতে জাতিগত বৈষম্য ও গণহত্যা

।। আতাউর রহমান খসরু ।।

২৫ মার্চ ১৯৭১। ভয়াবহ এক গণহত্যার শিকার হয় বাঙালি জাতি। আর দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই গণহত্যার নেতৃত্ব দেয় দেশের তৎকালীন শাসকগোষ্ঠী। ২৬ মার্চ স্বাধীনতার লক্ষ্যে মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে বাঙালি জাতি।

ইসলামের দৃষ্টিতে যেকোনো মানবহত্যাই গুরুতর অপরাধ। আর যখন তা গণহত্যায় পরিণত হয় তখন তা জঘন্যতম অপরাধে রূপ নেয়। পবিত্র কোরআনে গণহত্যায় লিপ্ত অত্যাচারী শাসক ফেরাউনের ভয়াবহ পরিণতি তুলে ধরা হয়েছে। সে নিজ দেশের একটি বিশেষ শ্রেণি-গোষ্ঠীকে দুর্বল করে রাখতে চেয়েছিল। তাদের ওপর গণহত্যা চালিয়েছিল। পরিণামে সে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।

মানুষের মূল্য পৃথিবীর চেয়েও বেশি : পবিত্র কোরআনে মানুষের জীবনের মূল্য পৃথিবীর চেয়েও বেশি বলা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘মানুষ হত্যা বা পৃথিবীতে ধ্বংসাত্মক কাজ করা ছাড়াই যে ব্যক্তি কাউকে হত্যা করল, সে যেন পৃথিবীর সব মানুষকেই হত্যা করল, আর কেউ কারো প্রাণ রক্ষা করলে সে যেন সব মানুষের প্রাণ রক্ষা করল। ’ (সুরা মায়িদা, আয়াত : ৩২)

আরও পড়তে পারেন-

হত্যাকারীর প্রতি আল্লাহর অভিশাপ : যারা মানুষ হত্যা করে আল্লাহ তাদের প্রতি রুষ্ট হন এবং তাদের অভিশাপ করেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘যে কোনো মুমিনকে ইচ্ছাকৃত হত্যা করে, তার শাস্তি জাহান্নাম, সেখানে চিরদিন থাকবে। আল্লাহ তার প্রতি রুষ্ট হবেন, তাকে অভিশাপ করবেন এবং তার জন্য প্রস্তুত করবেন মহাশাস্তি। ’ (সুরা নিসা, আয়াত : ৯৩)

বৈষম্য অগ্রহণযোগ্য : ফেরাউন নিজের প্রজাদের ভেতর বনি ইসরাঈলকে হীন ও দুর্বল করে রাখার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছিল। কোরআনে এই ঘটনাকে বিপর্যয় সৃষ্টির প্রচেষ্টা আখ্যা দেওয়া হয়েছে এবং তার অপ্রচেষ্টার নিন্দা করে বলা হয়েছে, ‘ফেরাউন দেশে পরাক্রমশালী হয়েছিল এবং তাদের অধিবাসীদের বিভিন্ন শ্রেণিতে বিভক্ত করে তাদের একটি শ্রেণিকে শক্তিহীন করেছিল। …সে ছিল বিপর্যয় সৃষ্টিকারী। ’ (সুরা কাসাস, আয়াত : ৪)

গণহত্যা ফেরাউনের উত্তরাধিকার : ফেরাউন নবী মুসা (আ.)-এর আগমন প্রতিহত করতে বনি ইসরাঈলের ছেলেশিশুদের হত্যা করত এবং মেয়েদের জীবিত রাখত। যদিও তার হত্যা পুরুষে সীমাবদ্ধ ছিল, তবু এই নির্বিচার হত্যাকাণ্ডকে অবশ্যই গণহত্যা বলা যায়। ইরশাদ হয়েছে, ‘ফেরাউন…তাদের ছেলেসন্তানদের সে হত্যা করত এবং কন্যাসন্তাদের জীবিত ছেড়ে দিত। সে ছিল বিপর্যয় সৃষ্টিকারী। ’ (সুরা কাসাস, আয়াত : ৪)

অত্যাচার ভুল পথ : যারা জুলুম-অত্যাচারের পথে সমস্যার সমাধান করতে চায়, তারা জাতিকে ভুল পথে পরিচালিত করে। যেমন ফেরাউনের ব্যাপারে ইরশাদ হয়েছে, ‘ফেরাউন তার সম্প্রদায়কে পথভ্রষ্ট করেছিল এবং সৎপথ দেখায়নি। ’ (সুরা তাহা, আয়াত : ৭৯)

জুলুম ধ্বংসের পথ প্রশস্ত করে : জুলুম ও অত্যাচার মানুষের ধ্বংসের পথ প্রশস্ত করে। এ জন্য ফেরাউনের ধ্বংসের ব্যাপারে মুসা (আ.) উচ্চারণ করেছিলেন, ‘হে ফেরাউন, আমি তো দেখছি তোমার ধ্বংস আসন্ন। ’ (সুরা বনি ইসরাঈল, আয়াত : ১০২)

অত্যাচারের প্রতিবিধান ঈমানের দাবি : ইসলাম জুলুমের প্রতিবিধানে উৎসাহিত করে। আল্লাহ বলেন, ‘তবে অত্যাচারিত হওয়ার পর যারা প্রতিবিধান করে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না। ’ (সুরা : আশ-শুরা, আয়াত : ৪১)

অত্যাচারীর জন্য দোয়া করা নিষিদ্ধ : যারা মানুষের ওপর জুলুম ও অবিচার করে আল্লাহ তাদের পক্ষে দোয়া করতে নিষেধ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘…আর তাদের সম্পর্কে তুমি আমাকে কিছু বোলো না, যারা জুলুম করেছে। তারা নিমজ্জিত হবে। ’ (সুরা : মুমিনুন, আয়াত : ২৭)

কোনো নিপীড়ন চিরস্থায়ী হয় না : অত্যাচারীরা নিজেদের ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব চিরস্থায়ী মনে করে। কিন্তু কোনো জুলুম ও নিপীড়ন চিরস্থায়ী নয়। ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি ইচ্ছা করলাম, সে দেশে যাদের হীনবল করা হয়েছিল তাদের প্রতি অনুগ্রহ করতে, নেতৃত্ব দান করতে এবং উত্তরাধিকারী করতে। ক্ষমতায় তাদের অধিষ্ঠিত করতে আর ফেরাউন, হামান ও তাদের বাহিনীকে তা দেখিয়ে দিতে, যা তারা তাদের থেকে আশঙ্কা করত। ’ (সুরা কাসাস, আয়াত : ৫-৬)

অত্যাচারীর জন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি : আল্লাহ অত্যাচারীকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেন। যেমন ফেরাউনের ব্যাপারে ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন তারা আমাকে ক্রোধান্বিত করল, আমি তাদের শাস্তি দিলাম এবং নিমজ্জিত করলাম তাদের সবাইকে। অতঃপর পরবর্তীদের জন্য আমি তাদের করে রাখলাম অতীত ইতিহাস ও দৃষ্টান্ত। ’ (সুরা : জুখরুফ, আয়াত : ৫৫-৫৬)

অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘কেবল তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে, যারা মানুষের ওপর অত্যাচার করে এবং পৃথিবীতে অন্যায়ভাবে বিদ্রোহাচরণ করে বেড়ায়, তাদের জন্য আছে মর্মন্তুদ শাস্তি। ’ (সুরা আশ-শুরা, আয়াত : ৪২)

আল্লাহই আশ্রয়দাতা : জুলুম, অত্যাচার ও অবিচার থেকে আল্লাহ তাঁর কাছে আশ্রয় চাইতে বলেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক, আপনি আমাদের অবিশ্বাসীদের অত্যাচারের পাত্র করবেন না। হে আমাদের প্রতিপালক, আপনি আমাদের ক্ষমা করুন। আপনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। ’ (সুরা মুমতাহিনা, আয়াত : ৫)

আল্লাহই ত্রাণকর্তা : আল্লাহই মানুষকে অত্যাচার থেকে নিষ্কৃতি দিতে পারেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘বলুন! আল্লাহই তোমাদের তা (অত্যাচারীর অত্যাচার) থেকে এবং সব দুঃখ-কষ্ট থেকে মুক্তি দেন। এর পরও কি তোমরা তার সঙ্গে শরিক করবে?’ (সুরা আনআম, আয়াত : ৬৪)

আল্লাহ সবাইকে জুলুম ও অবিচার থেকে রক্ষা করুন। আমিন।

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএম

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।