Home লাইফ স্টাইল অযৌক্তিক অনুরোধে ‘না’ বলবেন কীভাবে?

অযৌক্তিক অনুরোধে ‘না’ বলবেন কীভাবে?

ব্যক্তিগত ও পেশাদার জীবনে প্রতিনিয়তই আমরা নানা রকম অনুরোধের সম্মুখীন হই। বেশিরভাগ সময় অনুরোধগুলো যৌক্তিক হলেও, কখনো কখনো এর বিপরীত চিত্রও দেখা যায়। সাধারণত অযৌক্তিক অনুরোধের মধ্যে এমন সব কাজ থাকে যা আপনার জন্য দুঃসাধ্য বা কষ্টসাপেক্ষ। আবার স্থান-কাল-পাত্র বিবেচনা না করে অনেকে হুটহাট অনুরোধ করে বসেন, যা রক্ষা করতে আপনাকে বেগ পেতে হয়।

বাংলায় ‘অনুরোধে ঢেঁকি গেলা’ বলে একটি প্রবাদ আছে। যখন আপনি এসব অযৌক্তিক অনুরোধ ফেলতে পারেন না এবং নিজে চ্যালেঞ্জ নিয়ে হলেও তা রক্ষা করতে যান- সে অবস্থাকেই বুঝায় এই প্রবাদ। আবার দেখা যায়, নারীরা পুরুষের চাইতে তুলনামূলকভাবে এসব অনুরোধ বেশি পান। অনুরোধ আসতে পারে আপনার বস, সহকর্মী, ক্লায়েন্ট, বন্ধুবান্ধব বা সহযোগীর কাছ থেকে; এমনকি কোনোদিন যাকে দেখেননি, কিন্তু সুপারিশক্রমে আপনার কাছে এসেছে এমন মানুষের কাছ থেকেও অনুরোধ আসে।

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, কারো অনুরোধে ‘না’ বলবেন কীভাবে? নিচের ৬টি কৌশল অবলম্বনের মাধ্যমে বুঝতে পারবেন কিভাবে কারো অনুরোধের জবাব দেওয়া যায়।

১. সম্পর্ক মূল্যায়ন করা

কারো অনুরোধকে আপনি কতটা গুরুত্ব দিবেন তা ওই ব্যক্তির সাথে আপনার সম্পর্কের উপর নির্ভর করবে। গবেষণায় দেখা গেছে, কেউ একজন আগে আপনার অনুরোধ রেখেছে বলে আপনি যদি তার অনুরোধ রক্ষা করেন, তার প্রভাব কর্মজীবনের চাইতে ব্যক্তিজীবনেই বেশি পড়বে।

আর ক্ষমতাধর কেউ যদি আপনাকে অনুরোধ করেন, যেমন- অফিসের বস বা গুরুত্বপূর্ণ কোনো ক্লায়েন্ট, তাহলে এই অনুরোধ রক্ষায় আপনি কতটা চাপ অনুভব করছেন তা দেখতে হবে। তবে চাপ যে নিতেই হবে এমনটা কিন্তু নয়!

আগে পরিচয় নেই এমন কেউ যদি অনুরোধ করে তাহলে তা উপেক্ষা করা অনেক বেশি সহজ। আপনি সেই অনুরোধে কোনোরকম সাড়া না দিলেও অসুবিধা নেই।

২. কৌতূহলী হওয়া

কোনো অনুরোধ পেলে তার পেছনের উদ্দেশ্য এবং ওই ব্যক্তি কী চায় তা জানার চেষ্টা করুন, খোলাখুলি প্রশ্ন করুন। উদাহরণস্বরূপ- আপনার বস যদি আপনাকে সারা সপ্তাহ একটি বিশ্লেষণধর্মী কাজের পেছনে সময় দিতে বলেন, আপনি প্রশ্ন করতে পারেন- ‘এই বিশ্লেষণ থেকে আপনি ঠিক কী ফলাফল প্রত্যাশা করছেন?’ উত্তর জানার পর হয়তো দেখা গেল তারা যা চাইছেন, সেটি এই বিশ্লেষণের মাধ্যমে পাওয়া সম্ভব না। হয়তোবা অন্য কোনো উৎস কাজে লাগিয়ে প্রত্যশা অনুযায়ী ফলাফল বের করা সম্ভব। আবার আপনার বদলে অন্য কোনো দক্ষ কর্মীকেও সুপারিশ করতে পারেন। এভাবে আপনি অযৌক্তিক অনুরোধের চাপ কমিয়ে আনা সম্ভব।

৩. অপরপক্ষের মধ্যে সচেতনতা জাগিয়ে তোলা

অযৌক্তিক অনুরোধ পাওয়ার সবচেয়ে বিরক্তিকর দিক হলো, যিনি অনুরোধ করেছেন তিনি জানেনই না তার এই অনুরোধ যৌক্তিক নয়! তার অনুরোধ রক্ষা করতে একজন মানুষকে কতটা শ্রম দিতে হবে অথবা সেই কাজ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি-গোষ্ঠীর উপর এর প্রভাব কতখানি, সে সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণাই থাকে না। অনুরোধকারীর কাছে মনে হয় কাজটা খুব সহজ। কিন্তু আসলেই কি তাই?

তারা যা ভাবেন তার চাইতে অনেক বেশিই শ্রম দিতে হয় অনুরোধ রাখতে। বিশেষ করে যেসব সিনিয়র নেতা কর্মক্ষেত্র ছেড়ে এসেছেন, তাদের ক্ষেত্রে এটা আরো কঠিন হয়ে ওঠে।

আরও পড়তে পারেন-

এক্ষেত্রে কিছু কৌশল অবলম্বন করা যায়। বাড়তি এই কাজ যদি ক্ষমতাধর কারো সুপারিশে করতে হয়, তাহলে সরাসরি আপনি বলতে পারেন আপনার বসকে- “এই অনুরোধ রক্ষা করতে গেলে আমাদের টিমের পুরো সপ্তাহ সময় লেগে যাবে, ফলে আমরা ‘ক’ প্রজেক্টের দিকে সময় দিতে পারবো না। আপনি কি চান তবুও আমরা এই কাজটা করি?” অথবা অনুরোধকারীকে বলতে পারেন, “আমরা নিশ্চয়ই এই বাড়তি কাজটা করবো, কিন্তু তার জন্য আমাদের বাড়তি খরচও হবে। সেটা কি আপনি দিতে রাজি?”

তবে মনে রাখবেন, এই কথপোকথন খুব সাবধানে করতে হবে। কিন্তু অভ্যাস বা চর্চা করলে ধীরে ধীরে আপনিও এতে অভ্যস্ত হয়ে পড়বেন। তাই নিজের বৃহত্তর স্বার্থেই আপনাকে এই পর্যায় পার হয়ে আসতে হবে।

৪. নিজের সক্ষমতার সীমানা বুঝতে শেখা

কখনো কখনো এমন অনুরোধ আসে যা আপনার নিজস্ব মূল্যবোধ, কর্মজীবনের ভারসাম্য, সাম্যতা, পেশাদারিত্ব বা পারিবারিক জীবনে অনধিকার প্রবেশ করতে পারে। যে অনুরোধ আপনাকে রাগান্বিত বা বিরক্ত করে তোলে, সেটি স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয় যে এই কাজ আপনার নীতিবিরুদ্ধ। তাই অনুরোধ রক্ষার সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে আগে নিজের সীমাবদ্ধতা ও ক্ষমতা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে।

কখনো কখনো অনুরোধ শুধু অযৌক্তিকই নয়, অনুচিতও হয়ে থাকে। কোনো প্রতিষ্ঠান এতটাই কর্পোরেট হয়ে থাকে যে কোনো কর্মী অসুস্থ হয়ে হাসপাতালের বেডে শুয়ে থাকলেও বস হয়তো বললেন, ‘ল্যাপটপটা নিয়ে কিছু কাজ শেষ করে ফেলুন।’ তবে এ ধরনের অনুরোধ যেমন জঘন্য, তেমনই এখানে ‘না’ বলার সুযোগও বেশি!

৫. বিকল্প পদ্ধতি জানানো

যখন আপনি নিজে কোনো অনুরোধ রাখতে পারছেন না, তখন কাজ সংশ্লিষ্ট অন্য কোনো পন্থা আপনি নিজেই তাকে জানাতে পারেন। এতে সাপও মরবে, লাঠিও ভাঙবে না! আপনি কোনো উপযোগী সমাধান দিলে অনুরোধকারী ব্যক্তি খুশি থাকবেন এবং একই সাথে সচেতনও হবেন যে, বিকল্প সমাধানের পথও খোলা থাকে।

৬. আংশিক সাহায্যের চেষ্টা

ব্যক্তি যা অনুরোধ করছেন তাতে কিছুটা পরিবর্তন এনে যদি কাজটা সহজ করে তোলা যায়, তাহলে সেদিকে মনোযোগ দিতে পারেন। সরাসরি ‘না’ বলে দেওয়ার চাইতে আপনার সাধ্যের মধ্যে কিছুটা সাহায্য করতে পারেন। এর ফলে ওই ব্যক্তির সাথে সম্পর্কও খারাপ হবে না এবং ভবিষ্যতে ইতিবাচক যোগাযোগের পথ খোলা থাকবে।

সূত্র: হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ।

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএম

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।