Home ওপিনিয়ন ভারতই ‘ঋণের ফাঁদে’? তা ফেলল কোন ‘চীন’!

ভারতই ‘ঋণের ফাঁদে’? তা ফেলল কোন ‘চীন’!

।। গৌতম দাস ।।

প্রধানমন্ত্রী মোদি তাঁর দুই ডজন সচিব নিয়ে চার ঘন্টা ধরে এক মিটিং করেছেন। বিষয় হল, ভারতের নাকি শ্রীলঙ্কার মত অর্থনৈতিক অবস্থা হতে পারে বলে তার সচিবেরা মোদিকে সাবধান করেছেন। খবরটা করেছে ভারতের সরকারি বার্তা সংস্থা পিটিআই [PTI]। যা ছাপিয়েছে অনেক মিডিয়াই। এমনই  এনডিটিভি-এর খবরটা এখানে দেয়া হল [States’ Freebies Flagged To PM With Lanka-Like Crisis Warning: Report]।
কথা হল, একালে চীন নাকি খারাপ খারাপ ঋণ গছিয়ে সবার অর্থনীতিকে ‘ঋণের ফাঁদে’ ফেলে চলছে – একথা, এতদিন বলে প্রপাগান্ডার রাজা ভারত  চলছিল। সর্বশেষ এমনকি বাংলাদেশেও নাকি এর শিকার বলে কেউ কেউ নিউজ বা ইউটিউব ক্লিপ তৈরি করে প্রচার করছিল।। আজ, তাহলে এত সাবধানী খোদ সেই ভারতকেই আবার “ঋণের ফাঁদে” ফেলল কে? এটা তো একেবারে নিজের ফাঁদে নিজেই পড়া!   এতো দেখা যাচ্ছে এটা হল – মিথ্যা করে, বাঘ আসছে বাঘ আসছে বলে গ্রামবাসীকে উত্যক্ত করা রাখাল বালকের ঘটনা। আর এনিয়েই এবারের প্রসঙ্গ।

শ্রীলঙ্কা গত কয়েক মাস ধরে হেডলাইনে, কারণ তার দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ফরেন রিজার্ভ প্রায় শূন্য, কোনো বৈদেশিক মুদ্রা সেখানে প্রায় নাই। অবস্থা এতই করুণ যে, যেসব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য যেমন স্কুল-কলেজের স্টুডেন্টদের লিখার কাগজ যা শ্রীলঙ্কা আমদানি করে চলে তা এখন কেনার মত বৈদেশিক মুদ্রাও তার হাতে নাই। ফলে স্কুল-কলেজে পড়াশুনা লাটে উঠেছে। এছাড়া আমদানি করা খাদ্যের বেলায় সমস্যা আরো ভয়াবহ। সব মিলিয়ে এতে রাজনৈতিক অস্থিরতা চরমে।

আর এই সুযোগেই কিছু প্রো-আমেরিকান ও ইন্ডিয়ান প্রপাগান্ডিস্ট মাঠে নেমে পড়েছে। তারা এটাকে চীনবিরোধী ক্যাম্পেইনের এক সুযোগ হিসাবে ব্যবহার করতে চায়। এমনকি বাংলাদেশ নিয়েও – আমেরিকান ও ইন্ডিয়ান প্রপাগান্ডিস্ট যারা চীন বিরোধিতা করে থাকে তারাও কিছু আর্টিকেল বা ইউটিউব কনটেন্ট ছড়ানো শুরু করে দিয়েছে যেখানে কোনো ফ্যাক্টস ফিগারের বালাই ছাড়াই তারা বলছে যে বাংলাদেশেও নাকি শ্রীলঙ্কা হবে? আপনি হাসিনা সরকারের-বিরোধী তাতে তো কোণ সমস্যা নাই। কিন্তু তাই বলে মিথ্যা প্রপাগান্ডা করে  জিতবেন?? কতদুর যাবেন? এভাবে জেতা যাবে না। কিন্তু এটাই চলছে। যদিও এখানে এই লেখার গুরুত্বপূর্ণ দিক হল, এসব প্রপাগান্ডিস্টদের কবল থেকে প্রসঙ্গটাকে বাস্তবে আনা, যদিও তা ঠিক তাদের বিরোধিতা করে নয়। কারণ পক্ষ-বিপক্ষে প্রপাগান্ডা, যারা এ নিয়ে বাঁচতে চায়, কিছু কামাই করে চলতে চায় তারা তা করবেই। তাহলে ‘প্রসঙ্গটাকে বাস্তবে আনা’ বলতে ঠিক কী করতে চাই?

গত কয়েক বছর ধরে যারা এই ক্যাম্পেইন ‘মাস্টার’, তারা যে ভাষ্যের ওপর দাঁড়িয়ে প্রপাগান্ডা করেছে তাদের একটা বড় অংশ হল বলা যায় যারা একেবারে  যেকোন ঋণ-গ্রহণের বিরোধি। এককথায় এরা নিজেদের প্রগতিবাদি-কমিউনিস্টদের একাংশ এক ধারা বলে নিজেকে ভাবে। এরা মুল প্রপাগান্ডিস্ট নয়, তবে এদের ভাষ্য-অবস্থান চীনবিরোধী আমেরিকান ও ইন্ডিয়ান প্রপাগান্ডিস্ট্দেরকে সহায়তা যোগায় যেহেতু এদের বয়ান মুল প্রপাগান্ডিস্ট্দের সহায়তা করে।  এই মূল প্রপাগান্ডিস্টদের  মানে হল, কিছু প্রপাগান্ডা বক্তব্য যেমন, “চীন ফাঁদে ফেলে কোনো দেশকে অতিরিক্ত ঋণ গছিয়ে দিয়ে থাকে। তাই এসব সমস্যা তৈরি হয়েছে”। তাই এই প্রপাগান্ডাকে তারা শিরোনামে বলে থাকে – ‘ডেট ট্রাপ’ [debt trap] বা ‘ঋণের ফাঁদ’ বলে। যেন চীনা অর্থনীতি আমেরিকাকে ছাড়িয়ে এক নম্বর বা সবচেয়ে বড় অর্থনীতি হতে যাচ্ছে এসব ছেচরামি করেই!!! এই হল এদের প্রপাগান্ডা বা চীনকে নিচা দেখানোর এক করুণ কায়দা!!  এতে ভাবনাটা অনেকটা ছেলে ধরার গল্পের মত যে, এশিয়ার দেশগুলো – এই তোরা আর বাইরে যাস না, চীনের ‘ঋণের ফাঁদ’-এ পড়বি!!!! তাই, তোরা ভারত-আমেরিকা ছুয়ে থাক!!
আচ্ছা, কোন দেশকে অতিরিক্ত ঋণ দিয়ে ডুবিয়ে চীনের মত দেশের কী লাভ? এটা কী আসলেই কোন লাভ? শেষ বিচারে যখন কোন দেশ ঋণের সমস্যায় পরে যায় তাতে ক্ষমতাসীন সরকারের ইমেজ ক্ষুব্ধ পাবলিকের সামনে কোনভাবে কী আর কোন কাজে লাগে? পক্ষে যায় না যেতে পারে??

গরীব অর্থনীতির দেশ “ঋণ না নিয়ে” চলে না কেনঃ
আমরা পছন্দ করি বা না-করি ফ্যাক্টস হল, আমাদের মত দেশে নতুন কাজ সৃষ্টি করতে গেলে যে নয়া বিনিয়োগ লাগে তা যোগানোর মুরোদ আমাদের অর্থনীতির নাই। কাজ সৃষ্টির প্রয়োজনটা আমাদের না বুঝার কিছু নাই যে কোন নির্বাচিত সরকার অন্যতম কাজ হচ্ছে কর্মক্ষম জনগণের জন্য কাজ সৃষ্টি করা। কিন্তু তাই বলে কাজ সৃষ্টি করতে গেলে তো অর্থনীতিতে যে নয়া বিনিয়োগ লাগবেই তা দেশের অর্থনীতিতে থাকবে না কেন? বিনিয়োগ অন্য কোথাও থেকে আনতে হবে, অন্য দেশ দিবে ইত্যাদি  – এই ব্যাপারগুলো কী স্বাভাবিক? জবাব হল, না একেবারেই তা স্বাভাবিক নয়। বরং একেবারেই তা উল্টা। অর্থাৎ প্রত্যেক দেশের অর্থনীতিই তার দেশের জন্য প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ যা আসলে “অর্থনীতিতে পুরানা সঞ্চিত সম্পদ” তা আসলে নিজেই উতপন্ন ও জমা-সঞ্চয় করতে সক্ষম থাকে। তাহলে প্রশ্ন হল আমাদের মত দেশের তা নাই কেন? কেন বিদেশ থেকে বিনিয়োগ আনতে হয়? এমনকি তা দুই ধরণের বিনিয়োগই – অবকাঠামোতে (infrastructure) বিনিয়োগ আর ব্যবসা-কারখানায় বিনিয়োগ (FDI) –  যা অন্যদেশ থেকে আনতে হয়। তা বিদেশ থেকেই আনতে হয়, কেন?

প্রগতিবাদি-কমিউনিস্টদের একাংশের মধ্যে এমন মনোভাব আছে যে ঋণ নেয়া হারাম!! কেন?
এর জবাব আমরা সবাই জানি কিন্তু খেয়াল করি নাই। মূল কারণ ইউরোপের হাতে আমাদের কলোনি দখল হয়ে যাওয়া। আমরা বৃটিশদের হাতে কলোনি দখল হয়ে গেছিলাম বলে তাঁরা আমাদের দেশের অর্থনীতিতে উদ্বৃত্ব সব সম্পদ লুটে তা পাচার করে তাঁরা নিজ দেশে নিয়ে গেছিল, দুশ বছর ধরে লাগাতর। আজও আমাদের দেশের বিনিয়োগের অর্থ সংকটের মুল কারণ এটাই।  এতে আমাদের দেশ পরবর্তিতে এক চরম বিনিয়োগ পুঁজি সংকটে পড়েছিল বিশেষত ১৯৪৭ সালে বৃটিশ কলোনি দখলের অবসান হয়ে যাওয়া সত্বেও। এখান থেকেই এরপর থেকে আমরা চাই বা না চাই বিদেশ থেকে বিনিয়োগ পুঁজি নিতে আমরা বাধ্য হয়ে যাই।

কিন্তু তাতেও নতুন সমস্যা বাধে বা তৈরি করে আমাদেরই কিছু  (প্রগতিবাদি-কমিউনিস্ট) লোকের মাথায় “পুঁজি জিনিষটাই খারাপ” – এই ধারণা “মাথায় গেথে বসে” থাকায়। এদেরকেই আমরা প্রগতিবাদি-কমিউনিস্ট বলেই চিনি। পুঁজি নাড়াচাড়া করা, পুঁজির ততপরতায় জড়ানো, ব্যবসা করা ইত্যাদি কাজকে ধর্মে পাপের যে ধারণা সে চোখে যেন পাপ মনে করে বা পাপের চোখে দেখে থাকে।  অথচ ব্যবসা করা মানে তো পুঁজির ততপরতা তাই এটা পাপ ও হারাম ধরণের কাজ যেন!

অথচ দেশে অর্থনৈতিক ততপরতা না চললে মানুষ খাবে কী? না কাজ পাবে না খাবার কিনতে পেতে পারে। যদিও এর একটাই জবাব তাদের কাছে আছে যে একমাত্র তাদের কথিত এক সমাজতন্ত্র চিন্তা যার সারার্থ তাদের কাছে – কেবলমাত্র রাষ্ট্রীয় মালিকানায় উতপাদন চলতে দেয়া হবে!! এটাই একমাত্র “সহি’ অর্থনৈতিক ততপরতা। যেন এটাই তাদের ধর্ম অনুসারে একমাত্র সহি ততপরতা। এর উদাহরণ হাতের কাছেই পাবেন। বাংলাদেশের প্রথম সাড়ে তিন বছরের অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দিনের নেতৃত্বের অর্থনীতি অথবা ভারতে নেহেরু নেতৃত্বে কথিত সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি যা ১৯৯০ সালে একেবারে মুখ থুবড়ে পড়ার আগে পর্যন্ত থামে নাই বা কোন সংস্কার-বদল ঘটে নাই। চরমতম “ব্যালেন্স অপব পেমেন্টের” ঘাটতিতে [মানে বৈদেশিক রিজার্ভের ঘাটতি থেকে ভাঁড়ার শুণ্যে করার দিকে যাত্রা] পরে শেষে এটা বিশ্বব্যাংকের চরণে হামলে পড়েছিল, ঐ ১৯৯০ সালে! বাংলাদেশেও তাই হয়েছিল। অন্যভাষায় এটাকে আমরা প্রচলিতভাবে বলি “চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষ”। যার প্রধান এবং কমন ফেনোমেনা হচ্ছে – বৈদেশিক রিজার্ভ শুণ্য হয়ে পড়া। তাই কোন খাদ্য আমদানিরও মুরোদ না থাকা। আজকের শ্রীলঙ্কাতেও সেটাই ঘটেছে। আর তাতে আমাদের দেশে তখন হতাশ শেখ মুজিব তাজউদ্দিনকে ফেলে পাশে সরিয়ে দিয়ে সরাসরি কিসিঞ্জারের সাথে কথা বলেন আর বিশ্বব্যাংকেও তদবীর করে আসেন ঐ চুয়াত্তরেই সেপ্টেম্বরের শেষে। কিন্তু সেই সাহায্য ও নীতিগত সংস্কারের সুবিধা বাংলাদেশে শুরু হবার আগেই তিনি পরের বছর (১৯৭৫) খুন হয়ে গেছিলেন। মোটামুটি ছিয়াত্তর সালের শুরু থেকেই প্রথম আমরা বিশ্বব্যাংকের পরামর্শ ও ফান্ড পাওয়া শুরু করেছিলাম।
তাই মূলকথাটা হল, চোরে আপনার বাসার সব থালাবাসনও চুরি করে নিয়ে গিয়েছে বলে চোরের উপর রাগ করে বা “পাপমুক্ত থাকতে” কিংবা জিদ পুরা করতে আপনি আর মাটির সানকি থালাও না কিনে মাটিতে ভাত রেখে খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন না। এটা এথিকস পালন করার কোন কায়দাও না। বরং এটা সোজাসাপ্টা স্টুপিডিটি; অক্ষমের বাস্তববোধহীনতা!!!  তাহলে ঠিক কী বলতে চাচ্ছি?

আরও পড়তে পারেন-

বলতে চাচ্ছি যে ইউরোপ বা পশ্চিম যারাই আমাদের সম্পদ লুটে চুরি করে নিয়ে গেছে তারাই একালে (১৯৪৫ সালের পর থেকে) যেন সেই সম্পদের কিয়দংশ  ফেরত দিতে চায়, যেটাকে তারা ঋণ বলছে! আর এরই অর্গানাইজেশনাল রূপ পদ্ধতির একটা সিস্টেমের নাম আইএমএফ-বিশ্বব্যাংক।  সোজা করে বললে এরা বিনা-সুদের অনুদান দেয়া থেকে শুরু করে নামমাত্র সুদের (০.৭৫% বা, ১% পার্সেন্টের নিচে) ঋণ (যা আবার লম্বা ৪০ বছর ধরে পরিশোধযোগ্য)। আর এই নতুন অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় অন্যদিকে প্রাইভেট কোম্পানির গ্লোবাল পুঁজি বাজার সর্বোচ্চ ৮% সুদে  বিভিন্ন ঋণ পাবার দিবার সুযোগ এসব প্রতিষ্ঠান করে থাকে।  তবে সাবধান প্রপাগান্ডায় পরা যাবে না। বিশ্বব্যাংকের কোন ঋণেই ৪% এর বেশি সুদ হয় না। আর প্রাইভেট কিন্তু গ্লোবাল পুঁজিবাজারের সুদের হার সর্বোচ্চ ৮%  যা আমাদের মত দেশের জন্য দেখা গেছে ৬% এর বেশি নয়। তবে এটা একটা কাফফারা অবশ্যই। সেই সাথে আরো আছে যে আইএমএফ-বিশ্বব্যাংক স্বভাবতই আমেরিকা বা পশ্চিমের স্বার্থের দিকে কান্নি মেরে চলা সংগঠন; তা মিথ্যা নয়। তাই এর জ্বালা ও আমাদের স্বার্থহানি ঘটা বা সময়ে বড় প্রতিবাদ না করতে পারার মনকষ্ট আমাদের মত দেশের সেখানে আছে। যদিও সে কষ্টেরও একটা শেষ যেন আছে। যেমন এখনকার বাংলাদেশের ইচ্ছা (ক্ষমতাসীনদের)  অনুসারে কোন ঋণ কিভাবে নিবে অথবা একেবারেই নিবে না কিনা অথবা দেয়া শর্ত কবুল করবে বা না করবে ইত্যাদি আমরা বাছাই করার সামর্থে পৌছেছি। এছাড়া এমন ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানও এখন একের অধিক হয়ে গেছে। কিন্তু কমিউনিস্ট গোয়ার্তুমি ছেড়ে আমাদের বুঝতে হবে যে আমাদের কাছে এটা এথিক্যাল প্রশ্ন বা অবস্থানের ইস্যুই নয় যে আইএমএফ-বিশ্বব্যাংক ভাল না মন্দ। বরং এটা মন্দের ভাল, কিছুই না থাকার চেয়ে। আসলে এটা একটা খারাপ বাস্তবতাতে সেখান থেকে উঠে আসতে আমাদের বুদ্ধিমান কোন কম্প্রোমাইজ ও সঠিক সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়েই আমাদেরকে বের  আজ হয়ে আসতে পারার অবস্থায় পৌছাতে হয়েছে।  তাই কোন পুঁজির ততপরতা খারাপ কিনা, ব্যবসা হারাম কিনা ইত্যাদি বিবেচনা করে – সারকথায় বিদেশি পুঁজি নেওয়া যাবে না এমন অলীক ভাবনা – এটা সবসময় আসলে অর্থহীন প্রলাপ। কিন্তু এই প্রলাপ বয়ানের উপর ভর করেই  আমেরিকান ও ইন্ডিয়ান প্রপাগান্ডিস্টেরা একালে রাজত্ব জমিয়েছে আর  চীনের তথাকথিত ঋণের ফাঁদের গল্প আমাদের শুনিয়েছে।  যেন কমিউনিস্টরা এবার বলতে চায় বলেছিলাম না বিদেশি ঋণ খারাপ জিনিষ!! আর ওদিকে প্রপাগান্ডিস্টেরা বলতে চায় যেন চীনা ঋণ হলে তা খারাপ আর আমেরিকান বা ইন্ডিয়ান ঋণ  আমাদেরকে দিলে অথবা  এ’দুই দেশ নিজের জন্য গ্লোবাল বাজার থেকে নিলে সেগুলো ভাল ও হালাল!!!  অবশ্য একটু পরেই আমরা দেখব খোদ আমেরিকা বা ভারত রাষ্ট্র নিজেরা নিজেদের বেলায় বৈদেশিক ঋণ কিভাবে নিয়েছে!

চীনা ঋণের ফাঁদের প্রপাগান্ডা বয়ানের যুগেঃ
বাস্তবে শ্রীলঙ্কায় হাম্বানটোটা গভীর সমুদ্রবন্দর গড়া নিয়ে চীনের ঋণ নেয়ার এত কথা প্রথম প্রচারে এসেছিল। সেই বন্দর প্রকল্প পরে কার্যত শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিতে আর কোনো বোঝা হয়েই দাঁড়ায় নায়। কারণ, পরের প্রো-ইন্ডিয়ান সরকারের আমলেই  ঐ সরকার চীনের সাথে কথা বললে চীন এক সহজ সমাধান করেছিল। তা হল, পুরো প্রকল্পটাকে এক চীনা প্রাইভেট কোম্পানি কিনে নিয়েছিল, তাতে চীনের ঋণ পরিশোধের দায়ও ওই পোর্ট ক্রেতা নয়া কোম্পানির, তাতে শ্রীলঙ্কা সরকারকে কোনো ঋণের দায় আর বইতে হবে না, পরিশোধ করতে হবে না। চীনা সরকার এই ব্যবস্থাটা করে দিয়েছিল। ফলে শ্রীলঙ্কা সরকারের কোন অর্থনৈতিক দায় আর ছিল না। ফলে এই পোর্ট প্রকল্প থেকে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিতে চাপ ফেলা জাতীয় কোনো প্রভাবের আর বালাই থাকেনি। অর্থাৎ পোর্ট প্রপার্টিটাই আর সরকারের থাকেনি। বরং যেকোন প্রকল্পের মোট মূল্যের প্রায় ২৫-৩০ ভাগ মালিকানা হোস্ট দেশের এমনিতেই পেয়ে যায় কোনো বিনিয়োগ করা ছাড়াই। কারণ প্রকল্পকে দেয়া জমি বা অবকাঠামো দেয়ারও একটা মূল্য ধরা থাকে বলে সরকার কোনো অর্থ খরচ না করেই তেমন প্রকল্পে ২৫-৩০ ভাগ মালিকানার ভাগ পেয়ে যায়। ফলে চীনা ওই প্রাইভেট কোম্পানি এখন হাম্বানটোটা পোর্টের বাকি অংশ, প্রায় ৭০ ভাগের মালিক। কিন্তু সেই থেকে তবু প্রপাগান্ডা আর কখনো বন্ধ হয়নি – আর তা থেকে ‘হাম্বানটোটা’ আর ‘চীনের ঋণের ফাঁদ’ এ দুই শব্দ থেকে যায় জব্বর প্রপাগান্ডা শব্দ হয়ে।

তাহলে এই লেখা থেকে আমরা ঠিক কী করব? কী জানব?
এসব প্রপাগান্ডার সবচেয়ে দুর্বল ভিত্তিমূলক দিক যেটা তা হল, এই প্রপাগান্ডা বলতেই পারে না যে কোন দেশ কী পরিমাণ ঋণ নিলে তা ‘ঋণের ফাঁদ’ হয়ে যায়? (এক কথায় কোন দেশের জন্য কত দূর ঋণ নেয়া সেফ [safe]? তা কি আগাম জানা যায়? তা মাপার কি কোনো স্টান্ডার্ড আছে?) নাকি চীনা বা বিদেশী ঋণ মাত্রই ‘ঋণের ফাঁদ’? প্রপাগান্ডিস্টরা এটা কোনদিন পরিষ্কার করে বলে না, উহ্য রেখে পাশ কাটিয়ে থাকে? অর্থাৎ কোন দেশের অর্থনৈতিক পরিসংখ্যান কী ও সেফ ঋণ নেওয়ার স্টান্ডার্ড কী তা হাজির না করেই এরা দাবি করতে থাকে চীনা ঋণ নেয়া একটা ফাঁদ! এই হলো এসব প্রপাগান্ডার কৌশল। এমনকি আমেরিকান প্রশাসন যে প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে চীনবিরোধী প্রপাগান্ডা চালিয়েছিল এমন একটা রিপোর্ট হল এখানে।   এই রিপোর্টেও এ দুই প্রশ্নের উত্তর দেয়নি, পাশ কাটিয়েছে। তাদের ছাপানো কোনো প্রপাগান্ডা আর্টিকেলেও এ নিয়ে কোনো বক্তব্য নেই। বরং এটা আমেরিকান চীনবিরোধী স্ট্রাটেজিক অবস্থানের পক্ষে সাফাই বক্তব্য। যা ঠিক ঋণ নেয়া প্রসঙ্গে অর্থনীতি-নির্ভর ব্যাখ্যা নয়।

এমনকি পরবর্তিতে এসব প্রপাগান্ডার বিরুদ্ধে এক ডাচ কনসাল্টেন্টের রিপোর্ট ওই দাবি নাকচ করে আর্টিকেল ছেপেছিল যদিও সেখানেও ঋণ নেয়ার স্টান্ডার্ড কী, কত দূর ঋণ নেয়া সেফ আর আলোচ্য দেশের পরিসংখ্যান গত ফ্যাক্টস কী তা নিয়ে কোনো আলাপ করা হয়নি সেখানে। এতে সবার বক্তব্যই হয়ে গেছে শেষ বিচারে এক আন্দাজি কথাবার্তা বা সরাসরি প্রপাগান্ডা অথবা এসব প্রসঙ্গ থেকে দূরে অন্য প্রসঙ্গের বক্তব্য। আমার এই লেখার উদ্দেশ্য ও প্রসঙ্গ হলঃ কোন দেশ নিজ অর্থনীতিতে কী পরিমাণের বেশি বিদেশী ঋণ নিয়ে ফেললে তা রিস্কি হওয়া শুরু হতে পারে, এ নিয়ে একটা গবেষণা স্টাডির ফলাফল পাঠকের সাথে সহজ ভাষায় আলাপ করা, শেয়ার করা।

এনিয়ে বিশ্বব্যাংকের স্টাডি রিপোর্টের ফাইন্ডিংস কী বলেঃ
সৌভাগ্যবশত এটা কোন খামখেয়ালি কথা নয়; গবেষণা, অবজারভেশন আর স্টাডি থেকে বাস্তবে পাওয়া রেজাল্ট। এই গবেষণাটা করেছিল বিশ্বব্যাংক এবং তা টানা ১৯৮০-২০০৮ এই ২৮ বছরের ডাটা নিয়ে। আর তা ১০১টা দেশের অর্থনৈতিক ডাটা নিয়ে যাদের মধ্যে গরিব ও ধনী উভয় ধরনের দেশই ছিল।

কোন দেশের রাষ্ট্রীয় ঋণ পরিমাপ করার এক প্রচলিত পদ্ধতি হল তা ওই দেশের জিডিপির কত অংশ বা অনুপাতে কত তা জেনে নিয়ে প্রকাশ করা। অর্থাৎ ওই দেশের নেয়া মোট ঋণ, মোট জিডিপির কত অংশ সে অনুপাত সংখ্যা দিয়ে। যেমন যদি বলা হয় একটা দেশের ঋণ ৭৭%। তাহলে এ কথার মানে ওই দেশের জিডিপির ৭৭% – এই অঙ্কই হল ও দেশের নেয়া মোট বিদেশি ঋণ। আসলে এটাই ও দেশের ঋণ-বনাম-জিডিপির অনুপাত। যদিও বিভিন্ন দেশের মোট ঋণ সংক্রান্ত ডাটা পড়তে গিয়ে সাবধান! মোট ঋণ বললে রাষ্ট্র আভ্যন্তরীণ ভাবে নিজ কারেন্সিতে যে লোন নিয়েছে সেটাও অন্তর্ভুক্ত থাকবে তাতে। তাই পরিস্কার করে বলতে ও বুঝতে হবে যে আমরা কোন দেশের মোট বৈদেশিক মুদ্রায় নেয়া ঋণ আমাদের আলোচ্য বিষয়।

এই হিসাবে এই গবেষণায় পাওয়া ফাইন্ডিংস হল, কোনো দেশের নেয়া রাষ্ট্রীয় ঋণ ঐ দেশের জিডিপির ৭৭% বেশি হলে বা ছাড়িয়ে গেলে তা বিপদ জোনে প্রবেশ করেছে মনে করা হবে। তবে এই হিসাব সব্দেশের বেলার জন্য নয়। এতা কেবল অগ্রসর অর্থনীতির দেশের (যেমন জি৭ গ্রুপের দেশ [G7 countries]) বেলায় যারা পুরনো ও বড় অর্থনীতির দেশ বলে অনেক ঘাত সইবার সক্ষমতা থাকে।

আর এর পরের ক্যাটাগরির মানে যাদেরকে উদীয়মান [Rising Economy] অর্থনীতি (যেমন জি২০ গ্রুপের দেশ) বলে, এদের ক্ষেত্রে টিপিং পয়েন্ট [Tipping point] বা বিপজ্জনক জোনে প্রবেশ ধরা হয় বা ঋণ-জিডিপি অনুপাত হল তাদের ৬৪% এর বেশি তা ছাড়িয়ে গেলে।

এই হলো, বিশ্বব্যাংকের ওই গবেষণা ফলাফল থেকে পাওয়া ফলাফল। তাই তখন থেকে এটাই বিশ্বব্যাংকের স্টান্ডার্ড বলে মানা হয়। এই বক্তব্যগুলো পাওয়া গেছে ‘টিপিং পয়েন্ট খোঁজা কখন রাষ্ট্রের নেয়া ঋণ খারাপ ঋণে পরিণত হবে’[Finding The Tipping Point — When Sovereign Debt Turns Bad] এই শিরোনামে পাওয়া গবেষণা ফলাফল থেকে, যা বিশ্বব্যাংকের লাইব্রেরিতে রক্ষিত। আর ‘টিপিং পয়েন্ট’ বলতে সহ্য সীমা বা ভেঙে পড়ার আগের বিন্দু বুঝা যেতে পারে।

তাহলে আমরা এখন আন্দাজে মন গড়া কথা বলে, যাকে দেখতে পারি না তার বিরুদ্ধে কথা বলা প্রপাগান্ডা থেকে চাইলেই বের হয়ে আসতে পারি। কারণ অন্তত বিশ্বব্যাংকের স্টান্ডার্ড বলে একটা কিছু আমাদের হাতে আছে। কোনো স্টান্ডার্ড মানে কোনো ধরনের মাপকাঠি যেটা ছাড়াই চীনবিরোধী প্রো-আমেরিকান বা প্রো-ইন্ডিয়ান হয়ে ইচ্ছামতো খামখেয়ালি প্রপাগান্ডা থেকে আমরা এখন চাইলে বের হয়ে আসতে পারি।

সাথে অন্য একটা কথাঃ  যদিও বিশ্বব্যাংকের ঐ রিপোর্টে দুধরণের দেশের ক্যাটাগরির কথাই বলা আছে। তবু অনেক মিডিয়া রিপোর্টে আরেকটা বা গরিব দেশের ক্যাটাগরির কথা বলতে দেখা যায় যাদের বেলায় নেয়া বিদেশী ঋণ নিজ জিডিপির ৪০% এর বেশি হলে সেটাকে “টিপিং পয়েন্ট” বলে দাবি করা হয়েছে। এই হিসাবেও বাংলাদেশে (যতগুলো উৎস থেকে দেখা যায় এর সবটাই) এখনো ৩১% এর নিচে আছে ; কোন কোন দাবিতে এটা ১৫% বলে সরকারের মন্ত্রীরা দাবি করেছেন অনেক মিডিয়া রিপোর্টে।। আর বাংলাদেশের মোট ঋণের মাত্র ৬.৮১% হলো চীনের ঋণ আর সবচেয়ে বড় দাতাটা হলো বিশ্বব্যাংকের; সেটা ৩৮%।

According to the World Bank and the International Monetary Fund (IMF), that a country will cross the danger mark if its external debts exceed 40 percent of GDP ensures that Bangladesh is in the “safe zone,” as its total foreign loan is less than 15 percent of its GDP.

কাজেই এটা পরিষ্কার আমরা দেখছি যে, তবুও চীনবিরোধী একটা প্রপাগান্ডার নহর এখনও বয়ে যাচ্ছে।

টিপিং পয়েন্ট নিয়ে কিছু মজার তথ্যঃ
বিশ্বব্যাংকের স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী, জি৭ ভুক্ত বড় অর্থনীতির আমেরিকার বেলায় তার ঋণের টিপিং পয়েন্ট হয় ৭৭%। কিন্তু সেই ১৯৪৬ সালেই মানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে যখন আমেরিকা একচ্ছত্র গ্লোবাল নেতা হিসেবে উঠে এসেছিল তখনই খোদ আমেরিকার টিপিং পয়েন্ট ছিল ১০৬% যার সোজা মানে এটা ৭৭% চেয়ে অনেক বেশি। কিন্তু তা সত্বেও আমেরিকা সেকালে গ্লোবাল নেতাই ছিল এবং অন্য সব দেশকে ঋণ দেয়ার মূল উৎস ছিল এবং তা সরাসরি দ্বিপক্ষীয়ভাবে অথবা বিশ্বব্যাংকের মাধ্যমে ঋণ দিয়ে গেছিল।
তবে এছাড়া আরো বড় ঘটনাটা হল, পরে আমেরিকার এই ঋণ-বনাম-জিডিপি অনুপাত কমতে থাকে। শেষ ১৯৭৪ সালের মধ্যে এটা নেমে মাত্র ২৩% হয়ে যায়।

তাহলে এখন কত?
পরে ১৯৮০ সাল থেকে আমেরিকার এই অনুপাত বা রিয়েল টিপিং পয়েন্ট আবার বাড়তে থাকে; ২০০৭ সালের গ্লোবাল মহামন্দার সময় আরো বাড়ে। আর ২০০৯ সাল থেকে এটা ৭৭% এর বেশি ছাপিয়ে তা বাড়তে শুরু করেছিল যেটা এখনো বৃদ্ধির দিকে। ২০২০ সালের সেকেন্ড কোয়ার্টারে এটা সর্বোচ্চ ১৩৫.৯% ( যদিও সারা বছরের গড় ১৩৪%) হয়ে আছে।
এর মানে সারকথাটা হল,  বিশ্বব্যাংকের টিপিং পয়েন্টই শেষ কথা নয়; একটা স্টান্ডার্ড মাত্র। ফলে এটা ছাপিয়ে গেলেই সব ভেঙে পড়বেই এমনটা সত্যি নয়, তবে হতে পারে। আর দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে বড় অর্থনীতি হয়ে থাকার কারণে এসব দেশের ঘাত সহ্য ক্ষমতা বেশি, অভিজ্ঞতায় তাই দেখা গেছে।

কোন দেশ সর্বোচ্চ অনুপাতেঃ
২০২০ সালের হিসাবে এমন দেশ হল ভেনিজুয়েলা। তার অনুপাত ছিল ৩০৪%। আমরা সবাই কমবেশি ভেনিজুয়েলার অবস্থা জানি। তার উপর আমেরিকান তেল অবরোধ দেয়া আছে সুদীর্ঘ সময় ধরে। ফলে সুনির্দিষ্ট কিছু দেশেই সে একমাত্র তেল বিক্রি করতে পারে এবং তা ডলার ছাড়া অন্য মুদ্রাতেই কেবল। আর তেল বিক্রি করে যেটুকু বিদেশী মুদ্রা আয় করতে পারে। সে কারণে ভেনিজুয়েলার অনুপাত বা টিপিং পয়েন্ট অমন উঁচু। তুলনায় সেকেন্ড সর্বোচ্চ অনুপাত ছিল জাপান ২০৪%। আর আমেরিকা ছিল ষষ্ঠ প্লেসে, ১৩৪%। তাহলে বিশ্বব্যাংকের স্টান্ডার্ড ৭৭% এখানে কার্যত অকেজো! কিছুই ভেঙ্গে পড়েনি বা ট্রিপ করে যায় নাই!!

তাহলে প্রপাগান্ডিস্ট মোড়ল ভারতের কী অবস্থাঃ
এশিয়ার সব দেশই ‘চীনা ঋণের ফাঁদে’ পড়ে ডুবে গেল – এই হল ভারতের প্রবল প্রপাগান্ডার মুলকথা। এই মিথ্যা প্রপাগান্ডায় আবার আমেরিকার থেকেও ভারতের গলা বেশি উঁচু। তাহলে এই প্রসঙ্গে ভারতের নিজের কী অবস্থা? সে খবর নিতে হয়। ব্লুমবার্গ [bloomberg] আমেরিকার ফাইন্যান্সিয়াল নিউজ মিডিয়াগুলোর মধ্যে অন্যতম। সে ভারতের কুয়িন্ট [QUINT] নিউজের সাথে খবর শেয়ার করে ও ভারতে খবর ছাপে। তাদেরই এক রিপোর্ট বলছে, ভারতের ঋণ বনাম জিডিপি অনুপাত ২০২১ সালে ৮৭.৮%। এই রিপোর্টের শিরোনাম হল, ‘বাজেট ২০২২ রাষ্ট্রের ঋণ নামিয়ে আনতে হলে একটি শক্ত অর্থনৈতিক উন্নতি দেখাতে হবে [Budget 2022: Bringing Public Debt Down Requires A Strong Groth Path]।’ আর তাহলেই নাকি আগামী বছর এই অনুপাত কমে ৮৭.৪% হতে পারে। অর্থাৎ ভারতকে যদি রাইজিং অর্থনীতির দেশ গণ্য করি, তাহলেও ওর বিশ্বব্যাংক স্টান্ডার্ড অনুপাত হয় ৬৪%। অথচ এই  আইডিয়াল টিপিং পয়েন্ট বা  স্টান্ডার্ড থেকে  রিয়েল টিপিং পয়েন্ট ৮৭% , তা অনেক দূরের ফিগার অবশ্যই। তাহলে কোন সুখে ভারত সব দেশের বিরুদ্ধে লেগে সেখানে ‘চীনা ঋণের ফাঁদ’ খুঁজে ফেরে?

তাহলে ভারতের শেষ অবস্থাটা কীঃ
গত ৪ এপ্রিল ভারতের অনেক পত্রিকাতেই একটা নিউজ ছাপা হয়েছে। তা হলো, অর্থনৈতিক সঙ্কট নিয়ে মোদি তার দু’ডজন সিনিয়র সচিব বা কর্কমর্তাদের নিয়ে লম্বা ৪ ঘণ্টার এক মিটিং করেছেন। ওই রিপোর্টের শিরোনাম হলো, ‘বুরোক্রাটেরা মোদিকে লাল পতাকা দেখিয়েছেন এই বলে যে, শ্রীলঙ্কার মতো ক্রাইসিস ভারতেও দেখা দিতে পারে।’ তারা আসলে বলতে চাইছেন ভারতেরঅনেক রাজ্যে যেভাবে নয়া প্রকল্প নেয়া হচ্ছে তা ভাল হচ্ছে না। এতে বৈদেশিক অর্থের সঙ্কটে পড়বে ভারত। হিন্দুস্থান টাইমস এ নিয়ে একটি ভিডিও ক্লিপও বানিয়েছে। আর এতে ভারতে হইচই পড়া অবস্থা যে, তাহলে কি খোদ ভারতই এখন শ্রীলঙ্কা হতে যাচ্ছে? এর সাথে এক অসমর্থিত খবরও আছে। তা বলছে, সম্প্রতি মোদিকে বাইডেন যে ফোন করেছিলেন, রাশিয়া থেকে ভারত যেন তেল আর না কিনে এই ইস্যুতে, সেখানে ভারত বাইডেনের কথায় আসলে রাজি হয়েছে। কারণ, বাইডেন মোদিকে শ্রীলঙ্কা ধরনের অর্থনৈতিক ক্রাইসিস সামলাতে ফাইন্যান্সিয়াল সাপোর্ট দিতে কবুল করেছেন। ভারতের ৬১৪ বিলিয়ন বৈদেশিক ঋণ শোধে কিস্তি দেরিতে ফেরত দিতে ও সুদ কমাবার আবেদন করেছেন মোদি। এখন একথা কতটা সত্য তা জানা যাবে যদি আমরা দেখি যে ভারত আর রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করছে না!!

এবার তাহলে ভারতকেও কোন চায়না ঋণের ফাঁদে ফেলতে পারল!! এটা সত্যি এক তামাসার ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে!

তাহলে দাঁড়াল এই যে কার প্রপাগান্ডা কখন যে কাকে খায়? এখন প্রধান প্রশ্ন হল, তাহলে, ভারতকে ঋণের ফাঁদে ফেলল কে সে চীন?

লেখক : রাজনৈতিক বিশ্লেষক
goutamdas1958@hotmail.com

ওয়েব সাইট- https://goutamdas.com/

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।