Home ইসলাম ধৈর্য, তাকওয়া ও আস্থা মুমিনের পুঁজি

ধৈর্য, তাকওয়া ও আস্থা মুমিনের পুঁজি

।। মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা ।।

বিশ্বব্যাপী সংকট, দ্রব্যমূল্যে ঊর্ধ্বগতি, দ্রুত ছড়িয়ে পড়া মাংকিপক্স রোগ, দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যা ও ফসলহানি মানুষের মধ্যে উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। পরিস্থিতি যত প্রতিকূল হচ্ছে, মানুষের ভয় ও হতাশা ততই বাড়ছে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে হতাশা ও দুশ্চিন্তা কোনো সমাধান এনে দেয় না, বরং মহান আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসা রেখে ধৈর্যসহকারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। মহান আল্লাহ দুশ্চিন্তা, হতাশার মতো মানবীয় দুর্বলতাগুলোকে প্রশ্রয় দিতে নিষেধ করেছেন।

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা হীনবল হয়ো না এবং চিন্তিতও হয়ো না; তোমরাই বিজয়ী যদি তোমরা মুমিন হও। ’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৩৯)
এই আয়াত একটি যুদ্ধের প্রসঙ্গে অবতীর্ণ হয়েছে। তবে এখানে মুসলমানদের সফলতার মূল ভিত্তি এবং তাদের শক্তির মূল উৎস বলে দেওয়া হয়েছে। আর তা হলো ঈমান। যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ঈমান রাখে এবং সব বিষয়ে আল্লাহর ওপরই ভরসা করে, দুনিয়ার কোনো দুর্ভিক্ষ, দুঃখ, বিপদ, রোগব্যাধি তাকে হীনবল করতে পারে না। সব পরিস্থিতিতে সে মহান আল্লাহর ওপর ভরসা করে ধৈর্য ধারণের শক্তি পাবে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ, তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো, নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৫৩)

তাই পরিস্থিতি প্রতিকূল দেখলেই আমাদের উচিত ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া শুরু করা। তাহলে পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের সংগ্রামে মহান আল্লাহ আমাদের সহায় হবেন।

আরও পড়তে পারেন-

দুর্যোগ, দুর্ভিক্ষ, রোগব্যাধি ইত্যাদি মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা, যারা এগুলোর মতো কঠিন পরিস্থিতিতেও মহান আল্লাহর ওপর ভরসা রাখে তারা মহান আল্লাহর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়, এবং আল্লাহর রহমতের শামিয়ানায় আশ্রয় পাওয়ার উপযুক্ত হয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং জীবন-সম্পদ ও ফলফলাদির স্বল্পতার মাধ্যমে। আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও। তারাই ধৈর্যশীল, বিপদাপদ গ্রাস করলে যারা বলে, নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর জন্য এবং নিশ্চয়ই আমরা তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তনকারী। তাদের ওপর আছে তাদের রবের পক্ষ থেকে মাগফিরাত ও রহমত। আর তারাই হিদায়াতপ্রাপ্ত। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৫৫-১৫৭)

অতএব, অভাব-অনটন, সাময়িক বিপদাপদ, দুঃখ-দুর্দাশায় ভেঙে না পড়ে ধৈর্যের সঙ্গে মহান আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়া উচিত। মহান আল্লাহ নিশ্চয়ই সব ঠিক করে দেবেন। এবং সাময়িক কষ্টের বিনিময়ে তাঁর রহমত ও মাগফিরাতের কোলে স্থান দেবেন।

তা ছাড়া রিজিকের মালিক ও বণ্টক একমাত্র আল্লাহ, আমাদের হতাশা, দুশ্চিন্তা বা দুনিয়াবি কোনো শক্তি দিয়ে আল্লাহর ফায়সালা পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। আল্লাহ যদি কারো রিজিক বন্ধ বা সংকীর্ণ করে দেন, দুনিয়ার সবাই মিলে তার রিজিকের ব্যবস্থা করতে পারবে না। এ জন্য অভাব-অনটন, দুর্যোগ-দুর্ভিক্ষ থেকে রেহাই পেতে চাইলে অবশ্যই আল্লাহর নির্দেশিত পদ্ধতিতে তাঁর কাছ থেকে এগুলোর সমাধান করিয়ে নিতে হবে। আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা-ভরসা রেখে পরিস্থিতি থেকে নিজেদের বের করার চেষ্টা করতে হবে। এবং অবশ্যই সব পাপ থেকে তাওবা করে তাকওয়া অবলম্বন করতে হবে। কারণ এগুলো যেকোনো বিপদ থেকে মুক্ত হওয়ার অন্যতম পথ। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য উত্তরণের পথ তৈরি করে দেন। এবং তিনি তাকে এমন উৎস থেকে রিজিক দেবেন যা সে কল্পনাও করতে পারবে না। আর যে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট। ’ (সুরা : তালাক, আয়াত : ২-৩)

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যদি তোমরা যথার্থই আল্লাহর ওপর ভরসা করতে, তাহলে তিনি অবশ্যই তোমাদের পাখির মতো রিজিক দান করতেন। ভোরবেলা পাখিরা খালি পেটে (বাসা থেকে) বের হয়ে যায় এবং সন্ধ্যাবেলা উদর পূর্তি করে (বাসায়) ফিরে আসে। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪১৬৪)

অতএব অনাগত দুর্ভিক্ষ নিয়ে (তা থেকে উত্তরণের কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করে) অহেতুক দুশ্চিন্তা না করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করা উচিত, এবং আল্লাহর কাছে খাঁটি তাওবা করে সব গুনাহ থেকে বিরত থাকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করা উচিত।

দুর্ভিক্ষ থেকে বাঁচতে মিতব্যয়ী হওয়া যেতে পারে, কিন্তু কোনো অবস্থায় কৃপণতা করা যাবে না। কারণ কৃপণতা মানুষের রিজিকের বরকত নষ্ট করে দেয়। মহানবী (সা.) বলেন, তোমরা কৃপণতার ব্যাপারে সাবধান হও। কেননা তোমাদের পূর্ববর্তীরা কৃপণতার কারণে ধ্বংস হয়েছে। অর্থলোভ তাদের কৃপণতার নির্দেশ দিয়েছে, ফলে তারা কৃপণতা করেছে। তাদের আত্মীয়তা ছিন্ন করার নির্দেশ দিয়েছে, তখন তারা তা-ই করেছে এবং তাদের পাপাচারে প্ররোচিত করেছে, তখন তারা তাতে লিপ্ত হয়েছে। (আবু দাউদ, হাদিস : ১৬৯৮)

অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি পছন্দ করে যে তার জীবিকা বৃদ্ধি হোক অথবা তার মৃত্যুর পরে সুনাম থাকুক, তবে সে যেন আত্মীয়ের সঙ্গে সদাচরণ করে। (বুখারি, হাদিস : ২০৬৭)

বিশ্বজাহানের মালিক যদি আমাদের রক্ষা করতে চান, তাহলে খাদ্যসংকট, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এগুলো কিছুই পৃথিবীতে থাকবে না। মহান আল্লাহ অবশ্যই সব সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন। মহান আল্লাহ সবাইকে ধৈর্য, আল্লাহর ওপর ভরসা ও তাকওয়া অর্জনের তাওফিক দান করুন। আমিন।

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএম

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।