Home স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা গবেষণা: মানুষ ঘুমিয়ে পড়লেই জেগে ওঠে ক্যান্সার কোষ

গবেষণা: মানুষ ঘুমিয়ে পড়লেই জেগে ওঠে ক্যান্সার কোষ

- প্রতিকী ছবি।

টিউমারের কোষগুলো যখন রক্তের মাধ্যমে প্রবাহিত হয়ে শরীরের নতুন কোনো জায়গায় বাসা বাঁধতে শুরু করে তখন ক্যান্সারের অবস্থা হয় সবচেয়ে গুরুতর। ক্যান্সার ছড়ানোর এই প্রক্রিয়াটি মেটাস্ট্যাসিস নামে পরিচিত। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত ব্যক্তিদের দেহে সিটিসি বা সার্কুলেটিং টিউমার সেলস নামের এই খারাপ কোষগুলোর দিনের তুলনায় রাতে রক্তে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। ২২ জুন ন্যাচার জার্নালে ‘দ্য মেটাস্ট্যাটিক স্প্রেড অব ব্রেস্ট ক্যান্সার এক্সিলারেটস ডিউরিং স্লিপ’ শীর্ষক গবেষণায় এসব তথ্য প্রকাশিত হয়।

“ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী ঘুমিয়ে পড়লেই তার টিউমারগুলো জেগে ওঠে,” বলেন জুরিখের সুইস ফেডেরাল ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজির ক্যান্সার বায়োলজিস্ট ও গবেষণাপত্রের সহলেখক নিকোলা অ্যাসিটো।

তিনি আরও বলেন, “মেটাস্ট্যাটিসকে বোঝার ক্ষেত্রে আমরা আরেকটি ধাপ অতিক্রম করলাম। দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সারে ভুগছেন এমন রোগীদের জন্য এটি একটি সুখবর।”

জানা যায়, গবেষক দলটি দীর্ঘদিন ধরেই সারকাডিয়ান রিদম বা দেহঘড়ির সঙ্গে ক্যান্সারের যোগসূত্র খুঁজছিলেন। গবেষণাটি সম্পর্কে যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব ম্যানচেস্টারের ক্রোনোবায়োলজিস্ট কিং জুন মেং বলেন, এই আবিষ্কারের মাধ্যমে শরীরতত্ত্বের মৌলিক কিছু বিষয় জানা গেছে যা এতদিন কেউ ধরতে পারেনি। এর ফলে ক্যান্সারের চিকিৎসা নতুন মোড় আসবে বলেই তার বিশ্বাস।

দেহঘড়ির সঙ্গে ক্যান্সারের যোগসূত্র

২০০৭ সালে সারকাডিয়ান রিদম ব্যাহত হওয়াকে ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সার ক্যান্সারের অন্যতম প্রভাবক হিসেবে উল্লেখ করে। গবেষণাটিতে আরও বলা হয়, যারা রাত জেগে বা অসময়ে কাজ করে যেমন ফ্লাইট অ্যাটেনড্যান্টস, রাতে কাজ করা নার্স- ইত্যাদি পেশার মানুষদের স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। তবে কেন এমন ঘটে সেই প্রশ্ন এতদিন জানা যায়নি।

মানুষের সার্কাডিয়ান ঘড়ি সাধারণত তাদের জিন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত যা ২৪ ঘণ্টার সময়সূচিতে ঘুম ও পরিপাক ব্যবস্থার মতো শরীরের গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু বিষয় নিয়ন্ত্রণ করে। অধিকাংশ গবেষকই আগে ভাবতেন ক্যান্সার কোষগুলো এতটাই অবাধ্য যে তারা দেহঘড়ির মতো সময়সূচির কোনো তোয়াক্কাই করে, বলেন অ্যাসিটো।

আরও পড়তে পারেন-

যেসব ইঁদুরের টিউমার আছে তাদের সিটিজি-র মাত্রা দিনের কোন সময় রক্ত নেওয়া হয় তার ওপর নির্ভর করে। সেখান থেকেই অ্যাসিটো দিনের ভিন্ন ভিন্ন সময়ে রক্ত পরীক্ষার পরিকল্পনা করেন। স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ৩০ জন নারীর রক্ত সংগ্রহ করা হয়। ভোর ৪টা এবং রাত ১০টা, এই দুটি ভিন্ন সময়ে তিনি রক্ত সংগ্রহ করেন।

গবেষকরা দেখেন ভোর ৪টায় সংগৃহীত নমুনায় শনাক্তকৃত সিটিসির হার প্রায় ৮০ শতাংশ। সেসময় রোগীরা বিশ্রাম নিচ্ছিলেন।

গবেষকরা দ্বিতীয় যে কাজটি করেছেন তা হলো, এই গুটিকয়েক আক্রান্তদের বাইরে অন্যদের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটছে কি না, তা খুঁজে বের করা। এর জন্য গবেষকরা স্তন ক্যান্সারের টিউমার ইঁদুরে প্রতিস্থাপিত করে সারাদিন তাদের সিটিসির মাত্রা পর্যবেক্ষণ করে।

মানুষের তুলনায় ইঁদুরের সারকাডিয়ান রিদম সম্পূর্ণ ভিন্ন, অর্থাৎ তারা রাতে বেশি সক্রিয় থাকে এবং দিনের বেলায় বিশ্রাম নেয়। গবেষক দল দেখে ইঁদুরগুলোর সিটিসি স্তর দিনের বেলায় সর্বোচ্চ ছিল। এসময় তাদের সিটিসির হার স্বাভাবিকের তুলনায় ৮৮ গুণ পর্যন্ত বেশি দেখা যায়।

ঘুম আসল শত্রু নয়

স্তন ক্যান্সারের কোষগুলো কেন রাতে অধিক সক্রিয় থাকে তা অসংখ্য বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। এসব নিয়ে এখনও অনেক গবেষণা দরকার বলে জানান অ্যাসিটো। শরীরের ঘুমানো ও জেগে ওঠার সময় নির্ণয়ে হরমোনের ভূমিকাও উল্লেখযোগ্য। কাজেই এক্ষেত্রে হরমোন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলেও গবেষকদের ধারণা।

গবেষক দলটি আরও দেখে টেস্টোস্টেরন বা ইনসুলিনের মতো হরমোনের ব্যবহার ইঁদুরের সিটিসি স্তরের ওপর প্রভাব ফেলে। কখন কোন সময় হরমোনগুলো বাড়ানো বা কমানো হয়েছিল তারও প্রভাব পড়েছিল সিটিসি স্তরে।

কীভাবে পুরো বিষয়টি কাজ করে তা জানতে পারলে ভবিষ্যতে হয়তো ক্যান্সারের চিকিৎসা করা আরও সহজ হবে। তবে গবেষকরা জানান, সেজন্য সম্ভবত আরও বহুদিন অপেক্ষা করতে হবে। সারকাডিয়ান রিদমের সঙ্গে ক্যান্সারের সম্পর্ক ভালোমতো বুঝতে আরও দীর্ঘমেয়াদী গবেষণার প্রয়োজন।

তবে এর মধ্যে কেউ যেন ঘুমকেই স্তন ক্যান্সার রোগীদের শত্রু ভেবে না বসেন, সেই বিষয়েও তিনি সতর্ক করেন। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে ক্যান্সার রোগীরা দিনে সাত ঘণ্টার কম ঘুমালে তাদের মৃত্যুঝুঁকি বাড়ে। অন্যদিকে ইঁদুরের ক্ষেত্রে দেখা গেছে যে সারকাডিয়ান রিদম ব্যাহত হলে ক্যান্সার দ্রুত ছড়াচ্ছে।

“গবেষণার ফলাফল এই নয় যে আপনার ঘুমের প্রয়োজন নেই বা কম ঘুমাবেন। এর খুব সাধারণ অর্থ এই যে, দিনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে একটি নির্দিষ্ট সময়কালে খারাপ কোষগুলোর রক্তপ্রবাহে ছড়িয়ে পড়ার হার বেশি,” বলেন কিং জুন মেং।

সূত্র: নেচার ম্যাগাজিন।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।