Home ইসলাম ইবাদতের অভ্যাস গড়ে তুলতে চাইলে

ইবাদতের অভ্যাস গড়ে তুলতে চাইলে

।। কাসেম শরীফ ।।

করা প্রয়োজন জানা সত্ত্বেও কোনো কাজ না করা বা করতে অবহেলা করার নাম অলসতা। নিষ্ক্রিয়, মন্থর, উদাস কিংবা উদ্যমহীন ব্যক্তিকে অলস বলা হয়। আলসেমি নিজের ও সমাজের অবক্ষয় ডেকে আনে। ইবাদতের ক্ষেত্রে অলসতা দূর করার পদ্ধতি হলো—

এক. অনেক মুসলমান না জেনে আল্লাহ তাআলার রহমত ও মাগফিরাতের ভুল অর্থ করে থাকে।

একদিকে তারা বেপরোয়াভাবে পাপ কাজে লিপ্ত হয়, অন্যদিকে আল্লাহ তাআলার রহমত ও মাগফিরাতের আশা করতে থাকে। এটা স্পষ্ট ভ্রান্তি। এটি মানুষকে বিপথগামী করে এবং তাদের ধ্বংসের মুখে নিয়ে যায়। কেননা আল্লাহ তাআলা যেমন ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু, তেমনি তিনি কঠিন শাস্তিদাতাও। পবিত্র কোরআনে অনেক স্থানে এ বিষয়ে আল্লাহ আমাদের সাবধান করেছেন। তিনি ইরশাদ করেছেন, ‘আমার বান্দাদের বলে দাও, আমি তো পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। আর আমার শাস্তি—সেটাও অতি মর্মন্তুদ!’ (সুরা : হিজর, আয়াত : ৪৯-৫০)

আরও পড়তে পারেন-

অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে : ‘হা-মিম। এই কিতাব অবতীর্ণ হয়েছে পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞ আল্লাহর পক্ষ থেকে, যিনি পাপ ক্ষমা করেন, তাওবা কবুল করেন। যিনি শাস্তিদানে কঠোর, শক্তিশালী। ’ (সুরা : মুমিন, আয়াত : ১-৩) এ জন্য ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ আকিদা ও বিশ্বাস হলো, আল্লাহ তাআলাকে ভয় করতে হবে আশা ও ভয়ের সমন্বয়ে। তাই আল্লাহর আজাবের কথা বেশি বেশি চিন্তা করলে ইবাদতের অভ্যাস গড়ে উঠবে।

দুই. এখনই নেক আমলে মনোযোগ দিন। আরো বয়স হলে আমল করব—এমন চিন্তা পরিহার করুন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা তোমাদের রবের পক্ষ থেকে ক্ষমা এবং এমন জান্নাতের দিকে দ্রুত ধাবিত হও, যার প্রশস্ততা হবে আকাশসমূহ ও জমিনসম। তা মুত্তাকিদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। ’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৩৩)

রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, সাতটি বিষয়ের আগে তোমরা দ্রুত নেক আমল করো। তোমরা কি এমন দারিদ্র্যের অপেক্ষা করছ, যা তোমাদের সব কিছু ভুলিয়ে দেবে? নাকি ওই ঐশ্বর্যের অপেক্ষা করছ, যা তোমাদের দর্পিত বানিয়ে ছাড়বে? নাকি এমন রোগের জন্য অপেক্ষা করছ, যার আঘাতে তোমরা জরাজীর্ণ হয়ে পড়বে? নাকি সেই বার্ধক্যের অপেক্ষায় আছ, যা তোমাদের অথর্ব করে ছাড়বে? নাকি মৃত্যুর, যা আকস্মিক এসে পড়বে? নাকি দাজ্জালের, অনুপস্থিত যা কিছুর জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে, সে হচ্ছে সেসবের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট। নাকি কিয়ামতের অপেক্ষা করছ, যে কিয়ামত সর্বাপেক্ষা বিভীষিকাময় ও সর্বাপেক্ষা তিক্ত হবে? (তিরমিজি, হাদিস : ২৩০৬)

তিন. ইবাদতে অলসতা আসার অন্যতম কারণ স্পৃহা না থাকা। নিজের মধ্যে প্রেরণা, চেতনা ও উদ্দীপনা জাগাতে মনীষীদের জীবনী ও বাণী পড়ুন। অলসতা দূর করতে খুব বেশি কাজে লাগবে এগুলো। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘পূর্বপুরুষদের কাহিনিতে বোধশক্তিসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য শিক্ষা রয়েছে। এটা (কোরআনের বাণী) মিথ্যা রচনা নয়; বরং তা আগের ধর্মগ্রন্থগুলোর সমর্থক, সব কিছুর বিশদ বিবরণ এবং ঈমানদার সম্প্রদায়ের জন্য পথনির্দেশ ও রহমত। ’ (সুরা : ইউসুফ, আয়াত : ১১১)

চার. নেককার মানুষের সংস্পর্শ গ্রহণ করুন। এতে নিজের মধ্যে ইবাদতের আগ্রহ-উদ্দীপনা তৈরি হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে ঈমানদাররা, আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সঙ্গে থাকো। ’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ১১৯)

পাঁচ. কোনো অহেতুক কথা বলব না—এই প্রতিজ্ঞা আপনার জন্য নেক কাজ ও কল্যাণময় কাজ করা সহজ করে দেবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, একজন ব্যক্তির ইসলামের পরিপূর্ণতার একটি লক্ষণ হলো, তার জন্য জরুরি নয়—এমন কাজ সে ত্যাগ করে। (তিরমিজি, হাদিস : ২২৩৯)

ছয়. ফজরের নামাজের প্রতি যত্নবান হোন। কেননা অলসতার কারণে ফজরের নামাজ না পড়তে পারলে এটাই হবে সারা দিনের আমলহীনতা, গুনাহমুখিতা ও অলসতার সূচনা। হাদিস শরিফে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যখন তোমাদের কেউ নিদ্রা যায়, তখন তার গ্রীবাদেশে শয়তান তিনটি করে গাঁট বেঁধে দেয়; প্রত্যেক গাঁটে সে এই বলে মন্ত্র পড়ে যে, তোমার সামনে রয়েছে দীর্ঘ রাত, অতএব তুমি ঘুমাও। অতঃপর যদি সে জেগে উঠে আল্লাহর জিকির করে, তাহলে একটি গাঁট খুলে যায়। তারপর যদি অজু করে, তবে তার আরেকটি গাঁট খুলে যায়। তারপর যদি নামাজ পড়ে, তাহলে সমস্ত গাঁট খুলে যায়। আর তার প্রভাত হয় স্ফূর্তি ও ভালো মনে। নচেৎ সে সকালে ওঠে কলুষিত মনে ও অলসতা নিয়ে। (বুখারি, হাদিস : ১১৪২)

সাত. উদাসীনতা থেকে মুক্তির জন্য মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করুন। দোয়া বা আল্লাহর কাছে কোনো কিছু প্রার্থনা করা ইবাদত। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘তোমরা আমার কাছে প্রার্থনা করো, আমি তোমাদের প্রার্থনা কবুল করব। যারা অহংকারবশত আমার ইবাদত হতে বিমুখ, তারা অবশ্যই জাহান্নামে প্রবেশ করবে লাঞ্ছিত হয়ে। ’ (সুরা : মুমিন, আয়াত : ৬০)

মহান আল্লাহ আমাদের আমল করার তাওফিক দান করুন।

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএম

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।