Home ফিকহ ও মাসায়েল ওজন দরে গরু ক্রয়, গরুর সঙ্গে খাসি ফ্রি: কুরবানি জায়েয হবে কি?

ওজন দরে গরু ক্রয়, গরুর সঙ্গে খাসি ফ্রি: কুরবানি জায়েয হবে কি?

।। মুফতি জাবের কাসেমী ।।

প্রতি বছরের মতো এ বছরও কুরবানির প্রাক প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। রাজধানী ঢাকাসহ গ্রামগঞ্জে কুরবানির পশুর হাট জমে উঠেছে। অনেকে কোরবানির পশু কিনেছেন। অনেকে পছন্দের পশু কেনার জন্য বিভিন্ন হাটবাজারে ঘুরে ঘুরে দেখছেন। গরু ব্যবসায়ীরা ক্রেতা আকর্ষণের জন্য বিভিন্ন অফার দিচ্ছেন। ‘একটা কিনলে আরেকটা ফ্রি’, ‘গরু কিনলে খাসি ফ্রি’। অনেকে কিনছেন কেজি হিসেবে।

কুরবানি হবে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য। শরিয়তের দৃষ্টিতে কোরবানির অর্থ হলো আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি ও নৈকট্য অর্জনের জন্য শরিয়ত নির্দেশিত পন্থায় শরিয়ত কর্তৃক নির্ধারিত কোনও প্রিয় বস্তু আল্লাহ তায়ালার দরবারে পেশ করা এবং শরিয়ত নির্দেশিত পন্থায় তা ব্যবহার করা।

আল্লাহ তায়ালা কোরআন মজিদে ইরশাদ করেন, ‘তোমার পালনকর্তার উদ্দেশ্যে নামাজ পড়ো এবং কোরবানি করো।’ (সুরা কাউছার, আয়াত নং-২)।

এ আয়াতে নামায ও কুরবানিকে একসাথে উল্লেখ করে এদিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে নামায যেমন আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও উদ্দেশ্যে পড়া যায় না, কুরবানিও তেমনিভাবে অন্য কারও উদ্দেশে করা যায় না।

নিয়ত বিশুদ্ধ করা:

আমরা বিভিন্ন নিয়তে কুরবানি করে থাকি, কেউ কুরবানি করি সামাজিক মর্যাদা হিসেবে। সমাজে আমার বিশেষ মর্যাদা রয়েছে, সুতরাং কুরবানি না দিলে আমার মর্যাদা থাকবে না। কেউ কুরবানি করি চক্ষু লজ্জা থেকে বাঁচতে। কেউ কুরবানি করি গোস্ত খেতে ইত্যাদি ইত্যাদি। এ জাতীয় উদ্দেশ্যে কুরবানি করলে কুরবানি কবুল হবে না। বরং আমি ছোট ও বড় যে পশুই কোরবানি করি তা যেন আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য হয়, অন্য কোনও উদ্দেশ্যে যেন না হয়।

আল্লাহ তায়ালা কুরআন মজিদে ইরশাদ করেন, ‘ গোশত ও রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না, পৌঁছে তোমাদের অন্তরের তাকওয়া।’ (সুরা হজ, আয়াত নং-৩৭)।

ওজন দরে কুরবানীর পশু বিক্রি কি জায়েয?

একসময় তো গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগি ইত্যাদি পশু-পাখি ওজন করে বেচাকেনার প্রথা ছিল না। বরং ক্রেতাগণ এসবের হাটে গিয়ে যেটা তার পছন্দ হতো বিক্রেতার সঙ্গে দর-দাম করে ক্রয় করে নিতেন। এটাই ছিল পশু-পাখি বেচাকেনার ক্ষেত্রে সমাজের প্রাচীন রীতিনীতি। আমাদের প্রিয় নবী করিম (সা.)এর যুগেও এই নীতি ছিল। বর্তমানে পাখি; যেমন হাঁস, মুরগি ওজন করে ক্রয়-বিক্রয়ের প্রথা কয়েক যুগ আগে থেকে সারা বিশ্বে চালু হয়েছে। নতুন করে গরু, ছাগলও ওজন করে বিক্রির কথা শোনা যাচ্ছে।

এ ক্ষেত্রে শরিয়তের ধারা মতে, যদি ক্রেতা কোনও গরু, ছাগল বা অন্য পশু পছন্দ করার পর বিক্রেতার সঙ্গে আলোচনা করে তার পছন্দের গরু-ছাগলটি কেজিপ্রতি মূল্য নির্ধারণের ভিত্তিতে উভয়ে সম্মত হয়ে বেচাকেনার চুক্তি সম্পন্ন করে, ইসলামি শরিয়তে আলোকে এই বেচাকেনা বৈধ বলে বিবেচিত হবে নিঃসন্দেহে।

যখন এই বেচাকেনা জায়েয বা বৈধ, তখন এ পদ্ধতিতে ক্রয় করা পশু দ্বারা কুরবানিও জায়েয হবে। (তথ্য সূত্র: ফাতাওয়ায়ে উসমানি, খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা- ৯৯-এর টিকা দ্রষ্টব্য এবং আহসানুল ফাতাওয়া, খণ্ড- ৬,পৃষ্ঠা- ৪৯৭)।

গরুর সাথে খাসি ফ্রি, এই খাসি দিয়ে কুরবানি হবে?

কুরবানির গরুর হাটে মাঝে মাঝে বিশালাকারের গরুর সাথে ছাগলও ফ্রি দেওয়া হয়। কয়েক বছর আগে আমাকে কেউ একজন প্রশ্ন করেছিল– ওই ফ্রি ছাগলটি দিয়ে ওয়াজিব কুরবানি দেওয়া যাবে কিনা? উত্তরে বলেছিলাম, ফ্রি দিতে যাবেন কেন? এটিকে ফ্রি নাম দেওয়া হলেও মূলত দুটি পশুর একত্রে দাম নেওয়া হয়েছে। আপনি যে মূল্য পরিশোধ করেছেন তাতে উভয় পশুর মূল্যই রয়েছে। আকর্ষণ সৃষ্টির জন্য কেবল ‘ফ্রি’ নাম দেওয়া হয়েছে। সুতরাং এর দ্বারা ওয়াজিব কোরবানি করতে কোনও অসুবিধা নেই।
(তথ্যসূত্র: হিদায়া, খণ্ড: ৩, পৃষ্ঠা: ৭৭)।

আমাদের সবার কুরবানিকে আল্লাহ কবুল করেন।

লেখক: হাদিসের শিক্ষক, জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা, ঢাকা।