Home ইসলাম জুমার বয়ান: হজ্জ ও কুরবানী পরবর্তী মুমিনের ভাবনা কী রকম হওয়া চাই

জুমার বয়ান: হজ্জ ও কুরবানী পরবর্তী মুমিনের ভাবনা কী রকম হওয়া চাই

।। মুফতি জাবের কাসেমী ।।

যিলহজ্জ মাসে আমরা প্রতি বছর গুরুত্বপূর্ণ দুটি ইবাদত পালন করে থাকি। একটি হলো হজ্জ অপরটি কুরবানি। দুটো ইবাদত পূর্ণ করার পর একজন মুমিনের ভাবনা কেমন হওয়া উচিত, সে সম্পর্কে কিছু আলোচনা করার ইচ্ছা করছি।

যেকোনো ইবাদত পূর্ণ হওয়ার পরে আল্লাহর কাছে প্রিয় আমল হচ্ছে এর জন্য শুকরিয়া ও কৃতজ্ঞতা আদায় করা। হজ ও কুরবানী এর ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু প্রশ্ন হলো কেন শুকরিয়া আদায় করবে? কারণ তিনি ইবাদত করার জন্য সঠিক পথ দেখিয়েছেন। আদায় করার সুযোগ দিয়েছেন ।এর জন্য পুরস্কার নির্ধারণ করেছেন এবং কবুল হওয়ার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বিশেষ করে যারা ইবাদত করতে বিভিন্ন ত্রুটি বিচ্যুতি করেছেন তাদের বেশি করে ইস্তেগফার ও শুকরিয়া আদায় করা যাতে করে তাদের ত্রুটি গুলো এর দ্বারা দূর হয়ে যায়।

এজন্যে আল্লাহ তাআলা কুরআন মাজীদের বিভিন্ন আয়াতে বিভিন্ন ইবাদতের আলোচনা করে তাঁর অনুগ্রহের কথা বলেছেন বিশেষ করে তার শুকরিয়া আদায় করার ব্যাপারে জোর তাকিদ দিয়েছেন।

যেমন হজের আলোচনা করতে গিয়ে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- “তোমাদের উপর তোমাদের পালনকর্তার অনুগ্রহ অন্বেষন করায় কোন পাপ নেই। অতঃপর যখন তওয়াফের জন্য ফিরে আসবে আরাফাত থেকে, তখন মাশ‘ আরে-হারামের নিকটে আল্লাহকে স্মরণ কর। আর তাঁকে স্মরণ কর তেমনি করে, যেমন তোমাদিগকে হেদায়েত করা হয়েছে। আর নিশ্চয়ই ইতিপূর্বে তোমরা ছিলে অজ্ঞ।” (সূরা বাকারা ,আয়াত ১৯৮)।

উক্ত আয়াতে আল্লাহকে সেভাবে স্মরণ করতে বলা হয়েছে যেভাবে তিনি হেদায়েত দান করেছেন।

হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম বাইতুল্লা নির্মাণের পর বলেন- “হে আমাদের পালনকর্তা, আমি নিজের এক সন্তানকে তোমার পবিত্র গৃহের সন্নিকটে চাষাবাদহীন উপত্যকায় আবাদ করেছি; হে আমাদের পালনকর্তা, যাতে তারা নামায কায়েম রাখে। অতঃপর আপনি কিছু লোকের অন্তরকে তাদের প্রতি আকৃষ্ট করুন এবং তাদেরকে ফলাদি দ্বারা রুযী দান করুন, সম্ভবতঃ তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে”। (সূরা ইব্রাহীম, আয়াত ৩৭)।

এই আয়াতে আল্লাহ তায়ালার শুকরিয়া আদায় করার কথা বলা হয়েছে।

কুরবানী সম্পন্ন হওয়ার পর আল্লাহ তাআলা নিচের আয়াতে শুকরিয়া আদায় করার কথা বলেছেন- “এবং কা’বার জন্যে উৎসর্গীকৃত উটকে আমি তোমাদের জন্যে আল্লাহর অন্যতম নিদর্শন করেছি। এতে তোমাদের জন্যে মঙ্গল রয়েছে। সুতরাং সারিবদ্ধভাবে বাঁধা অবস্থায় তাদের যবেহ করার সময় তোমরা আল্লাহর নাম উচ্চারণ কর। অতঃপর যখন তারা কাত হয়ে পড়ে যায় তখন তা থেকে তোমরা আহার কর এবং আহার করাও যে কিছু যাচ্ঞা করে না তাকে এবং যে যাচ্ঞা করে তাকে। এমনিভাবে আমি এগুলোকে তোমাদের বশীভূত করে দিয়েছি, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।” (সূরা হজ , আয়াত ৩৬)।

রোযা পূর্ণ হওয়ার পর আল্লাহ তাআলার শুকরিয়া আদায় করার কথা বলা হয়েছে- “রমযান মাসই হল সে মাস, যাতে নাযিল করা হয়েছে কোরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্যপথ যাত্রীদের জন্য সুষ্পষ্ট পথ নির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে, সে এ মাসের রোযা রাখবে। আর যে লোক অসুস্থ কিংবা মুসাফির অবস্থায় থাকবে সে অন্য দিনে গণনা পূরণ করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান; তোমাদের জন্য জটিলতা কামনা করেন না যাতে তোমরা গণনা পূরণ কর এবং তোমাদের হেদায়েত দান করার দরুন আল্লাহ তাআলার মহত্ত্ব বর্ণনা কর, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর।” (সূরা বাকারা, আয়াত- ১৮৫)।

ওযুর বিধান পূর্ণ করার পর আল্লাহ তা’আলা শুকরিয়া আদায় করার কথা বলেছেন- “হে মুমিনগণ, যখন তোমরা নামাযের জন্যে উঠ, তখন স্বীয় মুখমন্ডল ও হস্তসমূহ কনুই পর্যন্ত ধৌত কর এবং পদযুগল গিটসহ। যদি তোমরা অপবিত্র হও তবে সারা দেহ পবিত্র করে নাও এবং যদি তোমরা রুগ্ন হও, অথবা প্রবাসে থাক অথবা তোমাদের কেউ প্রসাব-পায়খানা সেরে আসে অথবা তোমরা স্ত্রীদের সাথে সহবাস কর, অতঃপর পানি না পাও, তবে তোমরা পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করে নাও-অর্থাৎ, স্বীয় মুখ-মন্ডল ও হস্তদ্বয় মাটি দ্বারা মুছে ফেল। আল্লাহ তোমাদেরকে অসুবিধায় ফেলতে চান না; কিন্তু তোমাদেরকে পবিত্র রাখতে চান এবং তোমাদের প্রতি স্বীয় নেয়ামত পূর্ণ করতে চান-যাতে তোমরা কৃতজ্ঞাতা প্রকাশ কর।” (সূরা মায়েদা, আয়াত ৬)।

হযরত মুয়াজ ইবনে জাবালকে নবী সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম ফরজ নামায শেষে শুকরিয়া আদায় করার কথা বলেছেন।

আরও পড়তে পারেন-

“মুআয ইবনু জাবাল (রাযি.) থেকে বর্ণিত- একদা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার হাত ধরে বললেন, হে মু‘আয! আল্লাহর শপথ! আমি অবশ্যই তোমাকে ভালবাসি, আল্লাহর শপথ! আমি অবশ্যই তোমাকে ভালবাসি। তিনি বললেন, হে মু‘আয! আমি তোমাকে ওয়াসিয়াত করছি, তুমি প্রত্যেক সলাতের পর এ দু‘আটি কখনো পরিহার করবে না- “আল্লাহুম্মা আঈন্নী ‘আলা যিকরিকা ওয়া শুকরিকা ওয়া হুসনি ‘ইবাদাতিকা” (অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আপনার স্মরণে, আপনার কৃতজ্ঞতা প্রকাশে এবং আপনার উত্তম ‘ইবাদাতে আমাকে সাহায্য করুন)।” (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ১৫২২)।

উক্ত হাদিসে নামাজের পরে শুকরিয়া আদায় করার কথা বলা হয়েছে। এছাড়াও অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ইবাদতের পাশাপাশি সরাসরি শুকরিয়া আদায় করার কথাও বলেছেন।

ইরশাদ হয়েছে- “বরং আল্লাহরই এবাদত করুন এবং কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত থাকুন।”
সূরা যুমার, আয়াত ৬৬)।

এজন্য আল্লামা সাদী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন যেমনিভাবে দুনিয়াবি নেয়ামত তথা সুস্থতা, নিরাপত্তা ও রিজিকের জন্য বান্দার যেমন শুকরিয়া আদায় করা জরুরী ঠিক দ্বীনী নেয়ামত তথা এখলাস, তাকওয়া ও তাওফিক এগুলোর জন্য শুকরিয়া আদায় করার জরুরি অন্যথায় অহংকার বান্দাকে পেয়ে বসবে এবং তার আমলকে বিনষ্ট করে দিবে।
প্রশ্ন হলো কিভাবে সে শুকরিয়া আদায় করবে?

জিলহজ মাসে বিশেষ করে যে এবাদতগুলো করেছে সেগুলোকে উল্লেখ করে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের শুকরিয়া আদায় করে বলবে-

১. হে আল্লাহ! আপনি আমাকে জিলহজের ১০ দিন এবাদতের সুযোগ দিয়েছেন সেজন্য আলহামদুলিল্লাহ।

২. হে আল্লাহ আপনি আমাকে আরাফার রোজা রাখার তৌফিক দিয়েছেন সেজন্য আলহামদুলিল্লাহ।

৩. হে আল্লাহ! আপনি আমাকে হজের সুযোগ দিয়েছেন সেজন্য আলহামদুলিল্লাহ।
৪. হে আল্লাহ ! আপনি আমাকে কুরবানী করার সুযোগ দিয়েছেন সেজন্য আলহামদুলিল্লাহ।

এভাবে বান্দা যখন প্রত্যেক ইবাদতের ক্ষেত্রে আল্লাহ তায়ালার শুকরিয়া আদায় করবে তখন অতিরিক্ত আরো বেশি করে তার ইবাদতের সুযোগ মিলবে।

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন- “যখন তোমাদের পালনকর্তা ঘোষণা করলেন যে, যদি কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর, তবে তোমাদেরকে আরও দেব এবং যদি অকৃতজ্ঞ হও তবে নিশ্চয়ই আমার শাস্তি হবে কঠোর।” (সূরা ইব্রাহীম, আয়াত ৭)।

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে তার শুকরিয়া বেশি করে আদায় করার তৌফিক দান করুন।

[আজ (১৫ জুলাই) শুক্রবার ঢাকা মানিক নগর সরদার বাড়ি রিয়াজুল জান্নাহ জামে মসজিদে প্রদত্ত জুমার বয়ান]

– মুফতি জাবের কাসেমী, মুহাদ্দিস- জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা ঢাকা।

উম্মাহ২৪ডটকম:এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।