Home ফিকহ ও মাসায়েল ইসলাম প্রচারের সাথে এর সঠিক রূপ ও পদ্ধতি অবিকৃত রাখা জরুরী

ইসলাম প্রচারের সাথে এর সঠিক রূপ ও পদ্ধতি অবিকৃত রাখা জরুরী

।। মাওলানা সাঈদ আহমদ ।।

যুগে যুগে দীন ইসলামের প্রচার প্রসার যেভাবে এগিয়ে নিয়েছেন ধারক বাহকরা, তেমনিভাবে বিন্দুমাত্রও পিছিয়ে নেই কোরআন-হাদীসের অপব্যাখ্যাকারী ও পরিবর্তনকারীরা। হোক তা কলমের ডগায় কিংবা সাহিত্যের পাতায়, সরাসরি বক্তৃতায় কিংবা মিডিয়ার পর্দায়।

তাই ইসলামের প্রচার-প্রসারে যেভাবে দাওয়াহ জরুরী, তেমনি ইসলামের পথ-পদ্ধতি সুরক্ষিত ও অবিকৃত রাখতে মুজাদালাহও জরুরী। উদাহরণসরূপ ইসলাম নামক পাখিটি কেয়ামতের আগ পর্যন্ত সারা দুনিয়ায় উড়তে থাকবে। আর তা উড়ার জন্যে দুটি ডানা লাগবে। তন্মধ্যে একটির নাম দাওয়াহ আর অপরটির নাম মুজাদালাহ।

ইরশাদ হয়েছে- ادْعُ إِلى سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ وَجادِلْهُمْ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ

‘আপন পালনকর্তার পথের প্রতি দাওয়াত দিন হিকমতের সাথে ও সুন্দর উপদেশ শুনিয়ে এবং তাদের সাথে বিতর্ক করুন পছন্দযুক্ত পন্থায়।’ (সূরা নাহল ১২৫)।

এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা দুটি আদেশ দিয়েছেন। এক. ঈমান ও আমলের দাওয়াহ। দুই বিতার্কীকদের সাথে মুজাদালাহ তথা বিতর্ক ও দলীল-প্রমাণের মাধ্যমে বাতিলকে ভুল সাব্যস্ত করে সঠিকটা তুলে ধরা। কেননা- দাওয়াহর দ্বারা উম্মাহ সঠিক পথের দিশা পাবে এবং ইসলামের অনুসারীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাবে। আর মুজাদালাহর মাধ্যমে-

১. দীন-ইসলামের সঠিক রূপ ও পথ-পদ্ধতি কেয়ামত পর্যন্ত সুরক্ষিত ও অবিকৃত থাকবে।

২. ঈমান ও আমলের ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি, ছাড়াছাড়ি, ভুল বা অপব্যাখ্যা, বিকৃতি, বিভ্রান্তি ও মিথ্যাচারসহ যাবতীয় প্রোপাগাণ্ডার অসারতা উম্মাহ বুঝতে পারবে।

৩. মুসলমানরা (জন্মলগ্ন থেকে মুসলিম হোক বা দাওয়াহর মাধ্যমে হোক) সব ধরণের সংশয়-সন্দেহ থেকে মুক্ত থেকে সঠিক আকীদা ও আমলের উপর অবিচল থাকবে। অন্যথায় মুসলমানরা সন্দিহান হয়ে পড়বে। যেমন আমাকে একবার আমাদের হাটহাজারী মাদরাসার এক লাইব্রেরীর মালিক বলল, ‘শরীয়তে শবে বরাত বলতে কিছু আছে নাকি?’

অনুরূপ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

يَحْمِلُ هَذَا الْعِلْمَ مِنْ كُلِّ خَلَفٍ عُدُولُهُ, يَنْفُونَ عَنْهُ تَحْرِيفَ الْغَالِينَ, وَانْتِحَالَ الْمُبْطِلِينَ, وَتَأْوِيلَ الْجَاهِلينَ.

‘প্রত্যেক যুগে সৎ ও নিষ্ঠাবান লোকেরা কুরআন-হাদীসের ধারক-বাহক হবে। তাঁরা সীমালংঘনকারীদের অতিরঞ্জন ও বাড়াবাড়ি, পথচ্যুতদের মিথ্যাচার বা বিকৃতি এবং মূর্খদের অপব্যাখ্যা ও ছাড়াছাড়ি থেকে তা সুরক্ষিত ও অবিকৃত রাখবে।’ (হাদীস হাসান, সবিস্তারে দেখুন বান্দার আল-আরবায়ূওনা হাদীসান ফীল ইলম, পৃ. ৩৭-৩৮)

সুতরাং কিছু লোক থাকতে হবে, যারা ইসলামকে অধ্যয়ন করার পাশাপাশি ইসলাম বিদ্ধেষী সম্প্রদায়ের চিন্তা চেতনার দাঁতভাঙ্গা জবাব দিবে এবং ইসলামী নামধারী দলের ঈমান ও আমলের ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি, ছাড়াছাড়ি, ভুল বা অপব্যাখ্যা, বিকৃতি, বিভ্রান্তি ও মিথ্যাচারসহ যাবতীয় প্রোপাগাণ্ডাকে পর্যবেক্ষণ করবে এবং হক ও বাতিলের মাঝে অপ্রতিরুদ্ধ প্রাচিরের ভূমিকা পালন করবে।

আর যদি মুজাদালাহ করা না হয়, তাহলে ইসলাম একটি বিচিত্র ও বিকৃত রূপ ধারণ করবে। কয়েকটি উদাহরণ দেখুন-

১. আল্লাহ তাআলা কারো থেকে জন্মগ্রহণ করেন নাই এবং কাউকে জন্মও দেন নাই। কিন্তু মুশরিকরা বলল, আল্লাহ তাআলার মেয়ে রয়েছে। (সূরা নাহল ৫৭) খৃস্টানরা বলল, ঈসা আ. তাঁর পুত্র। ইহুদিরা বলল, ওযাইর আ. তাঁর পুত্র। (সূরা তাওবা ৩০)

২. আল্লাহ তাআলাই একমাত্র আলিমুল গায়েব। কিন্তু কেউ বলল, নবীও গায়েব জানেন। আরেক জন বলল, গওছ পাকও জানেন।

৩. আল্লাহ তাআলা আকার থেকে মুক্ত ও পবিত্র। কিন্তু কেউ বলল, তিনি সাকার। আরেক জন বলল, তিনি নিরাকার।

৪. নবী ছাড়া কেউ মা’সূম বা নিষ্পাপ নন। কিন্তু কেউ বলল, নবী মা’সূম নন। আবার কারো মতে, নবীর মতো তাদের ১২ ইমামও মা’সূম।

৫. একদল তাওহীদকে এত বুঝা বুঝল যে, তারা এখন শিরিক ফোবিয়ায় আক্রান্ত, সবখানে শুধু শিরিক দেখতে পায়! তারা ছাড়া বাকিরা সবাই কুবুরী (কবর পূজারী)।

৬. আরেকদল তাওহীদুল হাকিমিয়াকে এত বেশি ধারণ করল যে, সর্বত্র কুফর-তাগুত খোঁজার চেষ্টা করে এবং দ্বীন কায়েম বলতে (যেভাবেই হোক) শুধু খেলা(ফত প্রতিষ্ঠা করাই বুঝে, আর এটাকেই প্রথম ও প্রধান ইবাদত মনে করে।

৭. আরেকটি দলের উপর ইশকে রাসুল ও অলিগণের মুহাব্বত এত বেশি চেপে বসলো যে, তাঁদের মর্যাদা ও ক্ষমতা আল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছে দিল। আর তারা ছাড়া বাকিরা সবাই বিশেষত দেওবন্দীরা নবী-অলীর দুশমন ও কাফের।

এভাবে রাজনীতি ইসলামের অবিচ্ছেদ্য অংশ ও অপরিহার্য অঙ্গ। কিন্তু সেকুলাররা বলল, ইসলামে রাজনীতি নেই কিংবা ধর্ম পবিত্র জিনিষ, তা রাজনীতিতে টেনে আনবেন না। আবার কেউ পশ্চিমা গণতন্ত্রকে ইসলামী গণতন্ত্র বানানোর কথা বলল।

আরও পড়তে পারেন-

শবে বরাতের ফযীলত সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। এবং সম্মিলিত কোন রূপ না দিয়ে ও বিশেষ কোন পন্থা উদ্ভাবন না করে বেশি ইবাদত করাও নির্ভরযোগ্য হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। কিন্তু একশ্রেণীর মানুষ শবে বরাতকে কেন্দ্র করে বাড়াবাড়িতে লিপ্ত। তারা ১২ বা ১৬ রাকাআত নামায আদায় এবং সম্মিলিতভাবে ইবাদতের রূপ দেয়। বিভিন্ন মাযার ও কবরস্থানে যায়। মসজিদ ও বাসা-বাড়ীতে আলোকসজ্জা ও হালুয়া-রুটির ব্যবস্থা করা হয়। আবার এক শ্রেণীর মানুষের মধ্যে ছাড়াছাড়ির প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। তাদের দাবি হল, ইসলামে শবে বরাতের কোন ধারণা নেই। এ ব্যাপারে যত রেওয়ায়েত আছে সব মাওযূ বা যয়ীফ। এবং এ রাতকে বিশেষ কোন ফযীলতপূর্ণ মনে করা যাবে না, ইত্যাদি।

লক্ষ্য করুণ, যদি মুজাদালাহ করা না হয়, তাহলে কোনটা ইসলামের সঠিক রূপ ও পথ-পদ্ধতি তা কীভাবে নিরধারণ করবে?

আর ইসলাম যেমন জরূরী, তদ্রূপ ইসলামের সঠিক ও অবিকৃত রূপ ও পথ-পদ্ধতিও জরুরী। ইরশাদ হয়েছে,{آمِنُوا كَمَا آمَنَ النَّاسُ}

‘তোমরা ঈমান আনয়ন কর যেভাবে লোকেরা (সাহাবায়ে কেরাম) ঈমান এনেছে।’

অন্যত্র এসেছে-{فَإِنْ آمَنُوا بِمِثْلِ مَا آمَنْتُمْ بِهِ فَقَدِ اهْتَدَوْا}

‘তারা যদি ঈমান আনয়ন করে তোমাদের (সাহাবায়ে কেরামের) ঈমানের মত, তাহলে অবশ্যই তারা হেদায়াতপ্রাপ্ত হবে।’ (সূরা বাকারা ১৩ ও ১৩৭)

হাদীসে এসেছে-

وَإِنَّ بَنِى إِسْرَائِيلَ تَفَرَّقَتْ عَلَى ثِنْتَيْنِ وَسَبْعِينَ مِلَّةً، وَتَفْتَرِقُ أُمَّتِي عَلَى ثَلَاثٍ وَسَبْعِينَ مِلَّةً، كُلُّهُمْ فِي النَّارِ إِلَّا مِلَّة وَاحِدَة، قَالُوا: وَمَنْ هِيَ يَا رَسُولَ اللهِ؟ قَالَ: مَا أَنَا عَلَيْهِ وَأَصْحَابِي.

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, বনী ইসরাঈল বাহাত্তর দলে বিভক্ত হয়েছিলো। আর আমার উম্মত তেহাত্তর দলে বিভক্ত হবে। কিন্তু সব দলই জাহান্নামী, শুধু একদল হবে মুক্তিপ্রাপ্ত (তথা জান্নাতী)। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! ঐ মুক্তিপ্রাপ্ত (ও জান্নাতী) দল কোনটি? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তরে বললেন, যারা আমার এবং আমার সাহাবাদের মত ও পথের পথিক হবে।’ (তিরমিযী ২৬৪১; তাবরানী আওসাত ৪৮৮৬, হাদীসটি গ্রহণযোগ্য। সবিস্তারে জানতে দেখুন, বান্দার আল-আরবায়ূওনা হাদীসান ফীস সুন্নাহ ওয়াল বিদআহ পৃ. ৪৫-৪৭)।

সেই মুক্তিপ্রাপ্ত ও জান্নাতী দলটির নাম হল, আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ। হাফেজ ইবনে কাছীর রহ. (মৃ. ৭৭৪ হি.) লিখেন-

وهذه الأمة أيضًا اختلفوا فيما بينهم على نحل، كلها ضلالة إلا واحدة، وهم أهل السنة والجماعة، المتمسكون بكتاب الله وسنة رسول الله صلى الله عليه وسلم، وبما كان عليه الصدر الأول من الصحابة والتابعين، وأئمة المسلمين في قديم الدهر وحديثه، كما رواه الحاكم في مستدركه أنه سئل عليه السلام عن الفرقة الناجية منهم، فقال: “ما أنا عليه [اليوم] وأصحابي”.

এই উম্মতও পরস্পরে ইখতিলাফ করে অনেক দলে বিভক্ত হয়েছে। সবগুলো গোমরাহ একটি দল ছাড়া। আর সেটি হচ্ছে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ। যারা কুরআন-সুন্নাহকে শক্তভাবে ধরে এবং সাহাবা-তাবিয়ীন ও ইমামগণের পথকে আঁকড়ে ধরে।.. (তাফসীরে ইবনে কাছীর ৬/৩৩৩)।

সারকথা, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ইসলামের নামে বিভিন্ন রূপ ও পথ-পদ্ধতি দেখা দিবে। এবং অনেক দল-উপদলের জন্ম হবে। তবে ঈমান-আকীদা ও আমলের ক্ষেত্রে কোন্ দলটির অনুসরণ করলে ইসলামের সঠিক রূপ ও পথ-পদ্ধতি পাওয়া যাবে এবং মুক্তি মিলবে তাও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

আর এ সঠিক রূপ ও পথ-পদ্ধতি পরিষ্কার হবে মুজাদালাহর মাধ্যমে। কেননা প্রত্যেক দল নিজেদের আকীদা ও আমলের স্বপক্ষে দলিল-প্রমাণ দিয়ে থাকে। যদিও তা অশুদ্ধ ও অগ্রহণযোগ্য। আল্লাহ তাআলা বলেন-

كُلُّ حِزْبٍ بِمَا لَدَيْهِمْ فَرِحُونَ. قال ابن كثير في تفسيره أي: يفرحون بما هم فيه من الضلال؛ لأنهم يحسبون أنهم مهتدون.

‘প্রতিটি দল নিজেদের (ভ্রান্ত) ধারণা মতে যে পন্থা অবলম্বন করেছে, তা নিয়েই উৎফুল্ল।’ (তাফসীরে ইবনে কাছীর ৬/৩৩৩)। অর্থাৎ ভ্রান্ত দলগুলো নিজেদের গোমরাহী নিয়েই সন্তুষ্ট। কেননা তাদের ধারণা মতে তারা হেদায়তপ্রাপ্ত।

ইমাম শাতেবী রহিমাহুল্লাহ (৭৯০ হি.) বলেন-

لا تجد مبتدعا ممن ينسب الى الملة الا وهو يستشهد على بدعته بدليل شرعي، فينزله على ما وافق عقله وشهوته، وهو من الحكمة الازلية التي لا مرد لها، قال تعالى يضل به كثيرا ويهدي به كثيرا.

প্রত্যেক পথ ভ্রষ্ট ব্যক্তিকে তুমি দেখতে পাবে যে, সে তার ভ্রান্তির পক্ষে (কুরআন হাদিস থেকে) দলিল হাজির করছে। এর কারণ হচ্ছে, সে দলিলকে তার নিজস্ব বুঝ ও মনের চাহিদা মতো ফিট করে।

এ জন্যই আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, কুরআন থেকে দলিল গ্রহণ করে অনেক লোক পথ ভ্রষ্ট হয় এবং অনেকে হেদায়েত প্রাপ্ত হয়। (আল-ই’তিসাম- ১/১৭৭)।

ভ্রান্তি ও গোমরাহী থেকে বাঁচার জন্য এটা একটা মৌলিক নীতিমালা। তাই কারো বক্তব্যে দলিল দেখলেই সঠিক মনে করা যাবে না। বরং যাচাই করে নিতে হবে। আর যাচাই হবে মুজাদালার মাধ্যমে। সুতরাং দাওয়াহর মতো মুজাদালাহও জরুরী বিষয়।

আলহামদুলিল্লাহ! ইসলামের শুরুলগ্ন থেকে এ উভয় ধারা চলে আসছে এবং হকপন্থীগণ এ দায়িত্ব পালন করে আসছেন। আর মুজাদালাহর ক্ষেত্রে ইসলামের সঠিক রূপ ও পথ-পদ্ধতির বিপরীত ছোট-বড় যা কিছু হবে, সবই শামিল। তবে হ্যাঁ, স্থান-কাল ভেদে কোনটির গুরুত্ব বেশ-কম হতে পারে।

কিন্তু কিছু ভাই আছেন, যারা তুলনামূলক কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করলে, তারা বিভিন্ন নসীহত-উপদেশ দেন। যেমন ‘লা-মাযহাবীরা কী চার মাযহাবে সীমাবদ্ধ?’ শিরোনামে একটি পোস্ট দিয়েছিলাম। এতে এক ভাই কমেন্ট করলেন, ‘পৃথিবী এগিয়ে চলেছে। আর হানাফী-সালাফীরা মাযহাবের গুরুত্ব নিয়ে পড়ে আছে’। আর এখন মওদুদী সাহেব ও জামায়াতে ইসলামী নিয়ে লিখছি, তো আকারে ইঙ্গিতে কিছু বলার চেষ্টা করছেন!

এদের সম্পর্কে আর কিছু না বলে কয়েকজন ব্যক্তিকে উদাহরণ হিসেবে দেখিয়ে দিচ্ছি। পাক-ভারত আযাদী আন্দোলনের অগ্রদূত, শায়খুল হিন্দ মাহমূদ হাসান দেওবন্দী রহ. যেভাবে ইংরেজদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন, আবার লা-মাযহাবী ও তাদের গুরু হুসাইন বাটালভীর খণ্ডনে ‘আদিল্লায়ে কামিলা’ (যার অনুবাদ: তুহফায়ে আহলে হাদীস) ও ‘মিসবাহুল আদিল্লা’র জবাবে ‘ইযাহুল আদিল্লা’ লিখেছেন।

এভাবে তাঁর শাগরিদ ইংরেজ খেদাও আন্দোলনের বীর শাইখুল আরব ওয়াল আজম, সায়্যিদ হুসাইন আহমদ মাদানী রহ.ও ‘জামায়াতে ইসলামী’র সংবিধানের একটি ধারার বিরুদ্ধে কলম ধরেছেন ‘মওদূদী দস্তুর আওর আকায়িদ কী হাকীকত’ (এর অনুবাদ হয়েছে, তবে এখনো অপ্রকাশিত) নামে। এবং আহমদ রেযা খান বেরেলভীর বিরুদ্ধে ‘আশ-শিহাবুস সাকিব’ নামে।

আরব-আজমসহ সর্বত্র সমাদৃত ব্যক্তিত্ব সায়্যিদ আবুল হাসান আলী নদভী রহ. যেখানে সারা বিশ্বের মুসলমানদের মৌলিক সমস্যা নিয়ে কথা বলেছেন, সেখানে মওদূদী সাহেবের ভুল-ভ্রান্তি নিয়ে লিখেছেন, ‘আসরে হাযের মেঁ দীন কী তাফহীম ওয়া তাশরীহ’ (যার অনুবাদ: ইসলামের রাজনৈতিক ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ) নামক গ্রন্থ।

দেওবন্দী ঘরানার মধ্যে যাকে উদার ব্যক্তি হিসেবে দেখা হয় এবং যার খিদমাত ও গ্রহণযোগ্যতা সারা বিশ্বের আলেম ও শিক্ষিত মুসলমানদের কাছে ঈর্ষনীয়, সেই মাওলানা মুফতী তকী ওসমানী হাফিযাহুল্লাহও মওদূদী সাহেবের ‘খেলাফত ও মুলূকিয়্যাত’ নামক গ্রন্থের যথাযথ জবাব দিয়েছেন ‘হযরত মুআবিয়া আও তারীখী হাকায়িক’ ‎(যার অনুবাদ: ইতিহাসের কাঠগড়ায় হযরত মুআবিয়া) লিখে, এমনকি সদ্য প্রকাশিত তাঁর আত্মজীবনীতেও জামায়াতে ইসলামী ও শিবির সম্পর্কে লম্বা আলোচনা করেছেন। এবং লা-মাযহাবীদের বিরুদ্ধে লিখেছেন, ‘তাকলীদ কী শরয়ী হাইসিয়াত’ ‎(যার অনুবাদ: মাযহাব কি ও কেন?)।

আল্লাহ তাআলা সকলকে সহীহ বুঝ দান করুন।

লেখক: তরুণ গবেষক আলেম ও উস্তাদ- আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।