Home সোশ্যাল মিডিয়া বোয়ালমারীবাসীকে পরিবহনমালিকদের দৌরাত্ম্য থেকে বাঁচান

বোয়ালমারীবাসীকে পরিবহনমালিকদের দৌরাত্ম্য থেকে বাঁচান

বেলায়েত হুসাইন: সাধারণ জনগণ হিসেবে আমরা যে কত অসহায়, তা সর্বশেষ ফরিদপুরের বোয়ালমারী থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা রুটে চালু হওয়া বিআরটিসি বাস বন্ধ হওয়ার ঘটনায় আরও একবার জানা গেল। স্থানীয় জনগণের দাবিতে কয়েকজন নেতা ও সমাজকর্মীর নিরলস প্রচেষ্টায় এই বাস সার্ভিস চালু হয়। কিন্তু চালু হওয়ার প্রথম দিনে শুরুর ট্রিপটিই সন্ত্রাসী কায়দায় বন্ধ করে দেয় জেলার বাস মালিক গ্রুপ।

গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ঘটনার দিন ভাঙ্গা পৌরসভা কার্যালয়ের সামনের সড়কে গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমানের নেতৃত্বে এক শ থেকে দেড় শ লোক বাস থেকে যাত্রীদের নামিয়ে তাঁদের রীতিমতো অপমান করে এবং বাসটি খালি করে বোয়ালমারীতে ফেরত পাঠানো হয়। শুধু তা–ই নয়, এখানে প্রশাসনের কোনো সদস্যকে কোনোরকম ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়নি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে বিআরটিসি বাস আটকে দেওয়ার খবর মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে। সাধারণ জনগণ সেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন ফরিদপুর বাস মালিক গ্রুপের তত্ত্বাবধানে বোয়ালমারী-ঢাকা রুটে চলাচলকারী ‘রাজধানী পরিবহন’-এর একটি বাসের ওপর। বোয়ালমারী কাউন্টার থেকে যাত্রী নিয়ে বাসটি রওনা করলে জনগণ বাসটির পথ রোধ করেন। অবাক করা ব্যাপার হলো, এবার পুলিশের শতভাগ তৎপরতা দেখা যায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘটনাস্থলে পুলিশ উপস্থিত হয়ে বাসটি কাউন্টার ছাড়ার ব্যবস্থা করে।

প্রশ্ন হলো, সন্ত্রাসী কায়দায় সরকারি প্রতিষ্ঠানের গাড়ি থেকে যাত্রীদের নামিয়ে দেওয়ার সময় প্রশাসনের কেউ কোনো পদক্ষেপ নিলেন না কেন? আবার বোয়ালমারী কাউন্টারে স্বল্প কয়েকজন যাত্রীর বাধার মুখে রাজধানী পরিবহনের বাস ছাড়াতে মুহূর্তেই পুলিশের আগমন ঘটল কীভাবে? পুলিশ প্রশাসন মূলত কাদের স্বার্থে মাঠে নামে?

ফরিদপুর বাস মালিক গ্রুপের বিরুদ্ধে জনগণের অভিযোগ বিস্তর। এর আগে দেশের নামকরা একাধিক পরিবহন কোম্পানি ফরিদপুর থেকে ঢাকা রুটে গাড়ি চালু করবে, সেই ঘোষণা দিয়েছিল; এমনকি এ–সংক্রান্ত ব্যানার-সাইনবোর্ড পর্যন্ত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চোখে পড়েছে। কিন্তু কোন সে অদৃশ্য শক্তিবলে তাদের এই কার্যক্রম আর সামনে বাড়েনি, আমাদের মতো সাধারণ মানুষের সে প্রশ্ন এখনো রয়েছে। বাস মালিক গ্রুপের ‘শত্রু’রা অবশ্য বলেন, নিজেদের একচেটিয়া ব্যবসা ঠিক রাখতে এটি মূলত তারাই করেছে, মানে ওই নামীদামি কোম্পানিগুলোকে আর ফরিদপুরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।

আরও পড়তে পারেন-

বাস মালিক গ্রুপের পরিবহনে যাতায়াতকারী ওই সব ‘শত্রু’র অভিযোগ, ঢাকা থেকে ফরিদপুরের যে পরিমাণ দূরত্ব, তার চেয়ে এখানে বেশি ভাড়া আদায় করা হয়। পদ্মা সেতু খুলে দেওয়ার পর ফরিদপুর-ঢাকা রুটে বিআরটিসি বাস সার্ভিস চালু হওয়ার আগে এখানে মূলত উল্লেখযোগ্য একটিমাত্র কোম্পানির বাস বেশি চলাচল করে আসছিল। বিভিন্ন নামে আরও কয়েকটি পরিবহন চললেও সেগুলো মূলত ‘থার্ড ক্লাস’–এর। ওই উল্লেখযোগ্য কোম্পানিটির সমকক্ষ কোনো পরিবহন না থাকায় যাত্রীদের ওপর তারা একপ্রকার ‘ভাড়া নৈরাজ্য’ চালাচ্ছিল এবং সেটি এখনো কিছুটা বহাল।

যাত্রীরা মনে করছেন, বিআরটিসি বাস বন্ধের পেছনে ওই উল্লেখযোগ্য কোম্পানিরও হাত থাকতে পারে। কেননা বিআরটিসি এসি বাস সার্ভিস চালু হলে দিন শেষে তাদেরই টিকিট বিক্রি নিচে নেমে আসবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যাত্রীদের প্রতিক্রিয়া দেখে এবং অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁরা চান, সড়কে একাধিক ভালো মানের পরিবহন চালু থাকুক। এতে কোম্পানিগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা থাকবে। এর ফলে যাত্রীরা উন্নত সেবা পাবেন। না হলে বর্তমান যে পরিস্থিতি, এখানে যাত্রীদের স্বার্থ একেবারেই গৌণ। যত সুযোগ-সুবিধা সবই মালিকপক্ষের স্বার্থ বিবেচনা করে করা।

সবশেষ তাই বোয়ালমারীবাসীর পক্ষ থেকে দেশের কর্তাব্যক্তি ও প্রশাসনের প্রতি আমার অনুরোধ, আপনারা জনগণের সেবক, তাঁদের কল্যাণেই পদক্ষেপ নিন। বড়লোকদের আরও বড়লোক করে এবং গরিবদের পেটে লাথি মেরে কী লাভ?

আশার কথা, প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বিআরটিসি বাস আবার চলাচল শুরু করেছে। আমরা চাই, পরিবহনমালিকেরা এ ব্যাপারে আর কোনো ঝামেলা করার সুযোগ না পায়। এ ব্যাপারে আমরা প্রশাসনের ওপর ভরসা রাখতে চাই।

– বেলায়েত হুসাইন, গণমাধ্যমকর্মী, দাদপুর, বোয়ালমারী, ফরিদপুর।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।