Home ইসলাম ইসলামী ব্যাংকিংয়ে গ্রাহকের দায়িত্ব

ইসলামী ব্যাংকিংয়ে গ্রাহকের দায়িত্ব

।। আতাউর রহমান খসরু ।।

ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থায় শরিয়াহ পরিপালনে ব্যাংক ও গ্রাহক উভয়ের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। ব্যাংক ও গ্রাহক উভয়ে আন্তরিক না হলে শরিয়াহ পরিপালন পুরোপুরি সম্ভব নয়। এ জন্য বর্তমান যুগের ইসলামী অর্থনীতিবিদরা ব্যাংকিং খাতে Customer Engagement (সিই)-কে অত্যন্ত গুরুত্ব দেন।

গ্রাহকের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ কেন? : ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থায় গ্রাহক অভিন্ন ঝুঁকি বহন করে।

তাই পরস্পরের স্বার্থ রক্ষায় গ্রাহক সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। একইভাবে ব্যাংক ও গ্রাহকের ধর্মীয় বিশ্বাস ও পরকালীন জবাবদিহির জায়গাটিও অভিন্ন। সুতরাং গ্রাহকও লেনদেন ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সচেতন হবেন। এ ছাড়া গ্রাহক ব্যাংকের অন্যতম বিনিয়োগ খাত। গ্রাহক যদি শরিয়াহ পরিপালনে আন্তরিক ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন না করে, তবে তার প্রভাব সামগ্রিক ব্যাংকিং খাতের ওপর পড়বে।
গ্রাহকের দায়িত্ব

ইসলামী ব্যাংকিংয়ে গ্রাহকের প্রধান প্রধান দায়িত্বগুলো তুলে ধরা হলো—

১. পরিচয় নির্ধারণ : গ্রাহকের প্রথম ও প্রধান দায়িত্ব হলো ইসলামী ব্যাংকের পরিচয় নির্ধারণ করা এবং কোনো ব্যাংক ইসলামী হওয়ার জন্য কী কী শর্ত পূরণ করতে হয়, সে সম্পর্কে অবগত হওয়া। কেননা ইসলামী ব্যাংকের পরিচয় নির্ধারণ করতে না পারলে গ্রাহকের বিনিয়োগ ও লেনদেন শরিয়তের দৃষ্টিতে ঝুঁকিমুক্ত হবে না, সংশয় থেকে যাবে। এটা তার ধর্মীয় জ্ঞানার্জনের অংশ হিসেবে বিবেচিত হবে। আর রাসুলুল্লাহ (সা.) দোয়া করতেন, ‘হে আল্লাহ, আপনি আমাকে যা শিখিয়েছেন তা দ্বারা আমাকে উপকৃত করুন এবং আমার জন্য যা কল্যাণকর তা শিক্ষা দিন। আপনি আমার জ্ঞান বাড়িয়ে দিন। ’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৯৯)

২. অনুসন্ধান : পরিচয় লাভ করার পর গ্রাহক শরিয়াহ পরিপালনে আন্তরিক ও সচেষ্ট এমন ব্যাংক অনুসন্ধান করবে। ব্যাংকের লেনদেন ও কর্মপদ্ধতি সম্পর্কে আশ্বস্ত হওয়ার পর তার সঙ্গে যুক্ত হবে। কেননা শরিয়ত সংশয় পরিহারের নির্দেশ দেয়। শরিয়তের নির্দেশ হলো, ‘যা তোমার মনে সংশয় তৈরি করে তা পরিহার করে সেটা গ্রহণ কোরো, যা সংশয় তৈরি করে না। ’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ৫৭১১)

৩. পারস্পরিক আলোচনা : ব্যাংকের নীতিমালা ও কর্মপদ্ধতি সম্পর্কে জানতে গ্রাহক সরাসরি ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন। গ্রাহকের উচিত হবে না, কোনো ধরনের পূর্ব ধারণা থেকে কোনো ব্যাংককেই ইসলামী বা অনৈসলামিক হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা। কেননা পূর্ব ধারণা থেকে সিদ্ধান্ত নিলে তা ভুল হওয়ার আশঙ্কা থাকে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা, যদি কোনো পাপাচারী তোমাদের কাছে কোনো সংবাদ নিয়ে আসে, তবে তোমরা তা পরীক্ষা করে দেখবে। না হলে অজ্ঞতাবশত তোমরা কোনো সম্প্রদায়কে ক্ষতিগ্রস্ত করে বসবে এবং পরে তোমরা কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হবে। ’ (সুরা হুজরাত, আয়াত : ৬)

৪. আস্থা রাখা : মুমিন সংশয় ও অবিশ্বাসের পথ পরিহার করে বিশ্বাসের পথে পরিচালিত হবে। সংশয় ও অবিশ্বাস দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ ও আর্থিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাধা। সুতরাং গ্রাহক প্রয়োজনীয় অনুসন্ধানের পর যখন কোনো ইসলামী ব্যাংকের সঙ্গে যুক্ত হবেন, তখন তিনি আস্থা রেখেই ব্যাংকের সঙ্গে লেনদেন করবেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা, তোমরা বেশির ভাগ অনুমান (ধারণ পোষণ) থেকে দূরে থাকো। কেননা অনুমান কোনো কোনো ক্ষেত্রে পাপ। ’ (সুরা হুজরাত, আয়াত : ১২)

৫. বিশ্বাস রক্ষা করা : ব্যাংক যেমন গ্রাহকের কাছে দায়বদ্ধ, তেমন গ্রাহকও ব্যাংকের কাছে দায়বদ্ধ। ব্যাংক প্রদত্ত অর্থ গ্রাহক শরিয়তসম্মত পদ্ধতিতে লাভজনক খাতে বিনিয়োগ করবে। অন্যথা করলে গ্রাহক আমানত বিনষ্ট ও বিশ্বাস ভঙ্গের দায়ে অভিযুক্ত হবেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে আমারে প্রতারিত করে, সে আমাদের দলভুক্ত নয়। ’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৫৭৯)

অন্যত্র বলেন, ‘যার আমানতদারিতা নেই, তার ঈমান পরিপূর্ণ নয়। যে অঙ্গীকার পূর্ণ করে না সে দ্বিনদার নয়। ’ (মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস : ৩৫)

৬. যোগাযোগ রক্ষা : গ্রাহক ব্যাংকের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করবে। কেননা এতে ব্যাংক ও গ্রাহক উভয়ের দায়িত্ববোধ সতেজ থাকবে এবং পরস্পর দ্বারা আরো বেশি উপকৃত হওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। সামাজিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ইসলামের নীতিমালাগুলো এই ক্ষেত্রে প্রণিধানযোগ্য।

আরও পড়তে পারেন-

৭. পরামর্শ গ্রহণ : প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্যাংক বহু অভিজ্ঞতা ও অভিজ্ঞ কর্মীকে ধারণ করে। তাই গ্রাহক আর্থিক ঝুঁকি থেকে বাঁচতে ব্যাংকের পরামর্শ গ্রহণ করতে পারে। ব্যাংকের পরামর্শ দ্বারা উপকৃত হতে পারে। পবিত্র কোরআনের নির্দেশ হলো, ‘যদি তোমরা না জানো, তবে জ্ঞানীদের জিজ্ঞাসা কোরো। ’ (সুরা নাহল, আয়াত : ৪৩)

৮. অভিযোগ দায়ের : প্রায় সব ইসলামী ব্যাংকেই অভিযোগ দায়ের করার সুযোগ আছে। গ্রাহক যদি ব্যাংকের কোনো শাখা বা কর্মকর্তার ভেতর নৈতিকতা ও সততার অভাব দেখেন এবং তাদের সঙ্গে শরিয়াহ পরিপালনে শিথিলতা দেখা যায়, তবে গ্রাহক যথাযথ কর্তৃপক্ষকে তা অবগত করতে পারেন। এসব অভিযোগ ব্যাংকের শরিয়াহ পরিপালন ও সেবার মান উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে। আল্লাহ বলেন, ‘যখন শান্তি বা শঙ্কার কোনো সংবাদ তাদের কাছে আসে, তখন তারা তা প্রচার করে থাকে। যদি তারা তা রাসুল বা তাদের মধ্যে যারা ক্ষমতার অধিকারী তাদের গোচরে আনত, তবে তাদের মধ্যে যারা তথ্য অনুসন্ধান করে তারা তার যথার্থতা নির্ণয় করতে পারত। ’ (সুরা নিসা, আয়াত : ৮৩)

৯. জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধি : গ্রাহক শুধু ব্যাংকের ওপর নির্ভর না করে নিজেও ব্যাংকিং বিষয়ে প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করবে। যেন সে নিজস্ব পরিধিতে শরিয়তের অনুসরণ করতে পারে এবং ব্যাংকেও প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহযোগিতা করতে পারে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যারা জানে এবং যারা জানে না, তারা কি সমান?’ (সুরা ঝুমার, আয়াত : ৯)

১০. নৈতিক উন্নতি : একজন মুসলিম শুধু জাগতিক আইনে উতরে যাওয়াকে যথেষ্ট মনে করে না; বরং পরকালীন মুক্তিই তার প্রধান লক্ষ্য। তাই একজন গ্রাহক হিসেবে গ্রাহক তার আচার-আচরণ ও নৈতিকতার উন্নয়নে মনোযোগী হবে। আর নৈতিকতার প্রধান মানদণ্ড আল্লাহভীতি। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে সেই অধিক উত্তম যে সবচেয়ে বেশি আল্লাহভীরু। ’ (সুরা হুজরাত, আয়াত : ১৩)

আল্লাহ সবাইকে সুপথ দান করুন। আমিন

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।