Home ইসলাম ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় মহানবী (সা.)-এর দৃঢ়তা যেমন ছিল

ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় মহানবী (সা.)-এর দৃঢ়তা যেমন ছিল

জাওয়াদ তাহের   

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা ইনসাফের নির্দেশ প্রদান করেছেন। ’ (সুরা: নাহল, আয়াত: ৯০)

যে সময় আল্লাহ তাআলা রাসুল (সা.)-কে বিশ্ববাসীর জন্য পাঠিয়েছেন, সে সময় সমাজে ইনসাফ বলতে কিছুই ছিল না। যে যেভাবে পারত সেভাবেই লুণ্ঠন করত। মানবতা ও ন্যায়বিচার যেন নির্বাসনে ছিল।

সেই ঘুটঘুটে এক অন্ধকার যুগে প্রিয় নবীকে আল্লাহ তাআলা আলোকবর্তিকা হিসেবে বিশ্ববাসীর জন্য প্রেরণ করেছেন। তিনি সমাজে শান্তি, ইনসাফ ও ন্যায়-নীতি প্রতিষ্ঠা করেছেন। ন্যায়বিচারের মাধ্যমে সমাজের বঞ্চিত নিপীড়িত মানুষের অন্তরে আশা সঞ্চার করে। কারণ ইনসাফবিহীন কোনো সমাজ কখনো উন্নতি লাভ করতে পারে না। সে জন্য প্রিয় নবী (সা.) সমাজে ইনসাফ প্রতিষ্ঠায় ছিলেন বদ্ধপরিকর।

স্বজনপ্রীতি ও পক্ষপাতিত্ব পরিহার

ইনসাফ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে রাসুল (সা.) কখনো স্বগোত্রীয় মানুষের পক্ষপাতিত্ব কিংবা স্বজনপ্রীতি দেখাননি; বরং প্রতিটি মুহূর্ত নিজের কর্ম পদ্ধতির মাধ্যমে সাহাবাদের মাঝে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, মাখজুম গোত্রের এক চোর নারীর ঘটনা কুরাইশের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন করে তুলল। এ অবস্থায় তারা বলাবলি করতে লাগল এ ব্যাপারে আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে কে আলাপ করতে পারে? তারা বলল, একমাত্র রাসুল (সা.)-এর প্রিয়তম ওসামা বিন জায়েদ (রা.) এ ব্যাপারে সুপারিশ করার সাহস করতে পারেন। সবাই মিলে সুপারিশের জন্য ওসামা (রা.)-কে নির্ণয় করলেন। ওসামা নবী (সা.)-এর সঙ্গে কথা বললেন। নবী (সা.) বললেন, তুমি কি আল্লাহর নির্ধারিত সীমা লঙ্ঘনকারিণীর সাজা মওকুফের সুপারিশ করছ? অতঃপর নবী (সা.) দাঁড়িয়ে খুতবায় বললেন, তোমাদের আগের জাতি এ কাজই ধ্বংস করেছে যে যখন তাদের মধ্যে কোনো বিশিষ্ট অভিজাত লোক চুরি করত, তখন তারা বিনা সাজায় তাকে ছেড়ে দিত। অন্যদিকে যখন কোনো অসহায় গরিব সাধারণ লোক চুরি করত, তখন তার ওপর দণ্ড জারি করত। আল্লাহর কসম, যদি মুহাম্মদ (সা.)-এর কন্যা ফাতিমাও চুরি করত; তাহলে আমি তাঁর অবশ্যই (দণ্ডবিধি অনুসারে) হাত কেটে দিতাম। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩৪৭)

আরও পড়তে পারেন-

অমুসলিমদের মধ্যে ন্যায়বিচার

ন্যায়বিচার ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা অমুসলিমদের মাঝেও সমানতালে বাস্তবায়ন করেছেন প্রিয় নবী (সা.)। এ ক্ষেত্রে নিজের প্রিয় সাহাবি আর অন্যজন ইহুদি হওয়ার কারণে বিন্দুমাত্র টলে যাননি; বরং আপন নীতি অনুযায়ী উভয়ের মাঝে ফায়সালা করেছেন। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, কোনো ব্যক্তি যদি কোনো মুসলিমের অর্থ সম্পদ আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে মিথ্যা শপথ করে, তাহলে সে আল্লাহর সমীপে এমন অবস্থায় হাজির হবে যে আল্লাহ তার ওপর রাগান্বিত থাকবেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ২৪১৬)

ইনসাফকারীদের জন্য সম্মানের আসন

রাসুলুল্লাহ (সা.) সাহাবাদের শিক্ষা দিয়েছেন যে কিয়ামতের কঠিন দিবসে ইনসাফের প্রতিদান কী হবে? তাঁদের সেই অনন্য প্রতিদান স্মরণ করিয়ে প্রিয় নবী (সা.) সাহাবায়ে কেরামের হৃদয়ে ইনসাফের বীজ বপন করে দিয়েছেন। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ন্যায়বিচারকরা (কিয়ামতের দিন) আল্লাহর কাছে নুরের মিম্বরসমূহে মহামহিম দয়াময় প্রভুর ডানপাশে উপবিষ্ট থাকবেন। তাঁর উভয় হাতই ডান হাত (অর্থাৎ সমান মহিয়ান)। যারা তাদের শাসনকাজে তাদের পরিবারের লোকদের ব্যাপারে এবং তাদের ওপর ন্যস্ত দায়িত্বসমূহের ব্যাপারে সুবিচার করে। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৪৬১৫)

উম্মাহ২৪ডটকম: আইএএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।