Home ইসলাম মিথ্যা চারিত্রিক সনদ দেওয়া অপরাধ

মিথ্যা চারিত্রিক সনদ দেওয়া অপরাধ

।। আল্লামা মুফতি তাকি উসমানি ।।

মিথ্যা চারিত্রিক সনদ প্রদানের বিষয়টি মহামারিতে পরিণত হয়েছে। বহু দ্বিনদার ও সচেতন লোকও নিজে এ ধরনের মিথ্যা সনদ প্রস্তুত করে অথবা অন্যকে এ ব্যাপারে সহযোগিতা করে। অন্যদিকে সনদদাতা নির্দ্বিধায় লিখে দেন যে আমি লোকটিকে দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে চিনি। আমার জানামতে লোকটি উত্তম চরিত্রের অধিকারী, তার যথেষ্ট কর্মদক্ষতা আছে ইত্যাদি।

অথচ সনদদাতা এই লোকটিকে হয়তো জীবনে দ্বিতীয়বার দেখেননি।
সনদদাতা ও গ্রহীতা কেউ বিষয়টিকে অন্যায় মনে করে না, বরং সনদদাতা মনে করে, সে একজন মুসলমানের প্রয়োজন পূরণ করে অনেক বড় পুণ্যের কাজ করেছে। প্রকৃতপক্ষে কারো চরিত্র সম্পর্কে না জেনে চারিত্রিক সনদ দেওয়া শরিয়তের দৃষ্টিতে হারাম ও নাজায়েজ। একইভাবে সনদ গ্রহীতার জন্যও এমন ব্যক্তির কাছ তেকে সনদ নেওয়া জায়েজ নেই। সেও সনদ দাতার মতো গুনাহগার হবে।

মানুষ চেনার সহজ দুই উপায় : ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)-এর কাছে এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তি সম্পর্কে মন্তব্য করে—সে তো খুবই ভালো মানুষ। ওমর (রা.) বললেন, তুমি কিভাবে জানো, সে উন্নত চরিত্রের অধিকারী? তুমি কি তার সঙ্গে লেনদেন করেছ? লোকটি উত্তর দিল, না। আমি তার সঙ্গে লেনদেন করিনি। অতঃপর ওমর (রা.) প্রশ্ন করলেন, তুমি তার সঙ্গে কখনো কি সফর করেছ? সে বলল, না, তার সঙ্গে কখনো কোনো সফর করিনি।

আরও পড়তে পারেন-

ওমর (রা.) বললেন, তাহলে তুমি কিভাবে বুঝলে যে সে ভালো মানুষ? কেননা মানুষের চরিত্র জানা যায় তার সঙ্গে কোনো লেনদেন করলে। লেনদেনে যদি সে নিখুঁত পাওয়া যায়, তাহলে সে নিখুঁত। মানুষের চরিত্র জানার আরেকটি পদ্ধতি হলো তার সঙ্গে সফর করা। কেননা সফরের সময় মানুষের বাহ্যিক আবরণ খসে পড়ে এবং আসল চেহারা বের হয়ে আসে। সফরের সময় তার স্বভাব-চরিত্র, আচার-আচরণ, আধ্যাত্মিক অবস্থা রুচি ও মন-মানসিকতা, আগ্রহ-অনাগ্রত সব কিছু প্রকাশ পায়।

সনদ সাক্ষ্যসম : পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তবে যারা সত্য উপলব্ধি করে তারা সাক্ষ্য দেয়, তারা ছাড়া। ’ (সুরা জুখরুফ, আয়াত : ৮৬)

শরিয়তের দৃষ্টিতে সনদ এক প্রকার সাক্ষ্য। সুতরাং যে ব্যক্তি সনদ স্বাক্ষর করেছে, সে কার্যত সাক্ষ্য প্রদান করেছে। আর উল্লিখিত আয়াতের দাবি হলো, সাক্ষ্য দেওয়া শুধু তখনই জায়েজ হবে, যখন সাক্ষ্যদাতা বিষয়টি নিজে প্রত্যক্ষ করে নিশ্চিত জ্ঞান অর্জন করবে। অথচ বর্তমানে কোনো কিছু না জেনেই চারিত্রিক সনদ প্রদান করা হয়। এতে মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়ার গুনাহ হওয়ার আশঙ্কা আছে। আর মিথ্যা সাক্ষ্য জঘন্যতম পাপ।

মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়ার পরিণতি : সহিহ হাদিসে এসেছে, নবী কারিম (সা.) একবার হেলান দিয়ে উপবিষ্ট ছিলেন। তখন সাহাবায়ে কেরামকে লক্ষ্য করে বললেন, আমি কি তোমাদের বলব বড় বড় গুনাহ কী? সাহাবায়ে কেরাম বললেন, হে আল্লাহর রাসুল, অবশ্যই বলুন। রাসুল (সা.) বললেন, বড় বড় গুনাহ হলো আল্লাহর সঙ্গে শরিক করা ও মা-বাবার অবাধ্য হওয়া। এ কথা বলে, রাসুলুল্লাহ (সা.) হেলানাবস্থা থেকে সোজা হয়ে বসে পড়লেন এবং বললেন, মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া। তিনি কথাটি তিনবার বললেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৪২)

হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) মিথ্যা সাক্ষ্যকে শিরকের সঙ্গে উল্লেখ করেছেন এবং তিনবার বলেছেন। এর দ্বারা মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদানের ভয়াবহতা অনুমান করা যায়।

এক পাপে বহু গুনাহ : মিথ্যা সনদ প্রদানকারী গুনাহগার হবে। কেননা সে মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছে। আর মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া মিথ্যা কথা বলার চেয়ে জঘন্য অপরাধ। কেননা তাতে কয়েকটি গুনাহের সম্মিলন ঘটে। যেমন—১. মিথ্যা বলার গুনাহ, ২. অন্যকে বিভ্রান্ত করার গুনাহ, ৩. প্রতারিত করার গুনাহ ইত্যাদি। এ ছাড়া যদি মিথ্যা সনদ দেখে কেউ এই ব্যক্তির ওপর আস্থা রাখে, তার সঙ্গে লেনদেন করে এবং প্রতারিত হয়, তবে সনদ প্রদানকারীর ওপরও সেই দায় বর্তাবে। এমনও হতে পারে যে এই মিথ্যা সনদের কারণে আদালতে কেউ ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হলো। আল্লাহ সবাইকে মিথ্যা থেকে বাঁচার তাওফিক দিন। আমিন

ইসলাহি খুতুবাত থেকে

আতাউর রহমান খসরুর ভাষান্তর

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।