Home ইসলাম আয়াতে কারীমা: আমার কুরআনী ভাবনা

আয়াতে কারীমা: আমার কুরআনী ভাবনা

।। বিনতে এন. এম. জাহাঙ্গীর ।।

আয়াতে কারীমা-

وَ قَضي رَبُّكَ اَلَّا تَعْبُدُوا اِلَّا اِيّاه وَبِالْوَالِدَيْنِ اِحْسَانًا اِمَّا يَبْلُغَنَّ عِنْدَكَ الكِبَرَ اَحَدُهُمَا اَوْ كِلَاهُمَا فَلَا تَقُلْ لَهُمَا اُفٍّ وَّلَا تَنْهَرْهُمَا وَ قُلْ لَهُمَا قَوْلًا كَرِيْمًا ০ وَاخْفِضْ لَهُمَا جَنَاحَ الذُّلِّ مِنَ الرَّحْمَةِ وَ قُلْ رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِيْ صَغِيْرًا০ رَبُّكُمْ اَعْلَمُ بِمَا فِيْ نُفُوْسِكُمْ اِنْ تَكُوْنُ صَالِحِيْنَ فَإنَّه كَانَ لِلْاَوَّبِيْنَ غَفُوْرًا ০

আয়াতে কারীমার মর্ম

তোমার প্রতিপালক আদেশ করেছেন, তোমরা যেন একমাত্র তারই ইবাদত করো এবং পিতামাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করো। যদি তাদের একজন বা উভয়ে বার্ধক্যে উপনীত হয়; তবু তাদের ‘উফ’ পর্যন্ত বলোনা এবং ধমক দিয়োনা, বরং তাদের সাথে সম্মানজনক কথা বলো। তাদের প্রতি দয়াপরবশ হয়ে বিনয়ের ডানা বিছিয়ে দাও ও প্রার্থনা করো ‘হে আমার রব! তাদের উপর রহম করুন, যেমন শৈশবে তাঁরা আমায় লালন পালন করেছেন।’  তোমাদের অন্তরে যা আছে, তোমাদের রব তা ভালো করেই জানেন। যদি তুমি নেককার হও, তবে তিনি অনুতাপকারীদের  ক্ষমা করেন। (সূরা ইসরা: ২৩-২৫)

আমার কুরআনী ভাবনা

২৩নং আয়াত: মা-বাবা প্রতিনিয়ত, প্রতি  মুহুর্তে সম্মান ও ইহতিরামের মহান দুজন ব্যাক্তিত্ব। কিন্তু এ আয়াতে কারীমায় রব্বে কারীম মা-বাবার সম্মান ও হক আদায়ের ব্যাপারে বিশেষভাবে ‘বৃদ্ধকালের’ কথা উল্লেখ করেছেন। এতে রব্বে কারীমের দু’টি হিকমত অধমার ভাবনায় উদিত হয়েছে-

১. মা-বাবা যখন শক্তি-সামর্থের বয়সে থাকেন, তখন সন্তানেদের সব দায়-দায়িত্ব তাদের উপর আরোপিত থাকে। ফলে মা-বাবার শাসনও সন্তানরা অনেকসময় হজম করে নেয়। পরবর্তীতে যখন সন্তান দায়িত্বশীলতার জায়গায় উপনীত হয় ও মা-বাবা অসমর্থ-বৃদ্ধ হয়ে যান; তখন কিছু সন্তানরা তাদের বোঝা ও ঝামেলা মনে করে (নায়ুযুবিল্লাহ)। তাদের সামান্য কথাও তখন তাদের চোখে বাঁকা হয়ে দেখা দেয়। তাই বিশেষভাবে বৃদ্ধকালের কথাই আয়াতে বলা হয়েছে।

২. বৃদ্ধকালে সাধারণত মানুষ অসংলগ্ন কথাবার্তা, অসম্ভব জিনিস চেয়ে থাকে বা আবদার করে বসে। যুবক সন্তানদের প্রায়ই বিরক্ত হতে দেখা যায়। বরং কিছু হতভাগ্য সন্তান এর চেয়েও অমানবিক আচরণ করে থাকে বৃদ্ধ মা-বাবার সাথে। যা আজকের সমাজের অতি পরিচিত ও অত্যন্ত বেদনাদায়ক এক নিমর্ম বাস্তবতা।

তাই রব্বে কারীম দ্ব্যর্থ ও সুস্পষ্ট ভাষায় আদেশ করেছেন। হুঁশিয়ার করে বলেছেন-

وَّلَا تَنْهَرْهُمَا وَ قُلْ لَهُمَا قَوْلًا كَرِيْمًا

১. সুতরাং মা-বাবাকে কখনোই অপমান করা যাবে না।
২. সম্মানী বাক্যে কথা বলতে হবে।

২৪ নং আয়াত: * আজকালকের অস্থিরচিত্ত মানুষের মনে প্রশ্ন হতে পারে ‘বৃদ্ধ মা-বাবার অতিমাত্রায় অসংলগ্ন আচরণ ও অযৌক্তিক কথাবার্তাতে কিভাবে এত ধারাবাহিক সবর সম্ভব?’

রব্বে কারীম ঠিক এ প্রশ্নের সুন্দর জবাব রেখেছেন পরের আয়াতে কারীমায়- “তাদের প্রতি দয়াপরবশ হয়ে বিনয়ের ডানা বিছিয়ে দাও ও প্রার্থনা করো ‘হে আমার রব! তাদের উপর রহম করুন, যেমন শৈশবে তাঁরা আমায় লালন পালন করেছেন’।”

আরও পড়তে পারেন-

অর্থাৎ অতীতের যে অনুগ্রহ, ইহসান, পেয়েছো শৈশবে, সেটার জন্য কৃতজ্ঞ থাকো। এ আয়াতে কারীমাতেও দুটি শিক্ষা রয়েছে-

১. অনুগ্রহকারীর প্রতি সর্বদাই কৃতজ্ঞ থাকা। (তারা আমার মা-বাবা; এটাই আমার প্রতি তাদের সবচেয়ে বড় অনুগ্রহ। অন্য অনুগ্রহ থাকুক বা না থাকুক)।

২. পরবর্তীতে তার থেকে অপ্রত্যাশিত কোনো আচরণ পেলেও, অতীতের অনুগ্রহের কারণে সবর করা ও দুআ অব্যাহত রাখা।

رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِيْ صَغِيْرًا

২৫নং আয়াত: উপরোক্ত আয়াতে কারীমা দুটি হতে বোঝা যায়, মা-বাবার হক এত অধিক যে, সামান্য বিরক্তিসূচক ‘উফ’ শব্দটিও বলা যাবেনা, বেয়াদবি তো দূরের কথা! তবুও মানুষ হিসেবে অনেক সময়ই আমাদের দ্বারা মা-বাবার হক নষ্ট হয়ে যায়। প্রতিনিয়তই তবু চেষ্টা অব্যাহত থাকতে হবে, সতর্ক হতে হবে আচরণ-উচ্চারণে। সামান্য ভুল মনে হলে, বারংবার ক্ষমা চাইতে হবে মা-বাবার কাছে। ‘অনুতাপে পাপ খন্ডায়’। রব্বে কারীম তাই পরবর্তী আয়াতে বলেনÑ ‘তোমাদের অন্তরে যা আছে, তোমাদের রব তা ভালো করেই জানেন। যদি তুমি নেককার হও, তবে তিনি অনুতাপকারীদের  ক্ষমা করেন।’

এ আয়াতে কারীমাতেও দুটি শিক্ষা রয়েছে-

১. দিলের খবর রব্বে কারীম জানেন। সুতরাং আমরা কি ভাবছি, কি করছি সবটাই তিনি জানেন। সত্যিকারেই আমি অন্যায় আচরণ করছি, নাকি ভুলক্রমে; তা-ও তিনি জানেন। সুতরাং সতর্ক হতে হবে আচরণ-উচ্চারণ ও চিন্তা-ভাবনায়।

২. নেককার যারা, রবের অনুগত যারা; রব্বে কারীম তাদের ভুলের উপর অনুতপ্ত হলে অবশ্যই ক্ষমা করবেন। সুতরাং ক্ষমাপ্রাপ্ত হতে চাইলে, নেককার হতে সচেষ্ট হতে হবে। অনুতপ্ত হতে হবে।

আয়াতে কারীমার শিক্ষা সমষ্টি-

১. সুতরাং মা-বাবাকে কখনোই অপমান করা যাবে না।
২. সম্মানী বাক্যে কথা বলতে হবে।
৩. অনুগ্রহকারীর প্রতি সর্বদাই কৃতজ্ঞ থাকা। (তারা আমার মা-বাবা; এটাই আমার প্রতি তাদের সবচেয়ে বড় অনুগ্রহ। অন্য অনুগ্রহ থাকুক বা না থাকুক)।
৪. পরবর্তীতে তার থেকে অপ্রত্যাশিত কোনো আচরণ পেলেও, অতীতের অনুগ্রহের কারণে সবর করা ও দুআ অব্যাহত রাখা।
৫. দিলের খবর রব্বে কারীম জানেন। সুতরাং আমরা কি ভাবছি, কি করছি সবটাই তিনি জানেন। সত্যিকারেই আমি অন্যায় আচরণ করছি, নাকি ভুলক্রমে; তা-ও তিনি জানেন। সুতরাং সতর্ক হতে হবে আচরণ-উচ্চারণ ও চিন্তা-ভাবনায়।
৬. নেককার যারা, রবের অনুগত যারা; রব্বে কারীম তাদের ভুলের উপর অনুতপ্ত হলে অবশ্যই ক্ষমা করবেন। সুতরাং ক্ষমাপ্রাপ্ত হতে চাইলে, নেককার হতে সচেষ্ট হবে।

ইয়া রব! আমাকে আমার মা-বাবার এমন সন্তান হওয়ার তাওফীক দান করো, কুরআনে তুমি যেমনটা বলেছ- قُرَّةَ اَعْيُنْ তথা ‘চক্ষু শীতলকারী’। আমীন।

[রবিবার, ২৫ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৪হিজরী]

লেখক: ওয়াপদা কলোনী, সিদ্ধিরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ থেকে।
মেইল- jahangirbwdb63@gmail.com

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।