Home ইসলাম থাইল্যান্ডের ঐতিহ্যবাহী ইসলামী শিক্ষা

থাইল্যান্ডের ঐতিহ্যবাহী ইসলামী শিক্ষা

আবরার আবদুল্লাহ  

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ থাইল্যান্ডের জনসংখ্যার প্রায় ৫ শতাংশ মুসলিম। মুসলিমরা ধর্মীয়ভাবে সংখ্যালঘু হলেও ইসলামী শিক্ষা-সংস্কৃতিতে তাদের আছে সুদীর্ঘ ঐতিহ্য। ‘পনদুক’ থাই মুসলিমদের ঐতিহ্যবাহী ইসলামী শিক্ষাধারা। শত শত বছর ধরে চলে আসা এই পদ্ধতিতে কিছুটা পরিবর্তন এলেও এখনো তা মুসলিমদের আস্থা ধরে রেখেছে।

থাইল্যান্ডে ইসলামের আগমন : থাইল্যান্ডে ইসলামের আগমন ঘটে দশম খ্রিস্টাব্দে আরব ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে। আর কেউ কেউ বলেছে, থাইল্যান্ডে ইসলামের আগমন ঘটেছে অচেহের রাজা সমুদ্র পাসাইয়ের মাধ্যমে। তিনি থাইল্যান্ড বিজয় করেন এবং ইন্দোনেশিয়ার বহু মুসলিমকে বন্দি হিসেবে থাইল্যান্ডে নিয়ে আসেন। তাদের কেউ কেউ মুক্তিপণ দিয়ে ইন্দোনেশিয়ায় ফিরে যায় এবং অনেকেই থাইল্যান্ডে থেকে যায়। তাদের মাধ্যমে থাইল্যান্ডে ইসলামের বিস্তার ঘটে। অবশ্য রাজা সমুদ্র পাসাই পরবর্তী সময়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন এবং ‘মালিক আল-সালিহ’ নাম ধারণ করেন।

এ ছাড়া থাইল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলে ১৫ শতকে মুসলিমরা ‘পাতানি দারুসসালাম কিংডম’ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে। পাতানি নামের উৎস আরবি শব্দ ‘আল-ফাতানি’, যার অর্থ বিচক্ষণ ও বুদ্ধিমান। এটা ইঙ্গিত করে এ অঞ্চলে বহু মুসলিম পণ্ডিতের জন্ম হয়েছে। ১৭৮৫ সালে পাতানি দারুসসালাম কিংডম দখল করেন থাই শাসক সিয়াম। তিনি মুসলিম রাজ্যটিকে সাতটি প্রদেশে বিভক্ত করেন। এর পর থেকে মুসলিমরা বহু প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে গেলেও মালয়েশিয়ার সীমান্তবর্তী থাইল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলীয় চার প্রদেশ পাতানি, ইয়ালা, সেতুন ও নারাথিওয়ায় মুসলিমরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ।

আরও পড়তে পারেন-

পনদুক শিক্ষাধারা : মুসলিম শাসনামলে পাতানি অঞ্চলে ‘পনদুক’ নামের বিশেষ শিক্ষাধারা গড়ে ওঠে। পনদুক শব্দটি আরবি ‘ফুনদুক’ শব্দ থেকে এসেছে, যার অর্থ হোটেল বা বিশ্রামাগার। পনদুক শিক্ষাধারাটি ভারতবর্ষ ও মধ্য এশিয়ার মুসলিম দেশগুলোতে প্রচলিত খানকাব্যবস্থার সঙ্গে সদৃশ, যা একজন প্রধান ধর্মীয় ব্যক্তিত্বকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে। তিনি শিক্ষা ও দীক্ষার মূল কাজটি আনজাম দেন। পনদুক শিক্ষাধারার প্রধান ব্যক্তিত্বকে স্থানীয় ভাষায় ‘তো খ্রু’ বলা হয়। তিনি শিশুদের ইসলামের মৌলিক ও সামাজিক শিক্ষা, ফরজে আইন ও ফরজে কিফায়া শিক্ষা প্রদান করেন। দীর্ঘদিন যাবৎ পনদুকই ছিল পাতানির প্রধান শিক্ষা মাধ্যম। আধুনিক যুগের শিক্ষা কারিকুলামের মতো পনদুকও প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে বিভক্ত ছিল।

থাই যুগে পনদুক : পাতানি থাইল্যান্ডে যুক্ত হওয়ার পর থাই কর্তৃপক্ষ কখনোই আবাসিক ইসলামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার অনুমতি দেয়নি এবং পনদুকও ছিল সরকারের কঠোর নজরদারিতে। থাইল্যান্ডের শিক্ষা মন্ত্রণালয় ‘প্রাইভেট স্কুল আইন ১৯৪৯’ প্রবর্তন করার পর আইনি বাধ্যবাধকতার কারণে পনদুক প্রাইভেট স্কুলে রূপান্তর হতে থাকে। ১৯৬৮ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় নিয়ম করে, নিবন্ধিত ও সরকারের অনুদান গ্রহণকারী পনদুকগুলোকে অবশ্যই মালয় ভাষার পরিবর্তে থাই ভাষা শেখাতে হবে এবং কেউ নতুন পনদুক প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না। সরকারের এই সিদ্ধান্তকে ইসলামী শিক্ষার অস্তিত্বের জন্য হুমকি মনে করে থাই মুসলিমরা। ফলে ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাধারা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। একদল সরকারের শর্ত মেনে আধুনিক শিক্ষা সংযুক্ত করে এবং অন্য দল সরকারি সহায়তা প্রত্যাখ্যান করে স্বাধীনভাবে শিক্ষাদানের সিদ্ধান্ত নেয়।

আধুনিক শিক্ষার সংযোগে পনদুক : মা’হাদ আল-বিতসাত আদ-দ্বিনিয়াহ পাতানির সর্বপ্রাচীন পনদুক। ১৩ রজব ১৩৭২ হিজরিতে হাজি হারুন বিন মুহাম্মদ তাহির মাত্র সাত ‘রাই’ (এক রাই সমান এক হাজার ৬০০ বর্গমিটার) ভূমির ওপর এটি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৩৮৬ হিজরিতে মা’হাদ আল-বিতসাত মাধ্যমিক স্কুল চালু করা হয়। ১৪০৩ হিজরিতে একটি হাই স্কুল চালু করা হয়। ১৪১৪ হিজরিতে মা’হাদ পনদুক ধারা থেকে বের হয়ে সরকার অনুমোদিত প্রাইভেট স্কুলে রূপান্তরিত হয়। প্রতিষ্ঠাতার নাম অনুসারে এর নামকরণ করা হয় ‘হাজি হারুন স্কুল’। স্কুলটি বর্তমানে ইসলামী শিক্ষার পাশাপাশি সরকারি কারিকুলামেও পাঠদান করে। হাজি হারুন স্কুলে ছয় হাজার শিক্ষার্থী এবং পাঁচ শতাধিক শিক্ষক আছেন। অবশ্য থাই শিক্ষা মন্ত্রণালয় ২০০৩ সালে ইসলামী পাঠক্রম কেমন হবে সে মর্মে একটি নীতিমালাও ঘোষণা করেছে।

তথ্য সূত্র : ইন্টিগ্রেশন অব এডুকেশনাল সিস্টেম অন হাজি হারুন স্কুল।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।