Home ইসলাম মাদরাসা শিক্ষায় আত্মশুদ্ধি অপরিহার্য

মাদরাসা শিক্ষায় আত্মশুদ্ধি অপরিহার্য

।। আল্লামা আশরাফ আলী থানবি (রহ.) ।।

বর্তমানে যারা খানকা প্রতিষ্ঠা করেন, তাদের উচিত হলো খানকা না দিয়ে মাদরাসা নাম দিয়ে সেখানে খানকার কাজ করা। কেননা একদিকে যেমন খানকার নাম বেশি প্রসিদ্ধ হয়ে থাকে, অন্যদিকে তেমন খানকায় বিদআত হতে থাকে। এমনকি উরস, গান-বাদ্যের আসর বসে এবং পীরালির উত্তরাধিকার নিয়ে নিজেদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ দেখা দেয়। এর চেয়ে উত্তম হলো মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করে তাতে চরিত্র গঠন ও আত্মশুদ্ধির কাজ করা।

সেটাই প্রকৃত প্রাণসম্পন্ন মাদরাসা এবং প্রথা-প্রচলন বর্জিত খানকা হবে।

যে প্রতিষ্ঠানে ধর্মীয় জ্ঞানের সঙ্গে সঙ্গে আমলের প্রশিক্ষণ ও গুরুত্ব শেখানো হয় সেটাই প্রকৃত মাদরাসা। সব মাদরাসা কর্তৃপক্ষের উচিত তাদের প্রতিষ্ঠানকে প্রকৃত মাদরাসা হিসেবে গড়ে তোলা। শিক্ষার্থীদের আমল-আখলাকের খোঁজ রাখা। কেননা রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল। প্রত্যেকে তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। ’ সুতরাং ছাত্রদের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখা মাদরাসা কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব। শুধু পাঠদান করে আলাদা হয়ে গেলে দায়মুক্তি ঘটবে না, তাদের মধ্যে কে ইলম অনুসারে আমল করছে সেটাও লক্ষ্য রাখতে হবে।

যার মধ্যে আমলের গুরুত্ব আছে তাকে পড়ানোর মধ্যেই স্বার্থকতা। আমলহীন শিক্ষার্থীকে পড়ানোর স্বার্থকতা কোথায়? বিষয়টিকে গুরুত্ব দিলেই মাদরাসা প্রকৃত ‘দারুল উলুম’ (জ্ঞানকেন্দ্র) হবে। মাদরাসার দায়িত্বশীলদের উচিত শিক্ষার্থীদের সব বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখা। তাদের পোশাক-পরিচ্ছদের ব্যাপারে খেয়াল রাখা। যারা দ্বিনি শিক্ষার পরিপন্থী পোশাক পরিধান করে, তাদের শোভনীয় পোশাক পরিধানে উৎসাহিত করা। কোনোভাবেই যদি তালিবুল ইলমের ভূষণ গ্রহণ করতে সম্মত না হয়, তবে তাদের অন্য প্রতিষ্ঠানে পাঠিয়ে দেওয়াই বাঞ্ছনীয়।

এখন মাদরাসাগুলোর অবস্থা হলো শিক্ষকরা শিক্ষাজীবন শেষ করে পাঠদানে মগ্ন হয়ে যায়। এটাকেই তারা মূল উদ্দেশ্য মনে করে। অন্তরে আল্লাহর ভয় অর্জনের প্রতি তাদের মনোযোগ থাকে না। মনে রাখতে হবে, যে ইলম (ধর্মীয় জ্ঞান) অন্তরে আল্লাহভীতি সৃষ্টি করে না, তা কোনো ইলমই না।

আরও পড়তে পারেন-

ধর্মীয় জ্ঞানকে নবী-রাসুলদের (আ.) উত্তরাধিকার বলা হয়। এখন যে শিক্ষায় শুধু মাসয়ালা ও পরিভাষার উচ্চারণ আছে, আল্লাহভীতির লেশমাত্র নেই তাকে কি কিছুতেই নবীদের উত্তরাধিকার বলা যায়? নবীদের ইলম বা জ্ঞান যত বৃদ্ধি পেত, তাদের আল্লাহভীতির পরিমাণ তত বৃদ্ধি পেত। হাদিসে এসেছে, ‘আমি আল্লাহকে তোমাদের সবার চেয়ে বেশি চিনি এবং বেশি ভয় করি। ’

প্রকৃত আলেম তিনি, যিনি জ্ঞানানুসারে আমল করেন। যার চাইলেই দরবেশ রাখা যায়। কিন্তু যার মধ্যে আমল নেই সে প্রকৃত আলেম না। বর্তমানে আমরা শুধু আরবি ভাষায় দক্ষ ব্যক্তিকেই আলেম বলি। মিসর ও বৈরুতে এমন বহু খ্রিস্টান আছে, যারা ভালো আরবি জানে। তাদের কি আলেম বলা হবে?

ধর্মীয় জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি আল্লাহভীতি ও উন্নত চরিত্রের অধিকারী হলেই তিনি আলেম হবেন। আলেম মৌলবিও বলা হয়। মৌলবি শব্দের সম্পর্ক ‘মাওলা’র (মনিব) সঙ্গে। মনিবের সঙ্গে যদি সম্পর্ক না হয়, তবে তাকে মৌলবি বা মাওলানা বলা উচিত নয় এবং এমন আলেম অনুসরণেরও যোগ্য নয়; বরং তাকে প্রত্যাখ্যান করা উচিত।

‘আল-ইলমু ওয়াল উলামা’ থেকে

মো. আবদুল মজিদ মোল্লার ভাষান্তর

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।