Home ওপিনিয়ন ভিনদেশী পতাকা উন্মাদনা: সচেতনতা জরুরী

ভিনদেশী পতাকা উন্মাদনা: সচেতনতা জরুরী

।। মুহাম্মদ নূর হোসাইন ।।

আর কদিন বাদেই কাতারে শুরু হচ্ছে-২২ তম ফিফা বিশ্বকাপ ফুটবল। ইতিমধ্যেই চূড়ান্ত দিনক্ষণ গণনা শুরু হয়ে গেছে। এরই মাঝে এক শ্রেণীর বাঙালিদের মনে জেগে উঠেছে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, পর্তুগাল কিংবা জার্মানি প্রেম। হকারেরা ভিনদেশী পতাকা বিক্রি করে নিজেদের পেট চালানোর ধান্ধায় লিপ্ত হচ্ছে আর সেই পতাকা উড়াবে বাসাবাড়ির ছাঁদ থেকে শুরু করে দোকানপাট, অফিস-আদালত এবং ব্যক্তিগত গাড়িতেও। এমনকি রিক্সা ভ্যান আর চায়ের দোকানেও হরদম উড়বে ভীনদেশী পতাকা। কেউকেউ ভীনদেশী পতাকার আদলে নিজ বাসাবাড়ি রঙ্গিন করার খবরও ইতিমধ্যে প্রকাশ করেছে গণমাধ্যম। সর্বত্রই ভিনদেশী পতাকা উত্তোলন’সহ বাকবিতণ্ডায় লিপ্ত হচ্ছে এবং হবে একশ্রেণী।

এই অসংস্কৃতি ছড়িয়ে পড়ছে ঢাকা’সহ দেশের জেলা, উপজেলা ও পাড়া-মহল্লার অলিগলিতে। এই পরিস্থিতিতে সচেতন তরুণ সমাজের এগিয়ে আসা খুবই জরুরী বলে মনে করছি! আমরা সকলেই অবগত আছি আমাদের দেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। প্রতিটি স্বাধীন দেশের যেমন নিজস্ব পতাকা ও প্রতিক রয়েছে ঠিক তেমনিভাবে আমাদেরও রয়েছে লাল-সবুজের পতাকা। এই পতাকা অর্জন করতে গিয়ে ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে এদেশের ৩০ লক্ষ মানুষ শহীদ হয়েছে। তাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি এই বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক লাল-সবুজের পতাকা।

এদিকে ফুটবল বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার সাথে সাথেই শুরু হচ্ছে বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। এই সময়ে ভীনদেশী পতাকা প্রদর্শন করে দেশীয় পতাকার অবমাননা করা হবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। আমি/আমরাও তাই মনে করছি।

তাছাড়া এই খেলা কয়েকটি দিক থেকে আমাদের গুনাহের দিকে ধাবিত করবে। আর যে জিনিস মানুষকে গুনাহের দিকে ধাবিত করে সেটা সম্পূর্ণ হারাম এবং শতভাগ নাজায়েজ।

১. মানুষের মূল্যবান সময় নষ্ট করে


সহীহ গ্রন্থ তিরমিজি শরীফের-২৪১৯ নং হাদীসে রাসূল (সা.)বলেছেন; পাঁচটি বিষয় জিজ্ঞাসাবাদ না হওয়া পর্যন্ত কিয়ামতের দিন আদম সন্তানের এক পাঁ-ও নড়বে না; ১. বয়স সম্পর্কে জিঙ্গাসা করা হবে, বয়স কিভাবে খরচ করেছে? ২. যৌবন কোন পথে কাটিয়েছে? ৩. সম্পদ কোথা থেকে উপার্জন করেছে? ৪. উপার্জিত সম্পদ কোন কাজে ব্যয় করেছে। ৫. সে যা শিখেছিল তদনুযায়ী কতটুকু আমল করেছে?

২. সতর খোলা থাকা
সুনানে আবু দাউদ শরীফের-৪৯৭ নং হাদীসে বলা হয়েছে, ‘কোনো পুরুষ অপর পুরুষের সতরের দিকে তাকাবে না। পুরুষের সতর হল নাভির নিচ থেকে হাঁটুর নিচ পর্যন্ত।’

আরও পড়তে পারেন-

আমরা জানি, প্রয়োজন ছাড়া সতর খোলা কিংবা দেখা নাজায়েজ। এটাতো দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট সত্য যে ফুটবল খেলায় সতর খোলা থাকে।

৩. নামাজ বিলম্বিত হওয়ার কারণে
তিরমিজি শরীফের-১৬১৯ নং হাদীসে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘কুফুর এবং শিরকের মধ্যে পার্থক্য হলো নামাজ। যে নামাজ ছেড়ে দিল সে কাফির হয়ে গেলো (কাফিরের মতো কাজ করলো)।’

সহীহ বুখারী শরীফে-৫৫৩, ৫৯৪ নং হাদীসে বুরাইদা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আসরের নামাজ পরিত্যাগ করলো তার সব আমল বরবাদ হয়ে গেল।’

অনেক সময় দেখা যায়, খেলার উত্তেজনাপূর্ণ মুহুর্তে নামাজের কথা স্মরণ থাকে না। আবার কোন কোন সময় যোহরের পর খেলা শুরু হলে আসর, মাগরীব গড়িয়ে যায় কিন্তু খেলায় মনোযোগের কারণে নামাজ ছুটে যায়।

৪. জুয়া ও ক্যাসিনো’র সাথে সম্পৃক্ত হওয়া
মেশকাত শরীফে-৪৩০৪ নং হাদীসে এসেছে, ‘আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা মদ, জুয়া ও বাদ্যযন্ত্র হারাম করেছেন।’

শুধুমাত্র ফুটবলই নয়, ক্রিকেট এবং অন্যান্য খেলাকে কেন্দ্র করেও পাড়ার চায়ের দোকান থেকে শুরু করে নামীদামী হোটেল-রেষ্টুরেন্টগুলোতে চলে রমরমা ক্যাসিনো কাণ্ড ও জুয়ার আসর। ইসলাম সব ধরনের জুয়া-বাজিকে অবৈধ ঘোষণা করেছে। জুয়া-বাজি থেকে প্রাপ্ত সবকিছুকে হারাম বলা হয়েছে। রাষ্ট্রের বিধান অনুযায়ীও জুয়া বা ক্যাসিনো আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। এই ক্যাসিনো বা জুয়া মারাত্মক সামাজিক অপরাধ।

তাই আসুন, ফুটবল বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে সব ধরণের মাতামাতি, বাক-বিতণ্ড ও ভীনদেশী পতাকা উত্তোলন পরিহার করি। এখন থেকেই সচেতন হই। এই অসংস্কৃতি থেকে বেড়িয়ে আসতে প্রশাসনের পাশাপাশি পাড়া-মহল্লায় মসজিদ ভিত্তিক যুবকেরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে এগিয়ে আসা জরুরী মনে করছি। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে বুঝার তাওফিক দান করুন, আমিন।

লেখক: স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, উম্মাহ২৪ ডটকম এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক, ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশ।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।