Home ইসলাম যে গুণে অর্জিত হবে মহাপ্রতিদান

যে গুণে অর্জিত হবে মহাপ্রতিদান

মারজানা কুবরা

সুন্দর পথটি কে না ধরতে চায়? দৃষ্টি ও জ্ঞানের ভিন্নতায় সীমাবদ্ধ এই সুন্দরের ব্যাখ্যা একেকজনের কাছে একেকরকম। কারো কাছে কৃত্রিম জাঁকজমকপূর্ণ পথকে মনে হয় সুন্দর। মহান স্রষ্টা সর্বশক্তিমান আল্লাহ বান্দার জন্য একটি সুন্দর পথের চিত্র তুলে দিয়েছেন। যদি আমরা নিজেরা তা অস্বীকার করে চলি, আর বলি- আমার চলনের পথটি সুন্দর শ্রেষ্ঠ, তাতে কি প্রকৃত সত্যি বদলে যাবে? আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন, ‘নিঃসন্দেহে ইসলামই আল্লাহর কাছে একমাত্র দ্বীন’ (সূরা আল ইমরান-১৯)।

মহাপ্রভুর কাছে নিজেকে সমর্পণ করা হলো বান্দার প্রথম কাজ। তার মনোনীত দ্বীনকে স্বীকার করে, মনে-প্রাণে বিশ্বাস করা হলো বান্দার সুন্দর পথের শুভ সূচনা। মানব মুক্তির ঠিকানা হলো ইসলাম। ‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম’ (সূরা-০৩)।

ইসলাম এমন জীবনবিধান যাতে রয়েছে, মানবজীবনের পূর্ণাঙ্গ জীবনযাপন পদ্ধতি। মানব মুক্তি ও হেদায়াত। এ কল্যাণ লাভ শুধু ইহকাল নয় পরকালেরও। জীবনে কত পাপ হয়ে গেল জেনে না জেনে, বুঝে না বুঝে। অপসংস্কৃতির অন্ধ অনুসরণ আমাদের করে তুলেছে পশ্চিমা, ইউরোপীয়দের হাতের খড়ি। অশ্লীলতার চর্চায় মানুষ শুদ্ধতা থেকে, প্রভুর রহম থেকে, তাঁকে উপলব্ধি করার বোধ থেকে বঞ্চিত হয়ে গেছে। আল্লাহর বাণী, ‘তোমরা অশ্লীল কাজের কাছেও যেও না’ (সূরা আনআম-১৫১)।

শুধু অশ্লীলতা নয়, নীতির চরম অবক্ষয় আমাদের মধ্যে। যার কারণ আমাদের হৃদয় খোদা প্রেম ও ভীতি হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। কিন্তু তাঁর দরজা আমাদের জন্য কখনোই বন্ধ নয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে আমার বান্দারা! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ আল্লাহর রহমত হতে নিরাশ হয়ো না। আল্লাহ সমুদয় পাপ ক্ষমা করে দেবেন। তিনি তো ক্ষমাশীল পরম দয়ালু’ (সূরা আয-জুমার-৫৩)।

সুন্দর পথের পথিকরূপে নিজেকে সূচিত করতে এগিয়ে আসতে হবে। ফেলে দিতে হবে রং তামাশা, নাচ, গান, অনর্থক আমোদ-প্রমোদ, বিধ্বংসী পথকে পয়ে ঠেলে যদি মুমিন হতে চান, সত্যিই সফলকাম হতে চান কে আছে আপনাকে রুখবে? আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘অবশ্যই আত্মসমর্পণকারী পুরুষ ও আত্মসমর্পণকারী নারী মুমিন পুরুষ মুমিন নারী অনুগত পুরুষ ও অনুগত নারী সত্যবাদী পুরুষ ও সত্যবাদী নারী ধৈর্যশীল পুরুষ ও ধৈর্যশীল নারী বিনীত পুরুষ ও বিনীত নারী দানশীল পুরুষ ও দানশীল নারী রোজা পালনকারী পুরুষ ও রোজা পালনকারী নারী যৌনাঙ্গ হেফাজতকারী পুরুষ ও যৌনাঙ্গ হেফাজতকারী নারী তাদের জন্য আল্লাহ রেখে দিয়েছেন ক্ষমা ও মহাপ্রতিদান’ (সূরা আহজাব-৩৫)।

উল্লিখিত আয়াতে পুরুষ ও নারীর জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কতক গুরুত্বপূর্ণ গুণের কথা বলেছেন। মহান প্রতিদান প্রাপ্তির জন্য ইসলামী স্কলাররা এ বিষয়গুলোকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েছেন।

আরও পড়তে পারেন-

আত্মসমর্পণকারী : আত্মসমর্পণকারী বলতে ইসলাম গ্রহণকারী বুঝানো হয়েছে। মানুষ প্রাথমিকভাবে নিজেকে আল্লাহর কাছে সমর্পণ করবে। তাঁর আদেশ, নিষেধ, নিয়মনীতির প্রতি অকুণ্ঠ বিশ্বাস, ইসলামের প্রতি সযতœ ভালোবাসা অন্তরে স্থাপন, প্রভু তথা স্রষ্টার কাছে নিজেকে সমর্পণ, সুখ-দুঃখ, উত্থান-পতন প্রতিটি জীবন ঘনিষ্ঠ ব্যাপারে প্রভুর দিকে বিশ্বাস দৃঢ় করা। রাসূল সা:-এর এক সাহাবি ইসলামের মূল মর্ম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি জবাবে বলেন, ‘তোমার অন্তর আল্লাহ তায়ালার কাছে সঁপে দেবে এটাই ইসলাম। হৃদয়ে থাকবে শুধু আল্লাহ তায়ালা। আল্লাহর কাছে পরিপূর্ণরূপে আত্মাকে সমর্পণকরা হলো এই আত্মসমর্পণকারী।’

মুমিন ও মুমিনা : প্রাথমিক পর্যায়ে প্রভুর প্রতি নিজেকে সমর্পণ করা। দ্বিতীয় বা তার পরে তার প্রভুর রঙে নিজেকে রাঙানো মানে মুমিন হতে হবে। ইসলাম প্রবেশের পর তার হকিকত বুঝে নিতে হবে। বুঝে নিতে হবে আপন দায়িত্ব। ইসলামের স্তম্ভ পাঁচটি তাওহিদ (কালেমা), নামাজ, রোজা, হজ ও জাকাত। এই পাঁচটি শুধু ইসলাম নয়। এগুলো ইসলামের মূল খুঁটি বা বুনিয়াদ। ইসলামকে পূর্ণ করতে হতে হবে পূর্ণ মুমিন। যার জন্য আরো কিছু দায়িত্ব পূর্ণ করতে হবে। তবেই খুঁটিতে তোলা গৃহ পূর্ণ হবে। মুমিন হতে হলে ইসলামকে পূর্ণাঙ্গ মানতে হবে। কিছু ছেড়ে কিছু রেখে মুমিন হওয়া যায় না। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘হে মুমিনগণ তোমরা ইসলামে পরিপূর্ণ প্রবেশ করো’ (সূরা বা কারা-২০৮)।

ঈমানকে সুন্দর করে সাজাতে ইসলাম যে লাইফ কোড নির্ধারণ করেছে। ব্যক্তিজীবন সে নীতি অবলম্বনে সাজাতে হবে। আত্মার আত্মাকে সুন্দর করা নীতির নির্দেশে তবেই ফুটে উঠে মুমিনের চিত্র। হজরত রাসূলে কারিম সা:-এর মতে, উত্তম চরিত্র হলো সবচেয়ে উত্তম ঈমান। ঈমানের পূর্ণাঙ্গতার জন্য উত্তম চরিত্রকে তিনি গুরুত্ব দিয়েছেন। চরিত্রের সংজ্ঞা হারিয়েও আমরা মার্জিত আধুনিক শিক্ষিতা। উত্তম চরিত্র হলো এমন কত গুণের সমন্বয়, সত্য ন্যায় ধৈর্য ক্ষমা সহানুভূতি সঞ্চিত মন, মানবপ্রেম, আতিথেয়তা, দান-সদকা নিয়ম-শৃঙ্খলা সুসমন্বয়ে সেজে ওঠা চারিত্রিক সুসমা। রাসূলে আরবি সা: উত্তম চরিত্রের অনুপম আদর্শ। আর জীবন আদর্শই হলো মুমিনের জন্য শ্রেষ্ঠ আদর্শ।

অনুগত নারী ও পুরুষ : প্রকৃতির প্ররোচনায় কিংবা কোনো প্রতিকূল পরিস্থিতিতে প্রভুর নির্দেশ পালনই তো অনুগত। আল্লাহর কাছে বিনয়াবনত হয়ে ইবাদত করা। আল্লাহর অনুগত থাকা বান্দা-বান্দীর গুণ। বিনয়কাতরচিত্তের অকুণ্ঠিত ইবাদত, বিনয়ে বিগলিত প্রভুর দরবারে যে আত্মা সেই অনুগত। প্রভুর প্রতিটি হুকুম পালনে সে হয় অগ্রগামী। কোনোরকম আপস ও দ্বিধা ছাড়াই। নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত, পর্দা, জিহাদ ইত্যাদি বিষয়ে ইসলামের রীতিতে অবস্থান ও পরিস্থিতি অনুযায়ী ফরজ একবাক্যে মেনে নিতে হবে। প্রতিটি মুমিনকে ইসলামিক হুকুম পালন, কুরআন-হাদিসের কোনো বিধান অমান্য করা অনুগত বান্দার দ্বারা সম্ভব নয়। নামাজ, রোজাকে যেমন ফরজ মানতে হবে- তেমনি হজ, জাকাত, পর্দা, জিহাদকে অনুরূপ ফরজ মেনে নিতে হবে। এক কথায় প্রভুর অনুগত হতে হবে। তবেই পাওয়া যাবে সফলতার সিঁড়ি ও কাক্সিক্ষত মঞ্জিল। মুমিনের আওয়াজ হবে সিংহ শার্দূলের মতো। গুরুগম্ভীর, দৃঢ় পথচলা। চরিত্র হবে নোংরামো অশ্লীলতা অপরাধ মিথ্যা হিংসা থেকে মুক্ত। ইসলামে রয়েছে সুন্দরের সুসন্নিবেশিত জীবন। বুঝতে হবে মানতে হবে হতে হবে প্রভুর অনুগত বান্দা-বান্দীর।

সত্যবাদী পুরুষ ও নারী : সত্যবাদিতা একটি মহাকাক্সিক্ষত মানবীয় গুণ। ওই আয়াত অংশের আল্লাহ এই আহ্বান জানিয়েছেন বান্দার প্রতি, হে মুসলিম নারী ও পুরুষরা তোমরা নিজেদেরকে সত্যবাদিতার গুণ দিয়ে সুসজ্জিত করে নাও! একদা এক ব্যক্তি রাসূল সা:-এর কাছে প্রশ্ন করেছিলেন, ইয়া রাসূল সা:, মুসলমান কি ভীরু হতে পারে? বললেন, হ্যাঁ হতে পারে। আবার প্রশ্ন করল, কৃপণ হতে পারে? বললেন, হ্যাঁ হতে পারে। আবার প্রশ্ন করল, মিথ্যাবাদী হতে পারে? বললেন, না মুসলমান কখনো মিথ্যা বলতে পারে না। ইসলাম সত্যকে মিথ্যা রঙে রাঙাতে নিষেধ করে তা ছাড়াও বলা হয় মিথ্যা সব পাপের মূল। এ কথা আমরা কমবেশি সবাই জানি। মিথ্যার কারণে অনেক পাপ জন্ম নেয়। একটি মিথ্যা ঢাকতে দুই-তিন ততোধিক মিথ্যার জন্ম হয়। এতগুলো মিথ্যা ঢাকতে বড় কোনো পাপ সংঘটিত হয়। মিথ্যার কুফল সবাই ছোট থেকে সবাই শুনি। তবুও, আমরা মিথ্যা বলি। মিথ্যার সাথে আষ্টেপৃষ্ঠে আছে মানবজীবন। এখন কেউ কাউকে বিশ্বাস করতে চায় না। মিথ্যা আমাদের মধ্যে ভয়াবহ ব্যাধি রূপ ধারণ করেছে। কলুষিত সমাজকে সজীব করতে সত্যবাদিতা পুনরুত্থান দরকার। মুমিন ও মুমিনাগণকে হতে হবে এ পথের অভিসারী। সত্যের মুখে দাঁড়িয়ে মৃত্যুতেও মজা। সত্য হৃদয়ে উপলব্ধির ব্যাপার। মিথ্যাকে সম্পূর্ণ পরিহার করতে হবে। সত্যের সঙ্কল্প আর মিথ্যা হতে বিমুখতা পার্থিব ও পরকালীন জীবনে বয়ে আনবে সম্মান ও সফলতা।

লেখক: শিক্ষার্থী, হাদিস বিভাগ, ফরিদগঞ্জ মজিদিয়া কামিল মাদরাসা, চাঁদপুর।

উম্মাহ২৪ডটকম: আইএএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।