Home ওপিনিয়ন কাতার বিশ্বকাপ ও পাশ্চাত্য মিডিয়া হেজেমনির ওরিয়েন্টালিস্ট পাঠ!

কাতার বিশ্বকাপ ও পাশ্চাত্য মিডিয়া হেজেমনির ওরিয়েন্টালিস্ট পাঠ!

।। ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব ।।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি-প্রধান জোসেফ বোরেল কিছুদিন আগে ইউরোপকে ‘বাগান’, বাকি বিশ্বকে ‘জঙ্গল’ বলেছেন। এই ধ্যান-ধারণা পশ্চিমের সর্বত্রই লক্ষণীয়, হ্যাঁ ইউরোপে উদারবাদী মানুষের সংখ্যাও বিস্তর। তবে বড় পরিসরে ইউরপের বুদ্ধিবৃত্তিক অঙ্গন এবং মিডিয়া নিজেদের সাফল্যকেই শুধু বিশ্বের সাফল্য এবং শুধু পশ্চিমের সমস্যাকেই সমগ্র বিশ্বের সমস্যা মনে করে।

পশ্চিম পূর্বের, এশিয়া কিংবা আফ্রিকার সাফল্যকে স্বীকৃতি দিতে অনুদার। তারা আফ্রো-এশিয়ান চ্যালেঞ্জকে বৈশ্বিক সমস্যা মনে করে না, বরং আফ্রো-এশীয়দের নিজেদের কারণে সৃষ্ট জঞ্জাল হিসেবে দেখে।

সভ্যতা, সাফল্য, সুন্দরের সংজ্ঞা যেন পশ্চিমই ঠিক করে দেবে! নগ্নতা, এল-জি-বি-টি, উপনিবেশ বা কলোনিয়ালিজম, অন্যের দেশ দখল, সরকার পরিবর্তন, যৌক্তিক কিংবা অযৌক্তি অজুহাতে আফ্রো-এশিয়ার সাবেক কলোনির দেশে যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়া, যখন-তখন মিসাইল হামলা ইউরোপীয় বিবেচনায় সুন্দর, দরকারি এবং মানবতাবাদী!

পশ্চিম যুদ্ধ বিজয়ের ক্ষেত্রেও ইতিহাসের ভাষ্য তৈরি করে, আবার পরাজিতের ক্ষেত্রেও নিজের ভাষ্য চাপিয়ে দেয়। নিজে পরাজিত হলেও ইতিহাসের ব্যাখ্যা তারই অনুকুলে রাখে। রেনেসাঁ ও ঔপনিবেশক সময়ের আগে-পরে নিজের অযোগ্যতা, ব্যর্থতা প্রতারণাকে, শিল্প বিপ্লবের শ্রম দাসত্বকে, কলোনিয়াল শোষণের ইতিহাসকে কিংবা বিশ্বের জলবায়ু ধ্বংসের মূল কারণগুলোকে সে স্কুলের সিলেবাসে সচেতনে উহ্য রাখে। পশ্চিম মনে করে ডমিন্যান্ট কোন ভাষ্য থাকতে পারে না পুবের। গ্লোবাল ন্যারেটিভ বা বয়ান তৈরির এই ঔদ্ধত্য ইউরোপের সচেতন জ্ঞান। পশ্চিমের কিছু উগ্র ডানপন্থী এ-ও মনে করে যে, আফ্রো-এশিয়ার ‘কালো’রা এখনও পর্যাপ্ত বিবর্তিত হতে পারেনি!

এটা অনস্বীকার্য যে, ফরাসি বিপ্লব-পরবর্তী সময়ে ইউরোপে কল্যাণ রাষ্ট্রের চিন্তা ও চর্চায় ক্রিশ্চিয়ান এথিক্সের প্রভাব ছিল। ফলে নৈতিকতার অনেক কিছুই আইনে রূপান্তরিত হয়ে সমাজের স্থিতিশীলতা ও ন্যায়ের সুরক্ষা দিয়েছে। তবে পশ্চিমে ডানপন্থার উত্থানের সঙ্গে সঙ্গে সময়ের পরিসরে ক্রিশ্চিয়ান এথিক্সের মানবিক ধারাগুলোর চর্চাও রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। চার্চ ধর্মে ধর্মে ও ধর্মেরই গ্রুপগুলোতে সংঘাত জিইয়ে রেখেছিল বলে সাধারণ উপলব্ধি ছিল, বিপরীতে ওয়েস্টফেলিয়ান সেকুলারিজম চর্চা এসব ইউরোপীয় হানাহানিকে থামিয়েছে। কিন্তু এই শুভবোধের ওপরে প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রগুলোই যখন অন্য রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সংঘাত ও লুটপাট অব্যাহত রেখেছে তখন ইউরোপের বস্তুবাদী সমাজ ও নাগরিক তা নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় পায়নি! পোস্ট-কলোনিয়াল সময়েও আমরা দেখি কল্যাণ রাষ্ট্র গঠনের চর্চাগুলো ইউরোপে অব্যাহত ছিল। কিন্তু এই চিন্তা ও চর্চার পরিধি ইউরোপের দেশগুলোর সীমানার বাইরে নেয়ার চেষ্টায় আন্তরিকতার সীমাবদ্ধতা ছিল বলেই মনে করি! দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে, মহাদেশের বাইরে গেছে আসলে প্রাচ্যবাদ বা প্রাচ্যতত্ত্ব।

প্রাচ্যতত্ত্ব বা ওরিয়েন্টালিজম বলতে এডোয়ার্ড সাঈদ বুঝিয়েছেন সেই মনোভাবকে যার দ্বারা পাশ্চাত্য, প্রাচ্যের সমাজ ও জনগণকে দেখে থাকে। সাঈদের মতে, প্রাচ্যবাদ মনোভাবটি শক্তভাবে সাম্রাজ্যবাদী সমাজগুলোতে প্রতিষ্ঠিত, এটা সাম্রাজ্যবাদের নৈতিক ভিত্তি নির্মাণ করেছে। রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতা কাঠামোতে প্রাচ্যবাদ টিকিয়ে রাখা হয়েছে। প্রাচ্যের জনগোষ্ঠী, সময় ও স্থানকে পাশ্চাত্যের সামরিক ও অর্থনৈতিক আকাঙ্ক্ষা ও অভিযানের দৃষ্টিভঙ্গিতে তুলে ধরে প্রাচ্যবাদ।

এডওয়ার্ড সাঈদ, গায়ত্রী স্পিভাকের মতো উত্তর-ঔপনিবেশিক এশীয় পন্ডিতেরা ইউরোপীয় শাসক ও চিন্তকদের আফ্রো-এশিয়াকে দেখার ‘ওয়ার্ল্ড ভিউ’টা বুঝতে সাহায্য করেছেন। আসলে প্রাচ্যের কোনটি ভালো, কোনটি মন্দ, তা ইউরোপ-আমেরিকানদের কল্পনাপ্রসূত সিদ্ধান্তই নির্ধারণ করে থাকে। সাঈদ সেই পশ্চিমা হীনম্মন্যতার ছবি এঁকেছেন, যেখানে পশ্চিম মনে করে আফ্রো-এশিয়ানরা নীচ-হীন, নোংরা, অসভ্য, নিজেদের শাসনে অক্ষম, বাচ্চা বেশি ফুটায়। বিপরীতে পশ্চিমই শাসক ও নেতা হবার যোগ্য। উপনিবেশ সুরক্ষার জন্য প্রজন্মের পর প্রজন্মে ইউরোপীয় নাগরিকদের কলোনিয়াল শাসক ‘মাইন্ডসেট’ তৈরির ‘সাপ্লাই চেইন’ নির্মাণ তাদের জন্য দরকারি ছিল। অনৈতিক শাসন চালিয়ে যাবার জন্য ইউরোপীয় সাধারণ নাগরিকের উপর ‘প্রাচ্যবাদ’ দর্শন চাপিয়ে দেয়ার মানসিকতা কাঠামোগত চর্চা ছিল। এসব বর্ণবাদী চিন্তা ও ধ্যান-ধারণা যে পশ্চিম থেকে এখনও মোছেনি তার প্রমাণ ইউরোপে নতুন করে ডানপন্থার নবজোয়ার। এসব এখন ইউরোপকে কুরে কুরে খাচ্ছে।

বাকি বিশ্বকে শত শত বছর শোষণ করে, চুরি ও লুট করে ইউরোপ সাজানো বাগান তৈরি করেছে, মানবতাকে পরিয়েছে দাসত্বের শিকল, লক্ষ কোটি জীবন ও সভ্যতার পর সভ্যতা ধ্বংস করেছে। হ্যাঁ ইউরোপের সাজানো বাগান রক্ত, হত্যা অমানবিকতার ও অন্যের দেশ ধ্বংসের উপর নির্মিত, এটাও খণ্ডিতভাবে বলা যায়। স্কুলের ইতিহাস বই এসবের সাক্ষ্য দেয় না বলে আজকের ইউরোপীয় শিশুরা বেশ কিছু মিথ্যায় বড় হচ্ছে। তবে ইউরোপের প্রতিটি বড় শহরের কথিত গৌরবজনক স্থাপনা, রাজপ্রাসাদ সেসবের প্রমাণ বয়ে যাচ্ছে।

আবারও বলছি, প্রাচ্যবাদ পশ্চিমা উদারবাদী নাগরিকদের জেনারালাইজড ভিউ নয়, বহু ইউরোপীয় প্রকৃত সুন্দরকে সুন্দর জানেন। ইউরোপের রয়েছে বহু গুরুত্বপূর্ণ মানব দর্শন, অতি উন্নত ভালো শিক্ষা গবেষণা মডেল, জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার উন্নত সব অবকাঠামো। ইউরোপের আছে সুন্দরের নান্দনিক অনেক সংজ্ঞা। বহু ইউরোপীয় আফ্রো-এশিয়ার সভ্যতাকে স্বীকার করেন, এমনকি এই সভ্যতাগুলোর অতীত ভালোগুলোকে বিশ্বের শেয়ারড সম্পদ হিসেবে ওউন-ও করেন। তথাপি কলোনিয়াল শোষণ কাঠামোর প্রাচ্যবাদী চর্চাটা পশ্চিমের মিডিয়া হেজেমনিতে আজও রয়ে গেছে।

আমরা এখানে তিনটি উদাহরণ আনতে পারি। ইরাক যুদ্ধের বিপরীতে ইউক্রেন যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে অবিভাসী গ্রহণের ইউরোপীয় নীতিমালা কিংবা আন্তরিকতা। ভারতীয় বংশোদ্ভূত ঋষি সুনাকের ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রিত্ব এবং অতি সাম্প্রতিক কাতার বিশ্বকাপ কাভারেজে পশ্চিমের মিডিয়া হেজেমনির কুৎসিত চেহারা বেরিয়েছে। ইউরোপের বর্ণবাদী ইতিহাসের পুনর্পাঠ পশ্চিমের শিক্ষার্থীদেরও দরকার।

উত্তরাধুনিক সময়ে মিথ্যা অজুহাতে ইরাক আগ্রাসনে লক্ষ মানুষ খুনে বগল বাজানো পশ্চিম আজ কাঁদছে সাদা চামড়ার নীল চোখের মানুষের দেশে যুদ্ধের দামামায়। উন্নত জীবনের সোপানের এত দীর্ঘ পথ হেঁটে পরে এখন তাকে যুদ্ধের কষ্ট, দেশ দখলের মানেটা বুঝতে হচ্ছে! যেন আফ্রো-এশীয়দের মারলে তারা ব্যথা পেত না, তাদের খুনের রক্ত লাল নয়! আমরা এখানে রাশিয়ার অনৈতিক ইউক্রেন আগ্রাসনের যৌক্তিকতা তৈরি করছি না, রবং প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মানুষের গুরুত্ব যে ভিন্ন সেটা দেখানোর চেষ্টা করছি।

আরও পড়তে পারেন-

পশ্চিম মনে করে ফুটবল, অলিম্পিক এসব তার খেলা। বিশ্বকাপ আয়োজনের অধিকারও তাই তার। বিশ্বকাপের স্থান ও সময় হতে হবে তার কমফোর্ট জোন বিবেচনায়। কিন্তু স্পোর্টস শো করে আফ্রো-এশিয়ার বিস্তৃত বাজার থেকে সে যে অর্থ তুলে নেয়, সে তা আমলে নেয় না। সে বোঝে, কিন্তু চোখ বুজে রাখে।

কাতার বিশ্বকাপে অতিরিক্ত খরচ করেছে, শ্রমিক মেরেছে, বড় ফুটবল প্লেয়িং নেশন নয়—এসব সত্য, তবে কিছু ক্ষেত্রে আংশিক সত্য। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) কাতারের শ্রমনিরাপত্তা নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করেছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে ফুটবল ও ফুটবল-বহির্ভূত, উচ্চতাপে শ্রমিক মৃত্যু বছরে ৫০-৬০-এর আশেপাশে। কিন্তু ইউরোপের মিডিয়ায় দশ বছরে শ্রমিক মৃত্যুর সংখ্যাটা প্রথমে সাড়ে ৫ থেকে সাড়ে ৬, কিন্তু বিশ্বকাপ শুরুর ঠিক আগে দেখানো হচ্ছে ১৫ হাজার।

ইউরোপে বিশ্বকাপ বর্জনের ব্যাপক আন্দোলন হয়েছে। কাতার ও আইএলও বলছে, কাফালা ব্যবস্থা বন্ধ করেছে। শ্রমিকদের চাকরি পরিবর্তনের ও দেশ ছাড়ার স্বাধীনতা দিয়েছে, শ্রমিকদের কর্ম নিরাপত্তা উন্নত করতে বেশ কিছু কাজ করেছে, নূন্যতম মজুরি, আবাসন ট্রান্সপোর্টেশান দিয়েছে। কিন্তু পশ্চিমের মিডিয়া বলছে কোনো পরিবর্তন হয়নি। আধুনিক শ্রমদাসত্বের এই কাফালা ব্যবস্থাটাও যে কলোনিয়াল লিগ্যাসি, সেটা পশ্চিমের মিডিয়ায় অনুপস্থিত।

যেকোনো শ্রম দাসত্ব এবং কাঠামোগত শ্রমিক শোষণ নিন্দার। কিন্তু সংখ্যাকে বড় করে দেখিয়ে, ঘৃণা ছাড়ানো প্রপাগান্ডায় পশ্চিমের মিডিয়া হেজেমনি ও হীনমন্যতা সামনে এসেছে। কাতারের অবকাঠামোগুলোর কিছু যে পশ্চিমা কোম্পানি করেছে, শ্রমিক নিরাপত্তার দায় যে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন সার্টিফাইড পশ্চিমা কোম্পানিরও—সেটা তারা বেমালুম চেপে গেছে। তারা চেপে যাচ্ছে ২২০ বিলিয়ন ডলারের খরচে বিমানবন্দর, মেট্রো, মহাসড়ক, হাসপাতাল, কালচারাল সেন্টার ইত্যাদিও কাতার ঢুকিয়ে ফেলে ব্র্যান্ডিং করে ফেলেছে।

হ্যাঁ, কাতারি রেগুলেশনকে অবশ্যই শুলবিদ্ধ করা যৌক্তিক। বাংলাদেশের মতো গরিব দেশের সস্তা শ্রমকে অ্যাবিউজ করে মধ্যপ্রাচ্যের নির্মাণশিল্পের অপার বিকাশ অবশ্যই সত্য ঘটনা। কিন্তু ইউরোপীয় মিডিয়া হেজেমনির প্রধান সমস্যা এটা না, প্রধান সমস্যা হচ্ছে একটি অ-ইউরোপীয় দেশের অবকাঠামোর চোখধাঁধানো উন্নয়ন ঘটে যাওয়া, বিশাল বড় গ্লোবাল শো-র যোগ্যতা পশ্চিমের বাইরে চলে আসা। সমস্যা ব্র্যান্ডিংয়ের নন-ইউরোকেন্দ্রিক নতুন মান। উন্নয়ন ও নির্মাণের নতুন সংজ্ঞাটিকে পশ্চিমের বাইরে নিয়ে আসাটাই আসলে প্রধান সমস্যা।

প্রধান সমস্যা আসলে ওরিয়েন্টালিজম

আমরা আধুনিকায়ন তত্ত্বের উন্নয়ন দর্শনের বিষয়টিও আনতে পারি। কোনো দেশের আধুনিকায়ন তত্ত্বমতে অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে সাংস্কৃতিক বাধা দূর করতে হবে। ‘সেকেলে সংস্কৃতি, ‘সেকেলে ধর্মীয় বিশ্বাস’ ত্যাগ করতে হবে। কিন্তু ভেতরের আলাপ হচ্ছে, উন্নত হতে হলে পাশ্চাত্যের অনুরূপ সংস্কৃতি দরকারি। ‘আধুনিকায়ন’ প্রপঞ্চটি অনেকের মতে একটি পশ্চিমা সাংস্কৃতিক পক্ষপাতদুষ্ট ধারণা, যাকে ইউরোপকেন্দ্রিক কিংবা নৃতত্ত্বের ভাষায় জাতিবাদীও বলা যায়। একটি দেশকে উন্নত হতে হলে তার প্রাচীন সাংস্কৃতিক প্রথা ত্যাগ করে পশ্চিমা দেশগুলোকে অনুসরণ করতে হবে; এশীয় পন্ডিতদের মতে এটি ওরেয়েন্টালিজমের দোষে দুষ্ট একটি ভুল ধারণা।

এর বাস্তবিক প্রমাণ হিসেবে এশিয়ান টাইগার্সখ্যাত দেশগুলোর (হংকং, তাইওয়ান, চায়না, কোরিয়া ইত্যাদি) উন্নয়ন উদাহরণ উল্লেখযোগ্য। এই দেশগুলো তাদের প্রাচীন সাংস্কৃতিক চর্চা পরিত্যাগ করা ছাড়াই বিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে উল্লেখযোগ্য হারে অর্থনৈতিক অগ্রগতি অর্জন করেছে। দেখা যায়, তারা তাদের সংস্কৃতি এবং কনফুসিয়াস-আদর্শ পরিত্যাগ না করেই টেকসই উন্নয়ন অর্জন করেছে। পাশাপাশি মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরের উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। পূর্ব এশিয়ার ঐতিহ্যকে অক্ষুণ্ণ রেখেই দেশ দুটি উন্নয়নের দিকে পথ হেঁটেছে।

পশ্চিমের উল্টোধারায় নতুন করে যুক্ত হয়েছে কাতার। দেখা যাচ্ছে, ফুটবল বিশ্বকাপের আয়োজনে, অবকাঠামো ডিজাইনে এবং এর উদ্বোদনী অনুষ্ঠানে দেশটি সযতনে নিজের আরব ও ইসলামি সংস্কৃতি তুলে ধরেছে। বিশ্বখ্যাত স্থপতি জাহা হাদিদের অসম্ভব নকশার বাস্তবায়নের কৃতিত্ব দেখিয়েছে কাতার। পশ্চিমা মিডিয়াকে এতে খুব খুশি মনে হচ্ছে না।

মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর হাজারো তরুণের ইউরোপীয় পেশাদার লিগে খেলার সাফল্য, কাতার দুবাইয়ের ইউরোপীয় ক্লাব ব্যবস্থাপনায় সাফল্যকে ইউরোপ তার উঠানে সীমাবদ্ধ রাখতে চায়। ওইসব খেলোয়াড় কিংবা সালাহ মানে-দের নিজ দেশের পানে পৌঁছে যাওয়াটা তার বাজার অর্থনীতিতে ভয়ের।

আরও বড় সমস্যা হচ্ছে, ইউরোপের সাবেক কলোনির একটা মুসলিম দেশ কলোনিয়াল অর্থ ছাড়াই, অন্যের দেশ দখল ছাড়াই, বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক লুটপাট ছাড়াই কিংবা সর্বৈব সামরিক শক্তি ছাড়াই সামনে চলে এসেছে। নিজের প্রাকৃতিক সম্পদের সদ্ব্যবহারটা শিখে গেছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে, এই শিখে যাওয়াটা যদি এশিয়া ও আফ্রিকায় ব্যাপক গতিতে ছড়িয়ে পড়ে! আজ কাতার-দুবাই, কাল থাইল্যান্ড-ভারত, পরশু মিশর-মরোক্কো কিংবা আগামীর কোনো একসময় ঘানা-নাইজেরিয়া-ক্যামেরুন নিজেদের ব্র্যান্ডিং করার যোগ্যতা তৈরি করে ফেললে ইউরোপীয় সাজানো বাগানের কী হবে! কী হবে ইউরোপীয় অর্থনীতির ভবিষ্যৎ!

[টিবিএস-এর সৌজন্যে]

– ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব, টেকসই উন্নয়নবিষয়ক লেখক। গ্রন্থকার: চতুর্থ শিল্পবিপ্লব ও বাংলাদেশ; বাংলাদেশ: অর্থনীতির ৫০ বছর; অপ্রতিরোধ্য উন্নয়নের অভাবিত কথামালা; বাংলাদেশের পানি, পরিবেশ ও বর্জ্য।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।