Home ইতিহাস ও জীবনী জামিয়া ইসলামিয়া আজিজুল উলূম বাবুনগর মাদ্রাসার একশত বছর

জামিয়া ইসলামিয়া আজিজুল উলূম বাবুনগর মাদ্রাসার একশত বছর

।। মাওলানা আবদুর রহীম ইসলামাবাদী ।।

চট্টগ্রামের প্রসিদ্ধ ইসলামী আরবী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জামেয় ইসলামিয়া আজিজুল উলূম বাবুনগর মাদরাসা। বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার হাজার হাজার ছাত্র বাবুনগর মাদ্রাসায় শিক্ষা লাভ করেছেন ও করছেন।

১৯৫০ইং সনে বাবুনগর মাদ্রাসায় ‘দাওরায়ে হাদীস’ (টাইটেল হাদীস) ক্লাস খোলা হয়। এ পর্যন্ত এ মাদ্রাসা থেকে বহু আলেম টাইটেল (দাওরায়ে হাদীস) পাশ করে দেশে-বিদেশে ইসলামের বহুবিদ খেদমতে নিয়োজিত আছেন।

এ মাদ্রাসা থেকে উত্তীর্ণ বহু আলেম বিভিন্ন জেলায় অনেক মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন। ইসলামের প্রচার প্রসারে বাবুনগর মাদ্রাসার বিরাট অবদান রয়েছে।

বাবুনগর মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা মুহতামিম পীরে কামেল হযরত আলহাজ¦ মাওলানা মুহাম্মদ হারুন বাবুনগরী (রহ.)। তিনি হাদীয়ে যামান হযরত আলহাজ¦ মাওলানা মুফতি আজিজুর রহমান বাবুনগরী (রহ.)এর ছোট সাহেবজাদা।

১৯২৪ইং সনে মাওলানা হারুন বাবুনগরী (রহ.) নতুনভাবে বাবুনগর মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন এবং ইন্তেকালের পূর্ব পর্যন্ত এর মুহতামিম হিসেবে নিয়োজিত থাকেন।

হযরত মাওলানা সুফি আজিজুর রহমান (রহ.) বাংলাদেশের প্রাচীন ও বৃহত্তম ইসলামী শিক্ষাকেন্দ্র চট্টগ্রাম হাটহাজারী দারুল উলূম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসা ও নাজিরহাট জামেয়া আরাবিয়া নাছিরুল ইসলাম বড় মাদ্রাসার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। নাজিরহাট নাছিরুল ইসলাম বড় মাদ্রাসার মুহতামিম হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেন। ছুফী আজিজুর রহমান সাহেবের ৪ জন পুত্র সন্তানের সকলেই আলেম ও বুযুর্গ ছিলেন।

হযরতের প্রথম ছেলে মাওলানা আবদুল হাই (রহ.)। দি¦তীয় ছেলে হযরত মুফতি মাওলানা মুহাম্মদ আমীন সাহেব (রহ.)। তৃতীয় ছেলে হযরত মাওলানা মুহাম্মদ মূসা প্রকাশ বুযুর্গ সাহেব রহ.। আর চতুর্থ ছেলে হযরত মাওলানা মুহাম্মদ হারুন বাবুনগরী সাহেব (রহ.)।

আরও পড়তে পারেন-

হযরত মাওলানা আমীন সাহেব (রহ.) দারুল উলূম দেওবন্দ থেকে দাওরায়ে হাদীস পাশ করে বাবুনগর মাদ্রাসায় যোগদান করেন এবং প্রথম শায়খুল হাদীস হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর ইন্তেকালের পর তদীয় ছোট ভাই হযরত মাওলানা মুসা বুযুর্গ সাহেবও বাবুনগর মাদ্রাসায় বুখারী শরীফের দরস দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন হযরত মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী (দা.বা.)।

মুফতিয়ে আযম মাওলানা আবদুচ্ছালাম চাটগামী সাহেব (রহ.) এ লেখককে বলেছেন, মাওলানা আমীন সাহেবের ইন্তেকালের পর হযরত মাওলানা শাহ সুলতান আহমদ নানুপুরী (রহ.)ও বাবুনগর মাদ্রাসায় বুখারী শরীফের দরস দিয়েছেন।

পরবর্তী সময়ে শায়খুল ইসলাম হযরত সৈয়দ হোসাইন আহমেদ মাদানী (রহ.)এর খলীফা হযরত হাফেজ মাওলান ওবাইদুর রহমান ইমাম নগরী (রহ.) বাবুনগর মাদ্রাসার শায়খুল হাদীস নিযুক্ত হন এবং দীর্ঘ দিন দরস দেন।

পরবর্তী সময়ে উস্তাদুল আসাতিজহা আল্লামা ইসহাক গাজী সাহেব বাবুনগর মাদ্রাসায় যোগদান করলে তাকে প্রধান মুহাদ্দিস তথা শায়খুল হাদীস পদে বরণ করা হয়।

পরবর্তী সময়ে তিনি জামেয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসার শায়খুল হাদীস পদে যোগদান করলে মাদ্রাসার শিক্ষা পরিচালক আল্লামা মুহাম্মদ ইউনুছ (রহ.) বাবুনগর মাদ্রাসার শাইখুল হাদীস নিযুক্ত হন।

বাবুনগর মাদ্রাসায় বুখারী শরীফের আরো দরস দিয়েছেন ফকীহুন মিল্লাত মুফতি আবদুর রহমান (রহ.)। হযরত মাওলানা হাফেজ জুনায়েদ বাবুনগরী (রহ.)। বর্তমানে বুখারী শরীফের দরস দিচ্ছেন প্রবীণ শায়খুল হাদীস হযরত মাওলানা শফিউল আলম আযিমপুরী সাহেব ও শায়খুল হাদীস হযরত মাওলানা মুফতি মাহমুদ হাসান ভূজপুরী সাহেব।

হযরত মাওলানা ওবাইদুর রহমান সাহেব (রহ.) হযরত মাদানী (রহ.)এর নির্দেশে ভারতের সুরাট এলাকায় শিক্ষকতা শুরু করেন। সাথে সাথে আত্মশুদ্ধির কাজ চালিয়ে যান। হযরত মাদানী (রহ.)এর পরামর্শে তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ হেফজ করেন। অতঃপর ইহসান ও সুলুকের কাজ সমাপ্ত হবার পর তিনি শায়খুল ইসলাম কুতুবে আলম হযরত মাওলানা সৈয়দ হোসাইন আহমদ মাদানী (রহ.)এর পক্ষ থেকে খেলাফত লাভ করেন।

শিক্ষা জীবন সমাপনান্তে দেশে প্রত্যাবর্তন করার পর তিনি স্থানীয় বাবুনগর আজিজুল উলূম মাদ্রাসার শিক্ষকতা শুরু করেন।

১৯৫০ইং সনে বাবুনগর মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদীস খোলা হয়। প্রথম শায়খুল হাদীস নিযুক্ত হন হযরত মাওলানা মোহাম্মদ আমীন সাহেব (রহ.)। তার ইন্তেকালের পর মুফতি আবদুচ্ছালাম চাটগামী (রহ.)এর দেয়া তথ্যমতে হযরত মাওলানা শাহ ছোলতান আহমদ নানুপুরী (রহ.) বুখারী শরীফের দরস দেন। ১৯৬১ইং সনে তিনি জামেয়া ওবাইদিয়া নানুপুর-এর নতুন মুহতামিম নিযুক্ত হয়ে নানুপুর চলে আসলে হযরত মাওলানা হাফেজ ওবাইদুর রহমান সাহেব বাবুনগর মাদ্রাসার শায়খুল হাদীস নিযুক্ত হন এবং বুখারী শরীফের দরস দিতে থাকেন।

হযরত মাওলানা ওবাইদুর রহমান সাহেবের উস্তাদ ছিলেন হযরত মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক গাজী সাহেব (রহ.)। নাজিরহাট বড় মাদ্রাসায় গাজী সাহেব (রহ.) শিক্ষকতায় থাকাকালে হযরত মাওলানা মুফতি আবদুর রহমান সাহেব ও তার বড় ভাই মাওলানা ওবাইতুর রহমান মুহাদ্দেস সাহেব (রহ.) হযরত গাজী সাহবের (রহ.)এর ছাত্র ছিলেন। তাই গাজী সাহেব হুজুর বাবনুগর মাদ্রাসায় যোগদান করলে তিনি উস্তান গাজী সাহেব (রহ.)কে বুখারী শরীফ পড়াতে দিয়ে নিজে হাদীসের অন্য কিতাব পড়ান।

আগেরকার সময়ে এমনই ছিল নিয়ম, ভদ্রতা ও আদব।

আমি দেখেছি হযরত মাওলানা ওবাইদুর রহমান (রহ.) ও হযরত মাওলানা মুফতি আবদুর রহমান সাহেব (রহ.) আপন উস্তাদগণকে খুবই ভক্তি শ্রদ্ধা করতেন।

নাজিরহাট বড় মাদ্রাসার মুহতামিম হযরত মাওলানা নুর আহমদ সাহেব (রহ.) সদরে মুদাররিস হযরত মাওলানা আবদুল আজিজ সাহেব (রহ.), হযরত মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক কানাই মাদারী (রহ.), হযরত মাওলানা ইসহাক গাজী (রহ.), হযরত মাওলানা ছোলতান আহমদ নানুপুরী (রহ.), হযরত মাওলানা হাকিম ওবাইদুর রহমান (রহ.), মুফতিয়ে আযম হযরত মাওলানা মুফতি আহমাদুল হক (রহ.), হযরত মাওলানা কারী মুন্সী মিয়া সাহেব (রহ.), হযরত মাওলানা ফরিদ আহমদ চৌধুরী (রহ.) প্রমুখকে খুবই ভক্তি শ্রদ্ধা করতেন।

আমাদের সুয়াবিল নিবাসী হযরত কারী মুন্সি মিয়া সাহেব (রহ.)এর জন্য অনেক সময় আামাদের মাধ্যমে হাদিয়া পাঠাতেন। খোঁজ খবর নিতেন।

৬/৭ বছর আমি নাজিরহাট বড় মাদ্রাসায় অধ্যয়ন করেছি। মুফতি আবদুর রহমান সাহেব ও মুহাদ্দেস হযরত মাওলানা ওবাইদুর রহমান সাহেবের (রহ.) ঘনিষ্ঠ বন্ধু হযরত মাওলানা হাফেজ শামসুদ্দীন সাহেব ও হযরত মাওলনা ইয়ার মুহাম্মদ সাহেবের (রহ.) তত্ত্বাবধানে লেখাপড়া করেছি। প্রায় প্রতিদিনই হযরত মাওলানা ওবাইদুর রহমান সাহেব (রহ.) নাজিরহাট বাজারে আসতেন। নাজিরহাট বড় মাদ্রাসায় মাগরিবের নামাজ আদায় করতেন। তার আত্মীয় মৌলভী আবদুল হাই (রহ.)এর দোকানে বসতেন। বিশ্রাম করতেন। অধিকাংশ সময় আমি মাওলানা ওবাইদুর রহমান মুহাদ্দেস সাহেবের (রহ.) সাথে দেখা করতাম। দোয়া নিতাম।

লেখক: প্রখ্যাত সাংবাদিক, লেখক, ইতিহাস গবেষক, আলেমে-দ্বীন এবং মুহতামিম- তালিমুল ইসলাম বালিকা মাদ্রাসা, ভূজপুর, ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।