বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ (বেফাক) ও আল হাইআতুল উলইয়া লিল জামিআতিল কওমিয়া বাংলাদেশ-এর কেন্দ্রীয় পরীক্ষায় রাজধানী ঢাকার অন্যতম বিখ্যাত দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা’র মেধা তালিকায় উত্তীর্ণ ছাত্রদের মাঝে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান ও দোয়া মাহফিল গতকাল (১৭ ডিসেম্বর) বাদ মাগরীব জামিয়া প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শায়খুল হাদীস আল্লামা উবায়দুল্লাহ ফারুক বলেছেন, কওমী মাদরাসা দ্বীন রক্ষার ফ্যাক্টরি। আমাদের দেশে দ্বীন ইসলামের যতটুকু হেফাজত আছে সবটুকু এই কওমী মাদরাসার অবদান। স্কুল, কলেজ, ভার্সিটি মাধ্যমে দ্বীন ইসলামের হেফাজত হয় না। সেগুলো দুনিয়াবি শিক্ষা। দেড় হাজার বছর ইসলামকে হেফাজত করে আসছে কওমী মাদরাসা।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশ। মুসলমান শিক্ষার্থীদের প্রতি লক্ষ্য করে পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন করতে হবে। ডারউইনের বিবর্তনবাদ সম্পূর্ণ কুরআন-হাদিস বিরোধী ও নাস্তিক্য মতবাদ। পাঠ্যপুস্তক থেকে ডারউইনের বিতর্কিত বিবর্তনবাদ বাতিল করে পূর্বের মতো ইসলামী বিষয়ক পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন করতে হবে।
আল্লামা উবায়দুল্লাহ ফারুক বলেন, দ্বীনি শিক্ষার বিস্তার, ঈমান-আক্বিদার সুরক্ষায় এবং জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা প্রতিষ্ঠায় রাহবারে মিল্লাত আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী (রহ.)এর অক্লান্ত আত্মত্যাগ ও গৌরবময় ভূমিকার কথা স্মরণ করে বলেন, জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা মাদ্রাসার ছাত্রদের জাতীয় পর্যায়ে এই কৃতিত্ব অর্জনে তাঁকে গভীরভাবে মনে পড়ছে। আল্লাহর ইচ্ছায় তিনি দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন। কিন্তু তাঁর রেখে যাওয়া মিশন ও ভিশনকে এগিয়ে নিতে আমাদের সকলকে কাজ করে যেতে হবে।
আরও পড়তে পারেন-
- কাবলাল জুমা: কিছু নিবেদন
- দারিদ্র বিমোচনে এনজিওদের থেকে কওমি মাদ্রাসার সফলতা বেশি!
- হজ্ব-ওমরায় গেলে আমরা সেখান থেকে কী নিয়ে ফিরব?
- সমাজে পিতা-মাতারা অবহেলিত কেন
- সংঘাতবিক্ষুব্ধ সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ইসলামের সুমহান আদর্শ
আল্লামা উবায়দুল্লাহ ফারুক পুরস্কারপ্রাপ্ত ছাত্রদেরকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আজ আমি আপনাদের এই গৌরবদীপ্ত অর্জনে অত্যন্ত সন্তুষ্ট ও মহান আল্লাহর দরবারে শোকরিয়া আদায় করছি। জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শিক্ষার্থীদের সফলতার এই ধারাবাহিকতায় গৌরববোধ করছে। দেশের অনেক বড় বড় পুরনো প্রতিষ্ঠানের ছাত্ররাও মেধা তালিকায় স্থান করতে পারেনি। কিন্তু আপনারা উস্তাদদের নির্দেশনা মেনে গভীর অধ্যাবসায়ে তালিমে মশগুল থাকায় এই অর্জন সম্ভব হয়েছে। আমি এজন্য প্রতিষ্ঠানের মেধাবী ও উদ্যোমি শিক্ষকবৃন্দদেরকেও ধন্যবাদ জানাতে চাই।
জামিয়া মাদানিয়া বারিধারার ভারপ্রাপ্ত মুহতামিম মাওলানা মাসউদ আহমাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন শিক্ষাসচিব আল্লামা মুফতি মকবুল হোসাইন কাসেমী। তিনি বিজয়ী ছাত্রদেরকে অর্জিত ইলমের চর্চা জারি রেখে উম্মাহর মাঝে ইলম ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আপনারা হলেন ওয়ারাসাতুল আম্বিয়া বা নবীগণের ওয়ারিশ। আপনাদের স্কন্ধে দাওয়াত ও তাবলীদের দায়িত্ব অর্পিত। নববী আদর্শে উম্মাহকে গড়ে তোলা ও হকের প্রচার করা আপনাদের আবশ্যিক দায়িত্ব। এটা কখনো ভুলে যাবেন না।
অনুষ্ঠানে রাহবারে মিল্লাত আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমীর ভূমিকা, অবদান ও জীবনীর উপর বক্তব্য রাখেন জামিয়া মাদানিয়া বারিধারার মুহাদ্দিস মুফতি জাকির হোসাইন কাসেমী ও সাহেবজাদা মুফতি জাবের কাসেমী। এ সময় স্টেজে জামিয়ার অন্যান্য মুহাদ্দিস, মুফতি ও শিক্ষকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে জামিয়া মাদানিয়া বারিধারার ছাত্র হাইআতুল উলইয়ার পরীক্ষায় তাকমিলে সারাদেশে ৫ম শীর্ষস্থান অর্জনকারীসহ মেধা তালিকায় স্থানঅর্জনকারী তিনজনকে বিশেষভাবে পুরুস্কৃত করা হয়।
এছাড়া বেফাকের মেধা তালিকায় উত্তীর্ণ হওয়া ফযীলত, সানাবিয়্যা, মুতাওয়াসসিতাহ, ইবতিদাইয়্যা ও হিফজুল কুরআন মারহালার সর্বমোট ৬৯ জনকে পুরুস্কৃত করা হয়। তন্মধ্যে মুতাওয়াসসিতায়- ১ম, ৪র্থ, ৭ম, ইবতিদাইয়্যায়- ৫ম ও ৬ষ্ঠ এবং হিফজুল কুরআনে ১ম স্থান অর্জন করে।
গতকালকের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানি জামিয়া মাদানিয়া বারিধারার গত ২০২২ইং সালের অভ্যন্তরীণ বার্ষিক পরীক্ষায় মক্তব থেকে শুরু করে ইফতা পর্যন্ত ১ম, ২য় ও ৩য় স্থান অর্জনকারী ৭৬ জনকেও পৃথকভাবে পুরস্কৃত করা হয়।
একই অনুষ্ঠানে জামিয়া মাদানিয়া বারিধারার বার্ষিক বক্তৃতা প্রতিযোগিতায় ১ম, ২য় ও ৩য় স্থান অর্জনকারীদেরকে পুরস্কৃত করা হয়।
সব মিলিয়ে গতকাল বিভিন্ন বিভাগে কৃতিত্ব অর্জনকারী মোট ১৮৮ জন শিক্ষার্থীকে প্রায় ৫ লক্ষ টাকা মূল্যমানের পুরস্কার দেওয়া হয়।
রাত ৮টায় শায়খুল হাদীস আল্লামা উবায়দুল্লাহ ফারুক-এর পরিচালনায় আখেরী মুনাজাতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের কার্যক্রম শেষ হয়।
উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ