Home ইসলাম ইসলামে বাণিজ্যিক চুক্তির ক্ষেত্রে যেসব বিষয় লক্ষণীয়

ইসলামে বাণিজ্যিক চুক্তির ক্ষেত্রে যেসব বিষয় লক্ষণীয়

জাওয়াদ তাহের   

ব্যবসা-বাণিজ্য জীবিকা নির্বাহের অন্যতম একটি মাধ্যম। জীবিকা নির্বাহের জন্য আমাদের পারস্পরিক সহযোগিতা নিতে হয়। ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-কারখানা আরো যত উপার্জনের মাধ্যম রয়েছে— এগুলোতে আমরা একসঙ্গে অনেকেই চুক্তিবদ্ধ হয়ে কাজ করি। কিন্তু আমরা পারস্পরিক চুক্তির ক্ষেত্রে অনেক ছোট ছোট ভুল করে থাকি।

যার কারণে পরবর্তী সময়ে নিজেকে পস্তাতে হয়। সঠিক নিয়মে যদি পরস্পরে চুক্তিবদ্ধ হই, তাহলে তা সবার জন্য মঙ্গলজনক। ইসলামী শরিয়ত ব্যবসা-বাণিজ্য করার জন্য উৎসাহ প্রদান করেছে। তবে এই ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ইসলামী শরিয়ত কর্তৃক যেসব বিধি-বিধান আছে তা মেনে যদি করা হয়, তাহলে তাকে বলা হবে সফল ব্যবসায়ী। নিম্নে আমরা সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করব—

সঠিক নিয়মে চুক্তি করা

যাদের সঙ্গে চুক্তি করব তারা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া (তবে যদি সমঝদার হয়, আর জানা যায় যে অভিভাবকের পক্ষ থেকে অনুমতি রয়েছে সে ক্ষেত্রে ভিন্ন তথা), পাগল না হওয়া, যাকে পার্টনার বানাব তার সমুদয় সম্পদ বৈধ হওয়া, বেশির ভাগ সম্পদ হারাম হলে তার সঙ্গে ব্যবসা না করা। সুদভিত্তিক কোনো চুক্তি না করা ইত্যাদি জরম্নরি। অবৈধ কোনো জিনিসের ব্যবসা না করা। শরিয়ত পরিপন্থী  কোনোরূপ শর্ত না কারা।   আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মুমিনরা! তোমরা পরস্পরে একে অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না, তবে পারস্পরিক সন্তুষ্টিক্রমে কোনো ব্যবসা করা হলে (তা জায়েজ)। এবং তোমরা নিজেরা নিজেদের হত্যা করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু। ’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ২৯)

আরও পড়তে পারেন-

ইনসাফভিত্তিক চুক্তি

চুক্তির সময় ইনসাফের প্রতি লক্ষ রাখতে হবে। এমন কোনো চুক্তি করা যাবে না যার দ্বারা অন্যের ক্ষতি হয়। যেমন—

এক. খাদ্য মজুদ করে সিন্ডিকেট করে ব্যবসা করা। খাদ্য মজুদ করে কোনো পণ্য কিনে কৃত্রিম খাদ্যসংকট তৈরি করা। আর যখন মূল্য বৃদ্ধি হবে তখন তা বাজারজাত করা। এটা করা সম্পূর্ণ নিষেধ। মামার ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, পাপাচারী লোক ছাড়া কেউ গুদামজাত করে না। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৪০১৫)

অন্য বর্ণনায় এসেছে, ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি মুসলমানদের বিরুদ্ধে (বা সমাজে) খাদ্যদ্রব্য মজুদদারি করে আল্লাহ তাকে কুষ্ঠরোগ ও দারিদ্র্যের কষাঘাতে শাস্তি দেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২১৫৫)

তবে কেউ যদি এমনভাবে মজুদ করে যার কারণে কোনো সংকট তৈরি হয় না, তার কোনো অসৎ উদ্দেশ্য না থাকে, তাহলে সে ক্ষেত্রে সমস্যা নেই।

দুই. বেচাকেনায় কোনো ধরনের ধোঁকা না দেওয়া, ওজনে গরমিল না করা। কথা কাজে মিল রাখা। বর্তমান সময়ে মার্কেট পাওয়ার জন্য অনেকেই চোখ ধাঁধানো নান্দনিক বিজ্ঞাপন দিয়ে মানুষকে সেদিকে আকৃষ্ট করে। অথচ বাস্তবে এর সঙ্গে অনেক তফাত আছে। এসব মিথ্যা প্রচারণা থেকে বিরত থাক। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, নবী (সা.) যখন মদিনায় আসেন তখন লোকেরা মাপে কারচুপি করত। তখন মহান আল্লাহ এই আয়াত নাজিল করেন (অনুবাদ), মন্দ পরিণাম তাদের জন্য যারা মাপে কম দেয়, (সুরা : মুতাফফিফিন, আয়াত : ১)

এর পর থেকে তারা ঠিকভাবে ওজন করে। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২২২৩)

অন্য এক হাদিসে এসেছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) খাদ্যশস্যের একটি স্তূপের পাশ দিয়ে অতিক্রম করলেন। তিনি স্তূপের ভেতরে হাত ঢুকিয়ে দিলেন, ফলে হাতের আঙুলগুলো ভিজে গেল। তিনি বলেন, হে স্তূপের মালিক! এ কী ব্যাপার? লোকটি বলল, হে আল্লাহর রাসুল! এতে বৃষ্টির পানি লেগেছে। তিনি বললেন, সেগুলো তুমি স্তূপের ওপরে রাখলে না কেন? তাহলে লোকেরা দেখে নিতে পারত। জেনে রাখ, যে ব্যক্তি ধোঁকাবাজি করে, আমার সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৮৫)

তিন. তেমনি তৃতীয় কোনো ব্যক্তি ক্রেতা সেজে কোনো বস্তুর দাম বাড়িয়ে দেওয়া, যাতে প্রকৃত ক্রেতা থেকে বেশি দাম নেওয়া যায়। আবু হুরাইরা (রা.) বলেন, প্রতারণামূলক ক্রয়-বিক্রয় করতে এবং কাঁকর নিক্ষেপে ক্রয়-বিক্রয় নির্ধারিত করতে রাসুলুল্লাহ (সা.) নিষেধ করেছেন। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ১২৩০)

অপরের প্রতি ইহসান

বেচাকেনার সময় অপরের প্রতি দয়া ও ইসহানের মনমানসিকতা থাকা। অসহায় গরিব মানুষকে বাকিতে পণ্য দেওয়া। মূল্য পরিশোধে যদি তারা কিছু সময় চায় তাহলে তা দেওয়া। লাভের পরিমাণ কমিয়ে মানুষকে কিছু ছাড় দেওয়া—এগুলো সব ইহসানের অন্তর্ভুক্ত। জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, আল্লাহ এমন ব্যক্তির প্রতি রহমত বর্ষণ করেন যে নম্রতার সঙ্গে ক্রয়-বিক্রয় করে ও পাওনা ফিরিয়ে দেয়। (সহিহ বুুখারি, হাদিস : ২০৭৬)

আখিরাত থেকে উদাসীন না হওয়া

ব্যবসা-বাণিজ্য করতে গিয়ে আখিরাত থেকে যেন উদাসীন না হয়ে যায়, সে ক্ষেত্রে পরিপূর্ণ লক্ষ রাখা। এ জন্য ব্যবসার জন্য উত্তম নিয়ত করা যে এই ব্যবসার মাধ্যমে আমি পরিবারের ভরণ-পোষণ সরবরাহ করব। এর মাধ্যমে মানুষের কল্যাণ সাধন করব। এ ব্যবসা দ্বারা আমার উদ্দেশ্য হবে মানবসেবা করা। কারণ মুসলমানের প্রয়োজনীয় জিনিস সরবরাহ করাও একটি ইবাদত। এ জন্য ব্যবসা-বাণিজ্যে যত ধরনের গুনাহের কাজ রয়েছে সেগুলো থেকে নিজেকে বিরত রাখা। এই ব্যবসা-বাণিজ্য যেন আমাকে দুনিয়ার প্রতি অত্যধিক আসক্ত না বানিয়ে ফেলে সে ক্ষেত্রে সজাগ দৃষ্টি রাখা। নিজেকে পূর্ণরূপে সন্দেহ জিনিস থেকে বাঁচিয়ে রাখা। সর্বোপরি এমনভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য করা, যেন কিয়ামতের দিন এই ব্যবসার কারণে আমি সৎ বান্দাদের সঙ্গে আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে পারি। কারণ হাদিসে এসেছে, আবু সাইদ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত ব্যবসায়ীরা (আখিরাতে) নবী, সিদ্দিক (সত্যবাদীরা) এবং শহীদদের সঙ্গে থাকবে।   (জামে তিরমিজি, হাদিস : ১২০৯)

উম্মাহ২৪ডটকম: আইএএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।