Home বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ইন্টারনেটের দুনিয়া থেকে নিজেকে মুছে ফেলবেন কীভাবে

ইন্টারনেটের দুনিয়া থেকে নিজেকে মুছে ফেলবেন কীভাবে

ইন্টারনেট দুনিয়ায় ব্যক্তিগত অনেক তথ্য আমরা জেনে বা নিজেদের অজান্তে প্রকাশ করি। ইন্টারনেটে থাকা তথ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে কখনো মুছে যায় না। বর্তমান সময়ে মানুষের মধ্যে অনলাইনে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা নিয়ে সচেতনতা বাড়ছে। তাই অনেকে ইন্টারনেটে নিজেদের উপস্থিতি কমাতে চাচ্ছেন অথবা ইন্টারনেট থেকে একেবারে বিদায় নিতে চাচ্ছেন।

কিন্তু আপনি ইন্টারনেট থেকে দূরে থাকতে চাইলেও ইন্টারনেট আপনাকে ভুলবে না। কোনো কিছু একবার অনলাইনে প্রকাশিত হলে তার ওপর ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি আর থাকে না। ইন্টারনেট থেকে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে মুছে ফেলার কোনো উপায় নেই, তবে চাইলে আপনি নিজের সম্পর্কে ইন্টারনেটে প্রকাশিত তথ্যের পরিমাণ সীমিত করতে পারবেন।

ক্ষেত্রবিশেষে ইন্টারনেট দুনিয়ায় থাকা ব্যক্তিগত তথ্য আপনার বিরুদ্ধে ভয়ংকর অস্ত্র হয়ে উঠতে পারে। রাজনৈতিক নেতারা বিষয়টির প্রভাব সবচেয়ে বেশি টের পান। এজন্য নির্বাচনে লড়ার আগে বিশ্বের অনেক দেশেই প্রার্থীরা ইন্টারনেট দুনিয়ায় বিচরণ, নিজেদের ডিজিটাল কনটেন্ট ইত্যাদি সতর্কতার সঙ্গে আগেভাগে পর্যালোচনা করে নেন।

দিন যত যাচ্ছে, মানুষের মধ্যে অনলাইন দুনিয়া থেকে চিরতরে বিদায় নেওয়ার প্রবণতাও বাড়ছে। সচেতন মানুষেরা এখন চান, তাদের নাম লিখে ইন্টারনেটে অনুসন্ধানের পর যেন কোনো তথ্যই পাওয়া না যায়। কিন্তু ইন্টারনেটে কারও সম্পর্কে একেবারে কোনো তথ্য না থাকাও কি খুব একটা ভালো দিক?

‘আজকাল ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট না থাকাটা কাউন্টারপ্রোডাক্টিভ… এর ফলে কিছুটা অবিশ্বাসের সূচনাও হতে পারে,’ স্প্যানিশ গণমাধ্যম এল পাইসকে বলেন ইন্টারনেটে ব্যবহারকারীর গোপনীয়তা রক্ষা নিয়ে কাজ করা প্ল্যাটফর্ম ইউফরগেট ডটমি-এর সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড্যানিয়েল লোপেজ।

এ বিশেষজ্ঞের মতে ইন্টারনেটে আমাদের ডিজিটাল সত্তাটিকে এমনভাবে রাখতে হবে যেন তা বাস্তব জীবনে ব্যক্তির প্রোফাইলের সঙ্গে মিলে যায়। প্রশ্ন হলো, ইন্টারনেট থেকে পুরোপুরি অদৃশ্য হওয়া সম্ভব কি না? ‘আমি বলব, না। ইন্টারনেটে এমন সব পরিবেশ রয়েছে যেগুলো নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব। এরকম একটি উদাহরণ হলো ডার্ক ওয়েব,’ ব্যাখ্যা করেন ইন্টারনেট থেকে ব্যক্তিগত তথ্য মুছে ফেলার জন্য তৈরি করা কোম্পানি রিমোভ গ্রুপ-এর প্রতিষ্ঠাতা আলেহান্দ্রো অ্যাবাস্কাল।

দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট-এর এক প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে, কারও পক্ষেই ইন্টারনেট থেকে নিজেকে পুরোপুরি মুছে ফেলা সম্ভব নয়। অনেক কোম্পানি আছে যেগুলো ইন্টারনেট থেকে মানুষের তথ্য সংগ্রহ করে সেগুলোকে অন্য কোম্পানির কাছে বিক্রি করে। এদেরকে ডেটা-ব্রোকার বলা হয়। ডেটা-ব্রোকারদের তথ্যভান্ডার, কোনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ভুলে যাওয়া অ্যাকাউন্ট অথবা ফেইসবুকে অন্য কারও ছবির ব্যাকগ্রাউন্ডে আপনি — ইন্টারনেটের কোনো না কোনো অংশে আপনার তথ্য থেকে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

আরও পড়তে পারেন-

তবে ব্যক্তি চেষ্টা করলে নিজের সম্পর্কিত বিশাল পরিমাণ তথ্য ইন্টারনেট থেকে কিছুটা হলেও মুছে ফেলতে পারেন। কিন্তু এর জন্য বেশ কাঠখড় পোড়াতে হতে পারে।

গুগল দিয়ে শুরু করুন
ওয়েবসাইটসমূহের বিশ্বের সবচেয়ে বড় ইনডেক্স হলো গুগল সার্চ ইঞ্জিন। গুগল সার্চ ইঞ্জিন কেবল কোন কোন ওয়েবসাইটে আপনার তথ্য আছে, সেগুলোর নাম আপনার সামনে এনে দেবে। তাই এ কথা মাথায় রাখা দরকার যে, গুগলের নিজস্ব সার্চ রেজাল্ট থেকে নিজেকে মুছে ফেললেও মূল ওয়েবসাইটে আপনার তথ্য থেকে যেতে পারে।

গুগল থেকে নিজেকে মোছার প্রথম ধাপ হলো নিজের নাম লিখে গুগলে অনুসন্ধান করা। এরপর কোন কোন ওয়েবসাইটে আপনার তথ্য রয়েছে সেগুলোর একটি তালিকা তৈরি করুন। চাইলে নিজের নাম ও ফোন নাম্বার লিখেও গুগলে অনুসন্ধান করতে পারেন।

দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, গুগল সম্প্রতি নতুন একটি ফর্ম তৈরি করেছে যেটি ব্যবহার করে আপনি নিজের সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কিছু তথ্য, সার্চ রেজাল্ট, ভুল ছবি, ভুল তথ্য, আপনার সম্মতি ছাড়া প্রকাশিত ডেটা ইত্যাদি মুছে ফেলার অনুরোধ করতে পারবেন।

নিষ্ক্রিয় অ্যাকাউন্ট মুছে ফেলা
ইন্টারনেট থেকে নিজেকে মুছে ফেলতে হলে আপনাকে অবশ্যই নিষ্ক্রিয় অ্যাকাউন্টগুলো মুছে ফেলতে হবে। তবে এক্ষেত্রে আপনাকে মনে রাখতে হবে কোন কোন সার্ভিসে আপনার অ্যাকাউন্টগুলো নিষ্ক্রিয় অবস্থায় পড়ে আছে। যদি তা মনে না থাকে, তাহলে গুগলে অনুসন্ধান করে এ ধরনের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট খুঁজতে পারেন।

তবে দুঃসংবাদ হলো, এভাবে ইন্টারনেট থেকে তথ্য মুছে ফেলার কাজটা বেশ কঠিন। আবার কিছু কিছু প্ল্যাটফর্মে অ্যাকাউন্ট খোলার পর সেগুলো মুছে ফেলাটা প্রায় অসম্ভব একটি কাজ।

জাস্টডিলিট ডটমি নামক একটি ওয়েবপেজ কোনো ওয়েবসাইট থেকে কীভাবে অ্যাকাউন্ট মুছে ফেলা যায়, সে সম্পর্কে বিভিন্ন নির্দেশনা দেয়। এছাড়া কোন ওয়েবসাইট থেকে অ্যাকাউন্ট বা ব্যক্তিগত তথ্য মুছে ফেলা কতটা সহজ বা কঠিন, তাও জানা যায় জাস্টডিলিট ডটমি থেকে। এ ওয়েবসাইটে গিয়ে আপনার অভীষ্ট অনলাইন প্ল্যাটফর্মের ওপর ক্লিক করে আপনি সরাসরি ওই প্ল্যাটফর্মের অ্যাকাউন্ট মুছে ফেলার ওয়েবপেজটিতে চলে যেতে পারবেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে বিদায়
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের একজন সক্রিয় ব্যবহারকারী সম্পর্কে অনেক তথ্যই জানা সম্ভব স্রেফ তার কিছু পোস্টে চোখ বুলিয়ে। কেউ যদি অনলাইন থেকে নিজের তথ্য মুছে ফেলার চিন্তা করেন, তাহলে তাকে অবশ্যই সব ধরনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে সম্পূর্ণভাবে বিদায় নিতে হবে — অর্থাৎ অ্যাকাউন্টগুলো ডিলিট করে ফেলতে হবে।

সমস্যা কেবল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমাদের কতটুকু তথ্য প্রকাশিত আছে তা নয়। বরং বড় সমস্যাটি হচ্ছে এ তথ্যসমূহ কখনোই মুছে ফেলা যায় না। মানে, আপনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যাকাউন্ট মুছে ফেললেও আপনার সম্পর্কে অনেক তথ্য এসব যোগাযোগমাধ্যমের তথ্যভান্ডারে থেকে যাবে। ‘আমরা মৃত্যুর পরও আমাদের স্মৃতির উপস্থিতি বজায় থাকবে,’ মন্তব্য করেছেন ড্যানিয়েল লোপেজ। তাই এসব মাধ্যমে যেসব অ্যাকাউন্ট আমাদের প্রকৃতরূপকে উপস্থাপন করে না, সেগুলো সরিয়ে ফেলা বা নিষ্ক্রিয় করে রাখাই উত্তম।

তথ্য মোছার অনুরোধ
আপনি যখন ইন্টারনেটে কোনো সেবার জন্য সাইন-আপ করেন, তখন তাৎক্ষণিকভাবেই সেসব সেবা উপভোগ করতে পারেন। কিন্তু যখনই আপনি এ ধরনের সেবা থেকে আনসাবস্ক্রাইব করবেন, তখন কিন্তু কর্তৃপক্ষ আপনাকে সঙ্গে সঙ্গেই তাদের তথ্যভান্ডার থেকে মুছে ফেলবে না।

এ বিষয়টা অবশ্য সেবার ওপর নির্ভর করে। কোনো কোনো প্ল্যাটফর্মে তাৎক্ষণিকভাবে নিজের তথ্য মুছে ফেলার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এর উত্তর হলো না। অনেক অনলাইন সেবা থেকে চিরতরে মুক্তি মেলার কাজটা অত্যাচারের মতো মনে হতে পারে আপনার কাছে।

কিন্তু যতই কঠিন হোক, আপনাকে একাধিক ধাপ পেরোতে হবে নিজের তথ্য মোছার জন্য। অনেকক্ষেত্রে চাইলে আপনি কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানাতে পারবেন আপনার তথ্য মুছে ফেলার জন্য। সাধারণত গ্রাহকের তথ্য মোছার অনুরোধ সামলানোর জন্য সেবাদাতা কোম্পানিগুলো ৩০ দিন সময় নেয়। আলেহান্দ্রো অ্যাবাস্কাল জানান, বড় কোম্পানি হলে এ সময় আরও ১৫ দিন বেশি।

এক্ষেত্রে যদি সেবাদাতা কোম্পানি আপনার অনুরোধে সাড়া না দেয়ে, তাহলে অ্যাবাস্কালের মতে পরের ধাপ হলো, বিভিন্ন সার্চ ইঞ্জিন থেকে আপনার তথ্য মোছার জন্য ওসব সার্চ ইঞ্জিনকে অনুরোধ করা। ‘তবে কেবল আপনার নাম বাদ দেওয়ার বাধ্যবাধকতা আছে সার্চ ইঞ্জিনসমূহের,’ অ্যাবাস্কাল বলেন। ছবি, ভিডিও ও অন্যান্য তথ্য তারপরও আপনার অ্যাকাউন্ট থাকা প্ল্যাটফর্মে থেকে যাবে যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা নিজে থেকে সেগুলো মোছে।

অনলাইনে নিজের সম্পর্কে কম তথ্য দিন
অনলাইনে নিজেকে কম প্রকাশ করার সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হলো অনলাইন দুনিয়ায় নিজের সম্পর্কে বেশি তথ্য না দেওয়া। আপনার ব্যবহৃত অ্যাপ্লিকেশন, ডিভাইস বা অন্যান্য প্ল্যাটফর্মগুলোতে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা বজায় রাখার বিভিন্ন অপশন থাকে। সেগুলো খূঁজে বের করে সেখান থেকে সবচেয়ে শক্তিশালী প্রাইভেসি সেটিংটি চালু করুন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কী শেয়ার করছেন সে বিষয়ে খেয়াল রাখতেও পরামর্শ দিয়েছে দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট। আপনার একান্ত ব্যক্তিগত তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে প্রকাশ না করাই শ্রেয়। আর এসব মাধ্যমে যখন পোস্ট করবেন, তখন গোপনীয়তার সেটিং বড় পরিসর বা সবার জন্য উন্মুক্ত করে না রাখার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।

যদি অনলাইন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান আপনার তথ্য মোছার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে, তাহলে আপনি চাইলে তাদের ওপর মৃদু ‘প্রতিশোধ’ নিতে পারেন। নিজের সম্পর্কে ভুল তথ্য দিয়ে ইন্টারনেটে নিজেকে অপ্রাসঙ্গিক করে তোলার এ প্রক্রিয়াটিকে ‘ইনফোসুইসাইড’ বলে।

এ পদ্ধতিতে ব্যবহারকারী চাইলে নিজের নামে কোনো ওয়েবপেজ তৈরি করে সেটিকে নিরপেক্ষ তথ্য দিয়ে পূর্ণ করতে পারেন। অথবা বিভিন্ন ওয়েবসাইটে নিজের নামও বদলে দিতে পারেন ব্যবহারকারী। আবার অনেক সময় ব্যবহারকারী নিজের সম্পর্কে ভুল তথ্য দিয়ে বিজ্ঞাপনদাতাদের কাছে নিজস্ব মেটাডেটার মূল্যমান নষ্ট করতে পারেন।

সূত্র- টিবিএস।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।