Home ইসলাম হাদিসের বর্ণনায় নবীজি (সা.)-এর পূর্ণাঙ্গ হজ

হাদিসের বর্ণনায় নবীজি (সা.)-এর পূর্ণাঙ্গ হজ

জাফর ইবনু মুহাম্মাদ (রহ.) বলেন, একদা আমরা জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রা.)-এর নিকট যাই। আমরা তার কাছে এলে তিনি (অন্ধ হওয়ার কারণে) আগন্তুকদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন এবং একপর্যায়ে আমার কাছাকাছি এলে আমি বললাম, আমি মুহাম্মাদ ইবনু আলী ইবনু হুসাইন ইবনু আলী (রা.)। আমার কথা শুনে তিনি আমার মাথার দিকে হাত বাড়ান, আমার জামার ওপরের ও নিচের বোতাম খুলে তার হাতের তালু আমার বুকের ওপর রাখলেন। তখন আমি ছিলাম যুবক।

তিনি বলেন, মারহাবা! মোবারক হোক তোমার আগমন, স্বাগতম হে ভ্রাতুষ্পুত্র! যা ইচ্ছা জিজ্ঞাসা করতে পারো। এরপর আমি জিজ্ঞাসা করলাম। তখন তিনি ছিলেন অন্ধ। সালাতের সময় উপস্থিত হলে তিনি কাপড় পেঁচিয়ে নিজের জায়নামাজের ওপর সালাতে দাঁড়ালেন।

কিন্তু তাঁর কাপড় ছোট হওয়ায় তিনি যখনই তা কাঁধের ওপর রাখছিলেন তখনই এর দুই পাশ তাঁর দিকে ফিরে আসছিল। তিনি আমাদের নিয়ে সালাত আদায় করলেন, অথচ তাঁর (বড়) চাদরটি আলনার ওপর রক্ষিত ছিল। আমি বললাম, আমাকে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর হজ সম্পর্কে বলুন। তিনি হাত দিয়ে ইশারা করে নয় সংখ্যাটির কথা বললেন, অতঃপর বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) নয় বছর মদিনায় ছিলেন, এ সময় একবারও হজ করেননি।

অতঃপর দশম বছর মানুষের মধ্যে ঘোষণা দিলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) হজ করবেন। ফলে অসংখ্য লোক মদিনায় এলো এবং সবাই চাইল যে তারা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর অনুসরণ করবে এবং তিনি যেসব কাজ করেন তারাও তাই করবে। অতঃপর রাসুল (সা.) রওনা হলে আমরাও তাঁর সঙ্গে রওনা হই। ‘জুল-হুলাইফা’ পর্যন্ত পৌঁছলে আসমা বিনতে উমাইস (রা.) মুহাম্মাদ ইবনু আবু বাকরকে প্রসব করেন। কাজেই তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে লোক মারফত জানতে চাইলেন, এখন আমার কী করণীয়? তিনি বলেন, তুমি গোসল করে (লজ্জাস্থানে) কাপড় বেঁধে ইহরাম বেঁধে নাও।

এরপর রাসুলুল্লাহ (সা.) মসজিদে সালাত আদায় করেন। অতঃপর উষ্ট্রী কাসওয়ার ওপর চড়েন। উষ্ট্রীটি যখন আল-বায়দা উপত্যকায় দাঁড়াল তখন জাবির (রা.) বলেন, তাঁর সম্মুখে আমার চোখের দৃষ্টিসীমা পর্যন্ত দেখতে পেলাম শুধু আরোহী ও পদাতিক জনসমুদ্র। তাঁর ডানে, বামে ও পেছনে সর্বত্রই একই অবস্থা। এ সময় রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের মধ্যে ছিলেন এবং তখন তাঁর ওপর আহকামসংবলিত কোরআনের আয়াত নাজিল হচ্ছিল। তিনিই এর ব্যাখ্যা জানতেন। তিনি যা কিছু করতেন আমরাও অনুরূপ করতাম। তারপর রাসুলুল্লাহ (সা.) মহান আল্লাহর একত্ববাদের ঘোষণা দিয়ে ইহরাম বেঁধে উচ্চ স্বরে পড়লেন : ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক। লা শারিকা লাকা লাব্বাইক। ইন্নাল হামদা ওয়ান নিমাতা লাকা ওয়াল মুলক লা শারিকা লাকা।’ তিনি যেভাবে ইহরাম বেঁধে তালবিয়া পড়ছিলেন মানুষও সেভাবে ইহরাম বেঁধে তালবিয়া পড়ছিল। তাদের কোনো কাজকে রাসুলুল্লাহ (সা.) অস্বীকৃতি দেননি। রাসুলুল্লাহ (সা.) তালবিয়া পাঠ অব্যাহত রাখলেন।

জাবির (রা.) বলেন, আমরা শুধু হজের নিয়ত করেছিলাম। ওমরাহ সম্পর্কে আমরা জানতাম না। পরে আমরা তাঁর সঙ্গে বায়তুল্লায় পৌঁছলে তিনি রুকন অর্থাৎ হাজরে আসওয়াদে চুমু খেলেন এবং তিনবার রমল এবং চারবার স্বাভাবিক গতিতে হেঁটে (তাওয়াফ) সম্পন্ন করলেন। অতঃপর মাকামে ইবরাহিমের দিকে অগ্রসর হয়ে পড়লেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং ইবরাহিমের দাঁড়ানোর স্থানকে তোমরা সালাতের স্থানরূপে নির্ধারণ করো।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১২৫) তিনি মাকামে ইবরাহিম ও বায়তুল্লাহকে সামনে রাখলেন।

জাফর ইবনু মুহাম্মাদ বলেন, আমার পিতা বলেছেন, ইবনু নুফাইল ও উসমান বলেছেন, আমার মনে হয়, এ কথাটি নবী (সা.) বলেছেন। সুলাইমান বলেন, আমার ধারণা, জাবির বলেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) দুই রাকাত সালাত ‘কুল হুআল্লাহু আহাদ’ এবং ‘কুল ইয়া আইয়্যুহাল কাফিরুন’ দিয়ে পড়েছেন।

আবার তিনি বায়তুল্লাহর নিকট গিয়ে রুকনে (হাজরে আসওয়াদ) চুমু খেলেন। অতঃপর (বায়তুল্লাহর) দরজা দিয়ে বেরিয়ে সাফা পাহাড়ের দিকে গেলেন। তিনি সাফার কাছে গিয়ে পাঠ করলেন : ‘নিশ্চয়ই সাফা ও মারওয়া আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভুক্ত’ (সূরাহ আল-বাকারা, আয়াত : ১৫৯)

সুতরাং আমরা সেখান থেকে সাঈ শুরু করব আল্লাহ যেখান থেকে শুরু করেছেন (অর্থাৎ প্রথমে সাফা থেকে এবং পরে মারওয়া থেকে)। এ বলে তিনি সাফা পাহাড়ের চূড়ায় উঠলেন। সেখান থেকে বায়তুল্লাহ দেখে তাকবির বললেন এবং তাঁর তাওহিদের ঘোষণা দিয়ে বলেন, ‘তিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তিনি একক, তার কোনো শরিক নেই, মালিকানা ও সার্বভৌমত্ব তাঁর। তিনিই জীবন-মৃত্যু দানকারী। তিনিই সকল প্রশংসার প্রকৃত হকদার এবং তিনি সব কিছু করতে সক্ষম ও ক্ষমতাবান। তিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। তিনি একাই তাঁর ওয়াদা পূর্ণ করে দেখিয়েছেন, তাঁর বান্দাকে সাহায্য করেছেন এবং একাই সব (বিদ্রোহী) বাহিনীকে বিতাড়িত ও পরাভূত করেছেন।’

রাসুল (সা.) এভাবে তিনবার দোয়া করলেন। অতঃপর সেখান থেকে নেমে মারওয়ায় গেলেন, তাঁর দুই পা নিম্নভূমি স্পর্শ করল। তিনি সমতল ভূমিতে রমল করলেন। সমতল ভূমি অতিক্রম করে মারওয়া পাহাড়ের কাছে এসে স্বাভাবিক গতিতে হাঁটলেন। তারপর মারওয়া পাহাড়ে উঠে তেমন করলেন, যেমন সাফা পাহাড়ে করেছিলেন। পরে মারওয়ার সর্বশেষ তাওয়াফ সম্পন্ন করে বললেন, আমি যা পরে জেনেছি তা যদি আগে জানতাম তাহলে কোরবানির পশু সঙ্গে নিয়ে আসতাম না এবং (হজের) ইহরামকে ওমরায় পরিণত করতাম। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যাদের সঙ্গে কোরবানির পশু নেই, তারা যেন ওমরাহ করার পর ইহরাম খুলে ফেলে এবং (তাওয়াফ, সাঈ ইত্যাদিকে) ওমরাহর কাজ হিসেবে করে নেয়। ফলে নবী (সা.) এবং যাদের সঙ্গে কোরবানির পশু ছিল তারা ছাড়া সব লোক তাদের ইহরাম খুলে মাথার চুল ছেঁটে ফেলল।

এ সময় সুরাকাহ ইবনু জশুম (রা.) দাঁড়িয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল, এটা কি শুধু আমাদের এ বছরের জন্য প্রযোজ্য, নাকি সব সময়ের জন্য? রাসুলুল্লাহ (সা.) এক হাতের আঙুল অন্য হাতের আঙুলের মধ্যে ঢুকিয়ে বলেন, ওমরাহ হজের মধ্যে প্রবেশ করেছে। এভাবে তিনি দুবার বলেন, সর্বকালের জন্য।

বর্ণনাকারী বলেন, এ সময় আলী (রা.) নবী (সা.)-এর কোরবানির পশু নিয়ে ইয়েমেন থেকে এলেন। তিনি দেখলেন, ফাতিমা (রা.) ইহরাম খুলে রঙিন পোশাক পরে সুরমা লাগিয়েছেন। আলী (রা.) এটা অপছন্দ করে বললেন, তোমাকে এমন করতে কে বলেছে? তিনি বললেন, আমার পিতা রাসুলুল্লাহ (সা.)।

বর্ণনাকারী বলেন, একসময় আলী (রা.) ইরাকে এ কথা বলেছেন, আমি ফাতিমার কাজের জন্য রাগ করে রাসুলুল্লাহর (সা.) কাছে গিয়ে বিষয়টি জানতে চাইলাম। আমি তাঁকে জানালাম, আমি ফাতিমার এ কাজ অপছন্দ করেছি এবং সে বলেছে, আমার পিতা আমাকে এমন করতে আদেশ করেছেন। তিনি আমার কথা শুনে বলেন, সে সত্য বলেছে, সত্য বলেছে। (হে আলী!) তুমি হজ ও ওমরার ইহরাম বাঁধার সময় কী বলেছিলে? তিনি বলেন, আমি বলেছি, হে আল্লাহ, রাসুলুল্লাহ (সা.) যেভাবে ইহরাম বেঁধেছেন, আমার ইহরামও তেমনি। তিনি বলেন, আমার সঙ্গে কোরবানির পশু আছে। সুতরাং (আমার মতো) তুমিও ইহরাম খুলে হালাল হতে পারবে না। অপরদিকে আলী (রা.)-এর ইয়েমেন থেকে নিয়ে আসা কোরবানির পশু এবং মদিনা থেকে নবী (সা.)-এর নিয়ে আসা কোরবানির পশু, এগুলোর মোট সংখ্যা ছিল এক শটি। নবী (সা.) এবং তাঁর ওই সব সাহাবি যাদের সঙ্গে কোরবানির পশু ছিল তাঁরা ছাড়া সবাই ইহরাম খুলে হালাল হয়ে মাথার চুল খাটো করল।

বর্ণনাকারী বলেন, তাঁরা যখন (অষ্টম তারিখ) তারবিয়ার দিনে মিনার দিকে রওনা হলেন। তখন তাঁরা হজের উদ্দেশ্যে ইহরাম বাঁধলেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) সওয়ারিতে চড়লেন এবং মিনায় পৌঁছে আমাদের জোহর, আসর, মাগরিব, এশা ও ফজর মোট পাঁচ ওয়াক্ত সালাত সেখানে আদায় করলেন। সেখানে সূর্যোদয় পর্যন্ত অবস্থান করলেন। তিনি তাঁর জন্য একখানা পশমের তাঁবু টানাতে নির্দেশ দিলেন এবং ‘নামিরা’ নামক স্থানে তা টানানো হলে নবী (সা.) সেখানে গেলেন। যাতে কুরাইশদের এমন সংশয় না করে যে রাসুলুল্লাহ (সা.) মাশআরুল হারামের কাছে মুজদালিফায় অবস্থান করবেন, যেমন কুরাইশরা জাহিলি যুগে করত। রাসুলুল্লাহ (সা.) সেখান থেকে রওনা হয়ে আরাফাতে এলেন। এখানে এসে দেখলেন ‘নামিরায়’ তাঁর জন্য তাঁবু টানানো হয়েছে। পশ্চিমাকাশে সূর্য ঢলে পড়া পর্যন্ত তিনি ওই তাঁবুতে অবস্থান করেন। অতঃপর সূর্য ঢলে পড়লে তিনি ‘কাসওয়া’ উষ্ট্রীটি উপস্থিত করার নির্দেশ দিলেন। তা আনা হলে তিনি তাতে চড়ে বাতনুল ওয়াদিতে এলেন এবং মানুষের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিলেন। তিনি বললেন, নিশ্চয় তোমাদের রক্ত ও সম্পদ (পরস্পরের জন্য) আজকের এই দিন, এই মাস এবং এই শহরের মতোই সম্মানিত। সাবধান! জাহিলি যুগের সব কাজ ও প্রথা আমার দুই পায়ের নিচে পতিত হলো। জাহিলি যুগের রক্তের সব দাবি বাতিল। আমি সর্ব প্রথম আমাদের (বনি হাশিমের) রক্তের দাবি পরিত্যাগ করলাম।

আরও পড়তে পারেন-

বর্ণনাকারী ‘উসমানের বর্ণনায় আছে : আমি ইবনু রবিআহর রক্তের দাবি আর সুলাইমানের বর্ণনায় আছে : আমি রবিআহ ইবনু হারিস ইবনু আবদুল মুত্তালিবের রক্তের দাবি পরিত্যাগ করলাম। আর রবিয়াহ সাদ গোত্রে দুগ্ধপুষ্য থাকাকালীন হুজাইল গোত্রের লোকেরা তাকে হত্যা করেছিল। জাহিলি যুগের সুদও বাতিল হলো। আমি সর্বপ্রথম ‘আব্বাস ইবনু ‘আবদুল মুত্তালিবের সুদের দাবি পরিহার করলাম। তা সম্পূর্ণরূপে বাতিল হলো। তোমরা নারীদের সম্পর্কে আল্লাহকে ভয় করো। কেননা তাদের তোমরা আল্লাহর আমানত হিসেবে গ্রহণ করেছ এবং আল্লাহর বিধান মোতাবেক তোমরা তাদের লজ্জাস্থানকে নিজেদের জন্য হালাল করেছ। তাদের ওপর তোমাদেরও অধিকার আছে, তারা যেন তোমাদের অপছন্দনীয় ব্যক্তিকে তোমার ঘরে স্থান না দেয়। তারা এরূপ করলে তাদের খুবই হালকা মারধর করো। তাদের ভরণ-পোষণের দায়িত্বও তোমাদের ওপর। তোমরা তা স্বাভাবিকভাবে আদায় করবে। সর্বোপরি আমি তোমাদের মধ্যে এমন একটি জিনিস রেখে যাচ্ছি, তোমরা তা দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরলে কখনো পথভ্রষ্ট হবে না। তা হলো আল্লাহর কিতাব। (কিয়ামতের দিন) তোমাদের আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে, তখন তোমরা কী বলবে? তারা বললেন, আমরা সাক্ষ্য দেব, আপনি আপনার দায়িত্ব যথাযথভাবে পৌঁছিয়েছেন, আপনার আমানতের হক আদায় করেছেন এবং ভালো কাজের উপদেশ দিয়েছেন।

অতঃপর তিনি আকাশের দিকে তর্জনী তুলে ধরেন এবং মানুষের প্রতি ইঙ্গিত করে (তিনবার) বলেন, হে আল্লাহ, আপনি সাক্ষী থাকুন, হে আল্লাহ, আপনি সাক্ষী থাকুন, হে আল্লাহ, আপনি সাক্ষী থাকুন। অতঃপর বিলাল (রা.) আজান অতঃপর ইকামত দিলেন। তিনি জোহরের সালাত আদায় করলেন, পুনরায় ইকামত দিলে আসরের সালাত আদায় করলেন। কিন্তু এ দুইয়ের মধ্যবর্তী সময়ে তিনি অন্য (নফল) সালাত পড়েননি। অতঃপর তিনি কাসওয়া উষ্ট্রীতে আরোহণ করে আরাফাতে অবস্থানের স্থানে এলেন এবং কাসওয়া উষ্ট্রীকে ‘জাবালে রহমতের’ পাদদেশে ঘুরিয়ে দাঁড় করিয়ে তিনি পাহাড়কে সামনে রেখে কিবলামুখী হয়ে দাঁড়ালেন। সূর্য ডুবে আকাশের লালিমা কিছুটা মুছে যাওয়া পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করলেন। সূর্যের লালিমা বিলুপ্ত হওয়ার পর তিনি ‘উসামাকে তাঁর পেছনে সওয়ারিতে বসিয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.) সেখান থেকে রওনা হলেন এবং উষ্ট্রীর লাগাম শক্ত করে ধরলেন, ফলে উটের মাথা হাওদার সম্মুখভাগের সঙ্গে ছুটতে লাগল। এ সময় তিনি ডান হাতের ইশারায় বলতে লাগলেন, ধীরস্থিরভাবে পথ চলো, হে লোকেরা, ধীরস্থিরভাবে চলো, হে লোকজন, তিনি কোনো বালুর টিলার নিকট এলে উষ্ট্রীর লাগাম সামান্য ঢিলা করতেন, যাতে তা সহজে টিলায় উঠে সামনে অগ্রসর হতে পারে। অবশেষে তিনি মুজদালিফায় উপস্থিত হলেন। এখানে এসে এক আজান ও দুই ইকামাতে মাগরিব ও এশার সালাত একত্রে আদায় করেন। এ দুই সালাতের মাঝখানে তিনি অন্য কোনো (নফল) সালাত পড়েননি। রাসুলুল্লাহ (সা.) এ স্থানে ভোর পর্যন্ত বিশ্রাম করেন। ফজরের সময় হলে তিনি ফজরের সালাত আদায় করেন। তিনি এ সালাত আদায় করেছেন এক আজান ও এক উষ্ট্রী ইকামাতে। অতঃপর তিনি কাসওয়া উষ্ট্রীর ওপর চড়ে মাশআরুল হারামে এসে তার ওপর ওঠেন। তারপর তিনি কিবলাহকে সামনে রেখে মহান আল্লাহর প্রশংসা, তাকবির ও তাহলিল পাঠ করেন। তিনি আল্লাহর একত্ববাদেরও ঘোষণা করেন এবং তিনি ভোর হওয়া পর্যন্ত এ স্থানে অবস্থান করেন।

অতঃপর সূর্যোদয়ের আগেই রাসুলুল্লাহ (সা.) ফাদল ইবনু আব্বাস (রা.)-কে তাঁর বাহনের পেছনে বসিয়ে রওনা হলেন। ফাদল ছিলেন কালো চুল ও সুন্দর চেহারার অধিকারী যুবক। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর চলার পথে জন্তুযানের অবস্থানকারী একদল নারীও তাঁর পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিল। আর ফাদল বারবার তাদের দিকে তাকাচ্ছিলেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) ফাদলের মুখের ওপর হাত রাখলেন। ফাদল অন্যদিকে ঘুরে তাদের দিকে দেখছিলেন। ফলে রাসুলুল্লাহ (সা.) ফাদলের মুখের ওপর হাত দিয়ে তা অন্যদিকে ফেরালেন। এবার তিনি ‘মুহাসসার’ নামক স্থানে পৌঁছলেন এবং তিনি উষ্ট্রীকে কিছুটা দ্রুত চালালেন। অতঃপর এখান থেকে রওনা হয়ে জামরাতুল কুবরার দিকের মধ্যবর্তী পথ ধরে চললেন এবং সেখানে বৃক্ষের নিকটবর্তী জামরায় এসে উপস্থিত হয়ে তাতে সাতটি কংকর মারলেন আর প্রত্যেক কংকর নিক্ষেপের সময় তাকবির বললেন। কংকরগুলো ছিল পাথরের ক্ষুদ্র টুকরার মতো এবং তা সমতল ভূমি থেকে নিক্ষেপ করেছেন। অতঃপর রাসুলুল্লাহ (সা.) পশু কোরবানির স্থানে উপস্থিত হলেন এবং নিজ হাতে তেষট্টিটি উট কোরবানি করলেন।

অতঃপর আলী (রা.)-কে নির্দেশ দিলেন তিনি অবশিষ্টগুলো জবেহ করলেন। তিনি আলী (রা.)-কে তাঁর কোরবানিতে অংশীদারও করেন। অতঃপর তিনি প্রত্যেকটি জবেহকৃত পশু থেকে এক টুকরা করে গোশত তাঁকে দেওয়ার আদেশ করলেন। সুতরাং তা নিয়ে একটি হাঁড়িতে পাকানো হলো। তাঁরা দুজনই এ গোশত খেলেন এবং এর ঝোল পান করলেন। অতঃপর রাসুলুল্লাহ (সা.) উষ্ট্রীতে চড়ে খুব তাড়াতাড়ি রওনা হয়ে বায়তুল্লাহয় উপস্থিত হলেন। তিনি মক্কায় এসেই জোহরের সালাত আদায় করলেন। পরে তিনি বনি আবদুল মুত্তালিবের নিকট গেলেন। এ সময় তারা (লোকদের) জমজমের পানি পান করাচ্ছিলেন। তিনি তাদের বলেন, হে বনি আবদুল মুত্তালিব, পানি উত্তোলন করতে থাকো। লোকদের অত্যধিক ভিড় হওয়ার আশঙ্কা যদি না থাকত, তাহলে আমিও তোমাদের সঙ্গে পানি উত্তোলনে অংশগ্রহণ করতাম। এরপর লোকেরা তাঁকে পানির বালতি সরবরাহ করলে তিনি (সা.) তা থেকে পান করেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ১৯০৫)

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।