Home লাইফ স্টাইল কাজের পাশাপাশি অবসর সময় কাটানোও গুরুত্বপূর্ণ: বাফেটকে দেখে শিখেছেন বিল গেটস

কাজের পাশাপাশি অবসর সময় কাটানোও গুরুত্বপূর্ণ: বাফেটকে দেখে শিখেছেন বিল গেটস

বিল গেটস ও বার্কশায়ার হ্যাথওয়ের সিইও ওয়ারেন বাফেট।

বিল গেটস দীর্ঘ সময় টেক জায়ান্ট কোম্পানি মাইক্রোসফটের সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এ সময় তিনি খুব ব্যস্ত সময় কাটাতেন। এমনকি মধ্যরাতেও নিজের প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের নানা সমালোচনা করে মেইল পাঠাতেন এ ধনকুবের।

তবে বার্কশায়ার হ্যাথওয়ের সিইও ওয়ারেন বাফেট যেন বিল গেটসের অতিরিক্ত ব্যস্ত ধারণা পরিবর্তন করে দিয়েছেন। এ ধনকুবেরের ব্যক্তিগত ডে-বুক দেখে গেটস উপলব্ধি করেন যে, নিজেকে সময় দেওয়া কিংবা অবসর সময় কাটানো খুব প্রয়োজন।

২০১৭ সালে বাফেটের সাথে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বিল গেটস বলেন, “একটা সময় ছিল, যখন আমি প্রতিটা মিনিটই ব্যস্ত থাকতাম। আমি ভাবতাম, এভাবেই কাজ করা উচিত।”

সাংবাদিক চার্লি রোজকে দেওয়া ঐ সাক্ষাৎকারে বিল গেটস আরও বলেন, “আমার বাফেটের ক্যালেন্ডার দেখার কথা এখনো মনে আছে। ক্যালেন্ডারে তার এমনও দিন ছিল যেদিন তিনি কোনো কাজই রাখেননি।”

বাফেটের কাজ ও অবসর সময়ের সমন্বয়ে বানানো এ শিডিউল থেকে গেটস খুব গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা নিয়েছেন। সেটা অনেকটা এমন যে, “আপনিই আপনার সময় নিয়ন্ত্রণ করেন। এক্ষেত্রে নিজের কাছে থাকা প্রতিটি মিনিটই কাজের মধ্যে থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ নয়।”

এ সম্পর্কে ওয়ারেন বাফেট বলেন, “আমি যা ইচ্ছা সেটাই কিনতে পারি। কিন্তু আমি চাইলেই সময় কিনতে পারবো না।”

এক্ষেত্রে বাফেট একটানা খাটুনির পক্ষে নয়। বরং তিনি বিচক্ষণতার সাথে কাজ করাকে বেশি কার্যকরী বলে মনে করেন।

বাফেটের এ দর্শনের পক্ষে অবশ্য বিজ্ঞানসম্মত যুক্তিও রয়েছে। ২০১৪ সালে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা যায়, সপ্তাহে ৫০ ঘণ্টার বেশি কাজ করলে কর্মীদের কর্মদক্ষতা ব্যাপকভাবে হ্রাস পায়।

গবেষণায় দেখা যায়, অনেকেই সপ্তাহে ৭০ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে কাজ করে থাকেন। এক্ষেত্রে যে পরিমাণ কাজ হয় ঠিক একই পরিমাণ কাজ ল্যাপটপ ব্যবহার করে ৫৫ ঘণ্টায় করা যায়।

শুধু গেটস নয়, বরং টেসলা সিইও ইলন মাস্কও নিজের অতিরিক্ত ব্যস্ত শিডিউল থেকে সরে এসেছেন। বছরখানেক আগেও মাস্ক জানান যে, তিনি নিয়মিত সারারাত কাজ করেন।

কিন্তু নিজের ভুল বুঝতে পেরে সম্পতি এমন শিডিউলে পরিবর্তন এনেছেন মাস্ক। গত মে মাসে সিএনবিসিতে এক সাক্ষাৎকারে টেসলা বস জানান, বর্তমানে তিনি রাতে নিয়মিত ছয় ঘণ্টা করে ঘুমান।

আরও পড়তে পারেন-

সাক্ষাৎকারে ইলন মাস্ক বলেন, “আমি একটা সময় কম ঘুমানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু আমি বেশিক্ষণ জেগে থেকেও আশানুরূপ কাজ করতে পারিনি। এছাড়া আমি যদি প্রতি রাতে ৬ ঘণ্টার চেয়ে কম ঘুমাই তবে সেটা মস্তিষ্কের জন্যও নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করে।”

তবে প্রয়োজনে অবসর সময় কাটানোর এ অভ্যাসটি রপ্ত করা সকলের জন্য খুব একটা সহজ নয়। এমনকি সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতে কাজ ও বিশ্রামের মধ্যে সামঞ্জস্য আনতে বিল গেটসকেও কয়েক বছর ধরে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হয়েছে। সম্প্রতি নর্থান অ্যারিজোনা ইউনিভার্সিটিতে এক বক্তৃতায় এমনটাই জানান এ ধনকুবের।

গেটস বলেন, “যখন আমি তোমাদের মতো বয়সে ছিলাম, তখন আমি অবকাশ যাপনে বিশ্বাস করতাম না। সপ্তাহান্তে ছুটি নেওয়াতে বিশ্বাস করতাম না। আমি আমার আশেপাশের সবাইকে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করার জন্য উদ্বুদ্ধ করতাম।”

সকলের উদ্দেশ্যে গেটস বলেন, “আমার এই শিক্ষাটা পেতে যতদিন সময় লেগেছে, তোমাদের যেন এত দীর্ঘ সময় না লাগে। নিজের সম্পর্কগুলোকে যত্ন করার জন্য, সফলতা উদযাপনের জন্য এবং ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার জন্যেও সময় নাও। যখনই প্রয়োজন মনে হবে বিরতি নাও। তোমার আশেপাশের মানুষের যখন এই বিরতি দরকার হবে, তখন তাদের সাথেও স্বাভাবিক আচরণ বজায় রাখো।”

২০১৯ সালে নিজের ব্লগে এই মার্কিন ধনকুবের লিখেছিলেন, “যখন আমি মাইক্রোসফটে ছিলাম, তখন আমার সঙ্গে যারা কাজ করতো তাদের সাথে আমি বেশ কড়া আচরণই করেছি। এর ফলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে সফলতা এসেছে, কিন্তু আমি নিশ্চিত কিছু কিছু ব্যাপার মাত্রাতিরিক্ত ছিল।”

নর্থান অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তব্যে সদ্য স্নাতক পাশ করা শিক্ষার্থীদের গেটস উপদেশ দেন যে, জীবনের সব পর্যায়েই যেন তারা নিজেদের সিদ্ধান্ত পুনর্মূল্যায়ন করতে কিছুটা সময় ব্যয় করে এবং শ্রেণীকক্ষের বাইরেও অনেককিছু থেকে শিক্ষালাভ করে।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।