Home ইসলাম দ্বিনি ইলম উঠে যাওয়ার কারণ

দ্বিনি ইলম উঠে যাওয়ার কারণ

 ।। মো. আলী এরশাদ হোসেন আজাদ ।।

এখন শোনা যায়—ইলমের কদর নেই, তাসির (প্রভাব) নেই। ওলামায়ে কিরামের দায়িত্ব ইলমের হেফাজত। তাঁদের অদূরদর্শিতা অথবা ইলমের ওপর হামলা প্রতিহত না করার কারণে ইলম দুনিয়া থেকে উঠে যেতে যেতে একসময় সম্পূর্ণভাবে উঠিয়ে নেওয়া হবে। আমর ইবনুল আস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আল্লাহ বান্দাদের থেকে হঠাৎ করে ইলম উঠিয়ে নেবেন না; বরং ইলম উঠিয়ে নেবেন ওলামাদের উঠিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে।

একপর্যায়ে যখন একজন সত্যপন্থী আলেমও থাকবে না, তখন লোকেরা মূর্খদের তাদের নেতা হিসেবে গ্রহণ করবে। এই মূর্খরা ধর্মীয় বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হলে অজ্ঞতা সত্ত্বেও সিদ্ধান্ত দেবে। ফলে তারা নিজেরা পথভ্রষ্ট হবে, অন্যদেরকেও পথভ্রষ্ট করবে। (বুখারি)
প্রিয়নবী (সা.) আরো বলেন, কিয়ামতের আলামতের মধ্যে একটি হলো, ইলম উঠিয়ে নেওয়া এবং মূর্খতা বৃদ্ধি পাওয়া, মদ পান করা এবং ব্যভিচার ছড়িয়ে পড়া। (বুখারি)

ইলম উঠে যাওয়ার প্রাসঙ্গিক কারণ :

সংক্ষিপ্ত পাঠক্রম

শিক্ষায় অবহেলিত থাকছে কোরআন-হাদিস ও বিশ্বনবীর দর্শন। সংক্ষিপ্ত পাঠক্রম অসম্পূর্ণ মেধাবী বানাচ্ছে। আলিয়া, কওমি, স্কুল-কলেজ- বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিন্ন পাঠক্রম অনুশীলন করা হচ্ছে না। এ ধারায় পাঁচ থেকে ১৬ বছরের পড়াশোনায় মিলছে সনদ।পড়াশোনা হচ্ছে সার্টিফিকেটসর্বস্ব।

তাফসির শিক্ষায় পর্যাপ্ত সময় না দেওয়া

তাফসিরে পারদর্শিতার জন্য অন্তত ১৫টি বিষয়ের প্রাজ্ঞতা জরুরি। সংক্ষিপ্ত পাঠক্রমে তাফসিরের বড় বড় কিতাব রপ্ত ও পরিপূর্ণভাবে কোরআন বোঝার যোগ্যতা অসম্পূর্ণ থেকে যাচ্ছে, অথচ ইলমের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত ছিল তাফসির।

আরবি ধ্বনিতত্ত্ব ভাষা-ব্যাকরণ চর্চা হ্রাস

শরহে জামি, কানজুদ্দাকায়েক, ন্যায় ও যুক্তিশাস্ত্রের চর্চা কমে যাওয়ায় শিক্ষার্থীর মধ্যে মাসআলা-মাসায়েল বোঝার যোগ্যতা সৃষ্টি হচ্ছে না। কোথাও কাফিয়া ও শরহে জামি এক বছরে পড়ানোর কারণে দুটির কোনোটিই বোঝা হচ্ছে না।

আরবি সাহিত্যের প্রতি অবজ্ঞা

আগে মাদরাসা শিক্ষার্থীর মুখে আরবি-ফারসি কবিতা শোনা যেত। এগুলোর মধ্যে ছিল অধ্যাত্ম-নৈতিক শিক্ষা। কেউ শেখে না শের-বয়াত।

তালিম-তাবলিগ উঠে যাওয়া

কঠিন কিতাবগুলো একের পর এক উঠে যাচ্ছে। আগে মাদরাসাছাত্রের মধ্যে বহুমুখী প্রতিভার স্ফুরণ দেখা যেত। খিদমত হতো তালিম-তাবলিগ-তাজকিয়ার। বর্তমানে বহুমুখী যোগ্যতা অর্জন না হওয়ায় সমাজ বঞ্চিত হচ্ছে।

আমল-আদব উঠে যাওয়া

সংক্ষিপ্ত পাঠক্রমে পড়ুয়াদের মধ্যে ইলমের অভাবে আমল এবং আদবের চর্চা উঠে যাচ্ছে। ফলে সুন্নাহর অনুশীলনও হ্রাস পাচ্ছে।

ছাত্ররাজনীতি

শিক্ষাজীবনে রাজনীতিমুক্ত থাকা শ্রেয়। ইসলামে রাজনীতি নিষিদ্ধ নয়। তবে শাইখুল হিন্দ মাহমুদুল হাসান, মুফতি মুহাম্মদ শফি, আল্লামা শাব্বির আহমাদ উসমান (রহ.) যখন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে জড়িত ছিলেন, তখন তাঁরা দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে বহুলাংশে দূরে ছিলেন।

আরও পড়তে পারেন-

সরকারি স্বীকৃতির মোহ

মাওলানা আশরাফ আলী থানভির খলিফা শাহ আবরারুল হক হক্কি হারদুঈ (১৯২০-২০০৫) হজরতের খলিফা মুফতি আব্দুর রহমান সাহেব (রহ.) বর্ণনা করেন, কওমি মাদরাসার স্বীকৃতির চেষ্টার কথা শুনে হারদুঈ হজরত বলেন, ‘এটার অর্থ তো এই দাঁড়ায় যেসব কওমি মাদরাসা সরকারি হয়ে যাবে। এতে ছাত্রদের চরিত্রও নষ্ট হয়ে যাবে। কাজেই এই স্বীকৃতি কোনো অবস্থায়ই সমীচীন মনে হচ্ছে না।’ (মালফুজাতে মুজাদ্দিদে দ্বিন)।

আসআদ মাদানি (রহ.)-কে কওমি সনদের স্বীকৃতি আদায়ের প্রচেষ্টা সম্পর্কে অবগত করলে তিনি বলেন, ‘ভারত সরকার আমাদের স্বীকৃতি নেওয়ার জন্য ডাকছে, কিন্তু আমরা তাদের বলে দিয়েছি, আপনারা আমাদেরকে আমাদের অবস্থায় থাকতে দিন, আমাদের স্বীকৃতির কোনো প্রয়োজন নেই।’

এ ছাড়া মেধাতালিকায় স্থান পাওয়ার প্রতিযোগিতা, জিপি এ-র মোহ, ছাত্রদের মোবাইল ব্যবহার, মাদরাসা শিক্ষার্থীদের মধ্যে সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার মানসিকতা ইলম উঠে যাওয়ার অন্যতম কারণ।

মহান আল্লাহ আমাদের সুগভীর ইলমওয়ালা হওয়ার তাওফিক দান করুন। মাদরাসাগুলো হোক নির্লোভ আলিমের ইবাদতকেন্দ্র। আমিন।

লেখক : সহকারী অধ্যাপক, কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজ, গাজীপুর

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।