Home অপরাধ ও আইন-আদালত সংবাদ প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা: এস আলম গ্রুপের আবেদনে সাড়া দেননি চেম্বার আদালত

সংবাদ প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা: এস আলম গ্রুপের আবেদনে সাড়া দেননি চেম্বার আদালত

এস আলম গ্রুপের মালিক মোহাম্মদ সাইফুল আলম ও তার স্ত্রী ফারজানা পারভীনের বিদেশে সম্পদের বিষয়ে সংবাদ, বিবৃতি, মতামত ও অনলাইনে কোনো রিপোর্ট ও ভিডিও প্রচারের বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদনে সাড়া দেননি আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। গতকাল বৃহস্পতিবার আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম এ বিষয়ে শুনানি শেষে আবেদনটি নথিভুক্ত করার আদেশ দেন।

শুনানিকালে আপিল বিভাগের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম বলেছেন, দুর্নীতির তথ্য পেলে গণমাধ্যম রিপোর্ট করবে সেটাই স্বাভাবিক। এখানে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার সুযোগ কোথায়? তবে প্রকাশিত রিপোর্ট সত্য না মিথ্যা কিংবা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কি না সেটা বিচার করার জন্য সুনির্দিষ্ট আইন রয়েছে। তিনি বলেন, গণমাধ্যম কী রিপোর্ট করবে, কী রিপোর্ট করবে না সেক্ষেত্রে কি কোনো নিষেধাজ্ঞা দেয়া যায়? যায় না। তবে সবারই নীতিমালা মেনে চলা উচিত।

এস আলমের আইনজীবী ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কেসি আদালতে বলেন, এস আলমের বিষয়ে একটা অভিযোগ এসেছে। যেটা একটা বিরোধপূর্ণ বিষয়। আমাদের মনে হচ্ছে এস আলম নিয়ে একটা মিডিয়া-ট্রায়াল হচ্ছে। এখন আমার বক্তব্য হলো, মিডিয়া ট্রায়াল চলবে না কোর্টের ট্রায়াল চলবে।

জবাবে বিচারপতি ইনায়েতুর রহিম বলেন, সবাই আমরা মিডিয়া ট্রায়ালের শিকার। রায় পক্ষে গেলে ঐতিহাসিক, বিপক্ষে গেলে ফরমায়েশি রায়। এমনটাই দেখে আসছি। কোনো রায় বা আদেশ দিলে একেক পক্ষে একেক রকম ব্যাখ্যা দিয়ে থাকেন বিভিন্ন মাধ্যমে। আমরা বিচার বিভাগ এসব বিষয় নিয়ে অসহায় অবস্থার মধ্যে আছি। এ কারণে আইনজীবীদের লক্ষ্য রাখা উচিত যাতে আদালতের মর্যাদা অক্ষুণœ থাকে, কোনোভাবেই সেটা ক্ষুণœ না হয়। এটা রক্ষার দায়িত্বও বারের আইনজীবীদের।

শুনানির শুরুতে আইনজীবী আজমালুল হোসেন কেসি বলেন, এভাবে এস আলম সম্পর্কে বক্তব্য প্রদান কতটা সঠিক। আমি হাইকোর্টে যেতে পারছি না, কারণ চেম্বার আদালতের স্থিতিবস্থা আছে। সালাম মুর্শেদীর মামলায় গণমাধ্যমের ওপর সংবাদ প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই আদেশ আমরা প্রার্থনা করছি।

এ পর্যায়ে বিচারপতি ইনায়েতুর রহিম বলেন, চেম্বার আদালতের স্থিতাবস্থার আদেশের পর তো কোনো সংবাদ প্রকাশ করেনি। বিচারকে প্রভাবিত করে এমন কোনো প্রতিবেদনও তো দেখতে পাচ্ছি না। নতুন করে যদি কিছু প্রকাশ করে তাহলে আপনার সংক্ষুব্ধ হওয়ার সুযোগ ছিল। সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার মতো কোনো প্রাথমিক উপাদান দেখতে পাচ্ছি না। তিনি বলেন, কেউ যদি যা ইচ্ছে তাই লেখে, সেজন্য সুনির্দিষ্ট আইনে প্রতিকারের বিধান রয়েছে।

এরপর দুদক আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, গণমাধ্যমের রিপোর্ট হলো আমাদের অন্যতম সোর্স। কমপক্ষে ৫০ ভাগ মিডিয়া রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে আমরা অনুসন্ধান করে থাকি। এখন মিডিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হলে আমরা এই তথ্য-উপাত্ত পাবো না।

আরও পড়তে পারেন-

শুনানি শেষে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের ওপর নিষেধাজ্ঞার আবেদনটি নথিভুক্তের আদেশ দেন। তবে আবেদনকারী চাইলে ৮ জানুয়ারি লিভ টু আপিলের সাথে এই আবেদন শুনানির জন্য প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে পেশ করার সুযোগ থাকবে। এ সময় এস আলম গ্রুপের পক্ষে সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ উপস্থিত ছিলেন।

গত ৪ আগস্ট ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারে ‘এস আলমস আলাদিনস ল্যাম্প’ (এস আলমের আলাদিনের চেরাগ) শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে অনুমতি ছাড়া বিদেশে বিনিয়োগ বা অর্থ স্থানান্তর নিয়ে এস আলম গ্রুপের মালিক ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অনুসন্ধান করে দুই মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।

গত ৬ আগস্ট দেয়া ওই আদেশের বিরুদ্ধে এস আলম ও তার স্ত্রী আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল করেন। ২৩ আগস্ট আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত বিষয়বস্তু সম্পর্কে সব পক্ষকে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে আদেশ দেন এবং আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে লিভ টু আপিল শুনানির জন্য আগামী বছরের ৮ জানুয়ারি দিন ধার্য করে দেন। ওই দিনই চেম্বার আদালতের আদেশ নিয়ে গণমাধ্যমে বক্তব্য রাখেন সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। যিনি ডেইলি স্টারের রিপোর্টটি ৪ আগস্ট হাইকোর্টের নজরে আনেন। যার প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট এস আলমের বিষয়ে অনুসন্ধানের নির্দেশ দেন।

সম্প্রতি এস আলমের ওপর গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের বিষয় নিয়ে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আবেদন করা হয়।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।