Home ইতিহাস ও জীবনী মাজাহেরুল উলূম সাহারানপুরের মুহতামিমের ইন্তিকালে আল্লামা মুফতি জসিমুদ্দীনের শোক

মাজাহেরুল উলূম সাহারানপুরের মুহতামিমের ইন্তিকালে আল্লামা মুফতি জসিমুদ্দীনের শোক

ভারতের প্রাচীনতম ইসলামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মাজাহেরুল উলুম সাহারানপুরের মহাপরিচালক মাওলানা সাইয়্যেদ শাহেদ আল-হাসানী ইন্তেকালে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন জামিয়া আহলিয়া দারুল উলূম হাটহাজারীর সহযোগী পরিচালক ও নূরানী তা’লীমুল কুরআন বোর্ড চট্টগ্রাম বাংলাদেশ-এর মহাসচিব আল্লামা মুফতি জসিমুদ্দীন।

এক শোকবার্তায় আল্লামা মুফতি জসিমুদ্দীন বলেন, মরহুম মাওলানা সাইয়্যেদ শাহেদ আল-হাসানী ভারতীয় উপমহাদেশে সমসাময়িক সময়ে এক উঁচু স্তরের আলেম ও দ্বীনের মুবাল্লিগ ছিলেন। একই সাথে তিনি শায়খুল হাদিস মাওলানা জাকারিয়া কান্ধলভি (রহ.)এর নাতি ও খলিফায়ে খাস ছিলেন এবং তাবলীগ জামাতের শীর্ষস্তরের মুরুব্বী মাওলানা ইনামুল হাসান (রহ.)এর জামাতা। মরহুমের নসব ও সম্পর্ক ছিল আমাদের পূর্বসুরী শীর্ষস্তরের আকাবির হযরাতগণের সাথে। কর্মজীবনে মরহুম ছিলেন অনন্য যোগ্যতার অধিকারী নিভৃতচারী একজন আলেম। মাজাহেরুল উলুম মাদরাসার উন্নতি ও অগ্রগতিতে তাঁর অনন্য ভূমিকা সর্বজনবিদিত। দ্বীনি ইলম বিস্তারে উচ্চস্তরের গবেষণা ও গ্রন্থ রচনায় তিনি সারা জীবন অতিবাহিত করেন। ভারতের বৃহত্তম মুসলিম সংস্থা অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড ও জমিয়ত উলামা হিন্দেরও তিনি গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন।

আল্লামা মুফতি জসিমুদ্দীন স্মৃতিচারণ করে বলেন, তার সাথে আমার ব্যক্তিগত পরিচয় ছিল দীর্ঘ দিনের। তিনি জামিয়া আহলিয়া দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসা সফর করেছিলেন। তখনও তাঁর সাথে দাওয়াত ও তাবলীগের মেহনত এবং মাদারেসে কওমিয়ার খেদমতের উপর দীর্ঘ মতবিনিময় হয়েছিল। দারুল উলূম হাটহাজারীর ব্যাপকতা ও ইলমি খিদমত অবলোকন করে তিনি অভিভূত হয়েছিলেন।

আল্লামা মুফতি জসিমুদ্দীন আরো বলেন, ভারত সফরের সময়ও একবার আমি মাজাহেরুল উলূম সাহারানপুর ভিজিটে গিয়েছিলাম। সে সময় হযরত (রহ.)এর আন্তরিকতা ও আতিথেয়তা ছিল মুগ্ধ হওয়ার মতো। তখনও তিনি ভারতে দ্বীনি শিক্ষা ও দাওয়াত-তাবলীগের হালত তুলে ধরেছিলেন। এছাড়াও আরো নানা দ্বীনি বিষয়ে তাঁর সাথে আমার কথা হতো। এসময় তিনি তাঁর লিখিত একসেট গ্রন্থসম্ভার আমাদের হাদিয়া স্বরূপ দেন। হাদিয়া হিসেবে প্রাপ্ত তাঁর গ্রন্থসমূহের মধ্যে ছিল- * তাহরিকে আজাদিয়ে হিন্দ, * মাকতুবাতে ইলমিয়্যাহ, * হজরত জি সালেস কি ওয়াফাত আওর ফিতনুন বারসাত, * আপবিতি খুদ নশত, * আকাবির কে খুতুত, * সাওয়ানেহে হজরত মাওলানা ইনআমুল হাসান, * তারিখে মাশায়েখে চিশত, * উলামায়ে মাজাহেরে সাহারানপুর, * মাকতুবাতে তাসাউফ, * মাকতুবাতে শায়খ।

আরও পড়তে পারেন-

আল্লামা মুফতিম জসিমুদ্দীন বলেন, ভারত সফর শেষে এরপর মাঝে মাঝে ফোনকলেও মরহুমের সাথে আমার কুশল বিনিময়সহ বিভিন্ন দ্বীনি বিষয়ে কথা হতো। তাঁর স্মৃতি কখনো ভুলবার নয়। হযরতের ইন্তিকালের খবর শোনার পর তাঁর সাথে নানা সময়ের স্মৃতিগুলো চোখের সামনে ভেসে ওঠে।

আল্লামা মুফতি জসিমুদ্দীন বলেন, হক্কানী উলামায়ে কেরামের দুনিয়া থেকে বিদায়ের তালিকা দ্রুত ভারি হচ্ছে। গত কয়েক বছরে আমরা বাংলাদেশসহ ভারতীয় উপমহাদেশের অনেক প্রখ্যাত বুযুর্গ ও শীর্ষস্তরের আলেমকে হারিয়েছি। এই তালিকায় সর্বশেষ মাওলানা সাইয়্যেদ শাহেদ আল-হাসানী (রহ.)এর নামও যুক্ত হলো। হযরতের বিদায়ে উলামায়ে কেরামের বৃহত্তর জামাতে আরেক বড় শূন্যতা তৈরি করেছে; যা সহজে পুরণ হবার নয়।

এ পর্যায়ে আল্লামা মুফতি জসিমুদ্দীন সহীহ বুখারী শরীফের কিতাবুল ইলম অধ্যায়ের দু’টি হাদীসের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, কিয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে দ্বীনি ইলমের শিক্ষা ও চর্চা কমে যাবে এবং মানুষের মাঝে ব্যাপকভাবে দ্বীনি বিষয়ে মূর্খতা বিরাজ করবে। যেমন- হযরত নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন- إِنَّ مِنْ أَشْرَاطِ السَّاعَةِ أَنْ يُرْفَعَ الْعِلْمُ وَيَثْبُتَ الْجَهْلُ অর্থাৎ- ‘‘কিয়ামতের অন্যতম আলামত হচ্ছে ইলম উঠিয়ে নেয়া হবে এবং মানুষের মাঝে অজ্ঞতা বিস্তার লাভ করবে’’। এখানে ইলম বলতে ইলমে দ্বীন তথা কুরআন-সুন্নাহর জ্ঞান উদ্দেশ্য। অপর হাদীসে রয়েছে- إِنَّ اللَّهَ لَا يَقْبِضُ الْعِلْمَ انْتِزَاعًا يَنْتَزِعُهُ مِنَ الْعِبَادِ وَلَكِنْ يَقْبِضُ الْعِلْمَ بِقَبْضِ الْعُلَمَاءِ حَتَّى إِذَا لَمْ يُبْقِ عَالِمًا اتَّخَذَ النَّاسُ رُءُوسًا جُهَّالًا فَسُئِلُوا فَأَفْتَوْا بِغَيْرِ عِلْمٍ فَضَلُّوا وَأَضَلُّوا অর্থাৎ- ‘‘আল্লাহ তাআলা মানুষের অন্তর থেকে ইলমকে টেনে বের করে নিবেন না; বরং আলেমদের মৃত্যুর মাধ্যমে ইলম উঠিয়ে নিবেন। এমনকি যখন কোন আলেম অবশিষ্ট থাকবে না, তখন লোকেরা মূর্খদেরকে নেতা হিসাবে গ্রহণ করবে। তাদেরকে কোন মাসআলা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে বিনা ইলমেই ফতোয়া দিবে। ফলে তারা নিজেরা গোমরাহ হবে এবং মানুষদেরকেও গোমরাহ করবে’’। তাই এতো দ্রুততার সাথে আলেমদের একের পর এক ইন্তিকাল ভাল লক্ষণ নয়।

শোকবার্তায় আল্লামা মুফতি জসিমুদ্দীন মাওলানা সাইয়্যেদ শাহেদ আল-হাসানী (রহ.)এর মাগফিরাত কামনা করেন এবং পরকালে জান্নাতের উঁচু মাকাম লাভের জন্য বিশেষ দোয়া করেন।

উল্লেখ্য, মাওলানা সাইয়্যেদ শাহেদ আল-হাসানী (রহ.) গত শুক্রবার (৬ অক্টোবর) আসরের পর নিজ বাসভবনে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। পরদিন ফজর নামাযের পর মাদরাসা প্রাঙ্গণে তাঁর নামাযে জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। ইন্তিকালের সময় মরহুমের বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর।

মাওলানা সাইয়েদ শাহেদ আল-হাসানি (রহ.) ১৯৫১ সালে জন্মগ্রহণ করেন। মাজাহেরুল উলুম মাদরাসায় তিনি প্রথম শ্রেণি থেকে দাওয়ারায়ে হাদিস পর্যন্ত পড়াশোনা করেন এবং ১৯৭০ সালে সেখানে শিক্ষকতা শুরু করেন। ১৯৯৩ সাল থেকে ইন্তিকালোর আগ পর্যন্ত তিনি মাদারাসাটির ‘আমিনে আম’ (মহাপরিচালক) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ব্যক্তিজীবনে তিনি দুই ছেলে মুফতি মুহাম্মদ সালেহ ও মাওলানা ইয়াসির আল-হাসানি এবং তিন মেয়ের পিতা ছিলেন।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।