Home অন্যান্য খবর সন্তান হারানো এক মায়ের অভিব্যাক্তি: ‘আমানতটা আল্লহর কাছে অর্পণ করছি’

সন্তান হারানো এক মায়ের অভিব্যাক্তি: ‘আমানতটা আল্লহর কাছে অর্পণ করছি’

উম্মাহ: আসসালামু আলাইকুম। ২৮শে এপ্রিল। আপনার জন্য অনেক বেদনার্ত ও ভারাক্রান্ত স্মৃতিময় একটি দিন। এক যুগেরও অধিক আগে এ দিনে আপনি হারিয়েছেন, আপনার বড় কন্যা (আমার বড় বোন) জাকিয়া সুলতানাকে। অসম্ভব মেধাবী ও প্রতিভাবান কলিজার টুকরার হঠাৎ চলে যাওয়া ছিল সত্যিই বড় হৃদয়বিদারক। যা এলাকার প্রতিটি মানুষ, আপু ও শিক্ষকবৃন্দদের পর্যন্ত গভীর শোকাহত করেছে।

(আমার শৈশবের সেই স্মৃতি যতটুকু মনে পড়ে) সেসময় আপনার সবরের শান্ত-সমাহিত নিরব অশ্রুর যে ভূমিকা আমরা দেখেছি, তা কি করে সম্ভব হল?

বিনতে জাহাঙ্গীরের মা: ওয়া আলাইকুমুস সালাম। আসলে আল্লাহ তাআলার রহমতেই সব সম্ভব হয়েছে। আমার চোখের সামনে তখন একটি হাদিস ভাসছিল, যেখানে আল্লাহ তাআলা ফিরিশতাদের জিজ্ঞেস করেন যে, তোমরা আমার বান্দার কলিজার টুকরোকে ছিনিয়ে নিয়েছ? ফিরিশতারা উত্তর দেয়- হ্যাঁ। তখন আল্লাহ তাআলা জিজ্ঞেস করেন, আমার বান্দা কি বলেছে? উত্তরে ফিরিশতারা বলেন, সে ইন্নালিল্লাহ পড়েছে… এই হাদিসের কথা ও ফযিলতগুলো বার বার ভেসে ওঠছিল।

উম্মাহ: আলহামদুলিল্লাহ!! আপনি হয়তো হাদিসে কুদসিটির কথা বলছেন। যা তিরমিযি শরীফে এসেছে-

‘যখন কারো সন্তান মারা যায়, তখন আল্লাহ তাআলা ফিরিশতাদের ডেকে বলেন, তোমরা আমার বান্দার সন্তানের জান কবজ করে নিয়েছো? তারা বলেন, হ্যাঁ। আল্লাহ তাআলা বলেন, তোমরা আমার বান্দার কলিজার টুকরোর জান কবজ করে ফেলেছ? ফিরিশতারা বলেন, হ্যাঁ। আল্লাহ তাআলা বলেন, আমার বান্দা কি বলেছে? ফিরিশতারা বলেন, আপনার বান্দা এ বিপদেও ধৈর্য্যধারণ করে আপনার প্রশংসা করেছে ও বলেছে- ‘ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রজিউন’। তখন আল্লাহ তাআলা বলেন, তোমরা আমার এ বান্দার জন্য জান্নাতে প্রাসাদ নির্মাণ করো, আর তার নাম দাও ‘বাইতুল হামদ’ বা ‘প্রশংসার ঘর’।

আরও পড়তে পারেন-

আমরা অনেকেই অনেক হাদিস জানি। যেমন রাগের সময় ‘রাগ হজম’ এর ফযিলত বা বড় বিপদের সময় ‘ধৈর্য্যধারণ’ এর ফযিলত। আমাদের অনেকসময় মনে পড়ে, কিন্তু মান্যতা অনেক সময় হয়ে উঠে না। ফলশ্রুতিতে রেগে যাই, হা-হুতাশ করি। আপনার ধৈর্য্যরে এই অনুপ্রেরণাটা কীভাবে এসেছিল সেই গভীর শোকের সময়ে?

বিনতে জাহাঙ্গীরের মাঃ আসলে আল্লাহ তাআলার রহমতেই সব সম্ভব হয়েছে।

উম্মাহ: মাশাআল্লহ!!

যতটুকু জানি সেটা মফস্বল শহর ছিল। তো অনেকেই নিশ্চয় এমন ভেবে থাকতেও পারে বা অনেকে হয়ত বলাবলিও করতে পারে যে, ‘কেমন মা! এত শক্ত হৃদয়! সন্তানকে চিরতরে হারিয়ে ফেলা সত্ত্বেও জোরে কাঁদছে না, কোন আহাজারি করছে না, ইত্যাদি’। আপনার সামনে এমন অযাচিত বা বিরক্তিকর পরিস্থিতি এসেছিল কি?

বিনতে জাহাঙ্গীরের মাঃ না, এসব কখনোই আমার কাছে কোন গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়নি।

উম্মাহ: আলহামদুল্লিাহ!

ধৈর্য্যরে সবচেয়ে বড় বিষয় ছিল, সদ্যপ্রয়াত সন্তানকে নিজ হাতে গোসল-কাফনে সাজিয়ে দেয়া! অনেকেই তো পারতো গোসল দিতে, আপনি নিজে আগ্রহের সাথে গোসলদান করে  ধৈর্য্যরে অনন্যতার যে পরিচয় দিয়েছেন, তাতে কোন বিষয়টি আপনাকে অনুপ্রাণিত করেছিল?

বিনতে জাহাঙ্গীরের মাঃ আমার মনে হচ্ছিল যে, আল্লাহ তাআলা আমার সন্তানকে যে আমানত দিয়েছিলেন, সেটা তিনি ফেরত নিয়েছেন। তাই নিজ হাতে গোসল-কাফনে প্রস্তুত করে যেন আমি আমানতটা আল্লাহর কাছে অর্পণ করছি ।

উম্মাহ: মাশাআল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ! আমরা আশা করি, রব্বে কারীমের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আপনার জন্য জান্নাতে নির্মিত হয়েছে ‘প্রশংসার ঘর’ ইনশাআল্লাহ।

আমার জন্য, আমাদের জন্য দুআ করবেন, যেন আপনার জীবনের এ ‘ধৈর্যের পাঠ’ আমরাও গ্রহণ করতে পারি।

বিনতে জাহাঙ্গীরের মাঃ আমীন। ফি আমানিল্লাহ।

উম্মাহ: অনেক ব্যস্ততার মাঝেও সময় দেয়ার জন্য আপনাকে অনেক অনেক শোকরিয়া।

বিনতে জাহাঙ্গীরের মাঃ (মুচকি হেসে) আলহামদুলিল্লাহ।

সাক্ষাৎকার গ্রহণ ও উপস্থাপনায়- বিনতে জাহাঙ্গীর

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।