Home অপরাধ ও আইন-আদালত ২৭৫১২ জনের তালিকা প্রস্তুত, অভিযান শিগগিরই

২৭৫১২ জনের তালিকা প্রস্তুত, অভিযান শিগগিরই

    আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর পদক্ষেপ নিতে যাছে। অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার ও দাগি অপরাধীদের ধরতে নানা পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে অপরাধীদের তালিকার কাজও সম্পন্ন করে আনা হয়েছে। ওই তালিকায় ২৭ হাজার ৫১২ অপরাধীর নাম উঠে এসেছে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন করতে নির্বাচন কমিশন অপরাধীদের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সকে বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে।

    নির্দেশনা পেয়ে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে গতকাল সোমবার পুলিশের সব কটি ইউনিটপ্রধানদের বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স। পাশাপাশি পুলিশের বিশেষ অভিযানে কোনো নিরপরাধ কাউকে হয়রানি না করতেও বলা হয়েছে। চলতি মাসের মধ্যেই সব ধরনের বৈধ (লাইসেন্স করা) আগ্নেয়াস্ত্র জমা দিতে নির্দেশনা আসছে। তা ছাড়া চলতি সপ্তাহেই ঢাকাসহ সারা দেশে দাগি অপরাধীদের ধরতে বিশেষ অভিযান শুরু হচ্ছে বলে পুলিশের একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে।

    জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ অনুযায়ী অপরাধীদের ধরতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে। সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন সম্পন্ন করতে অপরাধীদের ধরতে কিছুদিনের মধ্যে জোরালো অভিযান শুরু হবে। অবৈধ অস্ত্রধারীদেরও আইনের আওতায় আনা হবে। কোনো ধরনের অপরাধীরা ছাড় পাবে না। যারা নির্বাচন বানচাল করার চেষ্টা করবে, তাদের কঠোরভাবে দমন করা হবে বলে তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।

    সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে জানায়, পুলিশের সব কটি ইউনিটকে নিয়ে বিশেষ বৈঠক করেছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজপি)। পাশাপাশি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে নানা তথ্য। দু-এক দিনের মধ্যে জেলার পুলিশ সুপারদের সঙ্গে আরেকটি বৈঠক করবেন পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের শীর্ষ কর্তারা। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা পেয়ে সারা দেশে বিশেষ অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুলিশ। এ নিয়ে গতকাল আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতনরা বৈঠক করেছেন। অভিযানে অস্ত্র উদ্ধার ও পেশাদার সন্ত্রাসীদের টার্গেটে রাখা হয়েছে। পাশাপাশি নাশকতাকারীদের দিকে পুলিশের চোখ রাখা হচ্ছে বেশি। আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসীরা যাতে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে, সেদিকে বিশেষ নজর দিয়েছে পুলিশ ও র‌্যাব। সীমান্ত এলাকায় নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিশেষ অভিযান চালানোর বিষয়ে নির্বাচন কমিশন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স।

    আরও পড়তে পারেন-

    পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিশেষ অভিযানে তালিকাভুক্তদের বেশি প্রাধান্য দেওয়া হবে। তালিকায় ২৭ হাজার ৫১২ জনের নাম এসেছে। তারা সবাই দাগি অপরাধী। এই তালিকায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের নাম নেই। তবে নাশকতা যারা করছে, তাদের নতুন করে তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে। তালিকাভুক্ত অপরাধীদের মধ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল, খুলনা, সাতক্ষীরা. সিলেট, বগুড়া, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, চুয়াডাঙ্গা, নাটোর, চাঁদপুর, মুন্সীগঞ্জ, নরসিংদী, টাঙ্গাইল, কুমিল্লা, নোয়াখালী, ফেনী, ঝিনাইদহ, যশোর, কুষ্টিয়া, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, গাইবান্ধা, সিলেট, মানিকগঞ্জ, পটুয়াখালী, কক্সবাজার, গাজীপুর, নেত্রকোনা, ঝালকাঠি, লক্ষ্মীপুর, যশোর, নড়াইল, টাঙ্গাইল, পাবনা, ভোলা, নীলফামারী, সুনামগঞ্জ ও জয়পুরহাটে আছে বেশি অপরাধী। তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ অনুযায়ী চলতি সপ্তাহেই বিশেষ অভিযানটি পরিচালিত হবে। এ জন্য আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি। নির্বাচনের আগে যেকোনো ধরনের সহিংসতা রোধে বিশেষ পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই আমাদের এ সিদ্ধান্ত। অভিযানে সন্ত্রাসীদের পাশাপাশি রাজনৈতিক দুর্বৃত্তরাও ছাড় পাবে না। চলতি মাসের মধ্যে বৈধ অস্ত্র জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হবে। যারা নির্দেশনা মানবে না তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিলসহ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগে একটি মহল দেশে ফায়দা নিচ্ছে বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। সীমান্ত এলাকায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।’

    পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের উপমহাপরিদর্শক (অপারেশন) আনোয়ার হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দুদিন আগে নির্বাচন কমিশন অপরাধীদের ধরার বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা কাজ শুরু করে দিয়েছি। বৈধ অস্ত্রগুলো কোথায় কীভাবে আছে তার হিসাব মেলানো হচ্ছে। তা ছাড়া বৈধ অস্ত্র জমা দেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হবে। পাশাপাশি অবৈধ অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার এবং পেশাদার সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার করা হবে। তবে অহেতুক কাউকে হয়রানি করা হবে না।’

    পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের ঊর্ধ্বতন আরেক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরু হয়েছে। একটি মহল নির্বাচন বানচাল করার চেষ্টা করছে। আন্ডারওয়ার্ল্ডের অপরাধীরাও তৎপর হয়ে উঠেছে বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। যারা আত্মগোপনে ছিলেন তারা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছেন। অপরাধীদের ধরার বিষয়ে ইউনিটপ্রধানদের নিয়ে বিশেষ বৈঠক করেছেন আইজিপি। বৈঠকে সবাই মতামত দিয়েছেন বিশেষ অভিযান চালাতে। অভিযানে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও অস্ত্রবাজাদেরও ধরা হবে। যারা অপরাধ করবে, তাদেরই আইনের আওতায় আনা হবে। রাজনৈদিক দুবৃর্ত্তায়নদের পাকড়াও করা হবে।’

    ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন সীমান্তে কিছুটা বেড়ে গেছে অস্ত্র ও গোলাবারুদের ব্যবহার। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি ঘটনা আমাদের তাড়া দিয়েছে। এলাকাভিত্তিক অপরাধীদের তালিকা হালনাগাদের কাজ শেষ করা হয়েছে। রাজনৈতিকভাবে কাউকে হয়রানি করতে বারণ করা হয়েছে।’

    জানা গেছে, গতকাল পুলিশ হেডকোযার্টার্স থেকে পুলিশের সব কটি ইউনিটপ্রধান, রেঞ্জ ডিআইজি ও পুলিশ সুপারদের কাছে বিশেষ বার্তা দেওয়া হয়েছে। বার্তায় বলা হয়েছে, কোনো মহল বা ব্যক্তি আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল করার চেষ্টা করলেই তাদের কঠোরভাবে দমন করতে হবে। তবে অহেতুক কাউকে হয়রানি করা যাবে না। আবাসিক হোটেল ও মেসগুলো নজরদারির আওতায় আনতে হবে। ঢাকার প্রবেশপথগুলোতেও তল্লাশিচৌকি বসিয়ে তল্লাশি করতে বলা হয় বার্তায়। বঙ্গভবন, গণভবন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে। বার্তা পেয়ে বৈঠকে বসেন ডিএমপি কমিশনার। ওই বৈঠকে ঢাকার ৮ ক্রাইম জোনের ডিসি ও গোয়েন্দা পুলিশের ঊর্ধ্বতনরা অংশ নেন। মহান বিজয় দিবস, বড়দিন এবং থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। রেঞ্জ ডিআইজি, মহানগর পুলিশ কমিশনার ও জেলার এসপিরা আলাদাভাবে বিশেষ বৈঠক করছেন বিশেষ অভিযান সফল করতে।

    উম্মাহ২৪ডটকম: আইএএ

    উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
    https://www.ummah24.com

    দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।