Home জাতীয় পটিয়া মাদ্রাসায় বহিরাগত হস্তক্ষেপ অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত: চার শীর্ষ আলেমের বিবৃতি

পটিয়া মাদ্রাসায় বহিরাগত হস্তক্ষেপ অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত: চার শীর্ষ আলেমের বিবৃতি

জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়ায় বহিরাগত হস্তক্ষেপ অনাকাঙ্খিত ও অনভিপ্রেত উল্লেখ করে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন হেফাজত আমীর ও হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালকসহ চার শীর্ষ আলেম। একই সাথে তারা বিদ্যমান পরিস্থিতিতে কওমি মাদ্রাসার স্বকীয় নীতিমালা ও উসূলে হাস্তেগানা অনুসরণ করে কোনরূপ রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক হস্তক্ষেপের আশ্রয় না নিয়ে মজলিসে শূরা, হাইয়াতুল উলইয়ার সভাপতিসহ দেশের শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞ মুরব্বীদের মাধ্যমে সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানান।

মঙ্গলবার (৬ ডিসেম্বর) এক যৌথ বিবৃতিতে এই আহ্বান জানান হেফাজতে ইসলামের আমীর ও বাবুনগর মাদ্রাসার মুহতামিম আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী, দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসার মুহতামিম আল্লামা মুফতি খলীল আহমদ কাসেমী, নানুপুর ওবাইদিয়া মাদ্রাসার মুহতামিম আল্লামা সালাহ উদ্দীন নানুপরী এবং জামিয়া ইসলামিয়া জিরির মহাপরিচালক মাওলানা মুহাম্মদ খোবাইব।

যৌথ বিবৃতিতে শীর্ষ আলেমগণ বলেন, গত মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) দুপুরে পটিয়া থানার শোভনদন্ডি ও মুরাদাবাদ এলাকার কিছুসংখ্যক ছদ্মবেশী মুসল্লী; যারা জামিয়ার ছাত্র-শিক্ষক কিছুই নয়, জোরপূর্বক গেইট ভেঙ্গে জামিয়ার অভ্যন্তরে অনুপ্রবেশ করে এবং নীরিহ ছাত্রদের উপর হামলা চালিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা করে। এই বিশৃঙ্খলার উপর ভর করে পটিয়ার স্থানীয় প্রশাসন জামিয়া পটিয়ার মজলিসে এদারির প্রধান আল্লামা মুফতি আহমদ উল্লাহ সাহেব থেকে জোরপূর্বক অন্যায়ভাবে যে স্বাক্ষর গ্রহণ করেছে, আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। কওমী মাদরাসার হিতাকাক্সক্ষী ও কল্যাণকামী কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী এ ধরনের গর্হিত কাজ করতে পারে না।

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয় যে, বিগত ২৮ অক্টোবর ছাত্র আন্দোলনের মুখে মাদরাসার তৎকালীন মুহতামিম মাওলানা ওবাইদুল্লাহ হামজা পদত্যাগ করতে বাধ্য হন এবং মাদরাসা থেকে চলে যান। উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জামিয়ার প্রবীণ মুহাদ্দিসীন ও শিক্ষকগণ আল্লামা সুলতান যওক নদভী সাহেব সহ শূরার সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করেন। আল্লামা সুলতান যওক নদভী সাহেব বার্ধক্যজনিত অসুস্থতার কারণে তাৎক্ষণিক মাদরাসায় উপস্থিত হতে পারেননি। ফলে পরিস্থিতি বিবেচনায় দেশের শীর্ষস্থানীয় মুরুব্বী আমীরে হেফাজত আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী উম্মুল মাদারিস দারুল উলূম হাটহাজারীর মুহতামিম আল্লামা মুফতি খলীল আহমদ কাসেমী, জামিয়া ওবাইদিয়া নানুপুরের মুহতামিম আল্লামা শাহ সালাউদ্দীন নানুপুরী প্রমুখ শীর্ষ মুরুব্বী উলামায়ে কেরামের সাথে যোগাযোগ করেন। প্রকাশ থাকে যে, জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়ার সাথে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী সাহেবের পরিবার এবং আহলে হাটহাজারীর গভীর সম্পর্ক রয়েছে। একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠানের এহেন নাজুক পরিস্থিতিতে উদ্ভূত সমস্যার সমাধানের জন্য জামিয়া পটিয়ার প্রবীণ মুহাদ্দিসীন এবং শিক্ষকদের অনুরোধে উম্মাহের দরদী অভিভাবক আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী, হাটহাজারীর মুহতামিম আল্লামা মুফতি খলীল আহমদ কাসেমী এবং শূরার অপরাপর কিছু সদস্য যথাসময়ে জামিয়া পটিয়ায় উপস্থিত হয়ে এক বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে জামিয়ার চলমান সংকট নিরসনে এবং ছাত্রদের ভবিষ্যত বিবেচনায় তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে জামিয়ার কার্যক্রম স্বচল রাখা হয়।

তারা বলেন, যেহেতু মাওলানা ওবাইদুল্লাহ হামযাকে উক্ত বৈঠকে উপস্থিত করা সম্ভব ছিলো না এবং উভয়পক্ষের বক্তব্য শোনারও পরিবেশ ছিলো না, সেহেতু উপস্থিত মুরুব্বীরা জামিয়ার সার্বিক কার্যক্রম স্বচল রাখাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে নতুন কোনো মুহতামিম নিয়োগ না করে একটি মজলিসে এদারি গঠন করে দেন।

আরও পড়তে পারেন-

যৌথ বিবৃতিতে আরো বলা হয়, মাওলানা ওবাইদুল্লাহ হামযা সাহেবকে জামিয়ার প্রবীণ এবং সিনিয়র শিক্ষকগণ উত্তেজনাকর পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে পূর্বেই শূরা ডাকার জন্য বার বার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি বিষয়টি গুরুত্ব না দিয়ে গড়িমসি করায় ২৮ অক্টোবর অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা সংঘটিত হয়েছিলো। তাছাড়া মুহতামিম হওয়ার মেয়াদ এক বছর পূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও তিনি মজলিসে শূরাও ডাকেননি এবং মজলিসে আমেলাও গঠন করতে পারেননি। দূর্ভাগ্যজনক বিষয় হলো, মজলিসে এদারী গঠন পরবর্তী মাওলানা ওবাইদুল্লাহ হামযা সাহেব জামিয়া পটিয়ার পরিবেশ শান্ত হওয়ার অপেক্ষা না করে এবং মুরুব্বী হযরতগণের স্মরণাপন্ন না হয়ে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক হস্তক্ষেপকেই গুরুত্ব দিয়েছেন। যে কারণে উভয় পক্ষকে বৈঠকে বসানো আর সম্ভব হয়নি। যার ফলে পরিবেশ অশান্তই রয়ে যায়। মাদারেসে কওমিয়ার মৌলিক নীতিমালা অনুসারে কোনো কওমী মাদরাসার উপর রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ কখনোই কাম্য বা গ্রহণযোগ্য নয়। এমনকি, এ ধরণের হস্তক্ষেপ উসূলে হাস্তেগানার গুরুতর পরিপন্থী।

চলমান পরিস্থিতিতে করণীয় উল্লেখ করে বিবৃতিদাতাগণ দুই পরামর্শ দিয়ে বলেন- (১) অনতিবিলম্বে জামিয়ার মজলিসে শূরা এবং দেশের শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞ মুরুব্বীদের নিয়ে বৈঠক করে একটি শক্তিশালী তদন্ত কমিটি গঠন পূর্বক বিষয়টি নিষ্পত্তি করা হোক।

উল্লেখ থাকে যে, মাদরাসার অভ্যন্তরে অবস্থানরত প্রবীণ শিক্ষকদের দাবী- “ইত্তেহাদুল মাদারিসিল আরবীয়া বাংলাদেশ নামক শিক্ষাবোর্ডটি জামিয়া পটিয়ার অধীনে পরিচালিত। কারণ, অত্র বোর্ডের সংবিধানে উল্লেখ ছিলো যে, জামিয়ার প্রধান যিনি হবেন, তিনিই হবেন ইত্তেহাদের সভাপতি”। অপরদিকে মাওলানা ওবাইদুল্লাহ হামযার পক্ষের দাবী- “জামিয়া পটিয়া ইত্তেহাদের অধিনস্থ প্রতিষ্ঠান। সেক্ষেত্রে ইত্তেহাদের সভাপতি যিনি হবেন, তিনিই জামিয়া পটিয়ার শূরার প্রধান হবেন”। বিষয়টি জাতির কাছে অস্পষ্ট। এখানে দেখার বিষয় হলো- অতীতে আল্লামা শাহ ইউনুস (রহ.), আল্লামা হারুন ইসলামাবাদী (রহ.), আল্লামা শাহ আব্দুল হালীম বুখারী (রহ.) প্রয়াত মুহতামিমগণ নিয়মিত শূরার বৈঠকগুলো কি ইত্তেহাদের প্যাড বা পদ পরিচয়ে আহবান করতেন, নাকি জামিয়া পটিয়ার প্যাড বা পদ পরিচয়ে আহ্বান করতেন? যেহেতু ব্যক্তির চেয়ে প্রতিষ্ঠান বড়, তাই প্রতিষ্ঠান সচল রাখাই আমাদের কাছে মূখ্য। কারণ, প্রতিষ্ঠানের সাথে হাজার হাজার শিক্ষার্থীর মূল্যবান সময় ও জীবনের গভীর সম্পর্ক রয়েছে।

(২) আশির দশকে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে জামিয়া পটিয়াকে বন্ধ করে দিয়ে পটিয়া কলেজে রূপান্তর করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছিলো। আল্লাহ তাআলা সকল ষড়যন্ত্রকে নস্যাৎ করে দিয়ে জামিয়া পটিয়াকে অদ্যবধি সচল রেখেছেন, ইনশাআল্লাহ কিয়ামত পর্যন্ত সচল থাকবে। উল্লেখ্য যে, দেশের কওমী মাদরাসাসমূহ শূরা কর্তৃক পরিচালিত দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আল হাইয়াতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়্যাহ বাংলাদেশ-এর গেজেটে সরকার কওমী মাদরাসার আভ্যন্তরীণ বিষয়ে কোনোপ্রকার হস্তক্ষেপ করবেন না; বরং উসূলে হাস্তেগানার আলোকেই কওমী মাদরাসা পরিচালিত হবে বলে অঙ্গিকার রয়েছে। সুতরাং, উভয়পক্ষ জামিয়া পটিয়ার উপর রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কোনপ্রকার হস্তক্ষেপের আশ্রয় না নিয়ে মজলিসে শূরা, হাইয়াতুল উলইয়ার সভাপতিসহ দেশের শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞ মুরব্বীদের মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করবেন। আশাকরি , উভয়পক্ষ ২৮ অক্টোবরের ঘটনাপরবর্তী এবং গতকালের ঘটনায় সৃষ্ট সকল মামলা প্রত্যাহার করে সুষ্ঠু সমাধানের পরিবেশ তৈরি করবেন।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যুগশ্রেষ্ঠ বুযুর্গদের রেখে যাওয়া আমানত জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়াকে হেফাজত করুন। আমীন। – বিজ্ঞপ্তি।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।